প্রশ্ন
আস্সালামু আলাইকুম,
আমার একটা খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিলো একটা মেয়ের সাথে। আমাদের মাঝে খুব গভীর বন্ধুত্ব। বলতে গেলে অন্তর আত্মার মিল।আমরা প্রায় ১০ বছর একে অপরকে সমর্থন দিয়ে এসেছি। সম্পর্কের শুরুতে আমাদের খুব ঘনিষ্ট বন্ধুত্ব থাকলেও কিছুদিন পর শয়তানের ওয়াসওয়াসায় সমকামীতায় লিপ্ত হয়ে যাই।
তখন সমকামীতা সম্পর্কে আমাদের কারও কোন ধারণাও ছিলো না।
সম্পর্কের শুরুতে দ্বীন সম্পর্কে কোন জ্ঞান ছিলো না মানে সেকুলার পরিবারের সদস্যা। দ্বীন নিয়ে কোন গুরুত্ব ছিলো না।
যাইহোক, আল্লাহ সোবহানা তা’আলার পক্ষ থেকে শ্রেষ্ঠ নিয়ামতস্বরুপ হেদায়াত আসলে আমরা সমকামীতার পরিনতি সম্পর্কে ভয় পাই আর এসব ছেড়ে দেয়ার জন্য তাওবা করি আল্লাহর কাছে। আল্লাহর রহমতে ছেড়েও দিয়েছি আলহামদুলিল্লাহ।
তারপর আমাদের মাঝে কোন যৌন উন্মাদনা ছাড়াই সম্পর্ক চলতে থাকে। কিন্তু ইদানিং সমকামী বৈশিষ্ট্য নিয়ে বিচার দিবসে আল্লাহর সামনে কেমনে দাঁড়াবো সেই ভয়ে বিয়ে করে নেই।
আর আমার ফ্রেন্ডের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। মানে এখন যদি স্বামী থাকা স্বত্তেও ওর সাথে কথা বলে মনোরঞ্জন (এমনিই কথাবার্তা, আমাদের মাঝে যৌন আবেগী কথাবার্তা দ্বীনে ফেরার পর থেকেই হয় না) করি তাহলে যদি আল্লাহর দেয়া বিশেষ নিয়ামতের অকৃতজ্ঞা প্রকাশ পায় তাই ফোন করে খোঁজ খবর নেয়াও সংকোচ লাগে।
কিন্তু ভিতরে ভিতরে খুব বেশি কষ্ট হয়, খুব ইচ্ছে একটা বার একটু ফোন করে কথা বলি আর জিজ্ঞেস করি কেমন চলছে তার দিনকাল। আর ভিতরের অস্তিরতায় টিকতে না পেরে ফোন দেয়া হয়ে গেছে কয়েকবার। এদিকে আমার স্বামী বিষয়টা জানতে পেরে ও আমার ওপর ছেড়ে দিছে আর যোগাযোগের ব্যাপারে অপারগতা প্রকাশ করছে।
১
এখন আমার কি করা উচিত?? যোগাযোগ করে মাঝেমধ্যে খোঁজখবর নিলে কি আমার গুনাহ হবে? যদি আমার রব আল্লাহ অসন্তোষ হয় তাহলে আল্লাহর কসম আমার খুব বেশি কষ্ট হলেও আমি ওর সাথে যোগাযোগ করবো না ইনশাআল্লাহ।
২
পৃথিবীর বুকে আমি ওকে খুব ভালোবাসি কিন্তু সর্বোচ্চ ভালোবাসার হকদার আল্লাহ ও তার রাসূল। আর তাই আল্লাহ নারাজ এমন সম্পর্কে জড়িয়ে থাকতে পারিনি। কেননা, আল্লাহ নারাজ হলে আমাদের ধ্বংস ও জাহান্নাম অনিবার্য। এখন কথা হলো আমার স্বামী থাকা স্বত্তেও আমি কি পরকালে তার সাথে জান্নাতী হওয়ার জন্য দোয়া করতে পারি?
আমি একটা হাদিস পড়েছি, রাসূল সা. বলেছেন দুনিয়াতে যে যাকে ভালোবাসবে তার সাথেই হাশর হবে।
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
সমকামিতা খুবই মারাত্মক পর্যায়ের ঘৃণ্য গোনাহের কাজ।
যেহেতু উক্ত মেয়ের প্রতি আপনি এখনো টান অনুভব করেন। তার সাথে আখেরাতেও থাকতে চান। এর মানে তার প্রতি এখনো যৌন কামনা ভিতরগতভাবে রয়ে গেছে।
এ কারণে কোনভাবেই উক্ত মহিলার সাথে আপনার কথাবার্তা বলা, যোগাযোগ রক্ষা করা জায়েজ হবে না।
যেহেতু উভয়েই সমকামিতার মত গোনাহ করেছেন। তাই এমন সমকামীর পাপে লিপ্ত ব্যক্তির সাথে হাশর হবার কল্পনা করাটাও বিকৃতি মনোবৃত্তির পরিচায়ক।
তাই এহেন দুআ করাও আপনার জন্য বৈধ হবে না।
যেহেতু বিবাহ করেছেন। সুতরাং সংসার জীবনটা সুন্দরভাবে কাটান। স্বামীকে নিয়েই খুশি থাকুন। তাকেই আপনার পূর্ণ ভালোবাসা দিন।
বেশি বেশি ইস্তিগফার ও আল্লাহর কাছে কৃত গোনাহের জন্য সাচ্চা দিলে তওবা করুন।
আল্লাহ তাআলা আপনার দুনিয়া ও আখেরাত সুখী ও সমৃদ্ধশালী করুন।
عَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” إِِذَا اسْتَحَلَّتْ أُمَّتِي خَمْسًا فَعَلَيْهِمُ الدَّمَارُ، إِِذَا ظَهَرَ التَّلَاعُنُ، وَشَرِبُوا الْخُمُورَ، وَلَبِسُوا الْحَرِيرَ، وَاتَّخِذُوا الْقِيَانَ، وَاكْتَفَى الرِّجَالُ بِالرِّجَالِ، وَالنِّسَاءُ بِالنِّسَاءِ
হযরত আনাস বিন মালেক রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যখন আমার উম্মত ৫টি বস্তুকে হালাল মনে করতে থাকবে, তখন তাদের উপর ধ্বংস নেমে আসবে। একে অন্যের উপর লা’নত করা ব্যাপক হবে, মদ পান করতে থাকবে, রেশম পরিধান করতে থাকবে, গায়িকা রাখতে শুরু করবে। পুরুষ পুরুষের সাথে এবং নারীরা নারীদের সাথে থাকাকেই যথেষ্ট মনে করতে থাকবে। [শুয়াবুল ঈমান লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৫০৮৬]
عَنْ وَاثِلَةَ بْنِ الْأَسْقَعِ رَفَعَهُ قَالَ: ” سِحَاقُ النِّسَاءِ زِنًا بَيْنَهُنَّ “
হযরত ওয়াছিলা বিন আসক্বাহ মারফূ সূত্রে বর্ণনা করেন যে, মহিলাদের পারস্পরিক সমকামিতা তাদের মধ্যকার যিনা। [শুয়াবুল ঈমান লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৫০৮২, মুসনাদে আবু ইয়ালা মুসিলী, হাদীস নং-৭৪৯১]
عَنْ أَبِي مُوسَى قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” إِذَا أَتَى الرَّجُلُ الرَّجُلَ فَهُمَا زَانِيَانِ، وَإِذَا أَتَتِ الْمَرْأَةُ الْمَرْأَةَ فَهُمَا زَانِيَانِ “
হযরত আবূ মূসা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যখন কোন পুরুষ পুরুষের কাছে এবং কোন নারী আরেক নারীর কাছে (যৌন কামনা পূর্ণ করতে) আসে, তখন এরা উভয়ে যিনাকারী হয়। [শুয়াবুল ঈমান লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৫০৭৫]
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন:
مَلْعُونٌ مَلْعُونٌ مَلْعُونٌ مَنْ عَمِلَ عَمَلَ قَوْمِ لُوطٍ،
ঐ ব্যক্তি অভিশপ্ত, অভিশপ্ত, অভিশপ্ত যে কওমে লূতের আমল তথা সমকামিতা করে। [শুয়াবুল ঈমান লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৫০৮৯]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «وَالَّذِي بَعَثَنِي بِالْحَقِّ، لَا تَنْقَضِي هَذِهِ الدُّنْيَا حَتَّى يَقَعَ بِهُمُ الْخَسْفُ وَالْمَسْخُ وَالْقَذْفُ» قَالُوا: وَمَتَى ذَلِكَ يَا نَبِيَّ اللَّهِ بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي؟ قَالَ: «إِذَا رَأَيْتَ النِّسَاءَ قَدْ رَكِبْنَ السُّرُوجَ، وَكَثُرَتِ الْقَيْنَاتُ، وَشُهِدَ شَهَادَاتُ الزُّورِ، وَشَرِبَ الْمُسْلِمُونَ فِي آنِيَةِ أَهْلِ الشِّرْكِ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ، وَاسْتَغْنَى الرِّجَالُ بِالرِّجَالِ، وَالنِّسَاءُ بِالنِّسَاءِ فَاسْتَدْفِرُوا وَاسْتَعِدُّوا»
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন:ঐ সত্তার কসম! যিনি আমাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন। এই দুনিয়া ততক্ষণ পর্যন্ত ধ্বংস হবে না, যতক্ষণ না লোকদের মাঝে ধ্বস, চেহারা বিকৃতি এবং পাথর বৃষ্টি পাওয়া যাবে। লোকেরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের পিতামাতা আপনার জন্য কুরবান! এসব কখন ঘটবে? নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যখন তোমরা মহিলাদের দেখবে যে, তারা (ঘোড়ার) জিন ধরে সাওয়ারীতে আরোহন করছে (মহিলারা ড্রাইভিং করছে), গায়িকার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, মিথ্যা স্বাক্ষী দেয়া শুরু হয়েছে, মুসলমানরা মুশরিকদের পাত্র তথা স্বর্ণ রূপার পাত্রে পান করছে, পুরুষের মাধ্যমে (নারী থেকে) এবং নারী আরেক নারীর মাধ্যমে (পুরুষ থেকে যৌনতা বিষয়ে) অমুখাপেক্ষী হয়ে যাচ্ছে। তখন তোমরা প্রস্তুত হয়ে যাও। [মুস্তাদরাক আলাস সহীহাইন, হাদীস নং-৮৩৪৯]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: ” لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَتَسَافَدَ النَّاسُ فِي الطُّرُقِ كَمَا يَتَسَافَدُ الدَّوَابُّ، يَسْتَغْنِي الرِّجَالُ بِالرِّجَالِ، وَالنِّسَاءُ بِالنِّسَاءِ، أَتَدْرُونَ مَا التَّسَاحُقُ؟ قَالُوا: لَا، قَالَ: تَرْكَبُ الْمَرْأَةُ الْمَرْأَةَ ثُمَّ تَسْحَقُهَا “
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ বলেন, কিয়ামত ততক্ষণ পর্যন্ত কায়েম হবে না, যতক্ষণ না মানুষ পশুর মত রাস্তায় যৌনকাজে লিপ্ত হবে। পুরুষ পুরুষের মাধ্যমে (নারী থেকে) এবং নারী নারীদের মাধ্যমে (পুরুষ থেকে যৌনকর্ম বিষয়ে) অমুখাপেক্ষী হয়ে যাবে। তোমরা কি জানো “তাছাহুক” কী? তারা বললেন, না। জবাবে আবূ হুরায়রা রাঃ বলেন,এক নারী আরেক নারীর উপরে উঠবে এবং তার সাথে ‘ছাহহাক’ তথা কামনা পূর্ণ করবে। [আলফিতান লিনাঈম বিন হাম্মাদ, বর্ণনা নং-১৭৯৪]
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
ইমেইল– [email protected]