প্রচ্ছদ / ইলম/জ্ঞান/শব্দার্থ / কুরআনের মূল আরবী ছাড়া শুধু গদ্যানুবাদ বা কাব্যানুবাদ প্রকাশ কী শরীয়তসম্মত?

কুরআনের মূল আরবী ছাড়া শুধু গদ্যানুবাদ বা কাব্যানুবাদ প্রকাশ কী শরীয়তসম্মত?

প্রশ্ন

বাংলাদেশের একজন ইসলামিক কবি কুরআনের কারীমের কাব্যানুবাদ করেছেন। এছাড়া অনেক প্রকাশনী শুধুমাত্র কুরআনের অনুবাদ প্রকাশ করা শুরু করেছে। কেউ বাংলায়, কেউ ইংলিশে।

হুজুরের কাছে আমার জানার বিষয় হল, এভাবে কুরআনের মূল আরবী ইবারত রেখে শুধুমাত্র এভাবে অনুবাদ প্রকাশ করার ইসলামী শরীয়ত কি অনুমোদন করে? দয়া করে জানালে ভালো হতো।

নাম ঠিকানা প্রকাশে অনিচ্ছুক।

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

কুরআনের অনুবাদ বিষয়ে কয়েকটি বিষয় পরিস্কার জেনে রাখা দরকার:

অনুবাদ কখনোই মূল কুরআন নয়।

কুরআনের অনুবাদ পড়ার দ্বারা কুরআন তিলাওয়াতের হাদীসে বর্ণিত প্রতি হরফে দশ নেকীসহ অন্যান্য সওয়াব পাওয়া যাবে না।

নামাযে অনুবাদ পড়া জায়েজ নয়।

শুধু অনুবাদ নির্ভরতার কারণে অনেকগুলো খারাবী আবশ্যক হয়। যেমন:

মূল কুরআন অপরিবর্তনীয়। কিন্তু অনুবাদ অনুবাদকের জ্ঞান ও প্রজ্ঞা অনুপাতে পরিবর্তিত হয়ে থাকে।

অনুবাদ অনেক ক্ষেত্রেই কুরআনের মূল স্পিরিট ও অর্থ প্রকাশ নাও করতে পারে।

অজ্ঞ কিংবা বিধর্মী পাঠক এটাকেই মূল কুরআন মনে করে বসতে পারে।

অনুবাদকের ভিন্নতার কারণে অনুবাদের ভাব প্রকাশে তারতম্য স্বাভাবিক। ফলে বিকৃত তাওরাত, জবুর, ইঞ্জিলের মত কুরআনও বিকৃত বলার মত দুঃসাহস দেখাতে পারে ইসলাম বিদ্বেষীরা।

পূর্ববর্তী আসমানী গ্রন্থগুলো নাজিলকৃত মূল ভাষা বাদ দিয়ে শুধুমাত্র অনুবাদ নির্ভর হতে হতেই চরম বিকৃতির শিখরে পৌঁছেছে।

অন্যান্য বাংলা বইয়ের মতই কুরআনের অনুবাদও তখন যেখানে সেখানে রাখা হবে। ক্রয়বিক্রয় করা হবে। যা কুরআনের অসম্মান।

শুধু অনুবাদ প্রকাশ করলে, সেই অনুবাদ দেখে আরো কেউ তার থেকে নিজের মত করে অনুবাদ শুরু করে দিতে পারে। যা চরম বিকৃতি ঘটাবে মূল কুরআনের অর্থকে।

ইত্যাদি নানাভিদ কারণে মূল আরবী কুরআনের ইবারত বাদে শুধু অনুবাদ প্রকাশ করা জায়েজ নয়।

যদি সাথে আরবী মূল ইবারত থাকে, তাহলে সাথে অনুবাদ প্রকাশ করাতে সমস্যা নেই। [ফাতাওয়া কাসিমিয়া-৪/৭১-৭২, খাইরুল ফাতাওয়া-১/২১৪, ফাতাওয়া দারুল উলুম করাচি-১/৩৪৮]

وهو إنما نزل باللسان العربى كما هو مصرح به فى الآيات المتعددة، وإنما كان تبلغه والدعوة إلى الإسلام والإنذار به كما أنزل الله تعالى، ولم يترجمه النبى صلى الله عليه وسلم، ولا أذن بترجمته، ولم يفعل ذلك الصحابة، ولا خلفاء المسلمين، وملوكهم ولو كتب النبى صلى الله عليه وسلم كتبه إلى قيصر وكسرى ومقوقس بلغاتهم لصح التعليل الذى علل به (حاشية المغنى لابن قدامة-1\289)

ذكر الشيخ الإمام شمس الأئمة السرخسى فى شرح الجامع الصغير: وإن كتب القرآن وتفسير كل حرف وترجمته تحته، روى عن الشيخ الفقيه أبى جعفر: أنه لا بأس به فى ديارنا (الفتاوى التاتارخانية، كتاب الصلاة، الفصل الثانى فى الفرائض-2\52، رقم-1218)

فإن كتب القرآن والتفسير كل حرف وترجمته جاز (رد المحتار، كتاب الصلاة، باب صفة الصلاة-2\178، فتح القدير، كتاب الصلاة، باب صفة الصلاة، زكريا-1\291، كوئته-1\248، دار الفكر-1\286)

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

ইমেইল[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *