প্রচ্ছদ / প্রশ্নোত্তর / মেয়েদের বিয়ের বয়স বিয়েতে মেয়ের সম্মতি ও কনে দেখা সম্পর্কিত

মেয়েদের বিয়ের বয়স বিয়েতে মেয়ের সম্মতি ও কনে দেখা সম্পর্কিত

প্রশ্ন

আসসালামু আলাইকুম

১ , মেয়েদের বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স?

২ , বিয়েতে মেয়ের সম্মতির প্রয়োজনীয়তা  কি?

৩ ,  বিয়ের জন্য মেয়ের সাথে দেখা করা জায়েজ কি না?  জায়েজ হলে  দেখা করার পদ্ধতি কি?

প্রশ্নকর্তা-আব্দুল মুফরাদ

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

১ নং এর জবাব

ইসলামের মেয়েদের বিবাহের কোন বয়সসীমা নির্দিষ্ট করে দেয়নি। নাবালেগের বিবাহও শুদ্ধ হয়ে যায়। {আলবাহরুর রায়েক-৩/২০৬)

তবে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর বিবাহ করা উচিত মর্মে কুরআনে কারীমের আয়াত দ্বারা ইংগিত পাওয়া যায়।

وَابْتَلُوا الْيَتَامَى حَتَّى إِذَا بَلَغُوا النِّكَاحَ فَإِنْ آنَسْتُمْ مِنْهُمْ رُشْدًا فَادْفَعُوا إِلَيْهِمْ أَمْوَالَهُمْ

আর এতীমদের প্রতি বিশেষভাবে নজর রাখবে, যে পর্যন্ত না তারা বিয়ের বয়সে পৌঁছে। যদি তাদের মধ্যে বুদ্ধি-বিবেচনার উন্মেষ আঁচ করতে পার, তবে তাদের সম্পদ তাদের হাতে অর্পন করতে পার। {সূরা নিসা-৬}

এমন সময় বিবাহ করা উচিত, যখন বিয়ে করার দ্বারা মেয়েদের সতিত্ব ও সম্মান হিফাযত করা বিষয়ে কোন শংকা বাকি না থাকে।

২নং এর জবাব

মেয়ে প্রাপ্ত বয়স্ক হলে বিয়েতে মেয়ের অনুমতি থাকা আবশ্যক। মেয়ের অনুমতি ছাড়া বিয়ে শুদ্ধ হবে না। তবে অপ্রাপ্ত বয়স্ক হলে পিতা বা অভিভাবক বিয়ে দিতে পারবে। অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েটি থেকে অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন নেই। তবে পিতা-দাদা ছাড়া অন্য কেউ নাবালেগ অবস্থায় বিয়ে দিলে উক্ত মেয়ে বড় হওয়ার পর যদি উক্ত বিয়েতে সন্তুষ্ট না থাকে, তাহলে বিচারকের ফায়সালা দ্বারা উক্ত বিয়ে ভঙ্গ করে দিতে পারবে।

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ؛ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «الْأَيِّمُ أَحَقُّ بِنَفْسِهَا مِنْ وَلِيِّهَا.

হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, মেয়ে তার ব্যক্তিগত বিষয়ে অভিভাবকের চেয়ে অধিক হকদার। {মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং-৮৮৮, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৪২১, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৮৮৮, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২০৯৮, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-২২৩৪, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১১০৮, সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-৩২৬০, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৪০৮৪, সুনানে দারাকুতনী, হাদীস নং-৩৫৭৬}

عَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ قَالَ: ” جَاءَتِ امْرَأَةٌ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّ أَبِي وَنِعْمَ الْأَبُ هُوَ، خَطَبَنِي إِلَيْهِ عَمُّ وَلَدِي فَرَدَّهُ، وَأَنْكَحَنِي رَجُلًا وَأَنَا كَارِهَةٌ. فَبَعَثَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى أَبِيهَا، فَسَأَلَهُ عَنْ قَوْلِهَا، فَقَالَ: صَدَقَتْ، أَنْكَحْتُهَا وَلَمْ آلُهَا خَيْرًا. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا نِكَاحَ لَكِ، اذْهَبِي فَانْكِحِي مَنْ شِئْتِ»

হযরত সালামা বিনতে আব্দুর রহমান রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা এক মেয়ে রাসূল সাঃ এর কাছে এল। এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতা! কতইনা উত্তম পিতা! আমার চাচাত ভাই আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিল আর তিনি তাকে ফিরিয়ে দিলেন। আর এমন এক ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চাইছেন যাকে আমি অপছন্দ করি। এ ব্যাপারে রাসূল সাঃ তার পিতাকে জিজ্ঞাসা করলে পিতা বলে, মেয়েটি সত্যই বলেছে। আমি তাকে এমন পাত্রের সাথে বিয়ে দিচ্ছি যার পরিবার ভাল নয়। তখন রাসূল সাঃ মেয়েটিকে বললেন, “এ বিয়ে হবে না, তুমি যাও, যাকে ইচ্ছে বিয়ে করে নাও”। {সুনানে সাঈদ বিন মানসূর, হাদীস নং-৫৬৮, মুসন্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-১০৩০৪, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১৫৯৫৩, দিরায়া ফী তাখরীজি আহাদিসীল হিদায়া, হাদীস নং-৫৪১}

، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: ” أَنَّ جَارِيَةً بِكْرًا أَتَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَذَكَرَتْ أَنَّ أَبَاهَا زَوَّجَهَا وَهِيَ كَارِهَةٌ فَخَيَّرَهَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ”

إسناده صحيح على شرط البخاري.

وأخرجه أبو داود (2096) ، وابن ماجه (1875) ، والنسائي في “الكبرى” (5387) ، وأبو يعلى (2526) ، والطحاوي 4/365، والدارقطني 3/234-235، والبيهقي 7/117 من طريق حسين بن محمد المروذي، بهذا الإسناد.

وأخرجه ابن ماجه (1875) ، والنسائي (5389) ، والدارقطني 3/235 من طريق مُعمر بن سليمان، عن زيد بن حبان، والدارقطني 3/235 من طريق أيوب بن سويد، عن سفيان الثوري، كلاهما عن أيوب السختياني، به.

হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। কুমারী মেয়ে রাসূল সাঃ এর কাছে এসে বলল, আমার পিতা আমার অপছন্দ সত্বেও বিয়ে দিয়েছে, তখন রাসূল সাঃ সে মেয়েকে অধিকার দিলেন, [যাকে ইচ্ছে বিয়ে করতে পারে বা এ বিয়ে রাখতেও পারে]। {মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৪৬৯, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৮৭৫, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২০৯৬, সুনানুল কুবরা নাসায়ী, হাদীস নং-৫৩৬৬, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-৩৫৬৬}

عَنِ ابْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: جَاءَتْ فَتَاةٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَتْ: ” إِنَّ أَبِي زَوَّجَنِي ابْنَ أَخِيهِ، لِيَرْفَعَ بِي خَسِيسَتَهُ، قَالَ: فَجَعَلَ الْأَمْرَ إِلَيْهَا، فَقَالَتْ: قَدْ أَجَزْتُ مَا صَنَعَ أَبِي، وَلَكِنْ أَرَدْتُ أَنْ تَعْلَمَ النِّسَاءُ أَنْ لَيْسَ إِلَى الْآبَاءِ مِنَ الْأَمْرِ شَيْءٌ “

হযরত বুরাইদা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক মহিলা নবীজী সাঃ এর কাছে এসে বলল, আমার পিতা আমাকে তার ভাতিজার কাছে বিয়ে দিয়েছে, যাতে তার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। রাবী বলেন, তখন রাসূল সাঃ বিষয়টি মেয়ের ইখতিয়ারের উপর ন্যস্ত করেন, [অর্থাৎ ইচ্ছে করলে বিয়ে রাখতেও পারবে, ইচ্ছে করলে ভেঙ্গেও দিতে পারবে] তখন মহিলাটি বললেন, আমার পিতা যা করেছেন, তা আমি মেনে নিলাম। আমার উদ্দেশ্য ছিল, মেয়েরা যেন জেনে নেয় যে, বিয়ের ব্যাপারে পিতাদের [চূড়ান্ত] মতের অধিকার নেই্ {সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৮৭৪, মুসনাদে ইসহাক বিন রাহুয়াহ, হাদীস নং-১৩৫৯, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-৩৫৫৫}

فى رد المحتار-  لو فعل الأب أو الجد عند عدم الأب لا يكون للصغير والصغيرة حق الفسخ بعد البلوغ، وإن فعل غيرهما فلهما أن يفسخا بعد البلوغ. (رد المحتار، كتاب النكاح، باب الولى، مطلب مهم هل للعصمة تزويج الصغير امرأة غير كفء له؟-4/174)

৩ নং এর জবাব

বিয়ের জন্য মেয়েকে দেখা জায়েজ কতিপয় শর্ত সাপেক্ষে। যথা-

১-   মেয়ের মাহরাম কেউ উপস্থিত থাকা।

২-    বেশি দেরী না করা।

৩-   অযথা আলাপে নিমগ্ন না হওয়া।

৪-   বিয়ে করার উদ্দেশ্যে দেখা।

৫-   এক নজর দেখা।

তবে সবচে’উত্তম পদ্ধতি হল, পর্দার আড়াল থেকে দেখা। সামনে না যাওয়া। কারণ এভবে ঘটা করে এসে একাকি ছেলে ও মেয়ে দীর্ঘক্ষণ একসাথে বসে কথাবার্তা বলার দ্বারা গোনাহের দরজা খুলে যায়। বেলেল্লেপনা, অশ্লীলতা ও মেয়েদের অপমান করার অবস্থা তৈরী হয়।

আমাদের দেশে প্রচলিত কন্যা দেখা পদ্ধতি পুরোটাই শরিয়ত গর্হিত পদ্ধতি। যেভাবে মেয়েকে দেখা হয়, যেন বাজার থেকে গরু কিনতে যাওয়া হয়েছে। হাত, পা, চুল, হাটা-চলা, কথা-লেখা যেভাবে পরীক্ষা করা হয় তা কোনভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। এভাবে কন্যা দেখা শরীয়ত গর্হিত কর্ম হওয়ার সাথে সাথে মানবতার খেলাফও।

এভাবে ঢাকঢোল পিটিয়ে একজন মেয়েকে দেখে আসার পর যখন পাত্রপক্ষ না করে দেয়, তখন একজন মেয়ের মানসিক অবস্থা কতটা ভেঙ্গে পরে, তা কেবল ভুক্তভোগীই বুঝতে পারে।

ইসলাম কনেকে দেখার অনুমতি প্রদান করেছে বলে এটিকে বাধ্য করে দেয়নি। কনেকে দেখতেই হবে বিয়ে করার জন্য এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই। তাই দূর থেকে খবর নিয়ে, বা না জানিয়ে লুকিয়ে দেখাই সর্বোত্তম পন্থা হবে বর্তমান ফিতনা রোখার জন্য।

কিন্তু যদি বিয়ে করার ইচ্ছে না থাকে, এমনিতেই দেখতে যায়, তাহলে তা হারাম হবে। {ফাতাওয়া মাহমুদিয়া-১৬/৪৩-৪৬}

عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ مَسْلَمَةَ، قَالَ: خَطَبْتُ امْرَأَةً، فَجَعَلْتُ أَتَخَبَّأُ لَهَا، حَتَّى نَظَرْتُ إِلَيْهَا فِي نَخْلٍ لَهَا، فَقِيلَ لَهُ: أَتَفْعَلُ هَذَا وَأَنْتَ صَاحِبُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ فَقَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: «إِذَا أَلْقَى اللَّهُ فِي قَلْبِ امْرِئٍ خِطْبَةَ امْرَأَةٍ، فَلَا بَأْسَ أَنْ يَنْظُرَ إِلَيْهَا» (سنن ابن ماجه، رقم الحديث- 1864

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল- ahlehaqmedia2014@gmail.com

lutforfarazi@yahoo.com

আরও জানুন

আট ভরি স্বর্নের উপর কতটুকু যাকাত আবশ্যক?

প্রশ্ন আচ্ছালামুয়ালাইকুম। মুহতারাম আমার একটা প্রশ্ন স্বর্ণের কত ভরি হলে যাকাত দিতে হবে। আর আমার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আহলে হক্ব বাংলা মিডিয়া সার্ভিস