প্রচ্ছদ / দিফায়ে আকাবির / মিথ্যাচারঃ খলীল আহমাদ সাহরানপুরী বারাহিনে কাতিয়ায় নবীর ইলমের চেয়ে শয়তানের ইলম বেশি বলেছেন?

মিথ্যাচারঃ খলীল আহমাদ সাহরানপুরী বারাহিনে কাতিয়ায় নবীর ইলমের চেয়ে শয়তানের ইলম বেশি বলেছেন?

প্রশ্ন

আহমদ রেজা খাঁ বেরেলবী তার প্রণিত হুসামুল হারামাইনে লিখেছে যে, হযরত মাওলানা খলীল আহমদ সাহারানপুরী রহঃ নাকি তার কিতাব “বারাহিনে কাতিয়া” তে লিখেছেন যে, রাসূল সাঃ এর ইলম এর চেয়ে শয়তানের ইলম বেশি? নাউজুবিল্লাহ!
সঠিক জবাব দিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم

বেদআতি ও কথিত আহলে হাদীস নামধারী গায়রে মুকাল্লিদদের এ অভিযোগটি বারাহিনে কাতিআর লেখক মাওলানা খলীল আহমদ সাহারানপুরী রহঃ এর উপর একটি স্পষ্ট মিথ্যাচার।
আসলে কী আছে বারাহিনে কাতিয়ায়?

আসলে বারাহিনে কাতিয়ায় মাওলানা খলীল আহমদ সাহারানপুরী রহঃ রেজাখানী বেদআতিদের রাসূল সাঃ প্রত্যেক মিলাদ মাহফিলে উপস্থিত হওয়ার ভ্রান্ত আক্বিদা লাজাওয়াব উত্তর দিয়েছেন। এর ফলে বেদআতিরা হযরতের বিরুদ্ধে এ প্রোপাগান্ডা শুরু করে দিয়েছে। অথচ এ মাসআলায় রেজাখানী বেদআতিরা যে দলীল পেশ করে থাকে, তা স্পষ্টভাবে রাসূল সাঃ শানে অবমাননাকর।
বারাহিনে কাতিয়ার দীর্ঘ আলোচনা সার সংক্ষেপ হল-

মিলাদ মাহফিলে যারা কিয়াম করে থাকে, তাদের জিজ্ঞাসা করা হল যে, তারা কেন কিয়াম করে থাকে?
কিয়ামধারী বেদআতিরা জবাবে বলেঃ মিলাদের মজলিসে রাসূল সাঃ উপস্থিত হন, এ কারণে তারা কিয়াম করে থাকে।
তখন হযরত জিজ্ঞেস করলেনঃ মিলাদের মজলিসে রাসূল সাঃ এর আগমণের প্রমাণ কি? রাসূল সাঃ কি নিজেই একথা বলেছেন যে, যেখানেই মিলাদ মাহফিল হবে তিনি সেখানেই উপস্থিত হয়ে যান? যদি এরকম কোন হাদীস থাকে, তাহলে উদ্ধৃত করুন। সনদ বলুন। নতুবা এরকম মিথ্যা কথার নিসবত করা ইসলামী শরীয়তের সংযোজন তথা বিদআত এবং রাসূল সাঃ এর উপর অপবাদ আরোপ করা ছাড়া কিছু নয়।

হাদীসে এসেছে যে, “যে ব্যক্তি আমার উপর ইচ্ছেকৃত মিথ্যা কথার নিসবত করে, সে তার ঠিকানা বানিয়ে নিল জাহান্নামকে”।

এছাড়া যদি আগমণ করাকে মেনেও নেয়া হয়, তাহলে একই সময়ে আল্লাহই জানেন যে, কত স্থানে মিলাদ মাহফিল হয়ে থাকে, এ অবস্থায় রাসূল সাঃ কত স্থানে আগমণ করেন?

এই লোকেরা [রেজাখানী বেদআতিরা] তো হাদীস পেশ করতে পারেনি। কেননা, এ বিষয়ে কোন হাদীস বিদ্যমান নেই। তবে আমাদের বলা দ্বিতীয় কথাটির এমন জবাব দিয়েছে, যা কোন জ্ঞানী ব্যক্তি বা দ্বীনদার ব্যক্তি কস্মিনকালেও দিতে পারে না। শুধু তাই নয়, রাসূল সাঃ এর প্রতি যার সামান্যতম মোহাব্বতও আছে, সে একথার কল্পনাও করতে পারে না। জবাবে তারা যা বলেছে তা লিখতেও আমার কলম কাঁপছে, অন্তর ধড়ফর করছে।

বেদআতিরা জবাবে বলেছেঃ “শয়তানতো মজলিসে পৌঁছে যায়, কি রাসূল সাঃ পৌঁছতে পারেন না?”।
অবাক কান্ড! হাদীসের দলীল পেশ না করে তারা নাউজুবিল্লাহ রাসূল সাঃ কে শয়তানের উপর কিয়াস করে বাঁচতে চেষ্টা করেছে। যেন বলতে চাইছে যে, যেখানে যেখানে শয়তান পৌঁছে যায়, সেসব স্থানে রাসূল সাঃ ও পৌঁছে যায়। আস্তাগফিরুল্লাহ!
যে ব্যক্তির মাঝে আত্মমর্যাদাপূর্ণ মন আছে, তারা এরকম মারাত্মক অপমানজনক কথা রাসূল সাঃ এর ব্যাপারে কিভাবে সহ্য করতে পারে?
এই হল খলীল আহমদ সাহারানপুরী রহঃ এর বারাহিনে কাতিয়ার আলোচনার সার নির্যাস।

উপরোক্ত বক্তব্যটির ব্যাখ্যা

বেদআতির সাথে খলীল আহমদ সাহারানপুরী রহঃ এর কথোকথন ও বাহাস দ্বারা একথা বুঝা গেল যে, হযরতের বক্তব্য হল, শয়তানকে আল্লাহ তাআলা মানুষকে গোমরাহ করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। সে সকল নোংরা স্থান, মদের আড্ডা, অশ্লীল স্থান, ব্যাশ্যাপল্লী, মুর্তির আখরা ইত্যাদি সকল গোনাহ ও খারাপ স্থানে পৌঁছতে পারে। এমনকি টয়লেটেও সে প্রতিটি মানুষের সাথে যায়, শুধু আল্লাহুম্মা ইন্নি আওজুবিকা মিনাল খুবুসি ওয়াল খাবায়িস পড়ে যারা গমণ করে তারাই কেবল তার খারাবী থেকে বাঁচতে পারে। সে মানুষের রগে রগে রক্তের প্রবাহমানতার মত ঢুকে যেতে পারে। সমুদ্রের মাঝে নিজের সিংহাসন পেতে বসতে পারে। সেখানে তার চ্যালারা এসে তার কাছে কারগুজারী শুনিয়ে থাকে। সে আখেরাতে সুনিশ্চিত জাহান্নামী হবে। আর জাহান্নামী চিরস্থায়ীভাবে থাকবে। এই হল শয়তানের অবস্থা।

শয়তানের এ সকল অবস্থার ব্যাপারে হাদীস বিদ্যমান।

পক্ষান্তরে রাসূল সাঃ সকল মজলিসে উপস্থিত হওয়ার পক্ষে শয়তানের সাথে তুলনার এ নোংরা ও মারাত্মক বেআদবীমূলক কিয়াসটি ছাড়া আর কোন হাদীস আছে?

এ জঘন্য কিয়াসটির খোলাসা হল, শয়তানের যতস্থানে যাওয়া হাদীসে প্রমাণিত, শয়তানের উপর কিয়াস করে রাসূল সাঃ কে সেসব স্থানে আসা যাওয়া প্রমাণিত করা রাসূল সাঃ কে অপমান করা, এবং জঘন্যতম ধৃষ্টতা প্রদর্শন বৈ কিছু নয়। আল্লাহ তাআলা আমাদের এরকম ফালতু আক্বিদা থেকে হিফাযত করুন।

আশ্চর্য লাগে যে, আহমদ রেজা বেদআতি সাহেব রাসূল সাঃ এর প্রতি স্থানে উপস্থিতি প্রমাণে এরকম ফালতু দলীল কোত্থেকে উপস্থিত করল?

আক্বিদার জন্য প্রথমেতো নুসুসে কাতয়িয়্যাহ তথা অকাট্য দলিল প্রয়োজন হয়। যদি তা না হয়, তাহলে কমপক্ষে স্পষ্ট হাদীস থাকতে হয়। যদি তাও না হয়, তাহলে কোন উত্তম বস্তুর সাথে কিয়াস করার দ্বারা হয়তো প্রমাণিত হতে পারে। কিন্তু চির অভিশপ্ত শয়তানের সাথে কিয়াস করে আল্লাহর পর শ্রেষ্ঠ স্থান যার সেই মহান নবীর তুলনা করা? নাউজুবিল্লাহি মিন জালিক। কি আর বলা যায় এ জাহিলদের ব্যাপারে? ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নালিল্লাহি রাজিউনই পড়া যায়।
বারাহিনে কাতিয়ায় মাওলানা খলীল আহমদ সাহারানপুরী রহঃ যা লিখেছেন তা প্রমাণবাহী তিনি কী পরিমান রাসূলপ্রেমী। আর রেজাখানীরা কী পরিমাণ গুস্তাখে রাসূল। অথচ প্রচার করছে এর উল্টোটা। আল্লাহ তাআলা তাদের প্রোপাগান্ডা থেকে মুসলমানদের হিফাযত করুন। আমীন।

নবী অবমাননাকারী কারা? দেওবন্দী না রেজাখানী বেদআতিরা?

উদাহরণত কয়েকটি উপমা উপস্থাপন করা হল

মুফতী আহমাদ ইয়ারখান লিখেনঃ
“সারা জাহানের ইলম হুজুর সাঃ কে দেয়া হয়েছে। সারা জাহানের মাঝে হযরত আদম আঃ, ফেরেস্তা, মালাকুল মওত এবং শয়তান প্রমূখও আছে। জাআল হক্ব-৮১}

নাউজুবিল্লাহ! আল্লাহ তাআলা এমন বদবখত আক্বিদা থেকে আমাদের হিফাযত করুন।
“শয়তানী ইলমকে নবীর জন্য প্রমাণ মেনে, সেই সাথে শ্রেষ্ঠ নবী সাঃ এর জন্যও তা সাব্যস্ত করে রেজাখানী হযরত কী

পরিমাণ জঘন্য মানসিকতার পরিচয় দিয়েছে একবার ভেবে দেখবেন কি?

নাপাক শয়তানী ইলম তথা জাদু-টোনা, প্রতারণা, ঝগড়া-ফাসাদ করানোর জ্ঞান, গোনাহ-গোমরাহিতে নিপতিত করার পদ্ধতি, অশ্লিলতা, নোংরামী বিস্তারের ইলম নবীজী সাঃ এর জন্য প্রমাণিত করা নবীজী সাঃ সম্পর্কে কতটা ধৃষ্টতার পরিচায়ক একবার চিন্তা করুন। এরকম নাপাক ও জঘন্য ইলম রাসূল সাঃ এর জন্য মানাটা কোন ধরণের ভালবাসার পরিচয়?

শুধু তাই নয়, একদিকে রাসূল সাঃ এর জন্য শয়তানী ইলম আছে বলে দাবি করা, অপরদিকে শয়তানের জন্য ইলমে গায়েব দৃঢ়তার সাথে জায়েজ ও প্রমাণিত দাবি করছে। দেখুন কী বলেন তারা?-

শয়তানেরও ভবিষ্যতের জ্ঞান আছে!

মুফতী আহমাদ ইয়ারখান সাহেব লিখেনঃ

“শয়তানকেও ভবিষ্যতের গায়েবের বিষয়ে ইলম দেয়া হয়েছে। {নূরুল ইরফান-২৪১, পীর ভাই কোম্পানী লাহুর}
আল্লাহ তাআলার জন্য খাস ইলমে গায়েবকে রাসূল সাঃ এর জন্য দাবি করে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়াতে রেজাখানী বেদআতি দল ইলমে গায়েব কার কার মাঝে বন্টন করছে দেখুন।

রেজাখানী বেদআতি গ্র“প শয়তানের জন্য ইলমে গায়েব সাব্যস্ত করে নিজেদের কাদের দলের অন্তর্ভূক্ত করলো আশা করি পাঠকরাই নির্ণিত করবেন।

রাসূল সাঃ এর জন্য শয়তানের নাপাক ইলম সাব্যস্তকারী, এবং শয়তানের জন্য ইলমে গায়েবকে জায়েজ মান্যকারী দলটির আরো ধৃষ্টতা দেখুন। ওদের দাবি রাসূল সাঃ এর কাছে শয়তানের নাপাক ইলম এর সাথে সাথে শয়তানের চেয়ে বেশি খারাপ ইলম জানা আছে। [নাউজুবিল্লাহ]

নবীজী সাঃ এর ইলমকে শয়তানের ইলমের সাথে সাদৃশ্যায়ন

“শয়তান হল অসুস্থ্য, আর রাসূল সাঃ হলেন চিকিৎসক, যখন অসুস্থ্যতার শক্তি এত,তাই নবীজীর ইলম তার চেয়ে বেশি হওয়া দরকার। {তাফসীরে নূরুল ইরফান-২৪১, আল আরাফ,আয়ত নং-১৭}

রাসূল সাঃ এর ইলমকে কিভাবে শয়তানের ইলমের সাথে সাদৃশ্য করা হচ্ছে। যদি একাজটি অন্য কেউ করতো,তাহলে কুফরীর ফাতওয়া দিয়ে দিত সাথে সাথেই। কিন্তু রেজাখানীদের মূলনীতি মনে হয় যে, শুধু অন্যদের জন্য কুফরীর ফাতওয়া বরাদ্দ, তাদের সকল কিছুই মাফ।

শুধু তাই নয়। শয়তান শুধু ইলমে গায়েবই জানে না, বরং শয়তান সে খবর দেয় তাও নাকি সত্য! দেখুন কি বলেন হযরতরা!

শয়তানের ইলমে গায়েব

আল্লাহ তাআলা শয়তানকে এমন ইলমে গায়েব দিয়েছেন যে, সে ভবিষ্যতের ব্যাপারে যা বলেছে, বর্তমানে তাই দেখা যাচ্ছে। {নূরুল ইরফান-১৫৩, সূরা নিসা, আয়াত নং-১১৯}

জানা নেই রেজাখানী মতাদর্শীরা শয়তানের সমর্থনে কোন ষ্টেশনে গিয়ে ব্রেক কষে। তবে তাদের ভিতরগত হালাত বুঝার জন্য আশা করি এতটুকুই যথেষ্ঠ।

শয়তানে অতীতে যেসব সংবাদ দিয়েছে, বেরেলবীদের দাবি অনুপাতে তা সবই প্রমাণিত হয়েছে। এরকম শয়তানপ্রেমী বদবখতী আক্বিদা থেকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সকলকে হিফাযত করুন।

শয়তানের সমর্থনে নবীদের অপমান

মৌলবী আহমাদ ইয়ারখান বেরেলবী লিখেনঃ
“যদি শয়তান না হতো, তাহলে দুনিয়া ও দ্বীনের কিছুই হতো না। কেননা তখন না বাদশার প্রয়োজন হতো, না পুলিশের। না কোর্ট কাচারীর না সেনা ছাউনী ইত্যাদির দরকার হতো। এমনিভাবে না পয়গম্বরদের প্রয়োজন হতো, না ওলী ও পীরদের প্রয়োজন হতো, দোজখ ও আজাবের ফেরেস্তারা থাকতো বেকার। {তাফসীরে নাঈমী-১/২৪৮}

তাহলে কী দাঁড়াল? রেজাখানীদের কাছে পৃথিবী সৃষ্টির কারণ হল শয়তান। তার কারণেই দ্বীন দুনিয়া বাকি আছে। বলতে গেলেই শয়তানই হচ্ছে সবকিছুর রূহ। শয়তান আছে বলেই সব আছে! [নাউজুবিল্লাহ]

তাদের এ আক্বিদার মাধ্যমে তাদের এ বক্তব্যও স্পষ্ট হয়ে গেল যে, তাদের মতে নবীদের নবুওয়ত, ওলীদের ওয়ালায়াত, পীরদের বুযুর্গী সবই শয়তানের কারণে পেয়েছে। [নাউজুবিল্লাহ]

যদি শয়তান না হতো তাহলে এসব নবী, ওলী, পীর বুযুর্গরা বেকার বসে থাকতেন?! [নাউজুবিল্লাহ]

সহীহ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বিদা কখনোই এমন জঘন্য আক্বিদা রাখতে পারেন না। এটা রেজাখানী বেরেলবীদের নসীবেই আছে।

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল- ahlehaqmedia2014@gmail.com

lutforfarazi@yahoo.com

0Shares

আরও জানুন

‘সুন্দর সম্পর্ক কেন নষ্ট করে দিলা’ বলার দ্বারা কি স্ত্রী তালাক হয়ে যায়?

প্রশ্ন আস্সালামুআলাইকুম মুফতি সাহেব, এই প্রশ্ন কয়েকটা আগেও করেছিলাম, উত্তর না পেয়ে আবার করছি| ওয়াসওয়াসা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *