প্রশ্ন
From: M. Tazin
বিষয়ঃ অসিয়ত,ফারায়েজ ও বিধবার মাসায়েল
প্রশ্নঃ
আস সালামু আলাইকুম,
একজন বিধবা নারী, তাঁর স্বামীর মৃত্যুর পরে তাঁর সন্তানদের হক্ক,সম্পদ,হজ্জের আবশ্যকতা ইত্যাদি জরুরি কিছু মাসায়েল হাল করার জন্য সাহায্যপ্রার্থী। যত দ্রুত সম্ভব জবাব দিলে উপকৃত হব।
১. মৃত্যুর কত মাস পূর্বের বক্তব্য মৃত ব্যক্তির অসিয়াত বলে গণ্য হবে?
২. বিধবা নারীর সংসারে অভিভাবক কে, মা? নাকি বড় ছেলে?
৩. কোন বিধবা মহিলা ইদ্দতকালীন সময় পার হবার পরে মাহরাম ব্যতীত কত কিলোমিটার পর্যন্ত ভ্রমণ করতে পারবে? প্রয়োজনীয় কাজে মাহরাম ব্যতীত দূরে অবস্থান করতে পারবে কিনা? পারলে কত সময় পর্যন্ত?
৪. বিধবা নারীর সন্তানদের সাথে বসবাসের সমস্যা হলে সন্তানদের আলাদা করে দিয়ে সে তার স্বামীর বসতভিটায় একা বসবাস করতে পারবে কিনা?
সন্তান বে-নামাজী হলে করণীয় কি? ছেলের স্ত্রী নামাজ না পড়লে করণীয় কি?
৫. বিধবা নারীর সংসারের আসবাবপত্রের মালিক কে? তার মৃত্যুর পর গহনাদির মালিকানা সম্পর্কে সে কি কোন অসিয়াতনামা লিখে যেতে পারবে? নাকি ইসলামী শরিয়া মোতাবেক বন্টন হবে?
৬. বিধবা নারীর স্বামী বেঁচে থাকাকালীন তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে উমরাহ হজ্জ করার উদ্দেশ্যে তাঁর অফিস থেকে লোন তুলেছিলেন, ৩,০০,০০০/- পরিমাণ। সে টাকা যেন অন্য কাজে ব্যয় না হয়ে যায় সে জন্য তিনি সঞ্চয়পত্র(সুদবিহীন) কিনে রেখেছিলেন,সরকার থেকে উমরাহ করার অনুমতিপত্র না পাওয়ায় তাঁর হজ্জে যাওয়া হয়নি। উক্ত সঞ্চয়পত্রের বিপরীতে তিনি তাঁর স্ত্রীকে নমিনী করে গিয়েছেন। তাঁর অবর্তমানে(মৃত্যুর কারণে) উক্ত টাকার মালিক কে হবে?
সংসারের প্রয়োজনে উক্ত টাকা ব্যয় করা যাবে কিনা?
মৃতব্যক্তি ১৯৯৮ সাল থেকে হৃদরোগে ভুগছিলেন। তথাপি তাঁর নিয়ত ছিল অবসরে এসে ভাতা পাবার পরে তিনি মূল হজ্জ পালন করবেন। কারণ তাঁর কোন জমানো টাকা ছিল না এবং তাঁর চিকিৎসার জন্যই সারা বছর প্রচুর টাকা ব্যয় হয়ে যেত। এমতাবস্থায় তাঁর উপর হজ্জ ফরয হয়েছিল কিনা?
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
১ম প্রশ্নের জবাব
অসিয়ত নামে মৃত্যুর পূর্বে যা কিছু বলা হয় সেটিকেই অসিয়ত হিসেবে গণ্য হবে। এর কোন সময়সীমা নির্ধারিত নেই।
২য় প্রশ্নের জবাব
অভিভাবক হয় মূলত পুরুষ। তাই বড় ছেলেই হবে অভিভাবক। যদিও পরামর্শ নিবে মায়ের কাছ থেকে।
الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلَىٰ [٤:٣٤]
পুরুষেরা নারীদের উপর কৃর্তত্বশীল এ জন্য যে, আল্লাহ একের উপর অন্যের বৈশিষ্ট্য দান করেছেন। [সূরা নিসা-৩৪]
৩য় প্রশ্নের জবাব
সফরের দূরত্ব তথা ৮৩ কিলোমিটারের থেকে কম দূরত্বে নিরাপত্তা থাকলে সফর করতে পারবে। কিন্তু এর চেয়ে বেশি দূরত্বে নিরাপত্তা থাকলেও মাহরাম ছাড়া সফর করতে পারবে না।
عن أبي سعيد الخدري قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم لا يحل لإمرأة تؤمن بالله واليوم الآخر أن تسافر سفرا يكون ثلاثة أيام فصاعدا إلا ومعها أبوها أو ابنها أو زوجها أو أخوها أو ذو محرم منها
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ আল্লাহ তাআলা এবং কিয়ামত দিবসের উপর ঈমান রাখে এমন কোন মহিলার জন্য জায়েজ নয়, তিন দিন বা এর চেয়ে অধিক দিনের সফর করে অথচ তার সাথে তার পিতা,তার ছেলে,বা তার স্বামী বা তার ভাই কিংবা কোন মাহরাম না থাকে। {সহীহ মুসলিম,হাদীস নং-৪২৩}
৪র্থ প্রশ্নের উত্তর
যথা সম্ভব ছেলেদের সাথেই থাকা উচিত। যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে পর্দা ও নিরাপত্তা থাকলে আলাদা বসবাসে কোন বিধিনিষেধ নেই।
الْمُعْتَدَّةُ إذَا كَانَتْ فِي مَنْزِلٍ لَيْسَ مَعَهَا أَحَدٌ وَهِيَ لَا تَخَافُ مِنْ اللُّصُوصِ وَلَا مِنْ الْجِيرَانِ وَلَكِنَّهَا تَفْزَعُ مِنْ أَمْرِ الْمَبِيتِ إنْ لَمْ يَكُنْ الْخَوْفُ شَدِيدًا لَيْسَ لَهَا أَنْ تَنْتَقِلَ مِنْ ذَلِكَ الْمَوْضِعِ، وَإِنْ كَانَ الْخَوْفُ شَدِيدًا كَانَ لَهَا أَنْ تَنْتَقِلَ كَذَا فِي فَتَاوَى قَاضِي خَانْ. (الفتاوى الهندية، كتاب الطلاق، الباب الرابع عشر فى الحداد-1/535)
নামাযের আদেশ করা মায়ের দায়িত্ব, কিন্তু না পড়লে আল্লাহর কাছে হেদায়াতের দুআ করা ছাড়া আর কোন দায়িত্ব নেই।
৫ম প্রশ্নের উত্তর
মহিলার জীবদ্দশায় তার মালিকানা সকল সম্পদই তার। তার মৃত্যুর পর তা শরয়ী মিরাছনীতি অনুপাতে বন্টিত হবে। ইচ্ছে করলে উক্ত নারী তার জীবদ্দশায় কাউকে মালিকও বানিয়ে দিতে পারে। এটি তার ইচ্ছাধীন।
যদি জীবদ্দশায় সুস্থ্য অবস্থায় তা কাউকে দান বা দিয়ে না দেয়, তাহলে মৃত্যুর পর শরয়ী মিরাছনীতি অনুপাতে বন্টিত হবে।
فى البيضاوى- والمالك هو المتصرف فى الأعيان المملوكة كيف شاء الخ (تفسير بيضاوى، سورة الفاتحة- 1/7)
৬ষ্ঠ প্রশ্নের উত্তর
উপরোক্ত বিবরণ অনুপাতে নমীনী হিসেবে উপরোক্ত টাকার মালিকানা স্বামী মারা যাওয়া বিধবা মহিলারই হবে। তিনি যেভাবে ইচ্ছে তা ব্যয় করতে পারেন।
উপরোক্ত বিবরণ অনুপাতে যদি মৃত ব্যক্তির হজ্ব করার মত অর্থ সম্পদ না থেকে থাকে, তাহলে তার উপর হজ্ব করা আবশ্যক ছিল না।
وفى الهندية- ولو وهب رجل شيئا لأولاده في الصحة وأراد تفضيل البعض على البعض في ذلك لا رواية لهذا في الأصل عن أصحابنا، وروي عن أبي حنيفة – رحمه الله تعالى – أنه لا بأس به إذا كان التفضيل لزيادة فضل له في الدين، وإن كانا سواء يكره وروى المعلى عن أبي يوسف – رحمه الله تعالى – أنه لا بأس به إذا لم يقصد به الإضرار، وإن قصد به الإضرار سوى بينهم يعطي الابنة مثل ما يعطي للابن وعليه الفتوى هكذا في فتاوى قاضي خان وهو المختار، – (الفتاوى الهندية، كتاب الهبة، الباب السادس في الهبة للصغير ٤/٣۹۱، رد المحتار-12/608)
فى البيضاوى- والمالك هو المتصرف فى الأعيان المملوكة كيف شاء الخ (تفسير بيضاوى، سورة الفاتحة- 1/7)
وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا ۚ [٣:٩٧]
আর এ ঘরের হজ্ব করা হলো মানুষের উপর আল্লাহর প্রাপ্য;যে লোকের সামর্থ রয়েছে এ পর্যন্ত পৌছার।
(وَمِنْهَا الْقُدْرَةُ عَلَى الزَّادِ وَالرَّاحِلَةِ) بِطَرِيقِ الْمِلْكِ أَوْ الْإِجَارَةِ (الفتاوى الهندية، كِتَابُ الْمَنَاسِكِ، الْبَابُ الْأَوَّلُ فِي تَفْسِيرِ الْحَجِّ، وَفَرْضِيَّتِهِ وَوَقْتِهِ وَشَرَائِطِهِ، وَأَرْكَانِهِ وَوَاجِبَاتِهِ وَسُنَنِهِ وَآدَابِهِ، وَمَحْظُورَاتِهِ-1/287
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
ইমেইল– [email protected]