প্রচ্ছদ / প্রশ্নোত্তর / পোশাকে টাই ব্যবহারের হুকুম কী?

পোশাকে টাই ব্যবহারের হুকুম কী?

প্রশ্ন

আছ্ছালামুআলাইকুম।
কোনো কোনো আলেম টাই ব্যবহার করাকে হারাম বলে থাকেন। দয়া করে টাই এর উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ সহ টাই ব্যাবহার করা হারাম হওয়ার পক্ষে যৌক্তিক কারন ব্যাখ্যা করবেন কি?
>
> মোহাম্মদ ওবায়দুল হক আশফাক্ব
> ইংরেজি অনার্স, এম.সি কলেজ, সিলেট।
> গ্রামঃ লক্ষনসোম
> পোষ্টঃ জাউয়া বাজার
> থানাঃ ছাতক
> জিলাঃ সুনামগন্জ
> বিভাগঃ সিলেট

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

অনেক মুহাক্কিদের মতে টাই এটি খৃষ্টানদের ধর্মীয় প্রতিকৃতি ক্রুশের প্রতীকরূপে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যদি তা’ই হয়, তাহলে টাই ব্যবহার থেকে বিরত থাকা প্রতিটি মুসলমানদের জন্য আবশ্যক।

আর যদি তা নাও হয়, তবু এটি এটি ফাসিক ফুজ্জারদের পোশাকের অন্তর্ভূক্ত। সে হিসেবেও এটি পরিত্যাজ্য।

টাই হচ্ছে বিধর্মীদের ঐতিহ্যগত ভূষণ। ইউরোপে ছড়িয়ে পড়া তাদের এ ঐতিহ্যগত কালচারের মূলে রয়েছে থার্টি ইয়ার্স ওয়ার-এর সময় (1618-1648) যখন ক্রোয়েশীয় সেনাবাহিনী সীমান্ত থেকে তাদের ঐতিহ্যগত গ্রন্থিবদ্ধ টাই গলায় ধারণ করে–সেই থেকে তার ব্যাপক প্রচলন হয়। তা ছাড়া রাজা চতুর্দশ লুই (1646) ফরাসি আভিজাত্যের ফ্যাশন হিসেবে গলায় নেকটাই ঝুলান। তার অনুকরণে তখন থেকে তার ব্যবহার ব্যাপকতা পায়। আর ক্রমে তা ইউরোপে একটি ফ্যাশন উন্মত্ততার রূপ ধারণ করে। বিস্তারিত দেখুন উইকিপিডিয়ার নিম্নোক্ত লিঙ্কে–
https://en.wikipedia.org/wiki/Necktie

বলা বাহুল্য, মুসলমানদের কালচারকে বিধর্মীদের কালচারের সাথে পর্যবসিত করতে হাদীস শরীফে নিষেধ করা হয়েছে। তাই মুসলমানদের জন্য বিজাতীয় কালচারের টাই ব্যবহার বিধেয় নয়।

আবার অনেক মুহাক্কিক টাইকে খৃস্টানদের ক্রুশের প্রতীক সাব্যস্ত করেছেন। তারা বলেন–যেমনভাবে খৃস্টানরা যীশুর শূলীবিদ্ধ হওয়ার কল্পিত বিশ্বাসকে ধারণ করে তার প্রতীকরূপে গলায় ত্রিমাথা বিশিষ্ট ক্রশপ্রতীক ধারণ করেন, তেমনি পোশাক-আভিজাত্যে তার প্রতীকী প্রতিফলনরূপে তাদের মধ্যে টাইয়ের উদ্ভব হয়েছে।

সে হিসেবে টাই বা নেকটাইকে খৃষ্টীয় ক্রুশ প্রতীকের স্তাবক-চিহ্ন ও খৃষ্টানদের ধর্মীয় কালচার বলা যায়। এ ব্যাপারে ঐতিহাসিক বহু দলীল-প্রমাণও তারা পেশ করেন। নিম্নে তার কিছু দলীল-প্রমাণ উদ্ধৃত করা হলো–

█ প্রখ্যাত মুসলিম লেখক কুরাইশী সাবেরী ক্রুশ প্রতীক সম্পর্কে ঐতিহাসিক ডকুমেন্ট প্রকাশ করে বলেন, “উনিশ শতাব্দীর শেষের দিকে ইউরোপীয়রা তাদের ডিকশনারী ও এনসাইক্লোপিডিয়া থেকে প্রাথমিক যে সকল বিষয় (খৃষ্টীয় জাতিসত্তার পরিচয় বহন করে এমন) বাদ দিয়েছিল, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ‘টাই ক্রুশের প্রতীক’-এর দলীল। ১৮৯৮ সালের পূর্বে প্রিন্টকৃত এনসাইক্লোপিডিয়ার একটি পৃষ্ঠায় বিষয়টি স্পষ্ট হয়। উক্ত পৃষ্ঠার আলোকচিত্র নিম্নে লিঙ্কে দেখুন–
http://www.taajushshariah.com/Fatawa/tie.html

█ টাই-এর ইতিহাস ঘেটে জানা যায়–ক্রুশের চিহ্নরূপে টাই ধর্মীয় পরিচয় হিসেবে খৃষ্টানদের মধ্যে প্রচলন লাভ করে। এরই ধারাবাহিকতায় ষোড়শ শতাব্দীর কিছু আগে ক্রুশের চিহ্ন টাইকে প্রাতিষ্ঠানিকতা দিয়ে চীন ও রোমান সেনাদের সামরিক ইউনিফর্মে অন্তর্ভূক্ত করে দেয়া হয়। তেমনিভাবে ১৬১৮ সালে অটোম্যান সাম্রাজ্য বিজয়ের পর ক্রোয়েশিয়ান সামরিক ফ্রন্টিয়ার প্যারিস পরিদর্শনে রাজা লুই চতুর্দশের সামনে ক্রুশের স্মারক-চিহ্ন টাই পরে নিজেদেরকে উপস্থাপন করেন।

ইতিহাসের এ পরম্পরায় ১৭৯০ সালে পোপের পক্ষ থেকে সকল খৃষ্টানকে ক্রুশের প্রতীকরূপে টাই পরিধান করার জন্য বিশেষ তাকীদ দেয়া হয়। অতঃপর ১৮৫০ সালের মধ্যে সকল খৃষ্টানজাতি বিষয়টি গ্রহণ করে এবং এ ব্যাপারে পোপের আদেশ জারি করে দেয়।”

(বিস্তারিত দেখুন : http://www.taajushshariah.com/Fatawa/tie.html)

উল্লিখিত বর্ণনার দ্বারা স্পষ্টরূপে বুঝা যাচ্ছে–খৃষ্টানদের ধর্মীয় চিহ্ন রূপেই তাদের মধ্যে টাইয়ের প্রচলন হয়েছে। টাই পরা খৃষ্টানদের আবহমান কাল ধরে চলে আসা ধর্মীয় ঐতিহ্য। তা ছাড়া টাই যে ইউরোপে ব্যাপকভাবে প্রচলিত বিজাতীয় ভূষণ-কালচার এতে কোন সন্দেহ নেই। তাই মুসলমানদের জন্য টাই ব্যবহারকে কোনভাবেই জায়িয বলা যায় না।
عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ

হযরত ইবনে ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন- যে ব্যক্তি যার সাদৃশ্য গ্রহণ করে, সে তাদেরই অন্তর্ভূক্ত। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪০৩১}

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

ইমেইল- ahlehaqmedia2014@gmail.com

আরও জানুন

আট ভরি স্বর্নের উপর কতটুকু যাকাত আবশ্যক?

প্রশ্ন আচ্ছালামুয়ালাইকুম। মুহতারাম আমার একটা প্রশ্ন স্বর্ণের কত ভরি হলে যাকাত দিতে হবে। আর আমার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আহলে হক্ব বাংলা মিডিয়া সার্ভিস