প্রচ্ছদ / পর্দা/দুগ্ধপান/হুরমত / নারীদের জন্য ব্যক্তিগত গাড়িতে গায়রে মাহরাম ড্রাইভারের সাথে সফর করা জায়েজ?

নারীদের জন্য ব্যক্তিগত গাড়িতে গায়রে মাহরাম ড্রাইভারের সাথে সফর করা জায়েজ?

প্রশ্ন

From: তাজিন আলম
বিষয়ঃ মহিলাদের পর্দা, মাহরাম  ছাড়া একাকী গাড়ীতে  চলার বিধান

প্রশ্নঃ
জনাব,
আমি হানাফি মাজহাব অনুসারী, নিম্নোক্ত হালতে আছি, আমার সমস্যা সমাধানে শরিয়তের কি নির্দেশনা, মেহেরবানি করে তা জানালে কৃতজ্ঞ হব।

নিবেদক, তাজিন আলম,কিশোরগঞ্জ।

বিয়ের আগে জানতাম আমার স্ত্রী নিজে থেকেই পর্দা করে কিন্তু মহিলা কলেজে ভর্তি,ক্লাস করেনা,শুধু কলেজে পরীক্ষা দেয়। কিন্তু বাস্তবতা হল সে পুরুষ শিক্ষকের কাছে প্রাইভেটে পড়ে। সেখানে সে নেকাব খুলে ফেলে।

সে বলে শিক্ষক তো আমাকে আগেও দেখেছে ! আমি তাকে তারগিব দিলে আলহামদুলিল্লাহ সে মুখ ঢাকতে রাজী হয়।

কিন্তু চোখ এবং আংশিক নাক ও কপাল দেখা যায়।

কলেজে গরমের জন্য সে কখনও কখনও পুরুষ শিক্ষকদের সামনেই মুখমণ্ডল খোলা রাখে। সাধারনত নিজেদের গাড়িতে করে সে একা কলেজে যায়, যুবক(৩০)ড্রাইভার ছাড়া অন্য কেউ গাড়িতে থাকেনা। ড্রাইভার ৩ চিল্লার সাথী, নেসাব কাজা করেনা, ৫ কাজে মজবুত,তাই আমার শ্বশুর ড্রাইভারের চরিত্রের ব্যাপারে খুব এতমিনান।

আমিও জওয়ান ড্রাইভারের প্রতি ভাল ধারনা রাখি কিন্তু তার নফসের উপর তো ভরসা রাখতে পারিনা। তাই বিয়ের আগেই মাসালা জানার সুরুতে ইঙ্গিতে খেদ প্রকাশ করি। কেননা বর্তমানে সমাজে পাবলিক বাসে সুযোগ পেলেই প্রতিনিয়ত খুন,ধর্ষণ,যৌন নিপীড়নের মত অপ্রীতিকর ঘটনা ব্যাপক হারে পত্রিকায় চোখে পড়ে। স্ত্রীকে এখনও তুলে আনা হয়নি।
প্রশ্ন(১) উল্লেখিত পরিস্থিতিতে  আমার অসম্মতিতে  স্ত্রীর জন্য HSC পরীক্ষা দেয়া জায়েজ হবে কি?
প্রশ্ন(২) এ ধরনের পরিস্থিতিতে মহিলাদের মাহরাম ছাড়া একাকী যুবক ড্রাইভারের সাথে বাক্তিগত মালিকাধীন গাড়ীতে চলার শরীয়তের বিধান জানতে চাই।

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

বিয়ের পর স্বামীকে সন্তুষ্ট রাখা স্ত্রীর দায়িত্ব ও কর্তব্যের অন্তর্ভূক্ত।

তবে পর্দার সাথে পরীক্ষা দিতে ও পড়া চালিয়ে যেতে কোন সমস্যা নেই। এতে স্বামীর বাধা দেয়াও উচিত নয়।

কিন্তু প্রশ্নে উল্লেখিত সূরতে পুরুষ মাষ্টারের সামনে মুখ ইত্যাদি খুলে যাওয়া, কিংবা ক্লাসরুমে মুখ খুলে পুরুষ শিক্ষক এবং ছাত্রদের সামনে অবস্থান করা সম্পূর্ণরূপে হারাম।

সেই সাথে গায়রে মাহরাম ড্রাইভারের সাথে ব্যক্তিগত গাড়িতে হলেও সফর করা জায়েজ নয়।

সুতরাং উপরোক্ত বিষয়গুলো থেকে বিরত থাকা আপনার স্ত্রীর উপর অবশ্য কর্তব্য।

দলীলসমূহ

عَنْ عَبْدِ الْخَبِيرِ بْنِ ثَابِتِ بْنِ قَيْسِ بْنِ شَمَّاسٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، قَالَ: جَاءَتِ امْرَأَةٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُقَالُ لَهَا أُمُّ خَلَّادٍ وَهِيَ مُنْتَقِبَةٌ، تَسْأَلُ عَنِ ابْنِهَا، وَهُوَ مَقْتُولٌ، فَقَالَ لَهَا بَعْضُ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: جِئْتِ تَسْأَلِينَ عَنِ ابْنِكِ وَأَنْتِ مُنْتَقِبَةٌ؟ فَقَالَتْ: إِنْ أُرْزَأَ ابْنِي فَلَنْ أُرْزَأَ حَيَائِي،

হযরত আব্দুল খায়ের বিন সাবেত বিন কায়েস বিন শাম্মাস তার পিতা, তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, একদা এক মহিলা রাসূল সাঃ এর কাছে এলেন। যাকে উম্মে খাল্লাদ বলা হয়। তিনি এমতাবস্থায় এলেন যে, তার চেহারা পর্দাবৃত ছিল। সে এসে তার নিহত সন্তানের ব্যাপারে অভিযোগ জানায়। তখন কতিপয় সাহাবী তাকে বলেন, “তুমি তোমার ছেলের ব্যাপারে অভিযোগ দাখিল করতে এসেছে, তারপরও তুমি পর্দাবৃত হয়ে এলে?” তখন উম্মে খাল্লাদ বলেন, যদিও আমার ছেলের উপর বিপদ এসেছে, এর মানেতো আমার লজ্জা শরমেরও বিপদ আসেনি। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২৪৮৮}

আরেক বর্ণনায় এসেছে-

عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، قَالَتْ: ” لَمَّا نَزَلَتْ: {يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيبِهِنَّ} [الأحزاب: 59]، خَرَجَ نِسَاءُ الْأَنْصَارِ كَأَنَّ عَلَى رُءُوسِهِنَّ الْغِرْبَانَ مِنَ الأَكْسِيَةِ “

হযরত উম্মে সালামা রাঃ বলেন, যখন কুরআনে কারীমের এ আয়াত يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيبِهِنَّ

তথা “তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। [মাথার দিক থেকে]” -সূরা আহযাব-৫৯} নাজিল হয়, তখন আনসারী মহিলারা স্বীয় ঘর থেকে এমনভাবে বের হতো যেন তাদের মাথায় কাক বসে আছে। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪১০১}

ইমাম যাসসাস রহঃ বলেন,

فى هذه الآية دلالة على أن المرأة الشابة مأمورة بستر وجهها من الأجنبيين

এ আয়াত একথা বুঝাচ্ছে যে, যুবতী মেয়েরা ঘর থেকে বের হওয়ার সময় এমনভাবে বের হবে যেন তাদের চেহারা পরপুরুষের সামনে প্রকাশিত না হয়। {আহকামুল কুরআন ইমাম জাসসাসকৃত-৩/৩৭২}

عَنْ عَبْدِ اللهِ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: الْمَرْأَةُ عَوْرَةٌ، فَإِذَا خَرَجَتْ اسْتَشْرَفَهَا الشَّيْطَانُ.

হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঈদ রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, নারী জাতি হল আপাদমস্তক সতর। যখনি সে বের হয়, তখনি শয়তান তাকে চমৎকৃত করে তোলে। {সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১১৭৩, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-২০৬৫, সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-১৬৮৫, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৫৯৮}

 عن ابن عمر قال : خطبنا عمر بالجابية الخ ألا لا يخلون رجل بامرأة إلا كان ثالثهما الشيطان

হযরত ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-যখনই কোন পুরুষ পর নারীর সাথে নির্জনে দেখা করে তখনই শয়তান সেখানে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে উপস্থিত হয়। {সুনানে তিরমিযী, হাদিস নং-২১৬৫, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদিস নং-৫৫৮৬}

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক ও প্রধান মুফতী-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল[email protected]

0Shares

আরও জানুন

বিয়ের আগে ‘ব্রেক আপ বা তালাক’ বললে কি বিয়ের পর তালাক হয়?

প্রশ্ন   নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, কাতার প্রবাসী একটি মেয়ের সাথে দীর্ঘদিন হারাম রিলেশন ছিল এখন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *