প্রচ্ছদ / ঈমান ও আমল / ‌আল্লাহ তাআলা সব ভাষা জানার পরও নামায আরবী ভাষাতেই কেন পড়তে হয়?

‌আল্লাহ তাআলা সব ভাষা জানার পরও নামায আরবী ভাষাতেই কেন পড়তে হয়?

প্রশ্ন

From: মোঃ জহিরুল ইসলাম
বিষয়ঃ নামাজ/নামাজের মধ্যে শব্দ আরবি ভাষাতেই হতে হয়

প্রশ্নঃ
আসসালামু আলায়কুম।আমরা জানি নামাজ/নামাজের মধ্যে শব্দ আরবি ভাষাতে পরতে হয় যদিও আমাদের মাতৃ ভাষা আরবি না হয়। আল্লাহ্‌ সুবাহানাহুয়াতালা সব ভাষা জানেন তাকে যে ভাষাতে ডাকা হোকনা কেন। আমার জানার ইচ্ছা বা প্রশ্ন হল শরীয়তের হুকুম কিভাবে এলো (বা শরীয়তের দালিল কি) যে আমাদের নামাজ/নামাজের মধ্যে শব্দ আরবি ভাষাতেই পরতে হবে যদিও আমাদের মাতৃ ভাষা আরবি না হয়? জাযাকুমুল্লাহ খাইর।

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

আল্লাহ তাআলাই সকল ভাষার স্রষ্টা। তিনি সকল ভাষাই জানেন ও বুঝেন। মাখলুক যতটুকু জানে ও বুঝে এর চেয়ে অগনিত গুণ বেশি আল্লাহই ভাষা সম্পর্কে সম্মক অবগত। কিন্তু আল্লাহ তাআলা আরবী ভাষায় কথা বলেন।

আরবী ভাষা আল্লাহ ও নবীর ভাষা। জান্নাতীদের ভাষা। কুরআনের ভাষা। আল্লাহ যে শব্দে যে কথা বলেছেন, এর যথার্থ অনুবাদ আর কোন ভাষায় অন্য কেউ করতে পারে না। হ্যাঁ, ভাবার্থ বা কাছাকাছি অর্থ করা যায়। করেছেনও অনেকে। কিন্তু কুরআন যে শব্দ বলেছে, এর যে শক্তি এবং আবেদন তা অন্য কোন ভাষায় কোন মাখলুক প্রকাশ করতে পারে না। কারণ মাখলুক খালেকের ভাষাকে অন্য ভাষায় পূর্ণাঙ্গরূপে ভাষান্তর করতে সক্ষমই নয়।

ইসলাম কিয়ামত পর্যন্তের ধর্ম। তা অবিকৃত আকারে বিদ্যমান থাকার জন্য এমন কিছু মূলনীতি প্রয়োজন ছিল যা তাতে হাজার বছর পেড়িয়ে গেলেও সংরক্ষিত ও অবিকৃত রাখবে।

এর মাঝে একটি হল, ইসলামের ইবাদতের বিষয়গুলো এবং মৌলিক কিতাব তথা কুরআন ও হাদীসকে তার মূল ভাষায় বাকি রাখা। বুঝার জন্য ভাষান্তর হতে পারে। কিন্তু মূল ইবাদত এবং মূল কিতাব অবশিষ্ট রাখতে হবে।

নতুবা শুধু অনুবাদ ছড়ানো হলে এক সময় মূল কিতাবই হারিয়ে যাবে। যেমন তওরাত, যবুর ও ইঞ্জিলের ক্ষেত্রে হয়েছে। এসব কিতাব এমনভাবে একের পর ভাষান্তর থেকে ভাষান্তর হয়েছে যে, এগুলোর মূল ভাষা হিব্রু এবং ইব্রানী ভাষায় মূল কিতাব এখন পৃথিবীর কোথাও বিদ্যমান নেই। যার ফলে উক্ত কিতাবগুলো তার মূল প্রতিবাদ্য বিষয়গুলো হারিয়ে মানবরচিত গ্রন্থে পরিণত হয়েছে।

তাই ইসলামকে তার মূল ও আদি চেহারায় বাকি রাখার জন্য ইবাদতসমূহ যেমন আজান, ইকামত, নামায ইত্যাদির মাঝে কুরআন ও হাদীসের মৌলিক ভাষাকে আবশ্যকীয় রাখা হয়েছে। যেন তা ভাষান্তরের ফলে বিকৃতির স্বীকার না হয়।

ইসলাম খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগে অর্থ পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়লেও পৃথিবীর কোন প্রান্তে ইসলামের কোন ইবাদত পালন করার সময় আরবী ছাড়া অন্য ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে বা অনুবাদ করা হয়েছে এর কোন নজীর নেই।

যেমন আজান আরবীতে না দিয়ে বাংলা, ফার্সীতে দেয়া, নামাযের আরকানগুলোর তাকবীর অন্য ভাষায় দেয়া ইত্যাদির কোন নজীর ইসলামের সূচনালগ্ন থেকে নিয়ে অদ্যবধি নেই। কারণ একটাই। এসবের অনুমোদন নবী থেকে প্রমানিত নয়। তাই এসব ইবাদত যেভাবে, যে শব্দে এসেছে, হুবহু সেই পদ্ধতি ও শব্দে-বাক্যে অবিকৃত রেখে আদায় করাই কিয়ামত পর্যন্ত মুসলিম নরনারীর উপর আবশ্যক। এখানে যুক্তি তালাশের কোন সুযোগ নেই।

হযরত ইরবাস বিন সারিয়া রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন,

مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ يَرَى بَعْدِي اخْتِلَافًا كَثِيرًا، فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ، وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ، وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ، فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ، وَإِنَّ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ

তোমাদের মাঝে আমার পর জীবিত থাকবে, তারা অনেক মতভেদ দেখবে। তখন তোমাদের উপর আমার এবং আমার হেদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নত আঁকড়ে ধরবে। সেটিকে মাড়ির দাত দিয়ে কামড়ে রাখবে। আর সাবধান থাকবে নব উদ্ভাবিত ধর্মীয় বিষয় থেকে। কেননা ধর্ম বিষয়ে প্রতিটি নতুন বিষয়ই বিদআত। আর প্রতিটি বিদআতই গোমরাহী। {মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৭১৪৪}

فى الدر المختار– ( ودعا ) بالعربية ، وحرم بغيرها، (كتاب الصلاة، باب صفة الصلاة، مطلب فى الدعاء بغير العربية، 2/233-234)

فى مراقى الفلاح-ويفسد الدعاء بما يشابه كلامنا الخ (طحطاوى على مراقى الفلاح-261، وكذا فى الفتاوى الهندية-2/3)

وفى البحر الرائق– قوله ( ودعا بما يشبه ألفاظ القرآن والسنة لا كلام الناس ) أي بالدعاء الموجود في القرآن ولم يرد حقيقة المشابهة إذ القرآن معجز لا يشابهه شيء ولكن أطلقها لإرادته نفس الدعاء لا قراءة القرآن مثل { ربنا لا تؤاخذنا } البقرة 286 { ربنا لا تزغ قلوبنا } آل عمران 8 { رب اغفر لي ولوالدي } نوح 28 { ربنا آتنا في الدنيا حسنة } البقرة 201 إلى آخر كل من الآيات

وقوله والسنة يجوز نصبه عطفا على ألفاظ أي دعا بما يشبه ألفاظ السنة وهي الأدعية المأثورة ومن أحسنها ما في صحيح مسلم اللهم إني أعوذ بك من عذاب جهنم ومن عذاب القبر ومن فتنة المحيا والممات ومن فتنة المسيح الدجال

ويجوز جره عطفا على القرآن أو ما أي دعا بما يشبه ألفاظ السنة أو دعا بالسنة (البحر الرائق، كتاب الصلاة، باب صفة الصلاة، فصل هو في اللغة فرق ما بين الشيئين، (البحر الرائق-1/576

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক ও প্রধান মুফতী – মা’হাদুত তালীম ওয়াল  বুহুসিল ইসলামিয়া ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম আমীনবাজার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া ফারূকিয়া দক্ষিণ বনশ্রী ঢাকা।

আরও জানুন

অগ্রীম বাসা ভাড়ার উপর বছর অতিক্রান্ত হলে যাকাত কে দিবে?

প্রশ্নঃ মুহতারাম, অমি প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা দেওয়ার শর্তে বাড়ি ভাড়া নেই। ভাড়া নেওয়ার …

আহলে হক্ব বাংলা মিডিয়া সার্ভিস