প্রচ্ছদ / মুফতি লুতফুর রহমান ফরায়েজীর কলাম / নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে! তাহারা আসবেন আমাদের মঞ্চে! সতর্কতা কাম্য!

নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে! তাহারা আসবেন আমাদের মঞ্চে! সতর্কতা কাম্য!

নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে! তাহারা আসবেন আমাদের মঞ্চে! সতর্কতা কাম্য!

ইদানিং এমপি ও প্রার্থীদের মাহফিল মঞ্চে আগমণের প্রবণতা লক্ষণীয়।
আমরা উদার দৃষ্টিতে এটাকে দোষণীয় মনে করি না। একজন মুসলিম মুসলিমদের ধর্মীয় মিলনমেলা “মাহফিল” এ আসতেই পারেন। “তার মাকসাদ কী” তার মনের খবর নিয়ে আমাদের মন্তব্য না করাই উচিত বলে মনে হয়।
আচমকা বয়ানের মাঝখানে সদলবলে মঞ্চে উঠে পরিবেশ পাল্টে দিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরী করে থাকেন প্রার্থীরা। যা মাহফিলের সুন্দর পরিবেশটাকে মুহুর্তেই এলোমেলো করে দেয়। আলোচকের আলোচনায় ব্যঘাত ঘটে।
মাহফিলটা রাজনৈতিক নয়। ধর্মীয়।
আগত ব্যক্তিটা সামাজিকভাবে সম্মানীয়।
আলোচক ব্যক্তিটা আয়োজিত মাহফিলের মধ্যমণী।
সংকট তাই দ্বিমুখী। কাকে ছোট করবেন?
আলোচককে? নাকি আগত মেহমানকে?
আয়োজকদের বুদ্ধিদীপ্ত ভূমিকাই দু’ কোল রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে।
গতকাল মাহফিল ছিল আশুলিয়া জিরাবো বাজার। আয়োজক স্থানীয় উলামা পরিষদ এবং এলাকাবাসী। আগের দিন রাতে ঘুমিয়েছি মাত্র দু’ঘন্টা। ফের সারাদিন দু’চোখ একত্র করার সুযোগ হয়নি। পিরোজপুর থেকে লম্বা সফর শেষে মাহফিলে এসে যখন ঈশার নামাযে দাঁড়াই শরীর তখন কাঁপছিল। মাঝে মাঝে ঝাপসা হয়ে উঠছিল চোখটা। বয়ান করতে পারবোতো?
দরূদের উপর আমার দৃঢ় বিশ্বাস। শত বিপদে একাগ্রতার সাথে দরূদ পড়ে কাজ শুরু করলে আল্লাহ বরকত দিয়ে দেন।
সংক্ষেপ হামদ সানা পড়ে দরূদ পাঠ করে শুরু করলাম আলোচনা। মাত্র জমে উঠছে মাঠ।
খেয়াল করলাম সদলবলে কেউ উঠছে মঞ্চে।
শ্রোতা‌দের ই‌তিউ‌তি বয়া‌নের প‌রি‌বেশ চরমভা‌বে বি‌ঘ্নিত কর‌ছে। নষ্ট কর‌ছে মন‌যো‌গিতা। গলার ভ‌লিয়ম দিলাম বা‌ড়ি‌য়ে। না তা‌কি‌য়েই অনুভব করলাম আগত মেহমান আমার বাম পা‌শের চেয়া‌রে ব‌সেছেন। আমার আ‌লোচনা এক মুহু‌র্তের জন্যও থম‌কে যায়‌নি। দৃঢ়তার সাথে চল‌ছে বক্তব্য। বুঝলাম ম‌ঞ্চে কানাঘুষা চল‌ছে। যা আ‌লোচ‌কের আ‌লোচনার একাগ্রতা বিন‌ষ্টের অন্যতম উপসর্গ। বয়ান থা‌মি‌য়ে ডান দি‌কে তা‌কিয়ে জানালাম “আর একবারও য‌দি আপনারা এভা‌বে উঠাবসা ও ফিস‌ফিসানী ক‌রেন আ‌মি বয়ান ছে‌ড়ে দি‌বো। শ্রোতা‌দের জিজ্ঞাসা করলাম এমন কর‌লে বয়ান করা যায়?
সমস্ব‌রে জানা‌লেন “না”।
বললাম “সাম‌নে আ‌লোচনা কর‌বো না বন্ধ ক‌রে দে‌বো?”
না, না, হুজুর সাম‌নে চ‌লেন।
ব‌লে রাখা ভাল। আমার জানা ছিল না ম‌ঞ্চে যি‌নি এ‌সেছেন তি‌নি রানা প্লাজা ট্র‌জে‌ডির সময়কার আর্তমানবতার সেবায় বেনজীর সেবা প্রদানকারী এনাম মে‌ডি‌কে‌লের মা‌লিক এনাম সা‌হেব এ‌সে‌ছেন। এও জানা ছিল না যে তি‌নি বর্তমান উক্ত এলাকার এম‌পিও। আ‌মি জনাব‌কে চি‌নিও না।
বয়া‌নে বসার আ‌গে সর্বদাই আ‌মি সময় জে‌নে নেই “কয়টা পর্যন্ত বয়ান করবো”। আমা‌কে স্লিপ দি‌তে হয় ন‌া। আ‌মি আমার সময় শেষ হ‌তেই এমনি‌তেই ছে‌ড়ে দেই। আজও জে‌নে নি‌য়ে‌ছি “সময় পৌ‌নে নয়টা”। কিন্তু আটটা বাজ‌তেই স্লিপ আস‌লো ” সং‌ক্ষেপ করুন”। রাগ হল খুব। বললাম “আ‌মি‌তো আ‌গেই বলে‌ছি আমার সময় ব‌লে দিন। সময় নির্দিষ্ট করার পর মাঝখান দি‌য়ে কাগজ কেন?
‌ক্ষে‌পে গে‌লেন অ‌তি‌থিও । বল‌লেন “হুজু‌রের বয়ান চল‌বে। মাঝখান থেকে থামা‌লেন কেন?
এই প্রথম অ‌তি‌থির দি‌কে তাকালাম। শিক্ষা ও আ‌ভিজা‌ত্যের ঝলক চেহারায় প্রস্ফু‌টিত। মু‌খে এক মুুষ্টির কম হ‌লেও সাদাকা‌লো দা‌ড়িগু‌লো ব্যক্তিত্ব বা‌ড়ি‌য়ে‌ছে দ্বিগুণ।
আ‌মি তখ‌নো জা‌নি না তি‌নি এমপি এনাম সা‌হেব।
‌তি‌নি বল‌ছেন দৃঢ়তার সা‌থে “কথা‌টি তি‌নি গু‌ছি‌য়ে এ‌নে‌ছেন। মাঝখান থে‌কে কেন বন্ধ করবেন? কোন সময় বেঁধে দেয়া নেই। ও‌নি যতক্ষণ ইচ্ছা বয়ান কর‌বেন। দশট‌া হোক আর এগা‌রোটা। যার ইচ্ছা থাক‌বে, যার ইচ্ছা চ‌লে যা‌বো।”
ম‌াঠ থে‌কে এক‌যো‌গে কোরাস ” ঠিক, ঠিক, হুজুর বয়ান ক‌রেন।”
আবার শুরু করলাম। সং‌ক্ষে‌পে বিশ মি‌নি‌টের ম‌ধ্যে আলোচন‌া শে‌ষে নে‌মে এলাম।
অ‌তি‌থির সা‌থে মুসাফাহা ক‌রে নে‌মে গেলাম মঞ্চ থে‌কে। প‌রে জানলাম অ‌তিথি সা‌হেব ডাঃ এনাম সা‌হেব।
প্রকৃত ‌শি‌ক্ষিত মানু‌ষেরা এম‌নি হয়। ভদ্র ও সামা‌জিক।
যেসব জনপ্রতিনিধি মাহফিলের মঞ্চে এসে দিগদারী করেন এদের অন্তত প্রকৃত শিক্ষিত এবং ভদ্র মানুষ মানতে আমি নারাজ। ডাঃ এনাম সাহেবের কাছ থেকে সেসব পণ্ডিতদের শিক্ষা নেয়া উচিত।
পরে জেনেছি। মাহফিল আয়োজকদের দোষ নেই। দোষ নেই এমপি সাহেবেরও। এমপি সাহেবের কিছু অতি উৎসাহী ভক্তরা পরিবেশ বিনষ্টের জন্য দায়ী। এমপি সাহেবের দৃঢ়তায় যা ভেস্তে যায়। আলহামদুলিল্লাহ।

আমার মতামত!
এমন পরিস্থিতিতে যেমন আলেম আলোচকের সম্মান হানীকর কাজ করা যাবে না। তেমনি আগত অতিথিকে অপমান করা যাবে না।
উভয়কে যথাযোগ্য ইজ্জত করা মাহফিল আয়োজকদের দায়িত্ব।
আল্লাহ সহজ করে দিন। আমীন।

 

মুফতি লুতফুর রহমান ফরায়েজী দাঃ বাঃ 

আরও জানুন

কথিত আহলে হাদিসদের বুখারী আর আমাদের বুখারি কি তাহলে আলাদা ?

কুরআ‌নের এক‌টি আয়াত খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। আস‌লে সব আয়াতই গুরুত্বপূর্ণ। ত‌বে গতকাল রা‌তে এক‌টি আয়াত বারবার …

আহলে হক্ব বাংলা মিডিয়া সার্ভিস