প্রচ্ছদ / প্রশ্নোত্তর / বড় ভাই বিয়ে করেনি অজুহাতে প্রাপ্ত বয়স্ক সামর্থবান ছোট ভাইয়ের বিয়ে আটকে রাখা যাবে কি?

বড় ভাই বিয়ে করেনি অজুহাতে প্রাপ্ত বয়স্ক সামর্থবান ছোট ভাইয়ের বিয়ে আটকে রাখা যাবে কি?

প্রশ্ন

আমার বয়স ৩০। আমি দ্বীনের উপর চলার চেষ্টা করি। পারিবারিক সমস্যার কারণে আমার পড়াশানায় ব্যাঘাত ঘটে।

এখন আমার পড়াশোনা শেষ হয়েছে। নিজের ঈমানের হেফাজতের জন্য আমি বিয়ে করতে চেয়েছিলাম আজ থেকে ১ বছর আগে। কারণ আমার আয়ের পরিমাণও পর্যাপ্ত ছিল। কিন্তু আমার পড়াশোনা এবং বড় ভাই বিয়ে না করার অজুহাত দেখিয়ে তারা তা এড়িয়ে যায়। ঐ সময়ে আমার মানসিক অবস্থা ভাল না থাকায় আমি মসজিদের দুইজন বিজ্ঞ আলেমকে বাসায় নিয়ে এসে মিটিং করি।

সবাই আলোচনা করার পর এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যত দ্রুত সম্ভব আমার বিয়ের ব্যবস্থা করবে। কিন্তু পড়াশোনা শেষ করার অজুহাত দেখিয়ে [আমার-বাবা-মা] তা থেকে পিছিয়ে যায়। অবশেষে অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা শেষ করার পরও তারা এখনো এ ব্যাপারে তেমন আগ্রহী নয়, কারণ আমার immediate বড় ভাই বিয়ের বাকি আছে এবং তার বিয়ে করার কোন আগ্রহ দেখছি না।

এ অবস্থায় মহোদয়ের কাছে সুপরামর্শ চাচ্ছি।

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

বিয়ে একটি ইবাদত। বিয়ে একটি জরুরত।

যার যখন জরুরত হয়ে পড়ে, তখন বিয়ে করে নেয়াটা একটি প্রয়োজনীয় ইবাদতে পরিণত হয়। কারণ, তখন সে এ থেকে মুক্ত না থাকলে গোনাহে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা হয়ে যায়। এ কারণে বিয়ে করে স্ত্রীর সাথে রাত্রিযাপনও সওয়াবের কাজ বলে হাদীসে ইরশাদ হয়েছে।

একটি হাদীস দেখুনঃ

عَنْ أَبِي ذَرٍّ، أَنَّ نَاسًا مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالُوا لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَا رَسُولَ اللهِ، ذَهَبَ أَهْلُ الدُّثُورِ بِالْأُجُورِ، يُصَلُّونَ كَمَا نُصَلِّي، وَيَصُومُونَ كَمَا نَصُومُ، وَيَتَصَدَّقُونَ بِفُضُولِ أَمْوَالِهِمْ، قَالَ: ” أَوَلَيْسَ قَدْ جَعَلَ اللهُ لَكُمْ مَا تَصَّدَّقُونَ؟ إِنَّ بِكُلِّ تَسْبِيحَةٍ صَدَقَةً، وَكُلِّ تَكْبِيرَةٍ صَدَقَةً، وَكُلِّ تَحْمِيدَةٍ صَدَقَةً، وَكُلِّ تَهْلِيلَةٍ صَدَقَةً، وَأَمْرٌ بِالْمَعْرُوفِ صَدَقَةٌ، وَنَهْيٌ عَنْ مُنْكَرٍ صَدَقَةٌ، وَفِي بُضْعِ أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ، قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ، أَيَأتِي أَحَدُنَا شَهْوَتَهُ وَيَكُونُ لَهُ فِيهَا أَجْرٌ؟ قَالَ: «أَرَأَيْتُمْ لَوْ وَضَعَهَا فِي حَرَامٍ أَكَانَ عَلَيْهِ فِيهَا وِزْرٌ؟ فَكَذَلِكَ إِذَا وَضَعَهَا فِي الْحَلَالِ كَانَ لَهُ أَجْرٌ

আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীদের কয়েকজন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! বিত্তবানরা সাওয়াব নিয়ে যাচ্ছে তারা আমাদের মত সালাত আদায় করেন, আমাদের মত সিয়াম সাধনা করেন এবং তারা নিজেদের ধন সম্পদ হতে কিছু দান করে থাকেন। তিনি বললেন, তোমাদের জন্য কী আলল্লাহ তাআলা সাদাকা করার ব্যবস্থা করেননি? প্রতিটি তাসবীহ সাদাকা, প্রতিটি তাকবীর সাদাকা, প্রতিটি তাহমীদ সাদাকা, প্রতিটি তাহলীল সাদাকা, সৎকাজের আদেশ দেয়া, অসৎকাজ হতে বিরত রাখা সাদাকা এবং স্ত্রীর সঙ্গে মিলনও সাদাকা। তারা বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কেউ যদি স্ত্রী সংগম করে এতেও কি সে সাওয়াব পাবে? তিনি বললেন তোমরা কি মনে কর যদি সে কামাচার করে হারাম পথে তাতে কি তার পাপ হবে না? অনুরূপভাবে যদি সে কামাচার করে হালাল পথে তবে সে সাওয়াব পাবে। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১০০৬, ইফাবা-২২০১]

এ কারণে প্রতিটি সামর্থবান পুরুষেরই প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে গেলে বিয়ে করতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছেঃ

يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ، مَنِ اسْتَطَاعَ البَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ، فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ، وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, হে যুব সম্প্রদায়! তোমাদের মাঝে যারা বিয়ে করতে সামর্থ রাখো, তারা বিয়ে করে ফেলো, কেননা তা চোখকে নি¤œমুখী করে, এবং লজ্জাস্থানকে হিফাযত করে, যদি বিয়ে করতে সামর্থবান না হও, তাহলে রোযা রাখো, কেননা, তা যৌন ক্ষুধা দমন করে। [বুখারী, হাদীস নং-৫০৬৬, ৪৬৯৫]

বিয়ে করা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাত। হাদীসে এসেছেঃ

عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «النِّكَاحُ مِنْ سُنَّتِي، فَمَنْ لَمْ يَعْمَلْ بِسُنَّتِي فَلَيْسَ مِنِّي،

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, বিবাহ করা হল, আমার সুন্নত। যে ব্যক্তি আমার সুন্নাতের উপর আমল করে না, উক্ত ব্যক্তি আমার দলভূক্ত নয়। [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৮৪৬]

বিয়ে শুধু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নতই নয়। বরং সমস্ত আম্বিয়ায়ে কেরাম আলাইহিস সালামের সুন্নত।

ইরশাদ হচ্ছেঃ

وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلًا مِّن قَبْلِكَ وَجَعَلْنَا لَهُمْ أَزْوَاجًا وَذُرِّيَّةً ۚ [١٣:٣٨

আপনার পূর্বে আমি অনেক রসূল প্রেরণ করেছি এবং তাঁদেরকে পতœী ও সন্তান-সন্ততি দিয়েছি। [সূরা রা’দ-৩৮]

উপরোক্ত হাদীস ও আয়াতের মাধ্যমে একথা দীবালোকের ন্যায় পরিস্কার যে, সামর্থবান প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিম সন্তানদের বিয়ে করে নেয়াই ইসলামী শরীয়তের বিধান।

অহেতুক খোড়া যুক্তি দেখিয়ে এ থেকে বিরত থাকা উচিত নয়। বাবা মা, বা অভিভাবকদের এ বিষয়টি অনুধাবন করা উচিত।

অভিভাবকদের প্রতি তাদের অধীনতদের বিয়ে করিয়ে দেবার প্রতি পরিস্কার নির্দেশ প্রদান করেছেন আল্লাহ তাআলা। ইরশাদ হচ্ছেঃ

وَأَنكِحُوا الْأَيَامَىٰ مِنكُمْ وَالصَّالِحِينَ مِنْ عِبَادِكُمْ وَإِمَائِكُمْ [٢٤:٣٢]

তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তাদের বিবাহ সম্পাদন করে দাও এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ন, তাদেরও। [সূরা রূম-৩২]

এ আয়াতে কারীমার পরিস্কার নির্দেশনা থাকা সত্বেও বড় ভাই বিয়ে করেনি, আরো পড়ে, পড়াশোনা শেষ হয়নি ইত্যাদি খোড়া যুক্তি দেখিয়ে প্রাপ্ত বয়স্ক সমার্থবান ছেলেদের বিবাহ করা থেকে বিরত রাখা কিছুতেই উচিত নয়।

হ্যাঁ, যদি স্ত্রীর খরচ বহনের ক্ষমতা না থাকে, বা শারিরীক সক্ষমতা না থাকে, তাহলে ভিন্ন কথা। কিন্তু খরচ বহনের সক্ষমতা সত্বেও এসব যুক্তি দেখিয়ে বিয়ে থেকে বিরত রাখার মানসিকতা কিছুতেই সমর্থনযোগ্য নয়।

আমাদের পরামর্শ

অভিভাবকদের প্রতিঃ

সামর্থবান সন্তানদের বিয়েতে অমত পোষণ করবেন না। পরবর্তীতে গোনাহে লিপ্ত হলে এর দায়ভার আপনার উপরও ন্যস্ত হবে।

সামর্থবান সন্তানদের প্রতিঃ

বাবা মা’কে বুঝিয়ে, তাদের সম্মতিতে বিয়ে করুন। বাকি যদি তাদের অমতেও শরয়ী সকল শর্ত মেনে বিয়ে করে ফেলেন, তাহলে বিবাহ শুদ্ধ হয়ে যাবে। নিজের চরিত্র হিফাযতের নিয়তে বিয়ে করলে গোনাহ হবে না। বরং সওয়াব হবে ইনশাআল্লাহ। বাকি পিতা-মাতাকে অসন্তুষ্ট না করার প্রতিও খেয়াল রাখা উচিত।

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

ইমেইল[email protected]

0Shares

আরও জানুন

শাতীমে রাসূল বিষয়ে কয়েকটি জরুরী মাসআলা

প্রশ্ন আসসালামু আলাইকুম। জনাব আমার প্রশ্ন শাতিমের শাস্তি কার্যকর প্রসঙ্গে। কিন্তু প্রাসঙ্গিক কয়েকটি প্রশ্ন: ১। কেউ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *