প্রচ্ছদ / আজান ও ইকামত / আসর ও মাগরিব সময়ের আগে আজান ও নামায পড়ার হুকুম কী?

আসর ও মাগরিব সময়ের আগে আজান ও নামায পড়ার হুকুম কী?

প্রশ্ন

From: MD Ahmadullah
বিষয়ঃ আসরের ও মাগরিবের আজান এর সঠিক সময় কোনটি?

প্রশ্নঃ
السلام عليكم ورحمة الله

প্রিয় ভাই, আমি ইন্ডিয়ার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বশিরহাটের বাসিন্দা। সম্প্রতি আমাদের এলাকায় তৈরী হওয়া একটি আহলে হাদিস মসজিদ থেকে আসরের এবং মাগরিবের আজান (ইফতারের) দিচ্ছে স্বাভাবিক সময়ের থেকে যথাক্রমে ৪০ মিনিট ও ৪ মিনিট আগে ।

এতে আমরা বেশ বিভ্রান্ত। আসলে এই দুটি ওয়াক্তে এভাবে আগ্রিম আজান দেওয়া শরীয়ত সম্মত কী? অনুগ্রহ করে দলিল সহ জানালে আমরা ভীষন উপক্রত হবো।

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

আসরের সময়ের সূচনা সময় নিয়ে মতভেদ আছে। তবে মাগরিবের শুরুর সময় নিয়ে মতভেদ নেই।

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ رَافِعٍ مَوْلَى أُمِّ سَلَمَةَ، زَوْجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. أَنَّهُ سَأَلَ أَبَا هُرَيْرَةَ عَنْ وَقْتِ الصَّلَاةِ.؟ فَقَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ: أَنَا أُخْبِرُكَ «صَلِّ الظُّهْرَ إِذَا كَانَ ظِلُّكَ مِثْلَكَ وَالْعَصْرَ إِذَا كَانَ ظِلُّكَ مِثْلَيْكَ، وَالْمَغْرِبَ إِذَا غَرَبَتِ الشَّمْسُ،

আবদুল্লাহ্ ইবন রাফি (রহঃ) আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর নিকট নামাযের সময় সম্পর্কে প্রশ্ন করিলেন। উত্তরে আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলিলেনঃ আমি তোমাকে নামাযের সময়ের সংবাদ দিব, যোহর পড় যখন তোমার ছায়া তোমার সমপরিমাণ হয়। আর আসর পড় যখন তোমার ছায়া তোমার দ্বিগুণ হয়। মাগরিব পড় যখন সূর্য অস্ত যায়। [মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-২০৪১, মুয়াত্তা মালেক, হাদীস নং-১২, ইফাবা-৯]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «هَذَا جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ جَاءَكُمْ يُعَلِّمُكُمْ دِينَكُمْ، فَصَلَّى الصُّبْحَ حِينَ طَلَعَ الْفَجْرُ، وَصَلَّى الظُّهْرَ حِينَ زَاغَتِ الشَّمْسُ، ثُمَّ صَلَّى الْعَصْرَ حِينَ رَأَى الظِّلَّ مِثْلَهُ، ثُمَّ صَلَّى الْمَغْرِبَ حِينَ غَرَبَتِ الشَّمْسُ وَحَلَّ فِطْرُ الصَّائِمِ، ثُمَّ صَلَّى الْعِشَاءَ حِينَ ذَهَبَ شَفَقُ اللَّيْلِ , ثُمَّ جَاءَهُ الْغَدَ فَصَلَّى بِهِ الصُّبْحَ حِينَ أَسْفَرَ قَلِيلًا، ثُمَّ صَلَّى بِهِ الظُّهْرَ حِينَ كَانَ الظِّلُّ مِثْلَهُ، ثُمَّ صَلَّى الْعَصْرَ حِينَ كَانَ الظِّلُّ مِثْلَيْهِ، ثُمَّ صَلَّى الْمَغْرِبَ بِوَقْتٍ وَاحِدٍ حِينَ غَرَبَتِ الشَّمْسُ وَحَلَّ فِطْرُ الصَّائِمِ، ثُمَّ صَلَّى الْعِشَاءَ حِينَ ذَهَبَ سَاعَةٌ مِنَ اللَّيْلِ»، ثُمَّ قَالَ: «الصَّلَاةُ مَا بَيْنَ صَلَاتِكَ أَمْسِ وَصَلَاتِكَ الْيَوْمَ»

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তিনি জিবরাঈল। তোমাদের দ্বীন শিক্ষা দেয়ার জন্য এসেছেন। অতঃপর তিনি ফজরের নামায পড়লেন সুবহে সাদিক উদিত হবার সাথে সাথে। যোহর পড়লেন সূর্য ঢলে পড়লে। অতঃপর আসর পড়লেন যখন তাঁর ছায়া সমপরিমাণ দেখলেন। তারপর মাগরিব পড়লেন সূর্য ডুবে গেলে এবং রোযাদারের জন্য ইফতার বৈধ হলে। আর ইশা পড়লে যখন শফক তথা আভা ডুবে গেল।

অতঃপর তিনি পরদিন এলেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ফজর পড়ালেন যখন সকাল কিছুটা ফর্সা হলো। আর যোহর পড়ালেন যখন তার ছায়া সমপরিমাণ হলো। আর আসর পড়ালেন যখন তার ছায়া দ্বিগুণ হলো। অতঃপর মাগরিব পড়ালেন একই সময় যখন সূর্য ডুবে গেলো এবং রোজাদারের জন্য ইফতার করা বৈধ হল। তারপর ইশা পড়ালেন যখন রাতের কিছু অংশ অতিবাহিত হলো। অতঃপর বললেন, ওয়াক্ত হলো গতকাল এবং আজকের মধ্যবর্তী সময়ে। [সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-৫০2]

হাদীসের বর্ণনা অনুপাতে হযরত জিবরাঈল আঃ দ্বিতীয় দিন যোহরের নামায পড়লেন তখন যখন তার ছায়া সমপরিমাণ হল। আর ছায়া সমপরিমাণ হয়ে যাবার পরের সময় মানেই দ্বিগুণের সূচনা।

আর দ্বিতীয় দিন আছরের নামায পড়লেন যখন তার ছায়া দ্বিগুণ হলো। এর অর্থ হলো আসর পড়লেন ছায়া তিনগুণ হবার সময় পড়েছেন।

এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, কোন জিনিসের ছায়া দ্বিগুণ হলে যোহর শেষ এবং আসর নামাযের সময় শুরু হয়।

উপরোক্ত দলীলের ভিত্তিতে ইমাম আবূ হানীফা রহঃ এর প্রসিদ্ধ মত হলো, যে কোন জিনিসের ছায়া মূল ছায়া থেকে তার দ্বিগুণ হলে যোহরের ওয়াক্ত শেষ এবং আসরের ওয়াক্ত শুরু হয়। [রদ্দুল মুহতার-১/৩৫৯]

আর ইমাম আবূ ইউসুফ, মুহাম্মদ ও ইমাম আবূ হানীফা রহঃ এর দ্বিতীয় মতানুসারে যে কোন জিনিসের ছায়া তার মূল ছাড়া ব্যতীত তার সমপরিমাণ হলেই যোহরের ওয়াক্ত শেষ এবং আসরের ওয়াক্ত শুরু হয়ে যায়। [রদ্দুল মুহতার-১/৩৫৯]

এটা জহুরে উম্মতেরও মত।

হাদীসের আলোকে একথা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত যে, কোন জিনিসের ছায়া তার সমপরিমাণ হওয়া পর্যন্ত যোহরের ওয়াক্ত থাকে। আর ছায়া দ্বিগুণ হয়ে যাবার পর নিশ্চিতভাবেই আসরের ওয়াক্ত।

কিন্তু বস্তুর ছায়া সমপরিমাণ হওয়া থেকে দ্বিগুণ হওয়ার আগ পর্যন্তের সময়টুকু কি যোহরের সময় না আসরের? এ বিষয়টি সম্পর্কে হাদীসের ভাষ্য বিপরীতমুখী।

তাই সতর্কতা হল, বস্তুর ছায়া সমপরিমাণ হবার আগেই যোহর পড়ে নেয়া। আর আসর বস্তুর ছায়া দ্বিগুণ হবার আগে না পড়া।

সুতরাং যারা বস্তুর ছায়া দ্বিগুণ হবার আগেই আসরের নামায পড়ে থাকেন, তাদের আমলটি সতর্কতামূলক নয়। বরং যারা দ্বিগুণ হবার পর পড়ে থাকেন, তাদের আমলটাই সবচে’ যুৎসই।

যেহেতু মাসআলাটি নিয়ে মতভেদ আছে। তাই এ নিয়ে কোন পক্ষেরই বাড়াবাড়ি করা উচিত নয়।

মাগরিব সময়

মাগরিব নামাযের সময় শুরু হয় সূর্য অস্ত যাবার পর থেকে। সুতরাং সূর্য অস্ত যাবার দুই এক মিনিট আগে যারা আজান দেয়া বা নামায পড়ে ও ইফতার করে, তাদের আজান ও নামায, রোযা কোনটাই শুদ্ধ হবে না।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ إِنَّ لِلصَّلاَةِ أَوَّلاً وَآخِرًا وَإِنَّ أَوَّلَ وَقْتِ صَلاَةِ الظُّهْرِ حِينَ تَزُولُ الشَّمْسُ وَآخِرَ وَقْتِهَا حِينَ يَدْخُلُ وَقْتُ الْعَصْرِ وَإِنَّ أَوَّلَ وَقْتِ صَلاَةِ الْعَصْرِ حِينَ يَدْخُلُ وَقْتُهَا وَإِنَّ آخِرَ وَقْتِهَا حِينَ تَصْفَرُّ الشَّمْسُ وَإِنَّ أَوَّلَ وَقْتِ الْمَغْرِبِ حِينَ تَغْرُبُ الشَّمْسُ وَإِنَّ آخِرَ وَقْتِهَا حِينَ يَغِيبُ الأُفُقُ

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন সালাতের জন্য রয়েছে শুরু এবং শেষ। সূর্য হেলে পড়ার সাথে শুরু হয় যুহরের ওয়াক্তের আর এর শেষ হয় আসরের ওয়াক্ত যখন আসে। আসরের ওয়াক্ত আসার সাথে শুরু হয আসরের ওয়াক্তের আর তাঁর শেষ হয় সূর্য কিরণ হলদে হয়ে গেলে। সূর্য ডোবরা সাথে শুরু হয় মাগরিবের ওয়াক্তের আর শেষ হয় দিগন্তের আলোর রেশ যখন মিলিয়ে যায়। [সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১৫১]

إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَّوْقُوتًا [٤:١٠٣]

নিশ্চয় নামায মুসলমানদের উপর ফরয নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। [সূরা নিসা-১০৩]

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল– ahlehaqmedia201[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *