প্রচ্ছদ / আহলে হাদীস / আহলে সুন্নত অনুসারী আহলে হাদীস কেন হয়? কথিত আহলে হাদীসদের সাথে কিভাবে বাহাস করবেন?

আহলে সুন্নত অনুসারী আহলে হাদীস কেন হয়? কথিত আহলে হাদীসদের সাথে কিভাবে বাহাস করবেন?

 লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

 

আসলে সহীহ আকিদা ও আমল থেকে বিভ্রান্ত হয়ে আহলে হাদীস হয়ে যাওয়ার মূল কারণ হল, অজ্ঞতা।

আরেকটি কারণ হল, হাদীসের প্রতি মোহাব্বত। দু একটি হাদীস দেখেই আমাদের ভাইয়েরা আহলে হাদীস হয়ে যায়, কারণ আমাদের আকিদা হল, সুন্নাতে নববী সাঃ সবার উপরে। সুন্নতে নববীর উপর কোন ব্যক্তি বিশেষের জেদ ও মতামত আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। এ শিক্ষা আমরা দিয়ে থাকি। এটি আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআত হানাফী দেওবন্দীদের মূল উৎস ও প্রেরণা।

তাই এ মাসলাকের কোন ব্যক্তি যখন নিজের কম ইলমীর কারণে স্বীয় আমলের দলীল সম্পর্কে ভালভাবে না জানে, তখন আহলে হাদীস ভাইদের বিভ্রান্তিকর দলীল দেখে আকৃষ্ট হয়। যখন দেখে আহলে হাদীস দাবিদারদের কাছে হাদীস আছে। তখন সে হাদীসের দিকে ঝুঁকে পড়ে। যেহেতু হাদীসের মোহাব্বত তার মন-মগজে প্রবিষ্ট। তাই খুব সহজে হাদীসের মোহাব্বতওয়ালা এসব সহজ-সরল ব্যক্তিদের নিজেদের ভ্রান্ত মতবাদে দিক্ষীত করে নিতে পারে আহলে হাদীসরা। যেহেতু বাহ্যিক দৃষ্টিতে তাদের মত ও কথা খুবই চমকপ্রদ এবং চিত্তাকর্ষী। যদিও তা আসলে মাকাল ফল। হাদীসের নামে ধোঁকাবাজীই যাদের স্বভাব। কিন্তু মুখরোচক স্লোগানের আড়ালে তা থাকে লুকায়িত। যা বুঝার ক্ষমতা সাধারণ লোকদের অনেক সময় হয়ে উঠে না।

 

আহলে হাদীস হবার পর আর ফিরে না কেন?

আহলে হাদীস হয়ে যাওয়ার পর সে আর কেন অসংখ্য সহীহ হাদীস দেখানোর পরও ফিরে আসে না?

এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।

জবাবটি খুবই সোজা। আসলে একজন হানাফী দেওবন্দী খুব সহজে আহলে হাদীস হয়ে যায়, যেহেতু তার মনে হাদীসের মোহাব্বত রয়েছে। যেটি হানাফী দেওবন্দীদের থেকে পাওয়া। হাদীসের প্রতি টান তার ঈমান ও বিশ্বাস। তাই হাদীস দেখেই যাচাই বাছাই ছাড়াই মেনে নেয়। বাহ্যিক লেবাসধারী হাদীস অনুসারীদের কথায় ধোঁকায় পড়ে বিভ্রান্ত আহলে হাদীস মাযহাব গ্রহণ করে।

কিন্তু যখনি আহলে হাদীস হয়ে যায়। তখন আহলে হাদীসের প্রশিক্ষকরা উক্ত ডাইভার্ট হওয়া ব্যক্তির মন-মগজ থেকে হাদীসের মোহাব্বতকে দূর করে দেয়। তার মনে হাদীস সম্পর্কে তৈরী করে দেয় সন্দেহ ও সংশয়। কিভাবে হাদীস অস্বিকার করতে হবে, তা তাকে হাতে কলমে শিক্ষা দেয়া হয়।

বলা হয়, তোমার মতের উল্টো হাদীস আসলেই বলে দিবে- হাদীসটি জাল।

বলবে- হাদীসটি মুনকার।

বলবে- হাদীসটি জঈফ।

বলবে- হাদীসটি মওকুফ।

বলবে-হাদীসটির সূত্র নেই।

বলবে- হাদীসটির মাঝে তাদলীস আছে।

বলবে- হাদীসটি মুরসাল। ইদ্যাদি।

এভাবে হাদীস কিভাবে বর্জন করা যায় এর প্রশিক্ষণ দেয়া হয় হাতে কলমে। তখন লোকটির মন থেকে হাদীসের মোহাব্বত দূর হয়ে যায়। যে মোহাব্বত তার রগ রেশায় ঢুকেছিল আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআত হানাফী দেওবন্দী থাকার সময়। তা আর তার থাকে না। তখন সে হাদীসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামে। তখন সে তার মনগড়া মতের বিরোধী হাদীস দেখলেই তা বর্র্জন করার জন্য হাদীসকে অস্বিকার করা শুরু করে দেয়। হাদীসটিকে দোষনীয় করার জন্য সর্ব প্রকার প্রচেষ্টা নিয়োগ করে। ফলে তার মনে আগের মত আর হাদীসের মোহাব্বত থাকে না। সে হয়ে যায় এক প্রকার হাদীস বিদ্বেষী।

এ কারণে এ লোকটিকে  যতই সহীহ হাদীসের রেফারেন্স দেয়া হোক না কেন, সে আর আহলে হাদীস নামক ভ্রান্ত মাযহাব ছেড়ে নাজাতপ্রাপ্ত জামাত আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতে ফিরে আসার সৌভাগ্য অর্জন করতে পারে না। দু একজন যাও আসে তার পরিমান নিতান্তই কম।

 

এ ভ্রান্তিতা নিরসনে কী করবেন?

আসলে এ জন্য প্রয়োজন ব্যাপক পড়াশোনা। আর বিজ্ঞ ব্যক্তিদের তত্বাবধানে দ্বীনের মাসায়েলকে সমাধান করার চেষ্টা করা। আকাবীরদের লিখিত কিতাব মনযেগের সাথে অধ্যয়ন করা। নিজে নিজে হাদীস পড়ে বিজ্ঞ ব্যক্তির ভান করার মানসিকতা খুবই বিপদজনক।

যাইহোক, আহলে হাদীস ভাইদের মাযহাবের একটি বড় গুণ হল, তারা প্রচুর মিথ্যা তথ্য ব্যবহার করেন। যে যত বেশি মিথ্যা কথা বলতে পারে, সে ততবড় কথিত আহলে হাদীস হতে পারে।

ওদের আরেকটি গুণ হল, ওরা প্রচুর পরিমাণ ধোঁকাবাজি করে, যে যত বড় ধোঁকাবাজ সে ততবড় নামধারী আহলে হাদীস।

তাই ওদের কথায় বিভ্রান্ত হবেন না।

ওরা কথায় কথায় বুখারী বুখারী বলে বেড়ায়। মনে হয় বুখারী তাদের পৈত্রিক সম্পত্বি। অথচ বুখারীতে তাদের মাসলাকের ছিটেফোঁটাও নেই। বরং ওদের মাসলাকের উল্টো প্রচুর মত রয়েছে বুখারীতে। যা তারা মানে না।

নিচে তাদের সাথে বিতর্ক করার কিছু টিপস উপস্থাপন করা হল। মনযোগ সহকারে পড়ন। ইনশাআল্লাহ আহলে হাদীসদের সাথে বাহাসে আপনি বিজয়ী হবেনই। وما توفيق الا بالله

 

আহলে হাদীসের সাথে কিভাবে বিতর্ক করবেন?

কিছু টিপস আর মূলনীতি জানা থাকলে দুনিয়ার কোন আহলে হাদীস আপনার সামনে দুই মিনিট টিকতে পারবে না ইনশাআল্লাহ। তার অসাড় দলীল নিয়ে দৌড়ে পালাবে ইনশাআল্লাহ।

 

মূলনীতি নং-১

আহলে হাদীস ব্যক্তিটি কুরআন ও সহীহ হাদীস ছাড়া কোন উম্মতীর উক্তি নকল করতে পারবে না। যদি নকল করে, তাহলে তাকে তার মাযহাব অনুপাতে মিথ্যুক সাব্যস্ত করা হবে।

কারণ-

আহলে হাদীসদের দাবি হল, তারা শুধু কুরআনও সহীহ হাদীস মানে। কোন উম্মতীর বক্তব্য তাদের কাছে মাননীয় নয়। কোন উম্মতীর কথা মানা জায়েজও নয়। কোন উম্মতীর কথা বা মন্তব্য তাদের কাছে দলীলও নয়।

তাই কোনক্রমেই তারা কুরআন ও সহীহ হাদীস ছাড়া কোন উম্মতীর বক্তব্য বা মন্তব্য দলীল হিসেবে উপস্থাপন করতে পারবে না। যদি করে, তাহলে ঐ মুহুর্তেই তাকে মিথ্যুক সাব্যস্ত করা হবে। এবং আহলে হাদীস মাযহাবের মূলনীতিটিকে একটি ধোঁকাবাজিপূর্ণ মুখরোচক স্লোগান সাব্যস্ত করা হবে।

 

মূলনীতি নং-২

কোন উম্মতীর বক্তব্যের আলোকে কোন হাদীসকে জাল বা জঈফ বা সহীহ বলতে পারবে না। বরং হাদীস সহীহ বা জঈফ কিংবা জাল ইত্যাদি বলার জন্য পেশ করবে কুরআনের আয়াত বা হাদীস।

কারণ-

উম্মতীর কথা দলীল নয়। দলীল শুধুমাত্র কুরআনও হাদীস তাদের মতে। উম্মতীর কথাকে দলীল যারা মনে করে, তারা আহলে হাদীস ভাইদের মতে মুশরিক। তাই তারা কিভাবে উম্মতীর কথাকে দলীল সাব্যস্ত করে হাদীসকে সহীহ বা জঈফ বলতে পারে?

এটিতো তাদের নিজের তৈরী মূলনীতির বিরোধী অবস্থান? এটি কি করে সম্ভব হতে পারে?

তাই যখনি কোন হাদীসকে তারা সহীহ বা জঈফ বলবে কুরআনের আয়াত বা হাদীস ছাড়া উম্মতীর বক্তব্যের আলোকে, তখনি তাদের মাযহাব অনুযায়ী তারা মিথ্যুক ও ধোঁকাবাজ সাব্যস্ত হবে।

 

মূলনীতি নং-৩

ওদের ভাষায় যারা কুরআন ও হাদীস থেকে কিয়াস করে মাসআলা বের করেছেন, সেই সকল মুজতাহিদগণ দ্বীন বিকৃতকারী। বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী, ফিরক্বা সৃষ্টিকারী।

আর যারা সে সকল মুজতাহিদের অনুসরণ করে মুকাল্লিদ, সে সকল মুকাল্লিদ হলেন ওদের ভাষায় মুশরিক। বিভ্রান্ত।

তাই কোন আহলে হাদীস তাদের মতের দলীল কোন মুজতাহিদ বা মুকাল্লিদের সংকলিত হাদীসের কিতাব থেকে দিতে পারবে না।

শুধুমাত্র এমন ব্যক্তির সংকলিত কিতাব থেকে হাদীস দেখাবে, যিনি মুজতাহিদও নয় আবার মুকাল্লিদও নয়। বরং ওদের মত গায়রে মুকাল্লিদ।

যদি কোন মুজতাহিদের সংকলিত কিতাব থেকে হাদীস উপস্থাপন করে, বা কোন মুকাল্লিদের কিতাব থেকে হাদীস উপস্থাপন করে, তাহলে সাথে সাথেই তাকে মিথ্যুক ও ধোঁকাবাজ সাব্যস্ত করা হবে।

কারণ, যে মুজতাহিদ তাদের ভাষায় বিভ্রান্ত, দ্বীন বিকৃতিকারী, যে মুকাল্লিদ তাদের ভাষায় মুশরিক ও বিভ্রান্ত, সেসব দ্বীন বিকৃতিকারী, বিভ্রান্ত ও মুশরিকের কিতাব থেকে হাদীসের দলীল দেয়া কিভাবে তাদের মতে জায়েজ হবে? কিছুতেই জায়েজ হওয়ার কথা নয়।

তাই যখনি একাজ করবে তারা, তখনি তাদের ধোঁকাবাজ ও প্রতারক সাব্যস্ত করা হবে।

 

এক্ষেত্রে হাদীস সংকলকগণের মাযহাবী অবস্থান মনে রাখা জরুরী

১। ইমাম বুখারী রহঃ শাফেয়ী মাজহাবের অনুসারী।

সুত্রঃ নবাব ছিদ্দিক হাসান খান লিখিত আবজাদুল উলুম পৃষ্ঠা নং ৮১০, আলহিত্তা পৃষ্ঠা নং ২৮৩।

শাহ ওয়ালিউল্লাহ রহঃ লিখিত আল-ইনসাফ পৃষ্ঠা নং ৬৭।

আল্লামা তাজ উদ্দীন সুবকী রহঃ লিখিত ত্ববকাতুশ শাফেয়ী পৃষ্ঠা নং ২/২।

২। ইমাম মুসলিম রহঃ শাফেয়ী মাজহাবের অনুসারী।

সুত্রঃ ছিদ্দিক হাঃ খান লিখিত আল-হিত্তা পৃষ্ঠা নং ২২৮।

৩। ইমাম তিরমিজী নিজে মুজ্তাহিদ ছিলেন। তবে হানাফী ও হাম্বলী মাজহাবের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন।

সুত্রঃ শা ওয়ালিউল্লাহ রহঃ লিখিত আল-ইনসাফ পৃষ্ঠা নং ৭৯।

৪। ইমাম নাসাঈ শাফেয়ী মাজহাবের অনুসারী ছিলেন।

সুত্রঃ নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান লিখিত আল-হিত্তা পৃষ্ঠা নং ২৯৩।

৫। ইমাম আবুদাউদ রহঃ শাফেয়ী।

সুত্রঃ আল-হিত্তা পৃষ্ঠা নং ২২৮।

আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মিরী রহঃ ইবনে তাইমিয়ার উদ্ধৃতি দিয়ে ফয়জুল বারী ১/৫৮ তে ইমাম আবুদাউদ রহঃ কে হাম্বলী বলে উল্লেখ করেছেন।

৬। ইমাম ইবনে মাজাহ শাফেয়ী মাজহাবের অনুসারী।

সুত্রঃ ফয়জুল বারী ১/৫৮।

এ গেল ছিহাহ ছিত্তার ইমামগণের মাজহাব।

অন্যান্য ইমামগণের মাজহাব নবাব ছিদ্দীক হাসান খান সাহেবের আল-হিত্তা থেকে।

╚►৭। মিশকাত শরিফ প্রণেতা শাফেয়ী, পৃঃ ১৩৫

╚►৮। ইমাম খাত্তাবী রহঃ শাফেয়ী, পৃঃ ১৩৫

╚►৯। ইমাম নববী রহঃ শাফেয়ী, পৃঃ ১৩৫

╚►১০। ইমাম বাগভী রহঃ শাফেয়ী, পৃঃ ১৩৮

╚►১১। ইমাম ত্বহাবী হাম্বলী, পৃঃ১৩৫

╚►১২। বড় পীর আঃ কাদের জিলানী রহঃ হাম্বলী, পৃঃ ৩০০

╚►১৩। ইমাম ইবনে তাইমিয়া হাম্বলী, পৃঃ ১৬৮

╚►১৪। ইবনে কায়্যিম রহঃ হাম্বলী, পৃঃ ১৬৮

╚►১৫। ইমাম ইবনে আব্দিল বার রহঃ মালেকী, পৃঃ ১৩৫

╚►১৬। ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দেসে দেহলবী রহঃ হানাফী, পৃঃ ১৬০

╚►১৭। শাহ ওয়ালিউল্লাহ  দেহলবী রহঃ হানাফী, পৃঃ ১৬০-১৬৩

╚►১৮। ইমাম ইবনে বাত্তাল রহঃ মালেকী, পৃঃ ২১৩

╚►১৯। ইমাম হালাবী রহঃ হানাফী পৃঃ ২১৩

╚►২০। ইমাম শামসুদ্দীন আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে আব্দুদদায়েম রহঃ শাফেয়ী, পৃঃ ২১৫

╚►২১। ইমাম বদরুদ্দীন আঈনী রহঃ হানাফী, পৃঃ ২১৬

╚►২২। ইমাম যারকানী রহঃ শাফেয়ী, পৃঃ ২১৭

╚►২৩। ইমাম ক্বাজী মুহিব্বুদ্দীন হাম্বলী, পৃঃ ২১৮

╚►২৪। ইমাম ইবনে রজব হাম্বলী, পৃঃ ২১৯

╚►২৫। ইমাম বুলকিনী শাফেয়ী, পৃঃ ২১৯

╚►২৬। ইমাম মার্যুকী মালেকী পৃঃ ২২০

╚►২৭। ইমাম জালালুদ্দীন বকরী শাফেয়ী, পৃঃ২২০

╚►২৮। ইমাম কাস্তাল্লানী শাফেয়ী, পৃঃ ২২২

╚►২৯। ইমাম ইবনে আরাবী মালেকী, পৃঃ ২২৪

এমন কি তাদের মডেল আব্দুল ওয়াহ্হাব নজদীকে ও হাম্বলী বলে উল্লেখ করেছেন নওয়াব সিদ্দিক হাসান খান তার আল-হিত্তাতু ফিস সিহাহিস সিত্তাহর ১৬৭ পৃষ্ঠায়।

ইমাম তাহাবী রহঃ ছিলেন হানাফী রহঃ এর অনুসারী। যা তার সংকলিত তাহাবী শরীফ পড়লেই যে কেউ বুঝতে পারবে।

 

মূলনীতি নং-৪

দলীল দেয়া কার যিম্মায় তা নির্দিষ্ট করে নিন। এক্ষেত্রে রাসূল সাঃ এর প্রসিদ্ধ হাদীসটি জানিয়ে দিন-

أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ فِي خُطْبَتِهِ: «البَيِّنَةُ عَلَى المُدَّعِي، وَاليَمِينُ عَلَى المُدَّعَى عَلَيْهِ»

রাসূল সাঃ তার খুতবায় বলেছেন, দলীল আবশ্যক দাবিদারের যিম্মায়। আর হলফ করবে অস্বিকারকারী। {সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১৩৪১}

সুতরাং যে মাসআলায় কথা বলতে চাচ্ছেন আহলে হাদীস ভাইটির সাথে, সেখানে দেখে নিন, দাবিকারী কে আর অস্বিকারকারী কে?

যে দাবিদার হবে সে পেশ করবে দলীল। অস্বিকারকারীর কাছে দলীল চাওয়া এ হাদীসের বিধানের স্পষ্ট লঙ্ঘণ।

উদাহরণতঃ

১-   

আমীন আস্তে বলা ও জোরে বলার মতবাদের মাসআলায় দাবিদার কে আর অস্বিকারকারী কে?

আমীন জোরে বলার প্রবক্তা দাবিদার। আর আস্তে বলার প্রবক্তা অস্বিকারকারী।

কারণ তারা জোরে বলার দাবি করছে, আমরা অস্বিকার করছি। বলছি জোরে বলা লাগবে না। উক্ত প্রসিদ্ধ হাদীসের বিধান অনুপাতে জোরে বলার প্রবক্তা দলীল পেশ করবে, অস্বিকারকারীর কাছে দলীল চাওয়া প্রসিদ্ধ হাদীসের বিধান লঙ্ঘণ।

২-   

ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পড়া ও না পড়ার মাসআলা।

কে দাবিদার আর কে অস্বিকারকারী?

নিশ্চয় ফাতিহা যারা পড়তে বলেন, তারা দাবিদার আর যারা মানা করেন, তারা অস্বিকারকারী।

সুতরাং দলীল দিবে যারা ফাতিহা পড়তে বলেন। যারা পড়তে বলেন না, তাদের কাছে দলীল চাওয়া ধোঁকাবাজী ও প্রতারণা ছাড়া কিছু নয়।

–   

রুকুতে যেতে আসতে হাত উঠানোর মাসআলায় কে দাবিদার আর কে অস্বিকারকারী?

নিশ্চয় যারা উঠাতে বলেন, তারা দাবিদার। আর যারা বলেন না, তারা অস্বিকারকারী?

সুতরাং দলীল দিবে কে? কার যিম্মায় দলীল দেয়া আবশ্যক? অস্বিকারকারীর যিম্মায় না দাবিদারের যিম্মায়?

নিশ্চয় দাবিদারের যিম্মায়। সুতরাং এক্ষেত্রেও অস্বিকারকারীর কাছে দলীল চাওয়া ধোঁকাবাজী।

এমনভাবে প্রতিটি মতভেদপূর্ণ মাসআলায় নির্দিষ্ট করতে হবে, দলীল আসলে কার যিম্মায়। তারপর আলোচনা সামনে বাড়াতে হবে।

 

মূলনীতি নং-৫

যে মাসআলা নিয়ে আলোচনা হবে উভয় পক্ষ প্রথমে উক্ত মাসআলার ব্যাপারে নিজেদের পরিপূর্ণ দাবি ও আমল উপস্থাপন করবে। তারপর উক্ত পরিপূর্ণ দাবি ও আমলের উপর পূর্ণাঙ্গ দলীল পেশ করবে।

অর্ধেক মাসআলার দলীল দিলে হবে না। বরং পূর্ণাঙ্গ আমলের দলীল দিতে হবে। যদি অর্ধেক আহলের দলীল দেয়া হয়, আর অর্ধেক আমলের ক্ষেত্রে দলীল উপস্থাপন করতে অক্ষমতা প্রকাশ করে, তাহলেও এক্ষেত্রে উক্ত আমলের দাবিদারকে ধোঁকাবাজ ও প্রতারক সাব্যস্ত করা হবে।

কারণ, সে উক্ত পূর্ণ মাসআলায় আমল করছে, অথচ তার আমলের পরিপূর্ণ দলীল পেশ করতে পারছে না, অথচ প্রচার করে বেড়াচ্ছে, তার আমলের দলীল হাদীসে বিদ্যমান, তাহলে সে প্রতারক ও মিথ্যুক নয়কি?

যেমন কয়েকটি উদাহরণ নিচে উদ্ধৃত করা হল,

রফয়ে ইয়াদাইন তথা নামাযে হাত উত্তোলন

আহলে হাদীসরা বলে- রফয়ে ইয়াদাইন তথা নামাযে তাকবীরে তাহরীমা ছাড়াও হাত তুলতে হবে। এক্ষেত্রে তাদের পরিপূর্ণ আমল কি?

চার রাকাত নামাযে তারা ১০ স্থানে রফয়ে ইয়াদাইন করে থাকে, যথা প্রথম ও তৃতীয় রাকাতের শুরুতে এবং প্রতি রাকাতের রুকুতে গমণের সময় এবং উঠার সময়। এই হল মোট ১০ স্থান। এই ১০ স্থানে তারা রফয়ে ইয়াদাইন করে থাকে। আর ১৮ স্থানে রফয়ে ইয়াদাইন করে না। যথা দ্বিতীয় রাকাত ও চতুর্থ রাকাতের শুরুতে এবং প্রতি রাকাতের সেজদাতে গমণ ও উঠার সময়। তাহলে প্রতি রাকাতে দুটি করে সেজদা হলে চার রাকাত নামাযে হচ্ছে ১৬টি সেজদা, আর দ্বিতীয় ও চতুর্থ রাকাতের শুরু নিয়ে হল ১৮টি স্থান। যে ১৮ স্থানে আহলে হাদীস দাবিদার ভাইয়েরা রফয়ে ইয়াদাইন করে না।

সেই সাথে তাদের দাবি হল এটি রাসূল সাঃ এর সর্বশেষ আমল।

আর যারা রফয়ে ইয়াদাইন করে না, তাদের নামায হয় না।

তাহলে রফয়ে ইয়াদাইনের ক্ষেত্রে আহলে হাদীসদের পরিপূর্ণ আমল ও দাবি কি?

১-    ১৮ স্থানের রফয়ে ইয়াদাইনের নিষেধাজ্ঞা।

২-    ১০ স্থানে রফয়ে ইয়াদাইন করতে হবেই।

৩-    সর্বদা করতে হবে এ শব্দ।

৪-    যারা এভাবে রফয়ে ইয়াদাইন করবে না, তাদের নামায হবে না।

এ চারটি পয়েন্টসহ দলীল উপস্থাপন করতে হবে। শুধু আংশিক দলীল গ্রহণযোগ্য হবে না। যদি আংশিক দলীল পেশ করে পরিপূর্ণ আমল করে, তাহলে তারা ধোঁকাবাজ প্রমানিত হয়ে যাবে।

ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পড়া

গায়রে মুকাল্লিদরা [জেহরী তথা জোরে কেরাত পড়া নামাযে] নামাযের মাঝে ইমামের পিছনে ১১৩ সূরা কখনোই পড়ে না। এসব পড়াকে তারা নিষিদ্ধ ও হারাম বলে থাকে।

আরো বলে থাকে যে, “যেমন সকল জামাতে পড়া নামাযের জন্য একজনের আজান, একজনের ইকামত, একজনের খুতবা ও একজনের সুতরাই যথেষ্ট। তেমনি একজনের সূরা মিলানো সকলের পক্ষ থেকে যথেষ্ট। কিন্তু সূরা ফাতিহা ইমামের পড়ার দ্বারা মুক্তাদীর জন্য যথেষ্ট হবে না। প্রতিটি মুক্তাদী নিজেই তা পড়া আবশ্যক। নতুবা মুক্তাদীদের নামায বাতিল ও বেকার হয়ে যাবে। আর [সিররী তথা কেরাত আস্তে পড়া নামায] নামাযের মাঝে মুক্তাদীদের জন্য সূরা ফাতিহা পড়া ফরজ। আর সূরা মিলানো মুস্তাহাব। 

এসব মাসআলা গায়রে মুকাল্লিদ বিতার্কিক প্রথমে কুরআন পাক দ্বারা প্রমাণ করবে। যদি না করতে পারে, তাহলে লিখে দিবে যে, “এ মাসআলায় কুরআনে পাক আমাদের মাথায় হাত রাখতে তৈরী নয়

দ্বিতীয় নাম্বার, এ পূর্ণাঙ্গ মাসআলাটিই এমন কিতাব দ্বারা প্রমাণিত করবে, যার সংকলক না মুজতাহিদ না মুকাল্লিদ। বরং গায়রে মুকাল্লিদ। সেই সাথে উক্ত হাদীসটি সহীহ হওয়াটিও দলিল দ্বারা প্রমাণ করতে হবে। স্মর্তব্য- গায়রে মুকাল্লিদদের নিকট দলিল শুধুমাত্র কুরআন ও হাদীস। কোন উম্মতীর বক্তব্য উপস্থাপন করার সাথে সাথেই তাকে বিতর্ক থেকে উঠিয়ে দেয়া হবে।

আমীন বিলজেহের তথা আমীন জোরে বলা প্রসঙ্গে

১-

সবাই জানে যে, অধিকাংশ নামায যেমন সুন্নাত ও নফল একাকি পড়া হয়। সে সময় গায়রে মুকাল্লিদরা আমীন আস্তে আস্তে বলে।

২-

জামাতের সাথে নামাযে ইমাম একজন হয়, আর মুক্তাদী হয় বাকিরা। এখানে একটি বিষয় পরিস্কার থাকা দরকার যে, গায়রে মুকাল্লিদ মুসল্লি প্রতিদিন এগার সিররী [আস্তে কেরাত পড়া নামায] রাকাতের পিছনে আস্তে আস্তে আমীন বলে। আর ছয় [জেহরী নামায তথা যাতে কিরাত জোরে পড়া হয়] রাকাতে পড়ে জোরে জোরে।

এখানে দেখুন ছয় রাকাতের চেয়ে এগার রাকাত বেশি। অর্থাৎ জোরের চেয়ে আস্তে  আমীন বলে বেশি। তাই আগে প্রথমে ১১ রাকাতের বিষয়টি পরিস্কার হওয়া দরকার। তারপর ছয় রাকাতের বিষয়।

৩-

কোন কোন মুসল্লি এমন সময় শরীক হয় যে, ইমাম সাহেব ফাতিহার অর্ধেক পড়ে ফেলেছে। এমতাবস্থায় মুক্তাদী ফাতিহা শেষ করার পূর্বেই ইমামের ফাতিহা শেষ হয়ে যায়। তাই সে সময়ও তার জোরে সবার সাথে আমীন বলতে হয়। তাহলে কী দাঁড়াল? মুক্তাদী সূরা ফাতিহা শেষ না করেই আমীন বলে দিল।

এভাবে সূরা ফাতিহা শেষ করার আগেই আমীন বলা কোন আয়াত বা হাদীসের দ্বারা প্রমাণিত?

৪-

গায়রে মুকাল্লিদদের ইমামরাও ১১ সিররী রাকাতে সর্বদা আস্তে আমীন বলে। একাজটির প্রমাণ সর্বপ্রথম সাব্যস্ত হওয়া উচিত। তারপর যে ৬ রাকাতে জোরে জোরে আমীন বলা হয়, সেটার প্রমাণ সর্বদার শর্তের সাথে ইবারত দ্বিতীয় দফা দেখাতে হবে।

এ মাসআলাটিও গায়রে মুকাল্লিদ বিতার্কিক সর্ব প্রথম কুরআনে কারীমের দ্বারা প্রমাণিত করবে। যদি না করতে পারে, তাহলে লিখে দিবে যে, “কুরআনে কারীম এ মাসআলায় তাদের উপর হাত রাখতে তৈরী নয়

তারপর পূর্ণ মাসআলাটি হাদীস দ্বারা প্রমাণ করে দেখাবে। হাদীসও এমন কিতাব থেকে দেখাতে হবে, যার সংকলক না মুজতাহিদ না মুকাল্লিদ। বরং কোন গায়রে মুকাল্লিদ কিতাবটি সংকলন করেছেন। সেই সাথে হাদীসটিকে দলিল দ্বারা সহীহ সাব্যস্ত করতে হবে। আর একথা কিছুতেই ভুলবেন না যে, আহলে হাদীস দাবিদারদের নিকট দলিল শুধুমাত্র কুরআন ও হাদীস। তাই যদি গায়রে মুকল্লিদ বিতার্কিক সাহেব কোথাও কুরআন ও হাদীস ছাড়া কোন উম্মতী  বা স্বীয় সিদ্ধান্ত জানায়, তাহলে তাকে সে মুনাজারা থেকে উঠিয়ে দেয়া হবে। কারণ সে তখন আর আহলে হাদীস থাকবে না। আহলে রায় হয়ে যাবে।

এক্ষেত্রে আহলে হাদীস দাবিদার লোকটি যদি আপনার কথার মাহাত্ব ও ওজন না বুঝেই বোকামী করে তার দাবির আংশিক প্রমাণ করার জন্য ইমাম শাফেয়ী রহঃ এর মুকাল্লিদ ইমাম বুখারী রহঃ এর সংকলিত কিতাব বুখারী শরীফ থেকে প্রমাণ পেশ করার ব্যর্থ চেষ্টা করে বলে-

আত্বা (রঃ) বলেন, ‘’আমীন’’ হল দুআ। তিনি আরো বলেন, আবদুল্লাহ ইবন যুবায়ের (রাঃ) ও তাঁর পিছনের মুক্তাদীগন এত জোড়ে ‘’আমীন’’ বলতেন যে, মসজিদে গুমগুম শব্দ হত। আবু হুরায়রাহ (রাঃ) ইমামকে ডেকে বলতেন, আমাকে ‘’আমীন’’ বলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করবেন না, নাফি (রাঃ) বলেন, ইবন উমার (রাঃ) কখনই ‘’আমীন’’ বলা ছাড়তেন না এবং তিনি তাদেরকে ‘’আমীন’’ বলতে উৎসাহিত করতেন। [বুখারী ১০/১১১]

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নাবী (সঃ) বলেছেনঃ ইমাম যখন ‘’আমীন’’ বলবে তখন তোমরাও ‘’আমীন’’ বলবে। কেননা, যে ব্যাক্তির ‘’আমীন’’ বলা ফেরেশতাদের ‘’আমীন’’ বলার সাথে মিলবে তাঁর পূর্বেকার সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। ইবন শিহাব (রঃ) বলেন, রাসুল (সঃ) সুরাহ ফাতিহা শেষে ‘’আমীন’’ বলতেন। [বুখারি; হাদীস নঃ ৭৮০]

তাহলে তাকে ঠান্ডা মাথায় জবাব দিন-

প্রশ্ন নং-১

আতা রহঃ এর মতে আমীন হল দুআ, দুআ কি জোরে পড়া হয় না আস্তে?

আব্দুল্লাহ বিন জুবায়ের রাঃ এর বর্ণনাটির সূত্র কি?

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ এর বক্তব্যটির সূত্র কোথায়?

সেই সাথে ইবনে ওমর রাঃ আমীন জোরে বলতেন একথার সূত্র কোথায়?

সূত্র ছাড়া কথা কি গ্রহণযোগ্য? অন্যের কাছে দাবি করার সময় সূত্র চান, আর নিজের বেলায় এত গাফলতী কেন?

জেহরীর আর সিররীর যে পার্থক্য করেন, তা কোন হাদীস দ্বারা প্রমাণ হয়? এবং কিভাবে?

বুখারীর যে হাদীসটির কথা হলসেটির আরবীসহ পরে বর্ণিত একই টাইপের হাদীসটিও দেখা উচিত।

حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يُوسُفَ، قَالَ: أَخْبَرَنَا مَالِكٌ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ المُسَيِّبِ، وَأَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، أَنَّهُمَا أَخْبَرَاهُ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” إِذَا أَمَّنَ الإِمَامُ، فَأَمِّنُوا، فَإِنَّهُ مَنْ وَافَقَ تَأْمِينُهُ تَأْمِينَ المَلاَئِكَةِ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ – وَقَالَ ابْنُ شِهَابٍ – وَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: آمِينَ

অনুবাদ-হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-যখন ইমাম আমীন বলে তখন তোমরা আমীন বল। কেননা যাদের আমীন বলা ফেরেস্তাদের আমীন বলার সাথে মিলে যায় তাহলে তাদের আগের সকল গোনাহ মাফ হয়ে যায়। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৭৪৭, ৭৮০}

আচ্ছা, ঠিক একই টাইপের বর্ণনা বুখারীতে একটু পর এল-

حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يُوسُفَ، قَالَ: أَخْبَرَنَا مَالِكٌ، عَنْ سُمَيٍّ، عَنْ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” إِذَا قَالَ الإِمَامُ: سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ، فَقُولُوا: اللَّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الحَمْدُ، فَإِنَّهُ مَنْ وَافَقَ قَوْلُهُ قَوْلَ المَلاَئِكَةِ، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ

অনুবাদ-হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-যখন ইমাম সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ বলে তখন তোমরা বল-আল্লাহুম্মা রাব্বানা লাকাল হামদ, কেননা যার বলা ফেরেস্তাদের বলার সাথে মিলে যায়, তার আগের সকল গোনাহ মাফ হয়ে যায়। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৭৬৩, ৭৯৬}

নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে দুটি হাদীসের দিকেই তাকান।

প্রশ্ন নং-২

যদি প্রথম হাদীসটি দিয়ে, ফেরেস্তার আমীনের সাথে মিলানোর জন্য আমীন জোরে বলতে হয়, উক্ত হাদীসের কারণে, তাহলে পরের হাদীসে ফেরেস্তার কথার সাথে কথা মিলানোর জন্য রাব্বানা লাকাল হামদ কেন জোরে বলা হয় না? কেন এখানে আস্তে বলেন?

আগের আমীনের হাদীস, আর রাব্বানা লাকাল হামদ বলার হাদীসতো একই মানের, একই শব্দের এবং বুখারীরই। তাহলে এক স্থানে আস্তে বলেন, আরেক স্থানে জোরে বলার জন্য এত তোড়জোড় কেন?

প্রশ্ন নং-৩

ফেরেস্তার আমীনের সাথে মিলানোর যুক্তি দিলেন, আমাদের প্রশ্ন হল, ফেরেস্তারা কি আমীন জোরে বলেন? না আস্তে?

নিশ্চয় আস্তে বলেন। তাহলে ফেরেস্তার আমীনের সাথে মিলতে হলে কি আমীন জোরে বললে ফেরেস্তার সাথে মিলবে না আস্তে বললে মিলবে?

পরিস্কার ভাষায় জবাব দিন।

প্রসঙ্গ তারাবীহ বিশ রাকাত না আট রাকাত?

আহলে হাদীস দাবিদারকে তারাবীহ বিষয়ে তাদের পূর্ণাঙ্গ আমল কুরআন ও সহীহ হাদীস দিয়ে প্রমাণ করতে বলুন।

তাদের মতে রাসূল সাঃ থেকে আট রাকাতের উর্দ্ধে প্রমাণিত নয়, তাই তারা আট রাকাত তারাবীহ পড়ে থাকে। সাহাবীর কথা দলীল নয় তাদের কাছে, তাই হযরত উমর রাঃ বিশ রাকাত পড়ার নির্দেশ দেয়া, এবং জামাতের সাথে সাহাবায়ে কেরামের পড়া, সেই সাথে নিরবচ্ছিন্নসূত্রে তা আজো মসজিদে নববী এবং বাইতুল্লাহে পড়ে আসাও তাদের কাছে দলীল নয়। কারণ সাহাবীর আমল ও বক্তব্য তাদের কাছে দলীল নয়।

যেহেতু তাদের বক্তব্য এমন। তাই আপনি তাদের কাছে তারাবীহ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ আমলের দলীল রাসূল সাঃ থেকে প্রমানিত করার জন্য বলুন।

১-    আহলে হাদীসরা রমজানের চাঁদ উঠার পর থেকেই তারাবীহ পড়া শুরু করে, শেষ করে শাওয়ালের চাঁদ উঠলে। অর্থাৎ পুরো রমজান মাস গুরুত্বের সাথে প্রতিদিন তারাবীহ পড়ে থাকে।

২-    প্রত্যেক দিন ইশার নামাযের পরপরই তারাবীহ শুরু করে দেয়।

৩-    ইশার পর তারাবীহ শুরু করে রাত্রের প্রথমাংশে। শেষাংসে নয়।

৪-    তারাবীহ শেষে জামাতের সাথে বিতির পড়ে থাকে।

৫-    তারাবীহের মাঝে খতমে কুরআন করে থাকে।

এ পাঁচটি আমল তারা করে থাকে তারাবীহের মাঝে। এবার তাদের বলুন, এ পূর্ণাঙ্গ আমল রাসূল সাঃ থেকে প্রমাণিত করে দেখাতে। যদি না পারে, তাহলে তাদের জন্য বিশ রাকাতকে বিদআত বলার কোন অধিকার থাকে না। যদি বলে যে, এসব সাহাবী থেকে প্রমানিত। রাসূল সাঃ থেকে নয়, তাহলে ঠান্ডা মাথায় বলুন, সাহাবীদের আমল অনুসরণ করে বিশ রাকাত পড়ে যদি আমরা বিদআত করে থাকি, তাহলে তারা সাহাবীদের আমল অনুপাতে তারাবীহ বিষয়ে পাঁচটি কাজ যা রাসূল সাঃ থেকে প্রমাণিত নয় তা করে তারা কেন বিদআতি নয়?

তারাবীহ নামায বিষয়ে কথিত আহলে হাদীস ভাইদের ধোঁকাবাজী জানতে শুনুন-

উপসংহার

এভাবে জেনে বুঝে আহলে হাদীস ফিতনার মুকাবিলা করতে হবে। দেখবেন, কতটা দলীলহীন আর অযৌক্তিক এক ভ্রান্ত মাযহাব এ আহলে হাদীস মাযহাব। আপনার চোখের সামনে ভেসে উঠবে আহলে হাদীস নামধারী দলীলহীন স্লোগান সর্বস্ব একদল মানুষের আসল চিত্র।

আল্লাহ তাআলা আমাদের কথিত আহলে হাদীস বাতিল ফিতনাসহ সকল প্রকার ফিতনার মূলোৎপাটন করে সহীহ দ্বীন পালন করার তৌফিক দান করুন। আমীন ছুম্মা আমীন।

0Shares

আরও জানুন

বাউল সম্প্রদায় সম্পর্কে একথাগুলো কি আমরা জানি?

সংগৃহিত  আমরা জানি না লালন আসলে কে? লালন ছিলেন বাউল সম্প্রদায়ের গুরু।আমরা কি জানি কারা …

One comment

  1. ইমাম বুখারি র. কি কোন ফতোয়ার কিতাব লিখেছেন?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *