প্রচ্ছদ / আকিদা-বিশ্বাস / এবার রমজানে চাঁদের নিচে নক্ষত্র থাকা কি হাদীসে বর্ণিত কিয়ামতের আলামত?

এবার রমজানে চাঁদের নিচে নক্ষত্র থাকা কি হাদীসে বর্ণিত কিয়ামতের আলামত?

প্রশ্ন

প্রশ্নকারীর নাম: এস,এম ফখরুদ্দিন আহমেদ

ঠিকানা: গ্রাম-পাটুলি,পো:-বুল্লা উপজেলা – মাধবপুর, জেলা -হবিগঞ্জ।

জেলা/শহর: হবিগঞ্জ

দেশ: বাংলাদেশ

প্রশ্নের বিষয়: চাদের নিচে তারা দেখা সম্পর্কে।

বিস্তারিত:
—————-
আসসালামু আলাইকুম হুজুর,

মহান আল্লাহর কাছে আপনার জন্য দোয়া ও রহমত কামনা করি। হুজুর গত দুই দিন যাবৎ ফেসবুকে চাদের নিচে তারা দেখা সম্পর্কে বিভিন্ন দেখা দেখে চিন্তিত আছি,এই রকম চাদ আমিও দেখছি গত শুক্রবারে।।নিম্নে একটি ফেসবুেক পোস্ট করা লেখা কপি করে দিলাম সাথে ছবি ও। ঘটনা সম্পর্কে যা বলা হইছে তা কতটুকু সঠিক,আর ঘটনা টা সঠিক হলে আমাদের কি করনীয় তা জানাবেন। পোস্ট টা নিম্নরূপ:-
(একটু মনোযোগ দিন….।
চাঁদটা সুন্দর। কিন্তু হাদিসটা ভয়ংকর।

‎اِقۡتَرَبَ لِلنَّاسِ حِسَابُہُمۡ وَ ہُمۡ فِیۡ غَفۡلَۃٍ  مُّعۡرِضُوۡنَ ۚ﴿۱﴾

অর্থ:- রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, তোমরা যদি চাঁদের সঙ্গে অন্য কোন গ্রহের খুব কাছাকাছি অবস্থান দেখতে পাও। তবে তোমরা ভেবে নিও কেয়ামত অতি নিকটে।

১৪০০ বছর আগেই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ ‘‘কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার আলামত হচ্ছে, চন্দ্র মোটা হয়ে উদিত হবে। বলা হবে এটি দুই দিনের চাঁদ’’।

যেই রমজানে ১ম রমজানে শুক্রবার দিন হবে সেদিন তারার উপর চাঁদ বসে থাকবে, এবং রোজার ১৫ টাই শুক্রবার পড়লে সেদিন খুব বিকট একটা আওয়াজ হওয়ার সম্ভাবনা আছে,।

হাদিসে বর্ণিত
‎اِقۡتَرَبَلِلنّاسِ حِسَابُہُمۡ وَہُمۡ
কিয়ামতের আগে সেই জুলফি বিশিষ্ট তারকা যে তারকা সকলেই দেখতে পাবে, এবং এই তারকা দেখার পরে এক বছরের খাদ্য মজুদ রাখতে বলা হয়। যেখানে রমজান মাসের প্রথম রোজা শুক্রবার এবং মধ্য রোজার শুক্রবার হওয়ারও কিছু আলামত হাদিসে পাওয়া যায়।

আর চাঁদের নিচে একটি গ্রহ  দেখা দিবে  চাঁদের নিচে শুক্র গ্রহ থাকবে সেইটা ইমাম মাহদী আসার সংকেত বা আলামত
‘ চাঁদ’’ [তাবরানী,সহীহুল জামে ৫৭৭৪]

ফুরাত নদী শুকিয়ে গেছে আরব ভূমি সবুজ শ্যামল হয়েছে।
অবশেষে এই চাঁদটা ও একটা আয়াতের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে..

21:1
‎اِقۡتَرَبَلِلنّاسِ حِسَابُہُمۡ وَہُمۡ
কিয়ামতের আগে রমজান মাসে প্রথম রোজা হবে শুক্রবারে আর চাঁদের নিচে একটি গ্রহ  দেখা দিবে
১৫ রমজান শক্রুবার বিকট আওয়াজ হওয়ার সম্ভাবনা।)

আল্লাহ আমাদের ওই কঠিন মুসিবত থেকে রক্ষা করুন  আর সবাইকে ৫ ওয়াক্ত জামায়াতে সালাত আদায় করার  তৌফিক  দান করুন!
আমিন।

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

কিয়ামত একটি সুনির্দিষ্ট বিষয়। সন্দেহ ছাড়া এটা হবেই। ইসলামের এমন একটি মৌলিক বিশ্বাসকে  প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত করার চেষ্টা ইসলাম বিদ্বেষীদের পুরানো আদত।

ইসলাম বিদ্বেষীরা নানা ইস্যুতে ইসলাম বিষয়ক কতিপয় বিষয়কে চিক্তাকর্ষী ও মুখরোচক বিষয়কে সমন্বিত করে উপস্থাপন করে ছড়িয়ে দেয়, পরবর্তীতে তা ভুল প্রমাণ হবার দ্বারা উক্ত আকীদা সম্পর্কেই মানুষের মনে সন্দেহ দানা বাঁধে। এভাবে ইসলামের আকীদা সম্পর্কে মানুষকে বিতশ্রদ্ধ করাই ইসলাম বিদ্বেষীদের একটি সফলতা।

এবারের রমজান মাস শুক্রবার শুরু হওয়া এবং চাঁদের নিচে একটি তারকা বা গ্রহ দেখতে পাওয়াকে কেন্দ্র করে কিয়ামতের আলামত নামে যেসব গুজব ছড়ানো হচ্ছে তা সত্যিই দুঃখজনক।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে কিছু সেলিব্রেটি ইসলামিষ্টরাও এসব ভিত্তিহীন বিষয়কে আগপিছ লাগিয়ে আস্ত হাদীসই বানিয়ে ফেলছেন।

উক্ত পোষ্ট এর বক্তব্যগুলো পুরোপুরিও বানোয়াট ও মিথ্যা তথ্যে ভরপুর। কয়েকটি নিচে উদ্ধৃত করা হলো:

প্রশ্নোক্ত লেখায়  প্রথমে হাদীস নামে যা উদ্ধৃত করা হয়েছে। সেটি আদৌ হাদীস নয়। বরং এটি কুরআনের একটি আয়াত। সূরা আম্বিয়ার প্রথম আয়াত। যা  হলো:

اقْتَرَبَ لِلنَّاسِ حِسَابُهُمْ وَهُمْ فِي غَفْلَةٍ مُّعْرِضُونَ [٢١:١]

 “মানুষের হিসাব-কিতাবের সময় নিকটবর্তী; অথচ তারা বেখবর হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। [সূরা আম্বিয়া-১]”

উক্ত আয়াতের তরজমা হলো: “মানুষের হিসাব-কিতাবের সময় নিকটবর্তী; অথচ তারা বেখবর হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। [সূরা আম্বিয়া-১]”

অথচ পোষ্টকারী হাস্যকরভাবে উক্ত আয়াতের তরজমায় লিখেছে:

“অর্থ:- রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, তোমরা যদি চাঁদের সঙ্গে অন্য কোন গ্রহের খুব কাছাকাছি অবস্থান দেখতে পাও। তবে তোমরা ভেবে নিও কেয়ামত অতি নিকটে”।

এর মানে পোষ্টকারী কুরআন ও হাদীস সম্পর্কে নিতান্তই অজ্ঞ ও জাহিল। এমন ব্যক্তিদের কিছুতেই কোন বিজ্ঞ আলেমের পরামর্শ ছাড়া এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে পোষ্ট করা সমীচিন নয়।

কিয়ামতের আগে প্রথম দিনের চাঁদকে দ্বিতীয় দিনের মতো বলে মনে হবে। এ মর্মে বিশুদ্ধ বর্ণনায় হাদীস আছে।

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، – رَفَعَهُ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – قَالَ: «مِنِ اقْتِرَابِ السَّاعَةِ أَنْ يُرَى الْهِلَالُ قُبُلًا، فَيُقَالُ: لِلَيْلَتَيْنِ، وَأَنْ تُتَّخَذَ الْمَسَاجِدُ طُرُقًا، وَأَنْ يَظْهَرَ مَوْتُ الْفُجَاءَةِ

হযরত আনাস বিন মালেক রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে প্রথম দিনের চাঁদকে বড় দেখা যাবে। লোকেরা বলতে থাকবে যে, এটা দ্বিতীয় দিনের চাঁদ। মসজিদকে রাস্তায় পরিণত করা হবে। আকস্বিক মৃত্যু বৃদ্ধি পাবে। [আলমু’জামুল আওসাত লিততাবারানী, হাদীস নং-৯৩৭৬, আলমু’জামুস সগীর লিততাবারানী, হাদীস নং-১১৩২]

কিন্তু এ হাদীসকে যেভাবে চাঁদের নিচে তারকার সাথে মিলানো হচ্ছে, এটা আসলেই হাস্যকর ও বিভ্রান্তিকর।

“যেই রমজানে ১ম রমজানে শুক্রবার দিন হবে সেদিন তারার উপর চাঁদ বসে থাকবে, এবং রমজানের রোযার ৫ টা শুক্রবার পড়লে সেদিন খুব বিকট একটা আওয়াজ হওয়ার সম্ভাবনা আছে”।

এ পুরো বিষয়টি একটি বানোয়াট ও কল্পনাপ্রসূত বিষয়। এর সাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণিত কিয়ামতের আলামতের কোন সম্পর্ক নেই।

সুতরাং এসব বানোয়াট কথা বিশ্বাস করা কিছুতেই জায়েজ হবে না।

চাঁদের নিচে গ্রহ দেখা যাওয়া ইমাম মাহদী আলাইহিস সালামের আগমণের আলামত, কিংবা কিয়ামতের আগে রমজান মাস শুরু হবে শুক্রবার এবং তখন চাঁদের নিচে একটি গ্রহ দেখা যাবে মর্মে কোন হাদীস নেই।

যারা এসব কথাকে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামে বলে বেড়াচ্ছে তারা স্পষ্টই নবীজীর উপর মিথ্যারোপ করছেন। আর নবীজীর উপর মিথ্যারোপ করার শাস্তি সরাসরি জাহান্নাম।

 

একথা সত্য যে, কিয়ামতের অনেক আলামতই প্রকাশিত হয়েছে এবং প্রতীনিয়ত হচ্ছে। আমরা অতিদ্রুত কিয়ামতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, যার যা ইচ্ছে, সেটাকেই কিয়ামতের আলামত বলে নবীর নামে চালিয়ে দেবার অধিকার দেয়া হয়েছে।

আসলে কিয়ামত নিয়ে এমন হাদীসের নামে মিথ্যাচার দেখে কিয়ামতের আগে হাদীস বানানো হবে মর্মের আলামতই প্রকাশ পাচ্ছে।

এর মানে কিয়ামতের আলামত বর্ণনাকারীরা নিজেরাই আসলে কিয়ামতের আলামত!

أَبَا هُرَيْرَةَ، يَقُولُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ يَكُونُ فِي آخِرِ الزَّمَانِ دَجَّالُونَ كَذَّابُونَ يَأْتُونَكُمْ مِنَ الأَحَادِيثِ بِمَا لَمْ تَسْمَعُوا أَنْتُمْ وَلاَ آبَاؤُكُمْ فَإِيَّاكُمْ وَإِيَّاهُمْ لاَ يُضِلُّونَكُمْ وَلاَ يَفْتِنُونَكُمْ ‏”‏

আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ শেষ যুগে কিছু সংখ্যক প্রতারক ও মিথ্যাবাদী লোকের আবির্ভাব ঘটবে। তারা তোমাদের কাছে এমন সব হাদীস বর্ণনা করবে যা কখনো তোমরা এবং তোমাদের পূর্বপুরুষরা শোননি। সুতরাং তাদের থেকে সাবধান থাকবে এবং তাদেরকে তোমাদের থেকে দূরে রাখবে। তারা যেন তোমাদের বিভ্রান্ত না করতে পারে এবং তোমাদেরকে ফিতনায় না ফেলতে পারে।

আল্লাহ তাআলা আমাদের এসব বানোয়াট কথা ও থিওরী থেকে ঈমান ও আমলকে রক্ষা করার তৌফিক দান করুন।

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।

ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com

আরও জানুন

মুসলমানদের জন্য হিন্দু পরিচয় দিয়ে ইসকনের মিছিলে শরীক হওয়ার হুকুম কী?

প্রশ্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ইসকনের ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক মিছিলে যেসব মুসলমান শরীক হয়, নিজেদের হিন্দু পরিচয় দেয় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *