প্রচ্ছদ / প্রশ্নোত্তর / মসজিদ পাকা করা মাইকে আজান দেয়া বিদআত?

মসজিদ পাকা করা মাইকে আজান দেয়া বিদআত?

প্রশ্ন

From: শামীম নাটোর
বিষয়ঃ মসজিদ পাকাঁ করা,মাইকে আজান দেয়া কি বেদাত?

প্রশ্নঃ
ﺍَﻟﺴَّﻼَﻡُ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻭَﺭَﺣْﻤَﺔُﺍَﻟﻠﻪِ ﻭَﺑَﺮَﻛَﺎﺗُﻪ
সম্মানিত মুফতি সাহেব হুজুর
কিছু দিন হলে কিছু,কিছু আলেম বলে থাকে যা নবীজি (স) এর যুগে ছিলো না তাই বেদাত!!

তাই মসজিদ পাকাঁ টাইলস করা বা মাইকে আজান দেয়া বেদাত হবে!!
আল্লাহ্ পাক দিনকে পরিপুর্ণ করেছেন।

আর দিন থাকবে কেয়ামত পর্যন্ত তাহলে আধুনিক যুগে কি চলার জন্য কোনো আবিস্কার গ্রহন করা যাবে না?

তাহলে মুজতাহিদ কেনো?
ফক্বীহ, ফিকাহ্ এর কোনো প্রয়োজন নেই?
আশা করি উত্তরটা দিবেন।
আল্লাহ্ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুক আমিন।

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

হ্যাঁ। একথা ঠিক যে, যা কিছু নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে ছিল না। পরবর্তীতে এসেছে সবই বিদআত।

তবে বিদআত দুই ধরণের। এক হল, শাব্দিক অর্থ বিদআত। আরেক হল, পারিভাষিক অর্থে বিদআত।

শাব্দিক বিদআত মানে হল, যা কিছু নতুন তাই বিদআত। যেমন, ঘরি, মোবাইল, বিমান, বাস, গাড়ি, বিল্ডিং, টাইলস এমন কি আমাদের জন্মটাই বিদআত।

কারণ, আমরা সবাই নতুন। তবে এটা হাকীকী বা পারিভাষিক অর্থের বিদআত নয়।

পারিভাষিক বিদআত হল, যে আমল বা কাজ নবীজী ও তার সাহাবা এবং তাবেয়ী যুগে ছিল না। সেই কাজ বা আমলকে সওয়াব মনে করে ইসলামের অংশ মনে করে করার নাম হল বিদআত।

যেমন, মৃতের নামে কুলখানী, চল্লিশা, মৃত্যুবার্ষিকী, ঈদে মীলাদুন্নবী উদযাপন ইত্যাদি।

এছাড়া আর কোন কিছুই পারিভাষিক বিদআতের অন্তর্ভূক্ত নয়।

আর হাদীসে যে বিদআতের নিষেধাজ্ঞা আসছে, সেটি হল এই পারিভাষিক বিদআত।

শাব্দিক অর্থের বিদআতে কোন সমস্যা নেই।

যদি শাব্দিক অর্থের বিদআতও নিষিদ্ধ হয়, তাহলে ঐ  লোককে বলুন, তার জন্মটাওতো বিদআত। কারণ, সেতো নবীজীর যুগে ছিল না। যেখানে নিজেই বিদআতি, সেখানে আর অন্যকে বিদআতী বলার তার কতটুকু আছে?

عَنْ عَائِشَةَ رضى الله عنها قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « مَنْ أَحْدَثَ فِى أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ فِيهِ فَهُوَ رَدٌّ

হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-আমাদের দ্বীনের মাঝে যে ব্যক্তি নতুন বিষয় আবিস্কার করে যা তাতে নেই তাহলে তা পরিত্যাজ্য। {সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-৪৬০৮, সহীহ বুখারী, হাদিস নং-২৫৫০, সহীহ মুসলিম-৪৫৮৯}

এই হাদিসে লক্ষ্য করুন কি কি শর্তে নব আবিস্কৃত বস্তুকে পরিত্যাজ্য বলেছেন নবীজী সাঃ।

১-

সম্পূর্ণ নতুন বিষয়। যার কোন সামান্যতম প্রমাণ নবীযুগে বা সাহাবা যুগে নাই এমন বিষয় হতে হবে।

২-

দ্বীনী বিষয় হতে হবে। সুতরাং দ্বীনী বিষয় ছাড়া যত নতুন বিষয়ই আবিস্কারই হোকনা কেন তা বিদআত নয়। যেমন বৈজ্ঞানিক আবিস্কার। নতুন নতুন আসবাব ইত্যাদী। এসব বিদআত নয়। কারণ এসব দ্বীনী বিষয় নয়। বরং বৈষয়িক বিষয়।

৩-

দ্বীনের মাঝে নতুন আবিস্কার হতে হবে। দ্বীনের জন্য হলে সমস্যা নাই। কারণ দ্বীনের মাঝে নতুন আবিস্কার মানে হল এটা সওয়াবের কাজ। সুন্নাত, ওয়াজিব ইত্যাদি। আর দ্বীনের জন্য হলে সেটা মূলত সওয়াবের কাজ নয়, বরং সওয়াবের কাজের সহায়ক। যেমন মাদরাসা শিক্ষা একাডেমিক পদ্ধতি নববী যুগে ছিলনা। পরবর্তীতে আবিস্কার করা হয়েছে। এই একাডেমিক পদ্ধতিটি দ্বীনের মাঝে নতুন আবিস্কার নয়, বরং দ্বীনী কাজের জন্য সহায়ক হিসেবে আবিস্কার হয়েছে। অর্থাৎ দ্বীন শিখার সহায়ক। আর দ্বীন শিখাটা সওয়াবের কাজ। কিন্তু সিষ্টেমটা মূলত সওয়াবের কাজ নয় বরং সহায়ক।

সুতরাং এসব বিদআত নয়।

উপরোক্ত মূলনীতির আলোকে একথা পরিস্কার হয়ে গেছে যে, মসজিদ পাকা করা, টাইলস করা, মাইকে আজান দেয়া কোনটাই পারিভাষিক বিদআতের অন্তর্ভূক্ত নয়। তাই এসব করাতে কোন সমস্যা নেই।

اى أنشأ واخترع وأتى بأمر حديث من قبل نفسه…… (ما ليس منه) أى رأيا ليس له فى الكتاب أو السنة عاضد ظاهر أو خفى، ملفوظ أو مستنبط (فهو رد) أى مردود على فاعله لبطلانه، (فيض القدير، رقم الديث-8333)

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল– ahlehaqmedia201[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *