প্রচ্ছদ / অজু/গোসল/পবিত্রতা/হায়েজ/নেফাস / পায়খানা ও পেশাব থেকে পবিত্র হবার পদ্ধতির উপর উত্থাপিত অভিযোগের জবাব

পায়খানা ও পেশাব থেকে পবিত্র হবার পদ্ধতির উপর উত্থাপিত অভিযোগের জবাব

প্রশ্ন

 মলত্যাগের পর ঢিলা নেওয়ার তরীকা হল- শীতকালে প্রথমে পেছন থেকে সামনে এরপর সামনে থেকে পিছনে আবার পেছন থেকে সামনে ঢিলা ব্যবহার করবে এবং গরমকালে প্রথমে সামনে থেকে পিছনে এরপর… … । আমরা এ আমলটি করে থাকি , কিন্তু ইদানিং আহলে হাদিস ও জামাতে ইসলামীর আলেমরা এটা কে বোকাস বা বেহুদা কাজ বলতেছে,আবর প্রস্রাব করে ঢিলা নিয়ে হাটাহাটি করাকে বেয়াদবী  নোংরামী বলে আখ্যায়িত করছে।    এটি হাদীস অথবা আছার দ্বারা প্রমাণিত কিনা?

এম এম আবদুল্লাহ ভূঁইয়া

মক্কা সৌদি আরব

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

এগুলো বোগাস হলে তাদের বলুন, তারা কি নাপাকসহই থাকে? শরীরে পায়খানা পেশাব লাগানো অবস্থায়ই কি জীবন যাপন করে?

এসব পদ্ধতির কোনটিকেই আমরা সুন্নত বা জরুরী বলি না।  বরং জরুরী হল পবিত্রতা অর্জন করা। পরিপূর্ণভাবে পবিত্র হওয়া। আর এভাবে পূর্ণ পবিত্রতা অর্জিত হয়ে থাকে। এ কারণে এসব পদ্ধতি অনুসরণ করার কথা বলা হয়েছে। এসব ছাড়াও যদি কারো পবিত্রতা হয়ে থাকে, তাহলেতো কোন কথাই নেই। আমরা এসব পদ্ধতির কোনটিকেই জরুরী বা সুন্নত মনে করি না। শুধু মানুষের অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা গেছে এভাবে দ্রুত পবিত্রতা অর্জিত হয়ে থাকে, তাই এভাবে পবিত্র হওয়ার কথা বলা হয়েছে। সুন্নত বা জরুরী বিষয় হিসেবে বলা হয়নি।

ইস্তিঞ্জা দ্বারা মূল উদ্দেশ্য হল নাপাক পরিস্কার হওয়া। যেভাবে তা পরিপূর্ণ পরিস্কার হয় সেভাবেই তা পরিস্কার করা উচিত। আর এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে পেশাবের ফোটা যেন শরীরে না লাগে। কারণ হাদীসে এসেছে অধিকাংশ মানুষের কবরের আজাব হয়ে থাকে পেশাবের ফোটার কারণে।

সেই হিসেবে যেহেতু পানির দ্বারা নাপাক বেশি পরিস্কার হয়, তাই পানি দ্বারা ইস্তিঞ্জা করা সুন্নত। আর ঢিলা দ্বারা ইস্তিঞ্জা করা জায়েজ। {তিরমিজী-১/২৯, মুসতাদরাকে হাকেম-১/১৫৫, হেদায়া-১/৪৮, শরহে নুকায়া-১/৪৮, শরহে বেকায়া-১২৭}

عَطَاءُ بْنُ أَبِي مَيْمُونَةَ قَالَ: سَمِعْتُ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ، يَقُولُ كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «إِذَا خَرَجَ لِحَاجَتِهِ، أَجِيءُ أَنَا وَغُلاَمٌ، مَعَنَا إِدَاوَةٌ مِنْ مَاءٍ، يَعْنِي يَسْتَنْجِي بِهِ»

আতা বিন আবী মাইমুনা বলেন, আমি শুনেছি আনাস বিন মালিক রাঃ বলেছেন, রাসূল সাঃ যখন প্রয়োজন সম্পন্ন [টয়লেটে যাবার জন্য] করার জন্য বের হতেন, তখন আমি ও আরেক ছেলে আসতাম। আমাদের সাথে পানির পাত্র থাকতো। অর্থাৎ এ দিয়ে রাসূল সাঃ ইস্তিঞ্জা করতেন। {বুখারী, হাদীস নং-১৫০}

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-

وَمَنْ اسْتَجْمَرَ فَلْيُوتِرْ، مَنْ فَعَلَ فَقَدْ أَحْسَنَ، وَمَنْ لَا فَلَا حَرَجَ،

যে ব্যক্তি ঢিলা ব্যবহার করে সে যেন বেজোড় ব্যবহার করে। যে তা করবে সে উত্তম কাজ করল, আর যে করেনি তাতে কোন সমস্যা নেই। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৫}

ঢিলা হাতে হাটাহাটি করা

আসলে ঢিলা হাতে হাটাহাটি করা জরুরী বিষয় নয়। এটি দেখতেও সুন্দর দেখায় না। কিন্তু ইস্তিঞ্জার ক্ষেত্রে আবশ্যক হল পেশাব থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা। এটি আবশ্যকীয়।

ভাল করে বুঝে নেই। ঢিলা হাতে হাটাহাটি কোন জরুরী বিষয় বা সুন্নত নয়। কিন্তু পেশাবের ফোটা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা আবশ্যকীয় বিষয়। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

এ বিষয়ে আমরা দু’টি হাদীস লক্ষ্য করি-

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: مَرَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِقَبْرَيْنِ، فَقَالَ: ” إِنَّهُمَا لَيُعَذَّبَانِ، وَمَا يُعَذَّبَانِ فِي كَبِيرٍ، أَمَّا أَحَدُهُمَا: فَكَانَ لَا يَسْتَنْزِهُ مِنَ البَوْلِ – قَالَ وَكِيعٌ: مِنْ بَوْلِهِ – وَأَمَّا الْآخَرُ: فَكَانَ يَمْشِي بِالنَّمِيمَةِ “.

হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূল সাঃ দু’টি কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম হচ্ছিলেন। বললেন, এ দু’টি কবরে আযাব হচ্ছে। কোন বড় কারণে আজাব হচ্ছে না। একজনের কবরে আজাব হচ্ছে সে পেশাব থেকে ভাল করে ইস্তিঞ্জা করতো না। আরেকজন চোগোলখুরী করতো। {মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৯৮০, বুখারী, হাদীস নং-১৩৬১}

عَنْ عِيسَى بْنِ يَزْدَادَ الْيَمَانِيِّ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا بَالَ أَحَدُكُمْ فَلْيَنْتُرْ ذَكَرَهُ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ»

হযরত ঈসাব বিন ইয়াযদাদ আলইয়ামানী তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যখন তোমাদের কেউ পেশাব করে, তখন সে যেন তার লজ্জাস্থানকে তিনবার ঝেড়ে নেয় বা পবিত্র করে নেয়। {সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৩২৬}

যেহেতু পেশাব এমন বস্তু। যার ছিটা শরীরে লাগলে কবরের আযাব হয়ে থাকে। আর হাদীসেও লজ্জাস্থানকে ঝেড়ে পবিত্র করার কথা এসেছে। তাই যাদের পেশাব করার পর পেশাবের ছিটা ফোটা ফোটা করে পড়ে, তাদের উচিত কিছুক্ষণ হেটে তা পবিত্র করা। নতুবা পেশাবের ছিটা শরীরে লাগার দরূন মারাত্মক গোনাহ হবে। যা কবরের আযাবের কারণ হবে। সেই সাথে কাপড় থাকবে নাপাক। আর নাপাক কাপড় দিয়ে নামায হয় না।

এ দৃষ্টিকোণ থেকে যাদের পেশাবের ফোটা পেশাব শেষ করার পর পড়ে না। তাদের পানি দিয়ে ইস্তিঞ্জা করলেই যথেষ্ট। কিন্তু যাদের বের হয় তাদের কবরের আযাব থেকে রক্ষা পাবার আশায় কিছুক্ষণ হেটে হলেও তা থেকে পবিত্রতা অর্জন করে নেয়া জরুরী।

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল- ahlehaqmedia2014@gmail.com

lutforfarazi@yahoo.com

আরও জানুন

জমির মালিকের উপর যাকাত আবশ্যক হবে?

প্রশ্ন আমার বাবা এবং বড় ভাইয়ের সমন্বয়ে ২০ থেকে ২২ বিঘা জমি আছে এবং বাজারে …

No comments

  1. m m abdullah makkah

    ধন্যবাদ , মুহতারম সকলের উপকারার্থে এই মাসালাটি সহায়ক হবে

  2. Mehedi Hasan Emon

    Thanks

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আহলে হক্ব বাংলা মিডিয়া সার্ভিস