প্রচ্ছদ / কুরআন ও হাদীসের ব্যাখ্যা / দাওয়াত ও তাবলীগের সফর কি হিজরতের শামিল?

দাওয়াত ও তাবলীগের সফর কি হিজরতের শামিল?

প্রশ্ন

তাবরানি ও মাযমাউজ যাওয়ায়েদ এ একটা হাদিস আছে যেটা তাবলীগের মুন্তাখাবে
হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে, হাদিসটি হল, ওয়াসেলা ইবন আসকা রা: বর্নিত,
রাসুল সাল্লাল্লাহুয়ালাইহিওয়াসসাল্লাম বলেছেন, “………হিজরত দুই প্রকার,
হিজরতে বাইদা আর হিজরতে বাত্তা। বাইদা মানে দেশ পুরাপুরি ত্যাগ করা আর
বাত্তা মানে ‘দ্বীনি উদ্দেশে সাময়িক দেশ ত্যাগ করে আল্লাহর রাস্তায়
বাহির হওয়া।…” এর থেকে তাবলিগ রা দলিল নেয় যে তারা যেটা করে সেটাও
হিজরত। আমার প্রশ্ন এই হাদিসের সনদ ও মতন ঠিক কিনা, এর সঠিক অনুবাদ কি,
আর এর সঠিক ব্যাখ্যা কি?

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

প্রথমে আমরা হাদীসটি দেখে নেই।

عَنْ وَاثِلَةَ بْنِ الْأَسْقَعِ قَالَ: خَرَجْتُ مُهَاجِرًا إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَلَمَّا أَقْبَلَ النَّاسُ مِنْ بَيْنِ خَارِجٍ، وَقَائِمٍ، فَجَعَلَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يَرَى جَالِسًا إِلَّا دَنَا إِلَيْهِ فَسَأَلَهُ هَلْ لَكَ مِنْ حَاجَةٍ؟ وَبَدَأَ بِالصَّفِّ الْأَوَّلِ، ثُمَّ الثَّانِي، ثُمَّ الثَّالِثَ حَتَّى دَنَا إِلَيَّ فَقَالَ: «هَلْ لَكَ مِنْ حَاجَةٍ؟» فَقُلْتُ: نَعَمْ يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ: «وَمَا حَاجَتُكَ؟» قُلْتُ: الْإِسْلَامُ فَقَالَ: «هُوَ خَيْرٌ لَكَ» قَالَ: «وتُهَاجِرُ» قُلْتُ: نَعَمْ قَالَ: «هِجْرَةَ الْبَادِيَةِ أَوْ هِجْرَةَ الْبَاتَّةِ» قُلْتُ: أَيُّهُمَا أَفْضَلُ؟ قَالَ: «الْهِجْرَةُ الْبَاتَّةُ أَنْ تَثْبُتَ مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهِجْرَةُ الْبَادِيَةِ أَنْ تَرْجِعَ إِلَى بَادِيَتِكَ وَعَلَيْكَ السَّمْعَ وَالطَّاعَةَ فِي عُسْرِكَ وَيُسْرِكَ وَمَكْرَهِكَ وَمَنْشَطِكَ وَأَثَرَةٍ عَلَيْكَ»

হযরত ওয়াসেলা বিন আসকা রাঃ থেকে বর্ণিত। আমি হিজরত করে রাসূল সাঃ এর কাছে গমণ করলাম। যখন স্থানীয় ও বাহিরের লোকেরা রাসূল সাঃ এর সামনে এল। তখন রাসূল সাঃ যাকেই দেখতেন তাকেই জিজ্ঞাসা করছিলেন “তোমার প্রয়োজনটা কি?” প্রথম সারি থেকে প্রশ্ন শুরু করলেন। তারপর দ্বিতীয় সারি। তারপর তৃতীয় সারি। এভাবে তিনি আমার পর্যন্ত পৌঁছলেন। তারপর তিনি বললেন, তোমার কী কোন প্রয়োজন আছে? আমি বললাম, হ্যাঁ আল্লাহর রাসূল!তিনি বললেন, কি সেই প্রয়োজন? আমি বললাম, ইসলাম। তিনি বললেন, এটি তোমার জন্য খুবই উত্তম বিষয়। তারপর বললেন, তুমি কি হিজরত করবে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, হিজরতে বাদিয়া না বাত্তা? আমি বললাম, কোনটি উত্তম? তিনি বললেন, হিজরতে বাত্তা। আর হিজরতে বাত্তা হল, তুমি সব কিছু ছেড়ে দিয়ে রাসূল সাঃ এর সাথে অবস্থান কর। আর হিজরতে বাদিয়া হল, তুমি [সাময়িক রাসূল সাঃ এর কাছে অবস্থান করে আবার] নিজের এলাকায় ফিরে যাবে। তোমার স্বচ্ছলতা বা অস্বচ্ছলতা এবং ইচ্ছা অনিচ্ছায় তোমার জন্য আমীরের কথা শুনা ও মানা আবশ্যক।{আলমুজাবুল কাবীর লিততবরানী, হাদীস নং-১৯৬, মাযমাউজ যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-৯২৮৬}

এই হল পূর্ণ হাদীস। এ হাদীস কেউ পুরোটা পড়লে পরিস্কার হয়ে যাবে এ হাদীস দিয়ে তাবলীগের সফরকে হিজরত বলার কোন সুযোগ নেই।

কারণ এখানে যে সাহাবীকে হিজরত করতে বলা হয়েছে তিনি কাফির অবস্থায় ইসলাম গ্রহণ করতে রাসূল সাঃ এর দরবারে এসেছেন। এর মানে হল উক্ত সাহাবীর এলাকা কুফরীপূর্ণ। কাফেরদের এলাকা। যেখানে দ্বীনের ছোঁয়া নেই। তাই তিনি হিজরত করে রাসূল সাঃ এর কাছে এসেছেন ইসলাম গ্রহণ করতে। তখন রাসূল সাঃ তাকে বললেন তিনি যেন একেবারে স্বীয় এলাকা ছেড়ে মুসলিম অধ্যুসিত রাসূল সাঃ এর সাহচর্যে চলে আসে। নতুবা সময় পেলে এসে দ্বীন শিখে আবার স্বীয় বাসস্থানে ফিরে যায়।

তাহলে উক্ত হাদীসে হিজরতের কথা বলা হয়েছে কুফরী অধ্যুসিত এলাকা থেকে দ্বীন শিখার জন্য। আর তাবলীগ জামাতের লোকেরা কি কুফরী অধ্যুসিত এলাকা থেকে হিজরত করে? নাকি মুসলিম এলাকা থেকে?

আর হিজরত করে যায় কোথায়? উক্ত সাহাবীতো গিয়েছিলেন রাসূল সাঃ এর কাছে। আর তাবলীগী ভাইয়েরা কি হিজরত করে কোন বড় আলেমের কাছে যায়? নাকি গ্রামে গ্রামে ঘুরে দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ করে?

৩টি কারণে উক্ত হাদীস দিয়ে তাবলীগের চিল্লাকে হিজরত বলা ঠিক নয়। যথা-

উক্ত হাদীসের বর্ণিত সাহাবী এসেছিলেন কুফরী অধ্যুষিত এলাকা থেকে। আর তাবলীগী সাথি ভাইয়েরা বের হয় মুসলিম অধ্যুসিত এলাকা থেকে।

উক্ত হাদীসের সাহাবী যে এলাকায় ছিলেন সেখানে ইসলামের আলো ছিল না, কিন্তু তাবলীগী সাথিরা যেসব এলাকা থেকে যায়, সেখানে দ্বীনের প্রচারকারী আলেম উলামাগণ রয়েছেন।

উক্ত হাদীসের সাহাবী গিয়েছিলেন রাসূল সাঃ এর দরবারে দ্বীন শিখতে। আর তাবলীগী সাথীরা এমনটি করার কোন সুযোগই নেই।

সুতরাং উক্ত হাদীস দিয়ে তাবলীগী ভাইদের আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়াকে হিজরতের সাথে তুলনা করা কিছুতেই ঠিক নয়।

দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ অনেক বড় কাজ। অনেক সওয়াবের কাজ। আর এ সংক্রান্ত অনেক হাদীস ও আয়াত বিদ্যমান। সুতরাং অযথাই যে হাদীস যেখানে প্রযোজ্য হয় না, সেটিকে সেখানে প্রযোজ্য করার মানে হয় না। এসব থেকে বিরত থাকতে হবে।

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল- ahlehaqmedia2014@gmail.com

lutforfarazi@yahoo.com

আরও জানুন

অগ্রীম বাসা ভাড়ার উপর বছর অতিক্রান্ত হলে যাকাত কে দিবে?

প্রশ্নঃ মুহতারাম, অমি প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা দেওয়ার শর্তে বাড়ি ভাড়া নেই। ভাড়া নেওয়ার …

No comments

  1. Dawat o tablig er mehnat e eta bola hoy na j amra hijrat kori, but apnara lokhkho kore dekhben j bola hoy, hijrat er akta nokol horkot…. bepar ta bujha uchit….

  2. যাঝাকুমুল্লা খইরা

  3. Md.Obaidullah khokon

    দাওয়াত ও তাবলিগ আল্লাহর পক্ষ থেকে হক্ব,সত্য।যেহেতু এখানে নিজ ঘর বাড়ি ছেড়ে ঈমান ও আমলকে মজবুত করার জন্য যাওয়া হয় তাই এটি বহুত বড় সওয়াবের কাজ এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ করা উচিত নয়। আমাদের সব তবকার লোককেই এ রাস্তায় সফর করা উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আহলে হক্ব বাংলা মিডিয়া সার্ভিস