প্রশ্ন
জনাব,
আসসালামু আলাইকুম,
প্রশ্ন:এক ব্যক্তি বিয়ের এক মাস পরে তার স্ত্রীর নামে দূরনাম উঠলে কাজির অফিসের মাধ্যমে স্ত্রীর ঠিকানায় তালাকের নোটিশ পাঠিয়ে দেয় এবং কাজি তাকে উক্ত এক বৈঠকে মুখে “তিন তালাকের সহিদ তালাক দিলাম” একবার মুখে বলায়। নোটিশগ্রহণ না করে দুমাস পরে স্ত্রী স্বামীর কাছে আসায় তারা এক সাথে স্বামী -স্ত্রী হিসাবে বসবাস করে আসছে।উল্লেখ্য যে উক্ত নোটিশ পাঠানোর সময় তালাক দেওয়ার নিয়ম সম্মন্ধে তার জানা ছিলনা বা কাজিও কিছু বলেন নাই।এমতাবস্থায় তাদের তালাক কি পতিত হয়েছে?তারা স্বামী -স্ত্রী হিসাবে কি বৈধ? বা তাদের করনিয় কি?এ ব্যাপারে ইসালামিক বিধান মতে সমাধান দিলে উপকৃত হবো।
নিবেদক,
কে এম এ আমিন
সিতাকুন্ড
চট্টগ্রাম।
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
স্বামী তালাক দেবার পর কাজী সেটি গ্রহণ করা ও না করার সাথে তালাক পতিত হওয়া ও না হওয়ার কোন সম্পর্ক নেই। তালাকের সম্পর্ক স্বামীর সাথে। স্বামী তালাক দিলে তালাক হয়ে যাবে। কাজীর গ্রহণ করার উপর নির্ভরশীল নয়।
মুসলিম অধ্যুসিত রাষ্ট্রে শরয়ী মাসআলা সম্পর্কে অজ্ঞতা কোন উজর বলে বিবেচিত নয়। প্রতিটি মুসলমানদের প্রয়োজনীয় মাসআলা জানা থাকা ফরজ।
তাই তালাক দেবার পদ্ধতি সম্পর্কে অজ্ঞতা কোন উজর বলে সাব্যস্ত হবে না। যদি স্বামী তিন তালাক প্রদান করে থাকে, চাই সেটি নোটিশ লিখে সাইন করার মাধ্যমে হোক বা মুখে বলার মাধ্যমে হোক। স্ত্রী তিন তালাক হয়ে গেছে। উক্ত স্ত্রীর সাথে স্বামীর থাকা আর জায়েজ নয়।
একটি কথা শুনেই তালাক প্রদান করে দেয়া বাচ্চাসূলভ আহমকী কর্ম ছাড়া আর কিছু নয়। তাই ভবিষ্যতে এমন গোয়ার্তুমি কর্ম করা থেকে স্বামীর সতর্ক থাকা জরুরী।
যেহেতু উক্ত স্ত্রী আর স্বামীর নেই। তাই তাদের একসাথে বসবাস করা জায়েজ নয়। বরং পরিস্কার জিনার কাজ।
এখন উক্ত স্ত্রী লোক ইদ্দত শেষ হয়ে গেলে অন্য কারো সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে।
কোন কারণে যদি দ্বিতীয় বিবাহটিও না টিকে। স্বামীর সাথে বিচ্ছেদ হয়ে যায়, তাহলে উভয়ে রাজি থাকলে আবার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে। কিন্তু এখন থাকা কিছুতেই সম্ভব নয়।
আরেকটি সতর্ক বার্তা-
হিল্লা বিয়ে জায়েজ নয়। নাজায়েজ কর্ম। তাই কাউকে টাকা দিয়ে একদিনের জন্য বিবাহ দিয়ে তারপর প্রথম স্বামীর জন্য বৈধ করার পদ্ধতিটি নিষিদ্ধ পদ্ধতি। এমন অভিসম্পাদময় পদ্ধতি থেকে বিরত থাকতে হবে।
আর কিছু হলেই তালাক প্রবণতা কমাতে হবে। বাচ্চারা যেমন কিছু হলেই খেলার সামগ্রি ভেঙ্গে ফেলে, তেমনি সংসার কোন খেলনা বস্তু নয়। ইচ্ছে হলেই তালাক দিয়ে তা ভেঙ্গে দেবার নোংরা কর্মে লিপ্ত হতে হবে।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সঠিক পদ্ধতিতে দ্বীন মানার তৌফিক দান করুন।
وفى مصنف ابن ابى شيبة- – حَدَّثَنَا ابْنُ عُلَيَّةَ , عَنْ خَالِدٍ الْحَذَّاءِ , عَنْ أَبِي مَعْشَرٍ , عَنْ رَجُلٍ , عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّهُ قَالَ : لَعَنِ اللَّهُ الْمُحِلَّ وَالْمُحَلَّلَ لَهُ وَالْمُحَلَّلَةَ. (مصنف ابن ابى شيبة، كتاب النكاح، في الرجل يُطَلِّقُ امْرَأَتَهُ فَيَتَزَوَّجُهَا رَجُلٌ لِيُحِلَّهَا لَهُ، رقم الحديث-17364)
وفى سنن الترمذى- حدثنا قتيبة حدثنا حاتم بن إسماعيل عن عبد الرحمن بن أدرك ( في التقريب والخلاصة أدرك ) عن عطاء عن ابن ماهك عن أبي هريرة قال : قال رسول الله صلى الله عليه و سلم ثلاث جدهن جد وهزل جد النكاح والطلاق والرجعة (سنن الترذى، كتباب الطلاق، باب ما جاء في الجد والهزل في الطلاق، رقم الحديث-1184)
وفى موطا مالك- – حدثني يحيى عن مالك عن المسور بن رفاعة القرظي عن الزبير بن عبد الرحمن بن الزبير أن رفاعة بن سموال طلق امرأته تميمة بنت وهب في عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم ثلاثا فنكحت عبد الرحمن بن الزبير فاعترض عنها فلم يستطع أن يمسها ففارقها فأراد رفاعة أن ينكحها وهو زوجها الأول الذي كان طلقها فذكر ذلك لرسول الله صلى الله عليه وسلم فنهاه عن تزويجها وقال لا تحل لك حتى تذوق العسيلة (موطأ مالك، كتاب النكاح، باب نكاح المحلل وما أشبهه، رقم الحديث-1942)
قوله تعالى : ( فَإِنْ طَلَّقَهَا فَلا تَحِلُّ لَهُ مِنْ بَعْدُ حَتَّى تَنْكِحَ زَوْجاً غَيْرَهُ ( . (البقرة: من الآية230
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
ইমেইল- ahlehaqmedia2014@gmail.com