প্রশ্ন
১। কোন একজন নারী যদি তার দেবর/বাসুর/বোন জামাইয়ের সাতে হজ্ব কিংবা উমরা করতে যায়। এবং একই রুমে শাশুরী, বাসুর, দেবর এবং বোন জামাই এর সাথে একই রুমে রাত্রি যাপন করে তাহলে সেই মহিলার ব্যাপারে শরীয়তের হুকুম কি? অর্থাৎ তার উমরা পালন সহি হবে কিনা বিস্তারিত জানালে উপকৃত হবো।
২। কোন নারী তার বেগানা আত্বীয় (দেবর/বাসুর/বোন জামাই) পুরুষের সাথে উমরা পালন করতে যায় এবং তওয়াফ বা অন্য কোন পথ চলার ক্ষেত্রে উক্ত মহিলার বেগানা আত্মীয় যদি তার হাত ধরে তওয়াফ বা রাস্তা চলে হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে তাহলে তাদের ইহরাম নষ্ট হবে কিনা? এ ব্যাপারে দলিলসহ জানালে উপকৃত হবো।
৩। কোন মহিলা যদি উমরা বা হজ্ব পালনে উজু করতে গিয়ে বেগানা পুরুষের সহযোগিতা নেয় অর্থাৎ জামার হাতা খুলতে গিয়ে যদি তার কষ্ট হয় এবং বেগানা পুরুষের সহযোগিতা নেয় তার শরীর স্পর্শ করে তাহলে এক্ষেত্রে শরীয়তের কি হুকুম। জানালে উপকৃত হবো।
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
পর্দা একটি ফরজ বিধান। এটি লঙ্ঘণ করা মারাত্মক গোনাহের কাজ। এ কারণেই মহিলাদের উপর হজ্ব আদায় করা ফরজ হওয়ার জন্য মাহরাম থাকা শর্ত। যদি কোন মহিলার মাহরাম আত্মীয় না থাকে, তাহলে হজ্বের যাবতীয় খরচ থাকা সত্বেও তার উপর হজ্ব আদায় করা ফরজ হয় না।
পরপুরুষের হাত ধরা, শরীর স্পর্শ করা সবই মারাত্মক পর্যায়ের গোনাহ। হজ্ব কবুল হওয়ার জন্য এসব গোনাহ থেকে বেঁচে থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। হাদীসে এরশাদ হয়েছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ حَجَّ هَذَا البَيْتَ، فَلَمْ يَرْفُثْ، وَلَمْ يَفْسُقْ، رَجَعَ كَمَا وَلَدَتْهُ أُمُّهُ»
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ্ব করেছে এবং তাতে কোনরূপ অশ্লীল কথা বলেনি, এবং কোন গোনাহের কাজ করেনি, সেই ব্যক্তি হজ্জ থেকে প্রত্যাবর্তন করবে গোনাহহীন অবস্থায়, যেমন গোনাহহীন ছিল যেদিন তার মাতা তাকে প্রসব করেছিল। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১৮১৯, ১৭২৩, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৩৫০}
এ কারণে মাহরাম ছাড়া অন্য কারো সাথে হজ্জ বা উমরা পালন করলে বা গোনাহের কাজ করার দ্বারা গোনাহ হলেও তা মাকরূহের সাথে আদায় হয়ে যায়। বাকি কবুল হওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে তওবা করে ক্ষমা চাইলে দয়ালু আল্লাহ তাআলা আশা করি উক্ত হজ্জ বা উমরাটি কবুল করতে পারেন।
يُشْتَرَطُ فِي حَجِّ الْمَرْأَةِ مِنْ سَفَرِ زَوْجٍ أَوْ مَحْرَمٍ بَالِغٍ عَاقِلٍ غَيْرِ مَجُوسِيٍّ وَلَا فَاسِقٍ مَعَ النَّفَقَةِ عَلَيْهِ وَأَطْلَقَ الْمَرْأَةَ فَشَمِلَ الشَّابَّةَ وَالْعَجُوزَ لِإِطْلَاقِ النُّصُوصِ (البحر الرائق، كتاب الحج-2/552، المحيط البرهانى، كتاب الحج، الفصل الأول-3/394)
وَلَوْ حَجَّتْ بِلَا مَحْرَمٍ جَازَ مَعَ الْكَرَاهَةِ الخ- (قَوْلُهُ مَعَ الْكَرَاهَةِ) أَيْ التَّحْرِيمِيَّةِ لِلنَّهْيِ فِي حَدِيثِ الصَّحِيحَيْنِ «لَا تُسَافِرْ امْرَأَةٌ ثَلَاثًا إلَّا وَمَعَهَا مَحْرَمٌ» زَادَ مُسْلِمٌ فِي رِوَايَةٍ «أَوْ زَوْجٌ» (رد المحتار، كتاب الحج، مطبع كراچى-2/465)
إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ (سورة النساء-48
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।