প্রচ্ছদ / অজু/গোসল/পবিত্রতা/হায়েজ/নেফাস / মসজিদে কাপড় দিয়ে ঢেকে স্ত্রী সহবাস করা জায়েজ?

মসজিদে কাপড় দিয়ে ঢেকে স্ত্রী সহবাস করা জায়েজ?

প্রশ্ন

From: আজিজুল হাকিম
বিষয়ঃ মাসজিদে স্ত্রী সহবাস করা সম্পর্কে।

প্রশ্নঃ
আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
গত কয়েকদিন আগে আমাদের উত্তরবঙ্গে আঃ রাজ্জাক বিন ইউসুফ মাহফিলে বলেছেন যে, মাসজিদের এক কোনে কাপড় দিয়ে ঘিরে স্ত্রী সহবাস করা যাবে। অতএব হুজুর আমি জানতে চাচ্ছি যে এরকম কথা বলা মাসজিদের শানে বেয়াদবি নয় কি?

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

এটি যদি তিনি বলে থাকেন, তাহলে তিনি একটি বানোয়াট ও মনগড়া কথা বলেছেন। কুরআন ও হাদীসে এর কোন প্রমাণ নেই। সেই সাথে তার নোংরা মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন।

মসজিদে পেশাব পায়খানা, স্ত্রী সহবাস তথা বীর্যপাতসহ কোন প্রকার নাপাক কাজ করা বৈধ নয়। সম্পূর্ণ হারাম।

কারণ, মসজিদ হল ইবাদতের স্থান। নামায, তিলাওয়াত ইত্যাদির জন্য নির্ধারিত। স্ত্রী সম্ভোগ করার জায়গা মসজিদ নয়। বিকৃত মস্তিস্ক মানুষই কেবল মসজিদে স্ত্রী সহবাসের অনুমতি প্রদান করতে পারে।

وَلَا تُبَاشِرُوهُنَّ وَأَنتُمْ عَاكِفُونَ فِي الْمَسَاجِدِ ۗ تِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ فَلَا تَقْرَبُوهَا ۗ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ آيَاتِهِ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ [٢:١٨٧]

আর যতক্ষণ তোমরা এতেকাফ অবস্থায় মসজিদে অবস্থান কর,ততক্ষণ পর্যন্ত স্ত্রীদের সাথে মিশো না। এই হলো আল্লাহ কর্তৃক বেঁধে দেয়া সীমানা। অতএব, এর কাছেও যেও না। এমনিভাবে বর্ণনা করেন আল্লাহ নিজের আয়াত সমূহ মানুষের জন্য,যাতে তারা বাঁচতে পারে। [সূরা বাকারা-১৮৭]

وَعَهِدْنَا إِلَىٰ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ أَن طَهِّرَا بَيْتِيَ لِلطَّائِفِينَ وَالْعَاكِفِينَ وَالرُّكَّعِ السُّجُودِ [٢:١٢٥]

এবং আমি ইব্রাহীম ও ইসমাঈলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার গৃহকে তওয়াফকারী, অবস্থানকারী ও রুকু-সেজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখ। [সূরা বাকারা-১২৫]

أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ – وَهُوَ عَمُّ إِسْحَاقَ -، قَالَ: بَيْنَمَا نَحْنُ فِي الْمَسْجِدِ مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. إِذْ جَاءَ أَعْرَابِيٌّ فَقَامَ يَبُولُ فِي الْمَسْجِدِ، فَقَالَ أَصْحَابُ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَهْ مَهْ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تُزْرِمُوهُ دَعُوهُ» فَتَرَكُوهُ حَتَّى بَالَ، ثُمَّ إِنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَعَاهُ فَقَالَ لَهُ: «إِنَّ هَذِهِ الْمَسَاجِدَ لَا تَصْلُحُ لِشَيْءٍ مِنْ هَذَا الْبَوْلِ، وَلَا الْقَذَرِ إِنَّمَا هِيَ لِذِكْرِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ، وَالصَّلَاةِ وَقِرَاءَةِ الْقُرْآنِ»

ইসহাকের চাচা আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমরা মসজিদে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে বসেছিলাম ইতিমধ্যে এক বেদুঈন এল। সে দাঁড়িয়ে মসজিদেই পেশাব করতে লাগল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগণ বলতে লাগল, “থাম, থাম”। রাবী বলেন, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন তোমরা ওকে বাধা দিও না, ছেড়ে দাও ওকে। অতঃপর তাঁরা তাকে ছেড়ে দিল, সে পেশাব করা শেষ করল।

তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ডেকে বললেন, “দেখ এই যে মসজিদগুলো এতে পেশাব করা বা একে কোন রকম নাপাক করা উচিৎ নয়। এ সব তো কেবল আল্লাহর যিকির করা, সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করা এবং কুরআন তিলাওয়াত করার জন্য”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৮৫, ইফাবা-৫৫৪]

وَلَا يَحِلُّ لِلْجُنُبِ الْوُقُوفُ عَلَيْهِ وَالْمُرَادُ بِالْكَرَاهَةِ كَرَاهَةُ التَّحْرِيمِ وَصَرَّحَ الشَّارِحُ بِأَنَّ الْوَطْءَ فِيهِ حَرَامٌ لِقَوْلِهِ تَعَالَى {وَلا تُبَاشِرُوهُنَّ وَأَنْتُمْ عَاكِفُونَ فِي الْمَسَاجِدِ} [البقرة: 187] (البحر الرائق، كتاب الصلاة، باب ما يفسد الصلاة وما يكره فيها، فصل ا لْوَطْءُ فَوْقَ الْمَسْجِدِ وَالْبَوْلُ وَالتَّغَوُّطُ-2/60)

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা-জামিয়া ফারুকিয়া দক্ষিণ বনশ্রী ঢাকা।

ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com

আরও জানুন

ইস্তিস্কার সালাত তথা বৃষ্টির নামাযের বিস্তারিত বিবরণ

প্রশ্ন বৃষ্টি না হলে যে নামায পড়া হয়, যাকে আমরা ইস্তিস্কার নামায বলে থাকি। উক্ত …

আহলে হক্ব বাংলা মিডিয়া সার্ভিস