প্রশ্ন
Shishirkona Bristi & Syed Ali
মহিলাদের খৎনা করার হুকুম কি? বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে খৎনা করার দ্বারা নারীর অনেক ধরণের সমস্যা সৃষ্টি হয়ে থাকে।
এটার ভহাবহতা’
১) অনেক মেয়ে শিশুর মৃত্যু
২) যৌনাঙ্গের ভয়াবহ জটিলতা
৩) শিশু জন্মের সময় ভয়াবহ সমস্যা
৮) যৌন মিলন আনন্দহীন । ব্যথাযুক্ত মিলন। শুধু স্বামীর প্রয়োজনে সাড়া দিতে বাধ্য হয়। ভগাঙ্কুর না থাকলে কোন মেয়েকে মেয়ে হিসেবে চিন্তাই করা যায়না।
৫) মানসিক সমস্যা।
উল্লেখিত বিষয় সামনে রেখে মেয়েদের খৎনা করা কি আবশ্যক? এ বিষয়ে ইসলামী শরীয়তের সঠিক দিক-নির্দেশনা কামনা করছি।
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحمن
আসলে মহিলাদের খৎনা করা কোন আবশ্যকীয় বিষয় নয়। ইসলামে এর কোন বিশেষ মর্যাদাও নেই। এটি সুন্নতও নয়। বরং সর্বোচ্চ এটিকে জায়েজ বলা হয়েছে। তাই এটা নিয়ে অযথা বাড়াবাড়ি করা কিছুতেই কাম্য নয়। পুরুষদের খৎনা করা সুন্নত। কিন্তু মহিলাদের খৎনা করা সুন্নত নয়। বরং জায়েজ। বিজ্ঞজনদের মতে তৎকালিন আরবে এটি প্রচলিত ছিল। আরবের পরিবেশ শুস্ক হওয়ার কারনে সেখানকার মহিলাদের জরায়ুর উপরিভাগ হতো খুবই রুক্ষ ও মোটা। সতি পর্দা ছিন্ন না হলে সন্তান না হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। তাই তৎকালিন আরবের লোকেরা সতি পর্দা ছিন্ন করার জন্য মহিলাদের খৎনা করার প্রথা চালু করে। রাসূল সাঃ যখন জানলেন যে, এটি করার দ্বারা মহিলাদের উপকার হয়, সেই সাথে পুরুষদের উপকার হয়, তাই তিনি এ বিষয়ে অতিরঞ্জন না করার আদেশ দিয়েছেন। যেমন হাদীসে এসেছে যে,
عَنْ أُمِّ عَطِيَّةَ الأَنْصَارِيَّةِ : أَنَّ امْرَأَةً كَانَتْ تَخْتِنُ بِالْمَدِينَةِ فَقَالَ لَهَا النَّبِىُّ -صلى الله عليه وسلم- :« لاَ تَنْهَكِى فَإِنَّ ذَلِكَ أَحْظَى لِلْمَرْأَةِ وَأَحَبُّ إِلَى الْبَعْلِ ».
قَالَ أَبُو دَاوُدَ : مُحَمَّدُ بْنُ حَسَّانَ مَجْهُولٌ وَهَذَا الْحَدِيثُ ضَعِيفٌ. (سنن ابى داود، كتاب الأدب، باب ما جاء في الختان، رقم الحديث-5271
হযরত উম্মে আতিয়্যাহ আনসারী রাঃ থেকে বর্ণিত। মদীনার এক মহিলা খৎনা করাতো। তখন তাকে রাসূল সাঃ বললেনঃ তুমি অতিরঞ্জন করো না। তবে এটি পুরুষের জন্য অধিক উপকারী আর মহিলাদের প্রিয় হয়ে থাকে।
ইমাম আবু দাউদ রহঃ বলেনঃ এ এ হাদীসের একজন রাবী মুহাম্মদ বিন হাসসান মাজহূল। আর এ হাদীসটি জঈফ।
{সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৫২৭১, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-১৭৩৩৮}
অন্য এক হাদীসে এসেছে যে,
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ عَنِ النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- قَالَ :« الْخِتَانُ سُنَّةٌ لِلرِّجَالِ مَكْرُمَةٌ لِلنِّسَاءِ
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ খৎনা পুরুষের জন্য সুন্নত আর মহিলাদের জন্য ইজ্জত। {সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-১৭৩৪৪, মুসনাদে আহমাদ-৫/৭৫,কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-৪৫৩০৫}
এ সকল হাদীস একথাই প্রমাণ করে যে, প্রয়োজনে মহিলাদের খৎনা করা উত্তম। তবে এটি সুন্নত বা জরুরী কিছু নয়। এ কারণেই ফুক্বাহায়ে কেরাম এবং হাদীস ব্যাখ্যাকারগণ মহিলাদের খৎনাকে সুন্নত বা জরুরী সাব্যস্ত করেননি। তাই মহিলাদের শারিরিক ক্ষতির সম্ভাবনা থাকলে যেমনটি প্রশ্নে উল্লেখিত করা হয়েছে, মহিলাদের খৎনা করতে বাধ্য করা জায়েজ হবে না।
وفي الفتح يجبر عليه أن تركه إلا إذا خاف الهلاك وإن تركته هي لا (طحطاوى على المراقى الفلاح- باب ما يوجب الغسل، مطبوعة مصر-78
مَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُم مِّنْ حَرَجٍ وَلَٰكِن يُرِيدُ لِيُطَهِّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ [٥:٦
আল্লাহ তোমাদেরকে অসুবিধায় ফেলতে চান না; কিন্তু তোমাদেরকে পবিত্র রাখতে চান এবং তোমাদের প্রতি স্বীয় নেয়ামত পূর্ণ করতে চান-যাতে তোমরা কৃতজ্ঞাতা প্রকাশ কর। {সূরা মায়িদা-৬}
বিস্তারিত জানতে পড়–ন
১-ফাতহুল বারী লিইবনে হাজার-১০/৩৮৪-৩৮৭।
২- আলবাহরুর রায়েক১/৫৮।
৩-ফাতহুল কাদীর-১/৬৩
৪- ইনায়া আলা ফাতহিল কাদীর-১/৬৩।
৫- আল মাদখাল লিইবনুল হাজ্জ-৩/২৯৬।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
Valo
দারুণ