প্রচ্ছদ / তাবলীগ জামাত / ফাযায়েলে আমালে বর্ণিত কিছু কিছু ঘটনাকে গায়রে মুকাল্লিদরা শিরক বলছে। এব্যাপারে সঠিক সমাধান জানতে চাই।

ফাযায়েলে আমালে বর্ণিত কিছু কিছু ঘটনাকে গায়রে মুকাল্লিদরা শিরক বলছে। এব্যাপারে সঠিক সমাধান জানতে চাই।

প্রশ্ন:

 

ফাযায়েলে আমালে বর্ণিত কিছু কিছু ঘটনাকে গায়রে মুকাল্লিদরা শিরক বলছে। এব্যাপারে সঠিক সমাধান জানতে চাই। এগুলো কি আসলেই শিরক?

 

জবাব:

 

بسم الله الرحمن الرحيم

 

শাইখুল হাদীস আল্লামা শায়েখ জাকারিয়া রহঃ এর লিখা “ফাযায়েলে আমাল” কিতাবটিতে তিনি ফাযায়েল সম্পর্কিত বেশ কিছু হাদীস বিভিন্ন হাদীসের কিতাব থেকে একত্র করেছেন। সেই সাথে বুযুর্গানে দ্বীনের জীবনে ঘটে যাওয়া ঈমান উদ্দীপক কিছু ঘটনা উদ্ধৃত করেছেন।

ঘটনা মূলত ঘটনাই। এর দ্বারা কোন বিধান সাব্যস্ত হয়না। আর বুযুর্গানে দ্বীন থেকে ঘটিত আশ্চর্য ঘটনাবলী কোন শরয়ী দলিল নয়, কিন্তু ঈমান উদ্দীপক। যার মাধ্যমে আমলের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়। এগুলোতে অযথা শিরক খোঁজাটা বোকামীর শামিল। সেই সাথে শিরকের অর্থ সম্পর্কে অজ্ঞতার পরিচায়ক।

কারণ শিরক শব্দের আভিধানিক অর্থ হল শরিক করা, কাউকে একিভূত করা, অংশিদার করা। আর পরিভাষায় শিরক বলা হয়- “আল্লাহ তায়ালার সত্ত্বা বা তার গুণাবলীর সমতূল্য কাউকে সাব্যস্ত করার নাম”।

যেই বোকারা বলে যে বুযুর্গানে দ্বীনের থেকে ঘটা আশ্চর্য ঘটনাগুলো শিরক ,ওরা মূলত শিরকের সংজ্ঞাই জানে না।

আশ্চর্য ঘটনাবলী বা বুযুর্গানে দ্বীনের কারামাত বুযুর্গানে দ্বীনের নিজের ইচ্ছাধীন নয়। বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়। যদি কেউ মনে করে যে, কারামাত বা আশ্চর্য ঘটনাবলীর ঘটানোর মূল ক্ষমতা বুযুর্গের, তাহলে এটা শিরক হবে, এতে কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু একথাতো ফাযায়েলে আমালের কোথাও লিপিবদ্ধ নাই যে, কারামাতগুলো ঘটানোর ক্ষমতা সংশ্লিষ্ট বুযুর্গের। তাহলে এসব ঘটনা শিরক হল কিভাবে?

স্বাভাবিক রীতির উল্টো কাজ প্রকাশ করার ক্ষমতা আল্লাহ তায়া’লার রয়েছে, এটা আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। এটাই আমাদের ঈমান।

আল্লাহ তায়ালা যেমন বাতাসের উপর ভর করে হযরত সুলাইমান আঃ কে গোটা পৃথিবী ভ্রমণ করার সুযোগ দিয়েছেন, তেমনি নবী না হলেও হযরত বিবি মরিয়মকে স্বামী সঙ্গ ছাড়াই তার পেটে সন্তান দিয়েছেন। ঈসা আঃ এর হাতে মৃতকে জীবিত করার ক্ষমতা দিয়েছেন আল্লাহ তায়ালাই। সাপকে লাঠিতে পরিণত করেছেন মুসা আঃ এর হাতে একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই। সেই আল্লাহ তায়ালাই হযরত ওমর রাঃ এর সামনে সুদূরে থাকা জিহাদরত মুজাহিদ বাহিনীর অবস্থা পরিস্কার করে দিলেন, ফলে তিনি মদীনার মসজিদে জুমআর খুতবাদানকালেও যুদ্ধরত মুজাহিদদের সতর্ক করে বললেন-يَاسَارَيَةُ ! الْجَبَلَঅর্থাৎ  হে সারিয়া! পাহাড়! এই কথা শুনে সুদূরে যুদ্ধরত মুজাহিদরা পাহাড়ে আশ্রয় নিয়ে সেই যুদ্ধে বিজয় লাভ করে {কানযুল উম্মাল ফি সুনানিল আক্বওয়াল ওয়াল আফআল, হাদীস নং-৩৫৭৮৮, ৩৫৭৮৯}

তেমনি বুযুর্গানে দ্বীন থেকে আল্লাহ তায়ালা নিজেই আশ্চর্যজনক ঘটনা শিক্ষা দেওয়ার জন্য মাঝে মাঝে প্রকাশ করেন। যেমন নবী পাগল কোন বুযুর্গ মদীনায় গিয়ে নবীর রওজায় হাত বাড়িয়ে মুসাফাহা করেছেন। ঘুমের মাঝে নবীজী সাঃ এর দেয়া রুটি খেতে খেতে ঘুম থেকে জেগে হাতে অর্ধেক রুটি পেয়েছেন কোন কোন নবীর আশেকীন। এই সকল ঘটনা স্বাভাবিক রীতি বিরুদ্ধ। যা আল্লাহ তায়ালা নিজ কুদরাতে প্রকাশ করেছেন। এতে সংশ্লিষ্ট বুযুর্গের কোন হাত নেই। এসব বিষয়কে শিরক বলাটা দ্বীন সম্পর্কে আর শিরকের সংজ্ঞা সম্পর্কে অজ্ঞতার পরিচায়ক।

 

নবীদের মুজিজা, আর বুযুর্গদের কারামাত আল্লাহ তায়ালার কুদরত। তিনি ইচ্ছে করলেই অসম্ভবকে সম্ভব করে দেন। যেটা থেকে যা হওয়া সম্ভব নয়, তা থেকে তা করে দেখানোর ক্ষমতা আল্লাহর আছে, এটা আমাদের ঈমান।

গায়রে মুকাল্লিদরা কি আল্লাহ তায়ালা অসম্ভবকে সম্ভব করার ক্ষমতা রাখেন এই বিশ্বাস আল্লাহর প্রতি রাখেনা? ওরা কি আল্লাহ তায়ালাকে ওদের মতই দুর্বল আর কমজোর মনে করে?  না হলে বুযুর্গানে দ্বীন থেকে প্রকাশিত আশ্চর্য ঘটনা সম্বলিত কারামাতকে অস্বিকার করে কেন?

 

আশ্চর্য ঘটনা বর্ণনা করে মানুষের মাঝে ঈমান উদ্দীপ্ত করার প্রতি রাসূল সাঃ নিজেই উদ্ভুদ্ধ করেছেন।

 

عنعبداللهبنعمرو  : أنالنبيصلىاللهعليهوسلمقالبلغواعنيولوآيةوحدثواعنبنيإسرائيلولاحرج(صحيح البخارى، كتاب الانبياء، بابماذكرعنبنيإسرائيل، رقم الحديث-3274)

হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন যে, “আমার পক্ষ থেকে একটি বাণী হলেও পৌঁছে দাও। আর বনী ইসরাঈলের বিষয় বর্ণনা কর, কোন সমস্যা নাই”। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৩২৭৪, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৬২৫৬, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৬৬৪, সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-৫৮৪৮}

 

বনী ইসরাঈল হল হযরত মুসা আঃ ও হযরত ঈসা আঃ এর উম্মত বা জাতি। যদি হযরত মুসা ও ঈসা আঃ এর জাতির ঘটনা বর্ণনা করাতে কোন সমস্যা না থাকে, তাহলে শ্রেষ্ঠ, সর্বোত্তম উম্মত, উম্মতে মুহাম্মদীর বুযুর্গানে দ্বীনের ঈমানদীপ্ত ঘটনা বর্ণনা করা শিরক বা দোষণীয় হয় কি করে?

তাহলে কি গায়রে মুকাল্লিদদের মতে উম্মতে মুহাম্মদীর চেয়ে বনী ইসরাঈলরা বেশি মর্যাদার অধিকারী? বা বেশি শ্রেষ্ঠ? বেশি বুযুর্গ?

 

আসলে গায়রে মুকাল্লিদ গোষ্ঠিটি “আহলে হাদীস” নামটি রানী ভিক্টোরিয়ার কাছ থেকে রেজিষ্টার করিয়েছে কেবল মুসলমানদের মাঝে ধর্মীয় বিভক্তি আর কোন্দল সৃষ্টি করার জন্যই। আমলের দিকে ছুটা মানুষের মনে সন্দেহ সৃষ্টি করে আমল থেকে বিরত রাখার হীন চক্রান্তে লিপ্ত এই গ্রুপটি। নতুবা যেই ফাযায়েলে আমাল যেই এলাকায় ঢুকছে সেই এলাকার দাড়িহীন মানুষ দাড়ি রাখছে, বেনামাযী নামাযী হচ্ছে, সুদখোর সুদ ছাড়ছে, শরীয়ত অমান্যকারী শরীয়তের পাবন্দ হবার চেষ্টা করছে, সেই ঈমান জিন্দাকারী কিতাবের পিছেনে লেগে একে কলুষিত করার ষড়যন্ত্র করার মানে কি? বেনামাযীকে নামাযী বানানোর কোন ফিকির ওদের নাই, নামাযীর মনে ওয়াসওয়াসা প্রবিষ্ট করানোই ওদের কাজ।ওরা আমলকারীদের মনে ওয়াসওয়াসা সৃষ্টি করে দিচ্ছে সহীহ হওয়া না হওয়ার।

এই ওয়াসওয়া থেকেই আল্লাহ তায়ালা আশ্রয় চাইতে সূরা নাসে শিক্ষা দিয়েছেন যে,

الَّذِييُوَسْوِسُفِيصُدُورِالنَّاسِ (5) مِنَالْجِنَّةِوَالنَّاسِ (6)

অর্থাৎ যারা মানুষের মনে ওয়াসওয়াসা তথা সন্দেহ সৃষ্টি করে দেয় মানুষ ও জিনজাতির মধ্য থেকে তাদের থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। {সূরা নাস-৫-৬}

ওরা আমলের মাঝে মানুষকে বিভ্রান্ত করে। কুরআনের মাঝে ওয়াসওয়াসা সৃষ্টি করে, হাদীসের মাঝে ওয়াসওয়াসা সৃষ্টি করে। নামাযের মাঝে ওয়াসওয়াসা সৃষ্টি করে। ওরাই কুরআনে বর্ণিত সেই ওয়াসওয়াসা সৃষ্টিকারী দল। যাদের থেকে আশ্রয় চাওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন আল্লাহ তায়ালা।

তাই ওদের প্রপাগান্ডায় বিভ্রান্ত হবেন না। আল্লাহ তায়ালা আমাদের আহলে হাদীসের এই নব্য ফিতনা থেকে জাতিকে হিফাযত করুন।

 

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল- ahlehaqmedia2014@gmail.com

lutforfarazi@yahoo.com

0Shares

আরও জানুন

বিতর নামাযের পর নফল পড়লে কোন সওয়াব হবে না?

প্রশ্ন আস-সালামু আলাইকুম, মুহতারাম, একজন শায়েখ ভক্ত বলতেছেন, বিতরের পর নফল নামাজ আদায় করা যাবে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *