প্রচ্ছদ / ইতিহাস ও ঐতিহ্য / নবীজীকে রেখে আবু বকর ও উমর রাঃ উহুদ যুদ্ধ থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন?

নবীজীকে রেখে আবু বকর ও উমর রাঃ উহুদ যুদ্ধ থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন?

প্রশ্ন

প্রশ্নকারীর নাম:
—————-
মোহাম্মদ সিয়াম

ঠিকানা:
—————-
মাদারটেক নতুনপাড়া ১৬৭/৩,বাসাবো,ঢাকা।

জেলা/শহর:
—————-
ঢাকা

দেশ:
—————-
বাংলাদেশ

প্রশ্নের বিষয়:
—————-
ইসলামিক ইতিহাস

বিস্তারিত:
—————-
আসসালামু আলাইকুম হযরত।
এক ছোট ভাই প্রশ্ন করলেন, ‘আবু বকর রাদিআল্লাহু আনহু এবং হযরত উমর রাদিআল্লাহু আনহু উহুদ যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করলেন কেনো?’
এই প্রশ্নটা আমাকে অবাক করলো।এই বিষয়ে আমার জ্ঞান এ নেই।সাহাবারা যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করেছে বিশ্বাস হচ্ছে না।প্রকৃত সত্যতা জানতে চাই,হযরত।
হযরত উমর রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু কি আসলেই পলায়ন করেছিলেন এবং করলে কেনো করেছিলেন?
হযরত,জানালে খুব উপকৃত হতাম। (রিফারেন্স সহ বললে ভালো হত।)

 

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

এক নাম্বার বিষয়তো হল, উহুদ যুদ্ধের সময় কতিপয় সাহাবাগণের নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশ বুঝতে ভুল হবার কারণে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এর উপর আল্লাহ তাআলা আয়াত নাজিল করে দিয়ে সেসব সাহাবাগণকে আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দিয়েছেন। সুতরাং সেই প্রসঙ্গ টেনে উক্ত সাহাবাগণকে দোষারোপ করা কুরআনের বিরোধীতা ছাড়া কিছু নয়। যেখানে আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দিয়েছেন মর্মে ঘোষণা দিলেন, সেখানে সেই প্রসঙ্গ টেনে সাহাবাগণকে দোষারোপ করা কিভাবে জায়েজ হতে পারে?

إِنَّ الَّذِينَ تَوَلَّوْا مِنكُمْ يَوْمَ الْتَقَى الْجَمْعَانِ إِنَّمَا اسْتَزَلَّهُمُ الشَّيْطَانُ بِبَعْضِ مَا كَسَبُوا ۖ وَلَقَدْ عَفَا اللَّهُ عَنْهُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ حَلِيمٌ [٣:١٥٥]

উভয় বাহিনীর পারস্পরিক সংঘর্ষের দিন তোমাদের মধ্য হতে যারা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করেছিল, প্রকৃতপক্ষে শয়তান তাদেরকে তাদের কিছু কৃতকর্মের কারণে পদস্খলনে লিপ্ত করেছিল। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম সহিষ্ণু। [সূরা আলে ইমরান-১৫৫]

এমন সুষ্পষ্ট ক্ষমার আয়াত নাজিলের পরও উক্ত সাহাবাগণকে নিয়ে বিরোপ মন্তব্যকারীরা বক্র হৃদয়ের অধিকারী ছাড়া আর কী হতে পারে?

 

দ্বিতীয়ত হযরত আবু বকর রাঃ এবং উমর রাঃ উহুদ প্রান্তর থেকে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রেখে পলায়ন করেননি। যারা বলে পলায়ন করেছেন এরা পরিস্কার মিথ্যাবাদী।

বিশৃংখল পরিস্থিতিতে উহুদ প্রান্তরে ১৪জন সাহাবা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সর্বক্ষণ ছিলেন। এর মাঝে ৭জন মুহাজির এবং ৭জন আনসারী সাহাবী ছিলেন।

মুহাজির সেই সাতজনের মাঝে আবু বকর রাঃ এবং উমর রাঃ ও ছিলেন। সেই সাতজন সাহাবী হলেন, হযরত আবু বকর রাঃ, হযরত উমর রাঃ, হযরত আলী রাঃ, হযরত তালহা বি উবায়দুল্লাহ রাঃ, হযরত আব্দুর রহমান বিন আউফ রাঃ, হযরত যুবায়ের রাঃ, হযরত সাদ বিন আবী ওয়াক্কাস রাঃ। [তাফসীরে খাজেন-১/৪৩৭, সীরাতে মুস্তাফা-২/১৯৯, তাকবাতে ইবনে সা’দ-১/২৭৯]

ولم يبق مع النبى صلى الله عليه وسلم الا ثلاثه أو اربعة عشر رجلا من المهاجرين ومن الأنصار سبعة، فمن المهاجرين ابو بكر وعمر وعلى وطلحة بن عبيد الله وعبد الرحمن بن عوف والزبير وسعد بن ابى وقاص رضى الله  عنهم (تفسير خازن-1\437)

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে আবু বকর ও উমর রাঃ এর থাকার পরিস্কার প্রমাণ বুখারীর এক হাদীসে বিদ্যমান:

عَنِ الْبَرَاءِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ لَقِيْنَا الْمُشْرِكِيْنَ يَوْمَئِذٍ وَأَجْلَسَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم جَيْشًا مِنْ الرُّمَاةِ وَأَمَّرَ عَلَيْهِمْ عَبْدَ اللهِ وَقَالَ لَا تَبْرَحُوْا إِنْ رَأَيْتُمُوْنَا ظَهَرْنَا عَلَيْهِمْ فَلَا تَبْرَحُوْا وَإِنْ رَأَيْتُمُوْهُمْ ظَهَرُوْا عَلَيْنَا فَلَا تُعِيْنُوْنَا فَلَمَّا لَقِيْنَا هَرَبُوْا حَتَّى رَأَيْتُ النِّسَاءَ يَشْتَدِدْنَ فِي الْجَبَلِ رَفَعْنَ عَنْ سُوْقِهِنَّ قَدْ بَدَتْ خَلَاخِلُهُنَّ فَأَخَذُوْا يَقُوْلُوْنَ الْغَنِيْمَةَ الْغَنِيْمَةَ فَقَالَ عَبْدُ اللهِ عَهِدَ إِلَيَّ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَنْ لَا تَبْرَحُوْا فَأَبَوْا فَلَمَّا أَبَوْا صُرِفَ وُجُوْهُهُمْ فَأُصِيْبَ سَبْعُوْنَ قَتِيْلًا وَأَشْرَفَ أَبُوْ سُفْيَانَ فَقَالَ أَفِي الْقَوْمِ مُحَمَّدٌ فَقَالَ لَا تُجِيْبُوْهُ فَقَالَ أَفِي الْقَوْمِ ابْنُ أَبِيْ قُحَافَةَ قَالَ لَا تُجِيْبُوْهُ فَقَالَ أَفِي الْقَوْمِ ابْنُ الْخَطَّابِ فَقَالَ إِنَّ هَؤُلَاءِ قُتِلُوْا فَلَوْ كَانُوْا أَحْيَاءً لَأَجَابُوْا فَلَمْ يَمْلِكْ عُمَرُ نَفْسَهُ فَقَالَ كَذَبْتَ يَا عَدُوَّ اللهِ أَبْقَى اللهُ عَلَيْكَ مَا يُخْزِيْكَ قَالَ أَبُوْ سُفْيَانَ اعْلُ هُبَلُ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَجِيْبُوْهُ قَالُوْا مَا نَقُوْلُ قَالَ قُوْلُوا اللهُ أَعْلَى وَأَجَلُّ قَالَ أَبُوْ سُفْيَانَ لَنَا الْعُزَّى وَلَا عُزَّى لَكُمْ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَجِيْبُوْهُ قَالُوْا مَا نَقُوْلُ قَالَ قُوْلُوا اللهُ مَوْلَانَا وَلَا مَوْلَى لَكُمْ قَالَ أَبُوْ سُفْيَانَ يَوْمٌ بِيَوْمِ بَدْرٍ وَالْحَرْبُ سِجَالٌ وَتَجِدُوْنَ مُثْلَةً لَمْ آمُرْ بِهَا وَلَمْ تَسُؤْنِي

বারাআ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, উহূদ যুদ্ধের দিন আমরা মুখোমুখী অবতীর্ণ হলে নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আবদুল্লাহ [ইবনু যুবায়র (রাঃ)]-কে তীরন্দাজ বাহিনীর প্রধান নিযুক্ত করে তাদেরকে (নির্দিষ্ট এক স্থানে) মোতায়েন করলেন এবং বললেন, যদি তোমরা আমাদেরকে দেখ যে, আমরা তাদের উপর বিজয় লাভ করেছি, তাহলেও তোমরা এখান থেকে নড়বে না। আর যদি তোমরা তাদেরকে দেখ যে, তারা আমাদের উপর বিজয় লাভ করেছে, তবুও তোমরা এই স্থান ত্যাগ করে আমাদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসবে না। এরপর আমরা তাদের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করলে তারা পালাতে আরম্ভ করল। এমনকি আমরা দেখতে পেলাম যে, মহিলারা দ্রুত দৌড়ে পর্বতে আশ্রয় নিচ্ছে। তারা পায়ের গোছা থেকে কাপড় টেনে তুলেছে, ফলে পায়ের অলঙ্কারগুলো পর্যন্ত বেরিয়ে পড়ছে। এ সময় তারা (তীরন্দাজরা) বলতে লাগলেন, গানীমাত-গানীমাত! তখন ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, তোমরা যাতে এ স্থান ত্যাগ না কর এ ব্যাপার নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। তারা অগ্রাহ্য করল। যখন তারা অগ্রাহ্য করল, তখন তাদের মুখ ফিরিয়ে দেয়া হলো এবং তাদের সত্তর জন শাহীদ হলেন। আবূ সুফ্ইয়ান একটি উঁচু স্থানে উঠে বলল, কাওমের মধ্যে মুহাম্মাদ জীবিত আছে কি? নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা তার কোন উত্তর দিও না। সে আবার বলল, কাওমের মধ্যে ইবনু আবূ কুহাফা জীবিত আছে কি? নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা তার কোন জবাব দিও না। সে আবার বলল, কাওমের মধ্যে ইবনুল খাত্তাব বেঁচে আছে কি? তারপর সে বলল, এরা সকলেই নিহত হয়েছে। বেঁচে থাকলে নিশ্চয়ই জবাব দিত। এ সময় ‘উমার (রাঃ) নিজেকে সামলাতে না পেরে বললেন, হে আল্লাহর দুশমন, তুমি মিথ্যা কথা বলছ। যে জিনিসে তোমাকে অপমানিত করবে আল্লাহ তা বাকী রেখেছেন। আবূ সুফ্ইয়ান বলল, হুবালের জয়। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহাবীগণকে বললেন, তোমরা তার উত্তর দাও। তারা বললেন, আমরা কী বলব? তিনি বললেন, তোমরা বল, আল্লাহ সমুন্নত ও মহান। আবূ সুফ্ইয়ান বলল, আমাদের উয্যা আছে, তোমাদের উয্যা নেই। নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা তার জবাব দাও। তারা বললেন, আমরা কী জবাব দেব? তিনি বললেন, বল- আল্লাহ আমাদের অভিভাবক, তোমাদের তো কোন অভিভাবক নেই। শেষে আবূ সুফ্ইয়ান বলল, আজ বাদর যুদ্ধের বিনিময়ের দিন। যুদ্ধ কূপ থেকে পানি উঠানোর পাত্রের মতো (অর্থাৎ একবার এ হাতে আরেকবার ও হাতে) তোমরা নাক-কান কাটা কিছু লাশ দেখতে পাবে। আমি এরূপ করতে নির্দেশ দেইনি। অবশ্য তাতে আমি নাখোশও নই। [বুখারী, হাদীস নং-৪০৪৩]

 

যদি উমর রাঃ এবং আবু বকর রাঃ পালিয়ে যেতেন, তাহলে কাফেরদের বিজয়ের পরও কিভাবে নবীজীর সাথে আবু বকর ও উমর রইলেন? এর মানে এ মহান দুই সাহাবীর উপর পলায়ন করার কথা বলা জঘন্য অপবাদ ছাড়া কিছু নয়।

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.combghD

আরও জানুন

মহিলাদের এনআইডি কার্ড করার জন্য পর পুরুষের সামনে ছবি তুলতে মুখ খোলার হুকুম কী?

প্রশ্ন আসসালামুআলাইকুম ওয়ারহমাতুল্লাহ৷ আহলে হক্ব মিডিয়া কর্তৃৃৃপক্ষ কে আসন্ন রমজানের শুভাচ্ছে রইল ৷ আমার প্রশ্নটা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *