প্রচ্ছদ / আহলে হাদীস / পাঞ্জাবী পাগড়ি টুপি সুন্নত নয় আরবের পোশাক?

পাঞ্জাবী পাগড়ি টুপি সুন্নত নয় আরবের পোশাক?

প্রশ্ন

নাম: মু. হাসান

দেশ: বাংলাদেশ

জেলা: রংপুর

আস্‍সালামুআলাইকুম,

একজন আহলে হাদিস আমাকে চ্যালেন্জ্ঞ করলো যে লম্বা জামা ,টুপি,পাগড়ি এগুলি মক্কা মদিনার কাফির মুশরিকরাও পড়তো । তাই এগুলো সুন্নাত নয়। এগুলির সম্পর্কে কুরআন হাদিসের কোনো দলীল নাই। মহানবী সা. পরতেন কারণ এগুলি আরবের পোষাক ছিল। দয়া করে রেফারেন্স জানাবেন যাতে আমারও সন্দেহ নিরসন হয়।

আর আপনাদের এই প্রচারণার কাজে কোনো ব্যাংক একাউন্ট আছে কি ? যাতে প্রতি মাসে যতটুকু সামর্থ্য হয় দ্বীনের খেদমত করতে পারি।

জবাব:

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

এ বক্তব্যটি কোন নবীপ্রেমিকের কথা নয়, নবীজীর দুশমনদের কথা হতে পারে। কাফেররা কী করেছে, সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। আমাদের প্রিয় নবীজী কী করেছেন? সেটাই আমাদের আলোচ্য ও বিবেচ্য। রাসূল সাঃ এর প্রতিটি কাজ উম্মতের জন্য আদর্শ। তবে কতিপয় সুনির্দিশ বৈশিষ্ট রাসূল সাঃ এর ছিল যা অন্য কারো জন্য জায়েজ নয়। যেমন চারের অধিক বিয়ে করা ইত্যাদি। এটা রাসূল সাঃ এর বৈশিষ্ট। এমন কতিপয় সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট ছাড়া রাসূল সাঃ এর প্রতিটি আমল, প্রতিটি চাল-চলন একজন নবী প্রেমিক উম্মতের কাছে আদর্শ ও পালনীয়। রাসূল সাঃ এর সকল আমলকে আদর্শ সাব্যস্ত করে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-

لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا [٣٣:٢١

যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে,তাদের জন্যে রসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম নমুনা রয়েছে। {সূরা   আহযাব-২৩}

পোশাকের মাঝে রাসূল সাঃ কোন নমুনা আমাদের জন্য রেখে যান নি? তিনি শুধু মক্কার কাফেরদের অনুসরণে জামা কাপড় পরিধান করে গেছেন? এমন কথা রাসূল বিদ্বেষী ছাড়া অন্য কেউ কিছুতেই বলতে পারে না।

যারা আল্লাহ ও হাশরে বিশ্বাস রাখে তাদের জন্য নবীজীর পোশাকে, নবীজী কথায়, নবীজীর প্রতিটি আমলে উত্তম নমুনা আছে বলে ঘোষণা দিয়েছেন আল্লাহ পাক।

কিন্তু যারা আল্লাহ ও হাশরে অবিশ্বাসী তাদের জন্য নবীজীর পোশাকে, নবীজীর চাল-চলনে আদর্শ না থাকাটা অসম্ভব কিছু নয়। তারা নবীজী সাঃ এর চাল-চলন ও পোশাক পরিচ্ছদ না দেখে কাফেরদের পোশাক পরিচ্ছদ দেখেই আকৃষ্ট হবে বেশি এটাই স্বাভাবিক।

কে কী করেছে? সেটা কোন মুসলমান বিবেচনা করতে পারে না। একজন মুসলমান দেখবে আমাদের আদর্শ, আমাদের পথিকৃত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ কী করেছেন? রাসূল সাঃ এর প্রতিটি কাজের শর্তহীন ও যুক্তিহীনভাবে অনুসরণের নাম দ্বীন। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন-

قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ ۗ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ [٣:٣١

বলুন,যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস,তাহলে আমাকে অনুসরণ কর,যাতে আল্লাহ ও তোমাদিগকে ভালবাসেন এবং তোমাদিগকে তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু। {সূলা আলে ইমরান-৩১}

সর্বক্ষেত্রে নবীজীর অনুসরণকে আল্লাহ প্রেমের নিদর্শন বলা হয়েছে। আর হাদীসে কাফেরদের অনুসরণকে জাহান্নামী হওয়ার নিদর্শন বলা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে-

عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ ».

হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-যে ব্যক্তি যার সাদৃশ্য গ্রহণ করে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে (আবু দাউদ শরীফ, হাদিস নং-৪০৩৩, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদিস নং-২৯৬৬, মুসনাদে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস নং-২০৯০৮৬)

একজন মুমিন মুসলমান প্রতিটি আমলে রাসূলের মাঝে আদর্শ ও নমুনা খুঁজে বেড়ায়। আর নবী বিদ্বেষীরা খুঁজবে কাফেরদের মাঝে এটাই স্বাভাবিক। তাই তাদের মুখে নবীজী সাঃ এর পরিধান করা পোশাকে থাকা আল্লাহ তাআলার ঘোষণা দেয়া আদর্শিক রূপরেখা বর্জনের জন্য স্লোগান আসতেই পারে। নবীপ্রেমিকের মুখে এমন কুফরী কথা আসতে পারে না।

রাসূলে কারীম সাঃ এর প্রতিটি কর্মের অনুসরণকে রাসূল সাঃ এর সাথে জান্নাতে যাওয়ার পথ বলে ঘোষণা করে বলেন-

ومن أحيا سنتي فقد أحبني ومن أحبني كان معي في الجنة

যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত তথা পথ-পদ্ধতিকে জিন্দা করবে তথা পালন করবে, সে আমাকে ভালবাসল, আর যে, আমাকে ভালবাসল, সে আমার সাথে জান্নাতে থাকবে। {সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-২৬৭৮}

সুন্নাত কাকে বলে?

السنة تطلق في الأكثر على ما أضيف إلى النبي من قول أو فعل أو تقرير

সুন্নাত বলা হয়, রাসূল সাঃ এর কথা, কাজ ও চুপ থাকাকে। {আনওয়ারুল কাশিফাহ, উলুমুল হাদীস ফি জাওয়ি তাতবীকাতিল মুহাদ্দিসীন, কাওয়ায়েদুত তাহদীস ফি ফুনুনি মুসতালাহিল হাদীস, লিসানুল মুহাদ্দিসীন}

রাসূল সাঃ এর প্রতিটি আমলকে অনুসরণের চেষ্টা করা নবীপ্রেমিকের কাজ। নবীজী সাঃ এর আমল বর্জনের বাহানা খোঁজা নবী বিদ্বেষীদের কাজ। সাহাবায়ে কেরাম রাসূল সাঃ যাই করেছেন, যে কারণেই করেছেন, তা’ই অনুসরণ করার চেষ্টা করেছেন দলিল ও যুক্তি ছাড়া। এ কারণেই রাসূল সাঃ এর মজাক করে বলা আবু হুরায়রা তথা বিড়ালওয়ালা নাম পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দবোধ করতেন বিখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন সাখার রাঃ। সাহাবী আব্দুল্লাহ নামের সাথে জোড়ে নিলেন “জুলবাদাইন” তথা দুই চাদরওয়ালা নাম। আরেকজন জোরে নিলেন জুলইয়াদাইন তথা হাতওয়ালা নাম। যুক্তি খুঁজেননি, কেন বলেছেন রাসূল সাঃ? রাসূল সাঃ বলেছেন এর চেয়ে আর বড় দলিল কি আছে একজন একনিষ্ট ভক্তের কাছে?

এ কারণেই যুক্তিহীনভাবে রাসূল সাঃ কে ভালবেসে এক সাহাবী সারা জীবন খাবারের তালিকায় কদু রাখতে চেষ্টা করেছেন যেহেতু রাসূল সাঃ পছন্দ করতেন। আব্দুল্লাহ বিন ওমর অকারণেই মদীনা থেকে মক্কায় যাওয়ার পথে নির্দিষ্ট স্থানে বসে পড়তেন, যেহেতু রাসূল সাঃ কোন কারণে সেখানে একদিন বসে ছিলেন। হযরত ওমর রাঃ বিনা কারণে ইচ্ছেকৃত মাটিতে বসে গিয়েছিলেন এক স্থানে যেহেতু একদিন রাসূল সাঃ উক্ত স্থানে হোচট খেয়েছিলেন।

এই সবই তীব্র মোহাব্বত ও হৃদয়ের টানের ব্যাপার। নবীজী সাঃ কে হৃদয়ের সবটুকু নিংড়ে ভালবাসার নিদর্শন। রাসূল সাঃ এর অনুসরণ থেকে দূরে থাকতে নোংরা যুক্তি দিয়ে আল্লাহ তাআলার ঘোষণা করা গোটা পৃথিবীর আদর্শ মানব নবীজী সাঃ এর পোশাককে মক্কার কাফেরদের অনুসরণ বলাটা নবীপ্রেমিকরা করবে না। নবীবিদ্বেষীদের বেআদবীর বহিঃপ্রকাশ। আল্লাহ তাআলা আমাদের সহীহ বুঝ দান করুন। আমীন। ছুম্মা আমীন।

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল- ahlehaqmedia2014@gmail.com

lutforfarazi@yahoo.com

আরও জানুন

অগ্রীম বাসা ভাড়ার উপর বছর অতিক্রান্ত হলে যাকাত কে দিবে?

প্রশ্নঃ মুহতারাম, অমি প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা দেওয়ার শর্তে বাড়ি ভাড়া নেই। ভাড়া নেওয়ার …

2 comments

  1. হাফেজ জামির হোসেন

    পিডিফ গুল কিন্ত তা পোরার উপোযগি থাকছেনা কি কারন।। জানালে খুশি হতাম।।

  2. শুকরিয়া

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আহলে হক্ব বাংলা মিডিয়া সার্ভিস