প্রচ্ছদ / কসম ও মান্নত / মনে মনে মানত করলে মানত হয়? মানত ও নিয়তের মাঝে পার্থক্য কি?

মনে মনে মানত করলে মানত হয়? মানত ও নিয়তের মাঝে পার্থক্য কি?

প্রশ্নঃ

আসসালামু আলাইকুম
শায়েখ,আমি একদিন মনে মনে এক প্রকার মানত করি যে,আমার স্বামী যদি সঠিক হয়, আমি আর জব করব না।আমি তখন খুবই দুশ্চিন্তায় ছিলাম।এখন আমার পরিবার ও স্বামী জবের জন্য প্রেশার দিচ্ছে। এখন আমি জব করলে কি মানত ভংগ হবে???
From: Amreen Khan [email protected]

উত্তর :

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
حامدا ومصليا ومسلما

প্রশ্নোক্ত বিবরণ মতে কোন মানত হয়নি। তাই দুশ্চিন্তারও কারণ নেই।
বিষয়টি বুঝার জন্য মানত ও নিয়তের পার্থক্য বুঝতে হবে।

নিয়ত ও মানতের পার্থক্য
১. অর্থের দিক থেকে পার্থক্য
• নিয়ত:
মনে মনে কোনো কাজ করার দৃঢ় সংকল্প বা ইচ্ছা করার নাম নিয়ত। যেমন, কোনো ব্যক্তি মনে মনে বলে, “আমি সদকা করব” এটি নিয়ত; এতে সদকা করা তার ওপর বাধ্য হল না।

• মানত/নযর:
একটি নেক আমল নিজের ওপর বাধ্যতামূলক করে নেওয়া এবং তা স্পষ্ট ভাষায় উচ্চারণ করা।
যেমন, কেউ বলে, “আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করলে আমি তিন দিন রোজা রাখব” এটি মানত; এখন রোজা রাখা তার ওপর জরুরি।

২. শর্তের দিক থেকে পার্থক্য
• নিয়ত:
শুধু মনে ইচ্ছা করলেই নিয়ত হয়; কোনো শব্দ উচ্চারণ জরুরি নয়।

• মানত:
মুখে স্পষ্টভাবে বলতেই হবে—যেমন “আল্লাহর জন্য আমার ওপর…” শব্দ ছাড়া মানত হয় না।

৩. দায়বদ্ধতার দিক থেকে পার্থক্য
• নিয়ত:
নিয়ত কোনো কাজকে নিজের ওপর ওয়াজিব বা বাধ্যতামূলক করে দেয় না।
• মানত:
মানত করলে কাজটি সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তির ওপর বাধ্যতামূলক হয়ে যায়; তা আদায় করা তার দায়িত্ব।

মানত সহিহ হওয়ার শর্তসমূহ:
১.. যেসব আমলের মানত করা হবে, সেই আমলের শ্রেণি শরীয়তে মূলত ফরজ হতে হবে।
যেমন, রোজা, নামাজ, সদকা, ইতিকাফ ইত্যাদির মানত করা সহিহ।
কিন্তু অসুস্থকে দেখতে যাওয়া (ইয়াদত), জানাজার সঙ্গে যাওয়া, মসজিদে প্রবেশ করা এসব কাজের নযর সহিহ নয়; এগুলোর নযর করলে কিছুই ওয়াজিব হবে না।

২. মানতকৃত কাজটি স্বয়ং উদ্দেশ্য হতে হবে, কেবল মাধ্যম বা উপায় নয়
অর্থাৎ এমন কাজের নযর সহিহ হবে না যা নিজে উদ্দেশ্য নয় বরং অন্য ইবাদতের উপায় বা মাধ্যম—
যেমন: ওজু করা, সিজদায়ে তিলাওয়াত, কুরআন তিলাওয়াত করা, মসজিদে প্রবেশ করা, এসবের নযর সহিহ নয়।

৩. যে আমলের মানত করা হচ্ছে, তা ঐ ব্যক্তি বা অন্য কোনো সময়ে মূলত ফরজ বা ওয়াজিব না হওয়া
অর্থাৎ, তিনি যদি যোহরের নামাজ বা অন্য কোনো ফরজ নামাজকে নযর করেন এটি সহিহ হবে না।
কারণ ফরজ নামাজ তো মূলত তার ওপর বিদ্যমান তার নযর করা অর্থহীন।

৪. মানতকৃত কাজটি নিজের স্বভাবগত দিক থেকে গুনাহের কাজ না হওয়া
যেমন, মদ পান করা, কাউকে হত্যা করা, গুনাহের কোনো কাজ করার নযর করা এসব নযর সহিহ নয়।

৫. যে কাজের মানত করছে, কাজটি সংঘটিত হওয়া অসম্ভব (মুহাল) না হওয়া
যেমন, কেউ অতীত দিনের রোজা রাখার নযর করল এটি অসম্ভব; তাই এই নযর সহিহ হবে না এবং তার ওপর এমন কোনো নযর ওয়াজিবও হবে না।

৬. নযরের শব্দ মুখে উচ্চারণ করা
শুধু মনে মনে ইচ্ছা করলেই নযর হয় না; অবশ্যই মুখে স্পষ্টভাবে নযরের শব্দ উচ্চারণ করতে হবে।

৭ ও ৮. যে পরিমাণ সম্পদের নযর করেছে, সে পরিমাণ সম্পদ তার মালিকানায় থাকা
এবং সেই সম্পদ অন্য কারও মালিকানায় না থাকা।
তবে এই দুই শর্ত কিছু নির্দিষ্ট অবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত।
যেমন,  কেউ নযর করল যে সে এক হাজার টাকা সদকা করবে, কিন্তু তার কাছে কেবল একশ টাকা আছে—
তাহলে তার ওপর কেবল উপস্থিত একশ টাকা সদকা করা ওয়াজিব হবে; বাকি অংশ তার ওপর ওয়াজিব নয়।

৯. নযরের বাক্যের সঙ্গে সঙ্গে “ইনশাআল্লাহ” শব্দ যুক্ত না করা
যদি কেউ নযরের কথার সঙ্গে সাথেসাথেই “ইনশাআল্লাহ” বলে দেয়, তাহলে তার নযর সহিহ হবে না, এবং কোনো দায়িত্বও তার ওপর বর্তাবে না।

শরঈ দলীলঃ

زبدۃ الفقہ، ص:528 تا 530، ط:زوار اکیڈمی

البحر الرائق: (كتاب الصوم، باب مايفسد الصوم ومالايفسده، 316/2، ط: رشيدية)
“واعلم بأنهم صرحوا بأن شرط لزوم النذر ثلاثة كون المنذور ليس بمعصية وكونه من جنسه واجب وكون الواجب مقصودا لنفسه قالوا فخرج بالأول النذر بالمعصية والثاني نحو عيادة المريض والثالث ما كان مقصودا لغيره حتى لو نذر الوضوء لكل صلاة لم يلزم وكذا لو نذر سجدة التلاوة.”

بدائع الصنائع: (كتاب النذر، فصل: وأما شرائط الركن فأنواع، 82/5، ط: سعيد)
“(ومنها) أن يكون ‌قربة ‌مقصودة، فلا يصح النذر بعيادة المرضى وتشييع الجنائز والوضوء والاغتسال ودخول المسجد ومس المصحف والأذان وبناء الرباطات والمساجد وغير ذلك وإن كانت قربا؛ لأنها ليست بقرب مقصودة ويصح النذر بالصلاة والصوم والحج والعمرة والإحرام بهما والعتق والبدنة والهدي والاعتكاف ونحو ذلك؛ لأنها قرب مقصودة.”

الفقه على المذاهب الأربعة: (كتاب اليمين، مباحث النذر، 131/2، ط: دار الكتب العلمية)
“ويشترط لصحة النذر سبعة شروط: الأول أن يكون من جنس المنذور فرض أو واجب اصطلاحي على الأصح كالصوم والصلاة والصدقة.”

والله أعلم بالصواب
উত্তর লিখনে,
মুহা. শাহাদাত হুসাইন , ছাগলনাইয়া, ফেনী।
সাবেক শিক্ষার্থী: ইফতা বিভাগ
তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
সত্যায়নে
মুফতী লুৎফুর রহমান ফরায়েজী দা.বা.
পরিচালক– তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া ইসলামিয়া দারুল হক লালবাগ ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা: জামিয়াতুস সুন্নাহ কামরাঙ্গিরচর, ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা: কাসিমুল উলুম আলইসলামিয়া, সালেহপুর আমীনবাজার ঢাকা।
পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।
শাইখুল হাদীস: জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া, সনমানিয়া, কাপাসিয়া, গাজীপুর।

0Shares

আরও জানুন

কাজি কর্তৃক কাবিননামায় সাইন করলে কি স্ত্রী তালাকে তাফওয়ীজের মালিক হয়?

প্রশ্নঃ আসসালামু আলাইকুম। হুজুর স্বামি যদি বিয়ের আগে তালাকে তাফবিজ সম্পর্কে কিছুই জানত না।কাজী বিয়ের …

আহলে হক্ব বাংলা মিডিয়া সার্ভিস