প্রচ্ছদ / অজু/গোসল/পবিত্রতা/হায়েজ/নেফাস / হায়েজ ও নেফাস অবস্থায় কুরআন পড়া যাবে?

হায়েজ ও নেফাস অবস্থায় কুরআন পড়া যাবে?

প্রশ্ন

সম্মানিত মুফতী সাহেব।

আমাদের এক ভাই বলছেন যে, হায়েজ ও নেফাস অবস্থায় মহিলাদের জন্য কুরআন ধরা নিষিদ্ধ, কিন্তু পড়তে কোন সমস্যা নেই।

হায়েজ ও নেফাসের অবস্থায় কুরআন পড়া নিষেধ এটা মাযহাবী বক্তব্য। হাদীসের মাঝে এমন কোন বক্তব্য আসেনি

মুফতী সাহেবের কাছে আমার প্রশ্ন হল, উক্ত ভাইয়ের কথাটির বাস্তবতা কতটুকু?

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

উক্ত ভাইটির কথা সঠিক নয়।

আর তিনি যেভাবে মাযহাবী বক্তব্য বলে তাচ্ছিল্য করলেন এর দ্বারা বুঝা যাচ্ছে, তিনি মাযহাব বিষয়ে ধারণা রাখেন না। মাযহাবতো কুরআন ও হাদীসের বাহিরের কোন কিছু নয়। বরং কুরআন ও হাদীসের বিধানের একটি বিন্যাস্ত রূপের নাম মাযহাব।

তো এটি মাযহাবী বক্তব্য কুরআন ও হাদীসের নয়, এমনটি বলাই অজ্ঞতা। কুরআন ও হাদীসের বক্তব্যের উল্টো মাযহাবের বক্তব্য হতেই পারে না।

হলে সেটিতে আর গ্রহণযোগ্য মাযহাবই থাকে না।

 

হাদীসকে সামনে রেখেই ফুকাহায়ে কেরাম লিখেছেন, হায়েজ ও নেফাসগ্রস্থ মহিলা কুরআন তিলাওয়াত করতে পারবে না। এটি শুধু মাযহাবী মতামত নয়, হাদীসে বর্ণিত বিধান।

عن إبراهيم قال : الحائض والجنب يذكران الله ويسميان (مصنف عبد الرزاق، كتاب الطهارة، باب الحائض تذكر الله ولا تقرأ القرآن، رقم الحديث-989)

অনুবাদ-হযরত ইবরাহীম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন-হায়েজ এবং গোসল ফরজ হওয়া ব্যক্তি আল্লাহর জিকির করতে পারবে, এবং তার নাম নিতে পারবে। {মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১৩০৫, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-৯৮৯}

عن ابن عمر : عن النبي صلى الله عليه و سلم قال لا تقرأ الحائض ولا الجنب شيئا من القرآن (سنن الترمذى، ابواب الطهارات، باب ما جاء في الجنب والحائض : أنهما لا يقرأن القرآن، رقم الحديث-131)

অনুবাদ-হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-ঋতুবতী মহিলা এবং গোসল ফরজ হওয়া ব্যক্তি কোরআন পড়বে না। {সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-১৩১, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-৯৯১, মুসনাদুর রাবী, হাদীস নং-১১, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১০৯০, মুসন্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-৩৮২৩}

عن أبي سعيد الخدري أليس إذا حاضت لم تصل ولم تصم (صحيح البخارى، كتاب الحيض، ترك الحائض الصوم، رقم الحديث-298)

অনুবাদ-হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ বলেছেন-মহিলারা হায়েজা অবস্থায় নামায পড়তে পারে না, এবং রোযাও রাখতে পারে না। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-২৯৮}

يستحب للحائض اذا دخل وقت الصلاة ان تتوضأ وتجلس عند مسجد بيتها تسبح وتهلل قدر ما يمكن أداء الصلاة لو كانت طاهرة (الفتاوى الهندية، كتاب الطهارة، الفصل الرابع فى احكام الحيض والنفاس والإستحاضة- 1/38)

অনুবাদ-হায়েজ নিফাসওয়ালী মহিলার ক্ষেত্রে নামায পড়া নিষিদ্ধ, রোযা রাখা নিষিদ্ধ। কুরআন পড়া নিষিদ্ধ। গিলাফ ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা নিষিদ্ধ। মসজিদে প্রবেশ নিষিদ্ধ। বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করা নিষিদ্ধ। {বাদায়েউস সানায়ে’-১/১৬৩}

وأما حكم الحيض والنفاس فمنع جواز الصلاة والصوم وقراءة القرآن ومس المصحف إلا بغلاف ودخول المسجد والطواف بالبيت (بدائع الصنائع، كتاب الطهارة، باب الحيض والنفاس-1/163)

অনুবাদ-হায়েজ নিফাসওয়ালী মহিলার ক্ষেত্রে নামায পড়া নিষিদ্ধ, রোযা রাখা নিষিদ্ধ। কুরআন পড়া নিষিদ্ধ। গিলাফ ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা নিষিদ্ধ। মসজিদে প্রবেশ নিষিদ্ধ। বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করা নিষিদ্ধ। {বাদায়েউস সানায়ে’-১/১৬৩}

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com 

আরও জানুন

আট ভরি স্বর্নের উপর কতটুকু যাকাত আবশ্যক?

প্রশ্ন আচ্ছালামুয়ালাইকুম। মুহতারাম আমার একটা প্রশ্ন স্বর্ণের কত ভরি হলে যাকাত দিতে হবে। আর আমার …

আহলে হক্ব বাংলা মিডিয়া সার্ভিস