প্রচ্ছদ / আকিদা-বিশ্বাস / কবরে সঠিক উত্তরদাতা কবর থেকেই জান্নাতে চলে যাবে?

কবরে সঠিক উত্তরদাতা কবর থেকেই জান্নাতে চলে যাবে?

প্রশ্ন

From: সারোয়ার আহম্মেদ কাউছার
বিষয়ঃ মুত্যুর পর

প্রশ্নঃ
আসসলামুআলাইকুম ওয়ারাহতুল্লাহ।

জনাব আমি জানতে চাই মুত্যুর পর মুনকার নাকির এর প্রশ্রের জবাব দিতে পারলে বলা হয়েছে কবরের সাথে জান্নতের সরাসরি যোগাযোগ হয়ে যাবে। তাহলে কি ঐ ব্যক্তিকে জান্নাতের সব নেয়ামত ভোগ করতে দেয়া হবে কি না? আর যদি যদি না দেয়া হয় তাহলে তাকে কত বছর অপেক্ষা করতে হবে।

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

মৃত্যুর পর কবর জগতে মুনকার নকীরের প্রশ্নের জবাব দিতে পারলে উক্ত ব্যক্তিকে জান্নাতের পোশাক পরিধান করানো হবে। জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দেয়া হবে। আর জান্নাতের দিকে একটি দরজা খুলে দেয়া হবে। সেই দরজা দিয়ে জান্নাতের সুবাতাস বইতে থাকতে। আর উক্ত ব্যক্তি কিয়ামত পর্যন্ত উক্ত কবরে বাসর রাতের বরের মত নিশ্চিন্ত আরামে বিশ্রাম করতে থাকবে।

কিয়ামত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত প্রতিটি ব্যক্তি কবর জগতে থাকবে। এরপর হাশরের ময়দান, মীযান, পুলসিরাত, হিসাব নিকাশ ইত্যাদির পর উক্ত ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে।

হযরত বারা বিন আযেব রাঃ থেকে বর্ণিত এক দীর্ঘ হাদীসে কবরে সঠিক উত্তরদাতার ক্ষেত্রে বর্ণনা এসেছঃ

فَأَفْرِشُوهُ مِنَ الْجَنَّةِ، وَافْتَحُوا لَهُ بَابًا إِلَى الْجَنَّةِ، وَأَلْبِسُوهُ مِنَ الْجَنَّةِ

তার জন্য জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দাও। তার জন্য জান্নাতের দিকে দরজা খুলে দাও। তাকে জান্নাতের পোশাক পরিধান করাও। [সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৭৫৩, মুস্তাদরাক আলাস সহীহাইন, হাদীস নং-১০৭, শুয়াবুল ঈমান লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৩৯০]

وَمِن وَرَائِهِم بَرْزَخٌ إِلَىٰ يَوْمِ يُبْعَثُونَ [٢٣:١٠٠]

তাদের সামনে বরযখ তথা পর্দা আছে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত। [সূরা মুমিনূন-১০০]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا قُبِرَ الْمَيِّتُ، أَوْ قَالَ: أَحَدُكُمْ، أَتَاهُ مَلَكَانِ أَسْوَدَانِ أَزْرَقَانِ، يُقَالُ لأَحَدِهِمَا: الْمُنْكَرُ، وَلِلآخَرِ: النَّكِيرُ، فَيَقُولاَنِ: مَا كُنْتَ تَقُولُ فِي هَذَا الرَّجُلِ؟ فَيَقُولُ: مَا كَانَ يَقُولُ: هُوَ عَبْدُ اللهِ وَرَسُولُهُ، أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، فَيَقُولاَنِ: قَدْ كُنَّا نَعْلَمُ أَنَّكَ تَقُولُ هَذَا، ثُمَّ يُفْسَحُ لَهُ فِي قَبْرِهِ سَبْعُونَ ذِرَاعًا فِي سَبْعِينَ، ثُمَّ يُنَوَّرُ لَهُ فِيهِ، ثُمَّ يُقَالُ لَهُ، نَمْ، فَيَقُولُ: أَرْجِعُ إِلَى أَهْلِي فَأُخْبِرُهُمْ، فَيَقُولاَنِ: نَمْ كَنَوْمَةِ العَرُوسِ الَّذِي لاَ يُوقِظُهُ إِلاَّ أَحَبُّ أَهْلِهِ إِلَيْهِ، حَتَّى يَبْعَثَهُ اللَّهُ مِنْ مَضْجَعِهِ ذَلِكَ، وَإِنْ كَانَ مُنَافِقًا قَالَ: سَمِعْتُ النَّاسَ يَقُولُونَ، فَقُلْتُ مِثْلَهُ، لاَ أَدْرِي، فَيَقُولاَنِ: قَدْ كُنَّا نَعْلَمُ أَنَّكَ تَقُولُ ذَلِكَ، فَيُقَالُ لِلأَرْضِ: التَئِمِي عَلَيْهِ، فَتَلْتَئِمُ عَلَيْهِ، فَتَخْتَلِفُ فِيهَا أَضْلاَعُهُ، فَلاَ يَزَالُ فِيهَا مُعَذَّبًا حَتَّى يَبْعَثَهُ اللَّهُ مِنْ مَضْجَعِهِ ذَلِكَ

আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মৃত লোককে বা তোমাদের কাউকে যখন কবরের মধ্যে রাখা হয় তখন কালো বর্ণের এবং নীল চোখ বিশিষ্ট দু’জন ফেরেশতা আসেন তার নিকট। তাদের মধ্যে একজনকে মুনকার এবং অন্যজনকে নাকীর বলা হয়। তারা উভয়ে (মৃত ব্যক্তিকে) প্রশ্ন করেনঃ তুমি এ ব্যক্তির (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) প্রসঙ্গে কি বলতে? মৃত ব্যক্তিটি (যদি মুমিন হয় তাহলে) পূর্বে যা বলত তাই বলবেঃ তিনি আল্লাহর বান্দা ও তার রাসূল। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তা’আলা ব্যতীত আর কোন মাবূদ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দা ও রাসূল।

তারা উভয়ে তখন বলবেন, আমরা তো জানতাম তুমি একথাই বলবে। তারপর সে ব্যক্তির কবর দৈর্ঘ্য-প্রস্থে সত্তর গজ করে প্রশস্ত করা হবে এবং তার জন্য এখানে আলোর ব্যবস্থা করা হবে। তারপর সে লোককে বলা হবে, তুমি ঘুমিয়ে থাক। তখন সে বলবে, আমার পরিবার-পরিজনকে সুসংবাদ দেওয়ার জন্য আমি তাদের নিকট ফিরে যেতে চাই। তারা উভয়ে বলবেন, বাসর ঘরের বরের মত তুমি এখানে এমন গভীর ঘুম দাও, যাকে তার পরিবারের সবচাইতে প্রিয়জন ব্যতিত আর কোন ব্যক্তি জাগিয়ে তুলতে পারে না।

অবশেষে আল্লাহ তা’আলা কিয়ামাতের দিন তাকে তার বিছানা হতে জাগিয়ে তুলবেন। মৃত লোকটি যদি মুনাফিক হয় তাহলে (প্রশ্নের উত্তরে) বলবে, তার প্রসঙ্গে লোকেরা একটা কথা বলত আমিও তাই বলতাম। এর বেশি কিছুই আমি জানি না। ফেরেশতা দু’জন তখন বলবেন, আমরা জানতাম, এ কথাই তুমি বলবে। তারপর যমীনকে বলা হবে, একে চাপ দাও। সে লোককে এমন শক্ত করে যমীন চাপা দেবে যে, তার পাজরের হাড়গুলো পরস্পরের মাঝে ঢুকে পরবে। (কিয়ামাতের দিন) আল্লাহ তাকে তার এ বিছানা হতে উঠানো পর্যন্ত সে লোক এভাবেই আযাব পেতে থাকবে। [জামে তিরমিজী, হাদীস নং-১০৭১]

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com 

আরও জানুন

কেমোথেরাপি দিলে রোযা ভেঙ্গে যাবে?

প্রশ্ন আসসালামু আলাইকুম মুহতারাম,, ক্যান্সারের কেমো দিলে কি রোজা ভঙ্গ হবে? উত্তর وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته …

আহলে হক্ব বাংলা মিডিয়া সার্ভিস