প্রচ্ছদ / জায়েজ নাজায়েজ / আসল দেওবন্দীরা মীলাদ কিয়াম করে আর বাংলাদেশী দেওবন্দীরা বিদআত বলে?

আসল দেওবন্দীরা মীলাদ কিয়াম করে আর বাংলাদেশী দেওবন্দীরা বিদআত বলে?

প্রশ্ন

বাংলাদেশের একটি প্রসিদ্ধ আলিয়া মাদরাসা নেছারিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা কফীলুদ্দীন সালেহী সাহেব তার এক বক্তব্যে দাবী করেন যে,

ফুরফুরা, ছারছিনা, ফুলতলী ও দেওবন্দীদের গোড়া এক। সেটি হল, সাইয়্যেদ আহমাদ শহীদ রহঃ।

আমরা ফুরফুরা, ছারছিনা ও ফুলতলীরা মিলাদ কিয়াম করি আর দেওবন্দীরা করে না।

এর কারণ কি?

এর কারণ হল, এরা বাংলাদেশী দেওবন্দী। আসল দেওবন্দী নয়।

কা’জী মু’তাসিম বিল্লাহ রহঃ নিজে তার বই ‘ঐক্যের ডাক’ এ বলেছেন, মিলাদ কিয়ামকে দেওবন্দীরা বিদআত বলেনি। আপনারা দেওবন্দী দাবী করে এটাকে বিদআত বলছেন কেন?

এখন আমার প্রশ্ন হল, আসলেই উলামায়ে দেওবন্দ প্রচলিত মিলাদ কিয়ামের পক্ষে ছিলেন? সাইয়্যেদ আহমাদ শহীদ রহঃ এর অনুসারীগণ মিলাদ কিয়াম করতেন?

শুধুমাত্র বাংলাদেশের দেওবন্দীরা মিলাদ কিয়ামের বিরোধী? দয়া করে বিস্তারিত জানালে কৃতার্থ হতাম।

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

প্রসঙ্গ আল্লামা কাজী মু’তাসিম বিল্লাহ রহঃ

মাওলানা কফীলুদ্দীন সালেহী সাহেব এ বিষয়ে সুষ্পষ্টভাবে মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন। সেই সাথে জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ মাদরাসার শাইখুল হাদীস ও মুহতামিম আল্লামা কাজী মু’তাসিম বিল্লাহ রহঃ এর নামে অপবাদ আরোপ করেছেন।

কাজী মু’তাসিম বিল্লাহ রহঃ তার লিখিত ছোট্ট পুস্তিকা “ঐক্যের ডাক’ এর কোথাও এ দাবী করেননি যে, মিলাদ কিয়ামকে উলামায়ে দেওবন্দ বিদআত বলেননি। বরং তিনি তার উক্ত বইয়ের মাঝে পরিস্কার বলেছেন যে, আমি মু’তাসিম বিল্লাহ’ নিজেও মিলাদ কিয়াম করি না।

সেই সাথে তিনি এও বলেছেন যে,

‘আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে এ কথাও বলছি যে, যারা রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আলিমুল গাইব মনে করে হাজির নাজির বিশ্বাসে এবং মীলাদ মাহফিলে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজির হয়েছেন বা হয়ে থাকেন ইত্যাদি সুষ্পষ্ট শরীয়ত বিরোধী আকীদা ও নাজায়েজ কর্মকাণ্ড মিশ্রিত মীলাদ মাহফিল করে তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকা প্রত্যেক হক্কানী আলিমের দ্বীনি দায়িত্ব। [ঐক্যের ডাক, পৃষ্ঠা-১১]

তবে তিনি আহবান করেছেন যে, উপরোক্ত শিরকী ও কুফরী আকীদা  ছাড়া এমনিতেই যারা মিলাদ ও কিয়াম করে থাকে, তাদের সাথে কঠোরতা না করার। বিবাদে লিপ্ত না হওয়ার।

ব্যাস, এই ছিল কাজী মু’তাসিম বিল্লাহ রহঃ এর বক্তব্য ও উদ্দেশ্য। কিন্তু এটাকে পূজি করে তিনি দেওবন্দী আলেমগণ মীলাদ কিয়ামকে বলতেন না বলে প্রচার করা পরিস্কার অপবাদ এবং সত্যের অপালাপ ছাড়া আর কী’ হতে পারে?

তাছাড়া কা’জী মু’তাসিম বিল্লাহ রহঃ জীবনের পড়ন্ত বেলায় ভিডিও এবং লিখিত আকারে অসিয়ত করে গেছেন যে, “আমার মৃত্যুর পর আমার কোনো কথা ও লেখা দ্বারা আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআত তথা দেওবন্দী আকাবিরের চিন্তা-চেতনার পরিপন্থী ব্যাখ্যা করার কোনো সুযোগ নেই। সকল বাতিল ফিরকা বিশেষ করে মওদূদী জামায়াত, শিরক, বিদআত ও মিলাদ-কিয়াম সম্পর্কে দেওবন্দী আকাবিরের যেই মতামত, আমারও সেই মত। রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনা ও আদর্শগতভাবে আমি আমার উস্তায ও মুরশিদ শায়খুল ইসলাম হযরত মাদানী রহ. -এর অনুসারী। এতে কারও কোনো আপত্তি আমার কাছে গ্রহণীয় নয়। অতএব কেউ যদি আমার দিকে ভিন্ন কোনো মতাদর্শ সম্পর্কিত করেন তাহলে তা প্রত্যাখ্যাত হবে”।

এরপরও কা’জী সাহেব রহঃ এর দিকে অপবাদ আরোপ করাকে আমি সালেহী সাহেবের সুষ্পষ্ট ধৃষ্ঠতা বলেই মনে করি।

ভারতীয় দেওবন্দী উলামাগণ

এবার আমরা দেখবো যে, প্রচলিত মীলাদ কিয়ামকে বাংলাদেশী দেওবন্দী উলামাগণই বিদআত বলেছেন নাকি মূল দেওবন্দীরাও বিদআতই বলতেন?

১- খলীল আহমাদ সাহরানপুরী রহঃ প্রচলিত মীলাদকে বিদআত বলেছেন। [বারাহিনে কাতিয়া-৩২৭]

২- রশীদ আহমাদ গঙ্গুহী রহঃ প্রচলিত মীলাদ কিয়ামকে বিদআত বলেছেন। [ফাতাওয়া রশীদিয়া-১১৫]

৩- আশরাফ আলী থানবী রহঃ প্রচলিত মিলাদ কিয়ামকে বিদআত বলেছেন। [ইমদাদুল ফাতাওয়া-৫/২৪৯-২৫০]

৪-দারুল উলুম দেওবন্দের ফাতওয়া বিভাগের ফাতওয়া হল, প্রচলিত মীলাদ কিয়াম বিদআত ও নাজায়েজ। [ফাতাওয়া দারুল উলুম দেওবন্দ-১৮/৪৬৪

৫- মুফতী মাহমূদ হাসান গঙ্গুহী রহঃ বলেন, প্রচলিত মীলাদ, কিয়াম বিদআত ও নাজায়েজ। [ফাতাওয়া মাহমূদিয়া-৫/৩৮৩-৪১২]

পাকিস্তানী দেওবন্দী উলামাগণ

এবার আমরা দেখবো পাকিস্তানে অবস্থান করা দেওবন্দী উলামাগণ প্রচলিত মীলাদ বিষয়ে কী মন্তব্য করেছেন?

১- মুফতী আব্দুল হক রহঃ বলেন, প্রচলিত মীলাদ কিয়াম শরীয়ত বিরোধী এবং বিদআত। [ফাতাওয়া হাক্কানিয়া-২/৭২-৯৫]

২-মুফতী ইউসুফ লুধিয়ানবী রহঃ প্রচলিত মীলাদ কিয়ামকে শরীয়তে নিষিদ্ধ বলে ফাতাওয়া প্রদান করেছেন। [আপ কি মাসায়েল আওর উনকা হল্ল-১/৪৪৪-৪৪৫]

৩-মুফতী শফী রহঃ বলেন, প্রচলিত মীলাদ কিয়াম নাজায়েজ। [ইমদাদুল মুফতীন-১৬২]

৪-মুফতী রশীদ আহমাদ লুধিয়ানবী রহঃ বলেন, প্রচলিত মীলাদ কিয়াম মুনকার এবং বিদআত। [আহসানুল ফাতাওয়া-১/৩৬৪]

৫-মুফতী খায়ের মুহাম্মদ ঝালান্দরী রহঃ বলেন, খেলাফে সুন্নাত উপরোক্ত প্রচলিত মীলাদ কিয়াম গোনাহের কারণ হয়ে যায়। [খাইরুল ফাতাওয়া-১/৫৮৭]

এখানে শুধু আমি উপমা হিসেবে দুই দেশ থেকে মাত্র ১০জন দেওবন্দী আলেমের ফাতওয়া উল্লেখ করেছি। কিন্তু সত্য কথা হল, আমরা চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি যে, কোন দেওবন্দী আলেমই প্রচলিত মীলাদ কিয়ামকে সাপোর্ট করেননি। বরং বিদআত বলেই ফাতওয়া দিয়েছেন।

সুতরাং মাওলানা সালেহী সাহেব বাংলাদেশের দেওবন্দী উলামাগণকে যেভাবে অজ্ঞতা হেতু ঠাট্টা করেছেন তা রীতিমত লজ্জাজনক।

হযরতের উচিত পড়াশোনার পরিধি বৃদ্ধি করা। অজ্ঞতাসূচক বক্তব্য দিয়ে নিজেকে হাসির পাত্র না বানানো।

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক ও প্রধান মুফতী-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com

আরও জানুন

কুয়েতে প্যাকেটজাত গোস্ত খাওয়ার হুকুম কী?

প্রশ্ন আসসালামু আলাইকুম। আমি বর্তমানে কুয়েতে থাকি। আমার প্রশ্ন হলো এখানকার মার্কেটে যে সমস্ত প্যাকেটিং …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আহলে হক্ব বাংলা মিডিয়া সার্ভিস