প্রচ্ছদ / নির্বাচিত / রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পাশে দাঁড়াই! “মনুষত্ব এখনো হারিয়ে যায়নি” প্রমাণ হোক দৃঢ়তার সাথে!

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পাশে দাঁড়াই! “মনুষত্ব এখনো হারিয়ে যায়নি” প্রমাণ হোক দৃঢ়তার সাথে!

ইতিহাস এটা জানায় যে, ১৪৩০ থেকে ১৭৮৪ সাল পর্যন্ত ২২ হাজার বর্গমাইল আয়তনের রোহাঙ্গা স্বাধীন রাজ্য ছিল। মিয়ানমারের রাজা বোদাওফায়া এ রাজ্য দখল করার পর চরম বৌদ্ধ আধিপত্য শুরু হয়।

এক সময়ে ব্রিটিশদের দখলে আসে এ ভূখণ্ড। তখন বড় ধরনের ভুল করে তারা এবং এটা ইচ্ছাকৃত কিনা, সে প্রশ্ন জ্বলন্ত। তারা মিয়ানমারের ১৩৯টি জাতিগোষ্ঠীর তালিকা প্রস্তুত করে। কিন্তু তার মধ্যে রোহিঙ্গাদের নাম অন্তর্ভুক্ত ছিল না। এ ধরনের বহু ভূল করে গেছে ব্রিটিশ শাসকরা।

১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি মিয়ানমার স্বাধীনতা অর্জন করে এবং বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু হয়। সে সময়ে পার্লামেন্টে রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিত্ব ছিল। এ জনগোষ্ঠীর কয়েকজন পদস্থ সরকারি দায়িত্বও পালন করেন। কিন্তু ১৯৬২ সালে জেনারেল নে উইন সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করলে মিয়ানমারের যাত্রাপথ ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হতে শুরু করে। রোহিঙ্গাদের জন্য শুরু হয় দুর্ভোগের নতুন অধ্যায়। সামরিক জান্তা তাদের বিদেশি হিসেবে চিহ্নিত করে। তাদের নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। ধর্মীয়ভাবেও অত্যাচার করা হতে থাকে। জোর করে কেড়ে নেওয়া হয়। বাধ্যতামূলক শ্রমে নিয়োজিত করা হতে থাকে। তাদের শিক্ষা-স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ নেই। বিয়ে করার অনুমতি নেই। সন্তান হলে নিবন্ধন নেই। জাতিগত পরিচয় প্রকাশ করতে দেওয়া হয় না। সংখ্যা যাতে না বাড়ে, সে জন্য আরোপিত হয় একের পর এক বিধিনিষেধ। [সূত্র- https://bn.wikipedia.org/…/%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%B9%E0%A…]

একটি স্বাধীন ভূখণ্ড পরাধীন হল। চলে গেল “প্রাণী হত্যা মহাপাপ” এর মেকি স্লোগানধারী “মগ” বৌদ্ধদের হাতে।
নাটের গুরু সেই পশ্চিমারাই এখন সমাধানদাতার আসনে। উপদেশের ঢালি নিয়ে বসেছে। ছেলে ভুলানো গল্প শুনিয়ে বুঝাতে চাইছে, তারা মানবতাবাদী। বার্মীজ গুণ্ডাদের জুলুম তারা মানছেন না। সমাধানে বিশ্বাসী।

এইসব লোক দেখানো বুলি ছাড়া আর কিছু নয়।

পরিস্কার প্রমাণঃ সমস্ত অমুসলিম রাষ্ট্র ইসলামের শত্রু। মুসলমানদের শত্রু। ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে এরা এক ও একতাবদ্ধ।
মেরুদণ্ড সোজা হোক। ইতিহাসের পাতা থেকে বাস্তবতার জমিনে মুসলিম বীর পুরুষেরা নেমে আসুক। শুধু সাময়িক ত্রাণ সাহায্য নয়, স্থায়ী সমাধানে মনযোগী হই।
আরাকান ভূখণ্ড মুসলিমদের। মুসলমানদের। মগ বৌদ্ধদের এ জমিন দখলে রাখার কোন অধিকার নেই। স্বীয় ভূখণ্ড থেকে আরাকানীদের তাড়িয়ে দেবার কোন অধিকার মগদের নেই।
আরাকান আমাদের। প্রতিটি মুসলমানের। যে কোন মূল্যে তা আরাকানীদের নিরাপদ বাসস্থানে পরিণত করতে হবে। সারা বিশ্বের মুসলিম শাসকবৃন্দ ভোগ বিলাসিতা আর পশ্চিমা তোষণনীতি পরিহার করে আত্ম প্রত্যয়ী না হলে ধীরে ধীরে এ জুলুম ছড়িয়ে পড়বে মুসলিম বিশ্বের প্রতিটি ভূখণ্ডে।
তাই এখনি সময় হুংকার দেবার। শুধু সাময়িক ত্রাণ নয়। তুরস্ক মালয়েশিয়াসহ মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর প্রয়োজন জানবাজ সৈন্যবাহিনী প্রেরণ। মগদের বিষদাঁত উপড়ে ফেলে জানিয়ে দেয়াঃ মুসলিম মাথা উঁচু করা জাতি। শির দেগা নেহি দেগা আমামা।

কিন্তু তবু!

আমাদের মুহাজির আরাকানী ভাই-বোনেরা। নিজের ভিটেমাটি ছাড়া উদ্বাস্তু এখন। খোলা আকাশের নিচে অসহায় কতগুলো মানবসন্তান।

সময় এখন মনুষত্ব প্রমাণের। জান্নাত ক্রয় করার।

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «أَيُّمَا مُسْلِمٍ كَسَا مُسْلِمًا ثَوْبًا عَلَى عُرْيٍ، كَسَاهُ اللَّهُ مِنْ خُضْرِ الْجَنَّةِ، وَأَيُّمَا مُسْلِمٍ أَطْعَمَ مُسْلِمًا عَلَى جُوعٍ، أَطْعَمَهُ اللَّهُ مِنْ ثِمَارِ الْجَنَّةِ، وَأَيُّمَا مُسْلِمٍ سَقَى مُسْلِمًا عَلَى ظَمَإٍ، سَقَاهُ اللَّهُ مِنَ الرَّحِيقِ الْمَخْتُومِ

হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাঃ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যে কোন মুসলমান কোন বস্ত্রহীন মুসলমানকে কাপড় দান দান করবে, কাল কিয়ামতে আল্লাহ পাক ঐ ব্যক্তিকে বেহেশতের সবুজ কাপড় পরিধান করাবেন। আর যে কোন মুসলমান অপর মুসলমানকে অন্ন দান করবে, তাকে আল্লাহ পাক বেহেশতের ফল ভক্ষণ করাবেন। আর যে কোন মুসলমান অপর কোন তৃষিত মুসলমানকে পানি পান করাবে, আল্লাহ পাক তাকে কাল কিয়ামতে সিলমোহর করা বোতরের স্বচ্ছ পানি পান করাবেন। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-১৬৮২}

مَا مِنْ مُسْلِمٍ كَسَا مُسْلِمًا ثَوْبًا إِلاَّ كَانَ فِي حِفْظٍ مِنَ اللهِ مَا دَامَ مِنْهُ عَلَيْهِ خِرْقَةٌ.

হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সাঃ কে বলতে শুনেছি, যে কোন মুসলমান অপর কোন মুসলমানকে একটি বস্ত্র পরিধান করাবে সে আল্লাহ পাকের তত্ত্বাবধানে থাকবে, যখন পর্যন্ত ঐ কাপড়ের একটি টুকরাও তার অঙ্গে থাকবে। {সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-২৪৮৪}

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” مَنْ تَصَدَّقَ بِعَدْلِ تَمْرَةٍ مِنْ كَسْبٍ طَيِّبٍ، وَلَا يَصْعَدُ إِلَى اللهِ إِلَّا طَّيِّبٌ ، فَإِنَّ اللهَ يَقْبَلُهَا بِيَمِينِهِ، ثُمَّ يُرَبِّيهَا لِصَاحِبِهَا، كَمَا يُرَبِّي أَحَدُكُمْ فَلُوَّهُ، حَتَّى تَكُونَ مِثْلَ الْجَبَلِ “

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুজুরে পাক সাঃ ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি তার হালাল উপার্জন হতে একটি খেজুর পরিমাণও কিছু দান করে আর আল্লাহ পাক তা গ্রহণ করেন না হালাল উপার্জন ছাড়া। আল্লাহ পাক তা নিজ ডান হাতে গ্রহণ করেন। তারপর তা দাতার জন্য রক্ষা করেন যেভাবে তোমাদের কেউ নিজ ঘোড়ার বাচ্চাকে প্রতিপালন করে। এভাবে প্রতিপালন করার ফরে তা পাহাড় পরিমাণ হয়ে যায়। {মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৮৩৮১,সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১৪১০}

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ الصَّدَقَةَ لَتُطْفِئُ غَضَبَ الرَّبِّ وَتَدْفَعُ مِيتَةَ السُّوءِ.

হযরত আনাস রাঃ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,হুজুরে পাক সাঃ ইরশাদ করেন, দান খয়রাত আল্লাহ পাকের ক্রোধ প্রশমিত করে এবং অপমৃত্যু বন্ধ করে। {সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-৬৬৪, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৩৩০৯}

নিরাপদ বাসস্থান প্রয়োজন। প্রয়োজন খাবার। পোশাক। প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণে টয়লেট। নিরাপদ খাবার পানি। আরো কত কি?

নিজেদের সামর্থ অনুপাতে এগিয়ে আসি। নিজেই কিংবা বিশ্বস্ত মানুষদের মাধ্যমে পৌঁছে দেই সাধ্যানুপাতে ত্রাণ সামগ্রী।

সর্বত্র প্রতিবাদের ঝড় তুলি। আমাদের রোহিঙ্গা ভাইদের স্বাধীকার ফিরিয়ে দেয়া হোক। স্বীয় ভূমিতে নিরাপত্তার সাথে জীবন যাপনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক। বার্মার জালিম শাসককে পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন করা হোক। আরোপ করা হোক কড়া অবরোধ।

কিছুদিনের মাঝে টেকনাফের পথে “আহলে হক মিডিয়া” এর পক্ষ থেকে আমরাও যাবো। সাধ্যানুপাতে আমাদের ভাইদের হাতে খানিক সহযোগিতা পৌঁছে দিতে। কিংবা কাছ থেকে দুআ করতে।

সবাই সবার স্থান থেকে আরাকানীদের অধিকারের জন্য আওয়াজ তুলি। তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসি। মনুষত্ব আর মানবিকতার চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করে বিশ্বকে জানিয়ে দেইঃ চরম স্বার্থপরতার যুগে এখনো দয়ার্দ্র মানুষেরা বেঁচে আছে।

ওয়ামা তাওফীকী ইল্লাবিল্লাহ।

আরও জানুন

জিহাদ বলতে শুধু সশস্ত্র যুদ্ধকেই বুঝায়?

প্রশ্ন আমাদের দেশের এক শ্রেণীর উলামা বলে থাকেন যে, জিহাদ বলতে শুধুমাত্র সশস্ত্র যুদ্ধকেই বলে। …

আহলে হক্ব বাংলা মিডিয়া সার্ভিস