প্রচ্ছদ / প্রশ্নোত্তর / বিধর্মীদের দোকান ও বাড়ি ভাড়া দেয়ার হুকুম কি?

বিধর্মীদের দোকান ও বাড়ি ভাড়া দেয়ার হুকুম কি?

প্রশ্ন

আস সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ্,

মুহতারাম মুফতী সাহেব, (দা.বা.)

প্রশ্ন করার কারণ হচ্ছে, বাসা ভাড়া দেবার জন্য সাইনবোর্ড টানানোর পর ১ দিন ১ হিন্দু পরিবার ঘর দেখতে এসে বললো, আপনারা হিন্দুদেরকে ভাড়া দেবেন কি? মুখের উপর না করতে পারলাম না। কারণ সাধারণত ১জন মুসলিম হিসাবে আমি চাই না আমার ঘরে পূজা-অর্চনা হবে, পূজার আওয়াজ শুনতে হবে ইত্যাদি। ভাগ্যিস ঘর দেখে ওনাদের পছন্দ হয়নি।

সাধারণত আমরা সাইনবোর্ডে উল্লেখ করি না যে বিধর্মীদেরকে ভাড়া দেয়া হবে না। অর্থাৎ আমরা কেবল লিখে দেই,

“বাসা/দোকান ভাড়া দেয়া হবে”

এখন ভাড়া নিতে আগ্রহী যে কেউ এই বাক্য পড়ে নিজেকে সম্বোধনের পাত্র বানাতে পারে। এটা স্বাভাবিক। এহেন পরিস্থিতে কোনো বিধর্মী আমার কাছে আসলে এটা তার দোষ নয় বরং আমার উচিত ছিলো সাইনবোর্ডে উদ্দেশ্য পরিস্কার করে দেয়া যে, শুধু মুসলিমদের জন্য।

তাই জানতে চাচ্ছি

১. বিধর্মীদেরকে ঘর ভাড়া/ দোকান ভাড়া দেয়া জায়েজ কিনা? (আর এটাতো জানা ওদের উপার্জনের অধিকাংশ হারামের উপর ভিত্তি করে হয়ে থাকে)

২. যদি আমি অমুসলিমকে ভাড়া দিতে না চাই তাহলে ভাড়া নিতে আসা বিধর্মীদের সাথের আমার কথাবার্তার ধরণ কীভাবে হবে? অর্থাৎ কীভাবে তাদেরকে ফিরিয়ে দিবো? (মানবতার খাতিরে মুখের উপর না ও করা যায় না) নাকি সাইনবোর্ডে স্পষ্ট করে লিখে দিবো, “শুধু মুসলমানদের জন্য”আর এভাবে “সীমাবদ্ধ”করাটা কি ইসলাম সমর্থন করে? (আবার বর্তমানে তো সাম্প্রদায়িকতা বলে একটা পরিভাষা আছে, এমন পন্থা অবলম্বন করলে সাম্প্রদায়িক “ট্যাগ”খাওয়ার সম্ভাবনাও নাকচ করা যায় না! )

তাই আপনার কাছে বিনীত অনুরোধ, সমাধান দিয়ে সিদ্ধান্তহীনতা ও হীনমন্যতা থেকে উদ্ধার করবেন।

কৃতজ্ঞতায়

হাবীবুল হক

সিলেট।

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

বিধর্মীদের বসবাসের ঘর বা ব্যাবসা করার জন্য দোকান ভাড়া দেয়াতে কোন সমস্যা নেই। সম্পূর্ণ জায়েজ। এতে হীনমন্যতা বা সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগার কোন প্রয়োজন নেই।

বিধর্মী প্রতিবেশী হলে প্রতিবেশির হক সেও পাবে। অযথা তাকে কষ্ট দেয়া, পেরেশান করা জায়েজ নয়। বিধর্মী বলেই তার সাথে খারাপ ব্যবহার করার কোন বিধান ইসলামী শরীয়তে নেই। রাসূল সাঃ অসুস্থ্য বিধর্মীদেরও দেখতে যেতেন। তাই বিধর্মী বলেই তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করতে হবে এমন ধারণা করা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। এমন ধারণা সবারই পরিহার করতে হবে।

হ্যাঁ, মন্দির, গীর্জা, পূজা মন্ডপ ইত্যাদি তৈরীর জন্য স্থান ভাড়া দেয়া কোন মুসলিমের জন্য জায়েজ হবে না। কিন্তু এমনিতে বসবাস বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলার জন্য বিধর্মীদের ঘর ভাড়া দেয়াতে কোন সমস্যা নেই।

إِنَّمَا يَنْهَاكُمُ اللَّهُ عَنِ الَّذِينَ قَاتَلُوكُمْ فِي الدِّينِ وَأَخْرَجُوكُمْ مِنْ دِيَارِكُمْ وَظَاهَرُوا عَلَىٰ إِخْرَاجِكُمْ أَنْ تَوَلَّوْهُمْ ۚ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ [٦٠:٩

আল্লাহ কেবল তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেন, যারা ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কৃত করেছে এবং বহিস্কারকার্যে সহায়তা করেছে। যারা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করে তারাই জালেম। {সূরা মুমতাহিনা-৮}

এক ইহুদী কিশোর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমত করত। সে অসুস্থ হয়ে পড়লে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখতে গেলেন এবং তাকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন। তখন সে মুসলমান হয়ে গেল। (সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৩৫৬, ৫৬৫৭)

وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ ۖ وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۖ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ [٥:٢

সৎকর্ম ও খোদাভীতিতে একে অন্যের সাহায্য কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা কঠোর শাস্তিদাতা। {সূরা মায়িদা-২}

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল- ahlehaqmedia2014@gmail.com

lutforfarazi@yahoo.com

আরও জানুন

অগ্রীম বাসা ভাড়ার উপর বছর অতিক্রান্ত হলে যাকাত কে দিবে?

প্রশ্নঃ মুহতারাম, অমি প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা দেওয়ার শর্তে বাড়ি ভাড়া নেই। ভাড়া নেওয়ার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আহলে হক্ব বাংলা মিডিয়া সার্ভিস