প্রচ্ছদ / তালাক/ডিভোর্স/হুরমত / জোরপূর্বক বিয়ে করালে কি বিয়ে হয় না? আল্লাহকে সাক্ষি রেখে বিয়ে করার হুকুম কী?

জোরপূর্বক বিয়ে করালে কি বিয়ে হয় না? আল্লাহকে সাক্ষি রেখে বিয়ে করার হুকুম কী?

প্রশ্ন

আসসালামু আলাইকুম।
আমি মো: নূরনবী।

প্রায় তিন বছর থেকে একটি বাসায় দুজন ছাত্রী পড়াতাম। তারা দুবোন।দুজনে এক সাথে পড়বে এ জন্য রাজী হয়েছিলাম। যখন বুজতে পাড়লাম তাদের পরিবারের সবাই আমাকে পছন্দ করে তখন আমি পড়ানো বাদ দেই কিন্তু তাদের বাবা মা আমাকে খুব অনুরোধ করে এমনকি আমার ম্যাচেও চলে আসে আমি অনেকটা বাধ্য হই আবার পড়ানোর জন্য।বড়লোক বাপের মেয়েটির খোজ নিয়ে দেখি বেশ কিছু ছেলের সাথে কথা বলে যেটা আমার পক্ষে কোন ভাবেই মেনে নেওয়া সম্ভব না কিন্তু মেয়ে এবং মেয়ের পরিবার আমাকে খুব পছন্দ করে।এর মাঝে আমার ছোট ভাইকে অপারেশনের জন্য শহরে নিয়ে আসি সেই থেকে আমার পরিবারের সাথেও তারা ভাল একটা সম্পর্ক তৈরী করে। যখন বুঝতে পারলাম তারা শীঘ্রই আমার সাথে তাকে বিয়ে দিতে চায়। আমি বাধ্য হই বাদ দিতে। তারা আমাকে মানুষিক ভাবে চাপ দিতে থাকে আমি রাজী না হলেও তারা আমার পরিবার কে নানা প্রকার ভয়ভীতি দেখিয়ে আমার অমতেই বিয়ে ঠিক করে। আমি বাধ্য হই বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে কারণ আমি একটি মেয়েকে অনেক অনেক ভালবাসতাম জানি ইসলামে ভালবাসার কোন জায়গা নেই। তাই আমারা মোবাইলেই আল্লাহ কে স্বাক্ষী রেখে বিয়ে করেছি। কারণ সে অনেক দূরে থাকে আমারা কখনো এক জায়গায় হইনি। বাড়ি থেকে বের হওয়ার পরে আমাকে না পেয়ে মানসন্মানের ভয়ে বাবা অজ্ঞান হয়ে পরে। আমি বাধ্য হই ফিরে আসতে আর সে দিন আমাকে জোর করেই বিয়ে দেয়া হয় সেই মেয়ের সাথে। কিন্তু আমি এই মেয়েকে নিয়ে সংসার করতে পারব না আমি ওই মেয়েটিকে মন থেকে চাই।
আমাদের সম্পর্কের সুষ্পষ্টতা নির্ণয় ও আমার করণীয় কি ইসলামিক ও আইনি উত্তরে সহায়তা পেতে আমার কয়েকটি প্রশ্ন-

১) আমার অমতে বিয়েটি কি আদৌ হয়েছে?
২) মেয়েটির কাছে থেকে কিভাবে রেহাই পেতে পারি? মোহরানা কি পরিশোধ করতে হবে?
৩) আল্লাহ কে স্বাক্ষী রেখে আমরা দুজন মন থেকে যে বিয়ে করেছি সেটা কি হয়েছে?
জনাব আমাকে উপযুক্ত উত্তর প্রদানে বাধিত করবেন।

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

১ম প্রশ্নের উত্তর

মন থেকে সন্তুষ্ট না থাকা সত্বেও যদি দুইজন প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিম পুরুষ একজন পুরুষ ও দুইজন নারী সাক্ষির সামনে বিয়ের ইজাব কবুল তথা প্রস্তাব ও গ্রহণ হয়ে থাকে। তাহলে বিয়ে সম্পন্ন হয়ে যায়।

যদিও পাত্র বা পাত্রী বিয়ে করতে মন থেকে রাজি না হয়ে থাকে। কারণ বিধান প্রযোজ্য হয় বাহ্যিক অবস্থার উপর। আর বাহ্যিক ইজাব কবুল প্রমাণ করে বিয়েতে পাত্র পাত্রী রাজি।

সেই হিসেবে উক্ত মেয়েকে বিয়ে করতে আপনি রাজি না থাকলেও যদি বিয়ের মজলিসে বিয়ের জন্য ইসলামের যেসব শর্ত আছে, পুরণ করে বিয়ে করে থাকেন, তাহলে বিয়ে হয়ে গেছে। তাকে কোন যৌক্তিক কারণ ছাড়া তালাক দেয়া ঠিক হবে না।

وإن أكره على النكاح جاز العقد الخ (الجوهرة النيرة، كتاب الإكراه-2/355، دار الكتاب-2/337)

وإذا أكرهت المرأة على النكاح، ففعلت، فإنه يجوز العقد (الفتاوى الهندية-1/294)

نكاح المكره صحيح، (رد المحتار-4/87)

فيجوز نكاح المكره عندنا (بدائع الصنائع-2/602)

وكذالك الجد ليس من شرائط جواز النكاح حتى يجوز نكاح الهازل، لأن الشرع جعل الجد والهزل فى باب النكاح سواء (بدائع الصنائع-2/612)

২য় প্রশ্নের উত্তর

যদি মোহর ধার্য করে বিয়ে করে থাকেন, তাহলে উক্ত মেয়ের সাথে একান্ত সাক্ষাৎ ছাড়া তালাক দিলে অর্ধেক মোহর পরিশোধ করতে হবে। আর একান্ত সাক্ষাতের পর তালাক দিলে পূর্ণ মোহর দিতে হবে।

আর যদি মোহর ধার্য করা ছাড়া বিয়ে করে থাকেন, তাহলে একান্ত সাক্ষাৎ ছাড়া বিয়ে করলে স্ত্রীকে এক জোড়া কাপড় দিতে হবে। আর একান্ত সাক্ষাতের পর তালাক দিলে উক্ত মেয়ের নিকটাত্মীয়দের বিয়েতে যে পরিমাণ মোহর ধার্য করা হয়ে থাকে, তার সমমানের মোহর পরিশোধ করতে হবে।

তবে আমাদের পরামর্শ হল, যেহেতু বাবা মা রাজি হয়ে বিয়েটা দিয়েছেন, সেটাকে মেনে নিন। আল্লাহর কাছে এর প্রতিদান পাবেন ইনশাআল্লাহ। মানুষ সর্বদাই খারাপ থাকে না। আপনার সোহবতে ভালও হয়ে যেতে পারে।

দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টালে অনেক কিছুই পাল্টে যায়। আপনার চোখে আপনার আগে পছন্দ করা মেয়েটা রয়ে গেছে। তাই আপনি বিয়েটা মন থেকে নিতে পারতেছেন না। নাজায়েজ প্রেমের উক্ত সম্পর্কটা বন্ধ করে, শরীয়তসিদ্ধ বিয়েটা মেনে নিন। এতেই আশা করি আপনার কল্যাণ নিহিত থাকবে। আল্লাহর রহমাত বর্ষিত হবে ইনশাআল্লাহ।

وَإِن طَلَّقْتُمُوهُنَّ مِن قَبْلِ أَن تَمَسُّوهُنَّ وَقَدْ فَرَضْتُمْ لَهُنَّ فَرِيضَةً فَنِصْفُ مَا فَرَضْتُمْ إِلَّا أَن يَعْفُونَ أَوْ يَعْفُوَ الَّذِي بِيَدِهِ عُقْدَةُ النِّكَاحِ ۚ [٢:٢٣٧]

আর যদি মোহর সাব্যস্ত করার পর স্পর্শ করার পূর্বে তালাক দিয়ে দাও,তাহলে যে,মোহর সাব্যস্ত করা হয়েছে তার অর্ধেক দিয়ে দিতে হবে। অবশ্য যদি নারীরা ক্ষমা করে দেয় কিংবা বিয়ের বন্ধন যার অধিকারে সে (অর্থাৎ, স্বামী) যদি ক্ষমা করে দেয় তবে তা স্বতন্ত্র কথা। [সূরা বাকারা-২৩৭]

وللمطلقة قبل الدخول نصف المفروض، (تاتارخانية-4/220، رقم-6022)

ويجب نصفه: أى نصف المهر بطلاق قبل وطء، أو خلوة (رد المحتار-4/235)

وان طلقها قبل الدخول، والخلوة، فلها نصف المسمى (هداية-2/324)

كذا فى الهداية: فليست الخلوة صحيحة حتى لو طلقها كان لها نصف المهر (فتح القدير، باب المهر، زكريا-3/320، كوئته-3/217، دار الفكر بيروت-3/332، تنوير الابصار مع الشامية-4/250)

واذا خلا الرجل بامرأته وليس هناك مانع من الوطء، ثم طلقها، فلها كمال المهر…… عليها العدة فى جميع هذه المسائل (هداية-2/325-326)

عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ ثَوْبَانَ , قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:  «مَنْ كَشَفَ خِمَارَ امْرَأَةٍ وَنَظَرَ إِلَيْهَا فَقَدْ وَجَبَ الصَّدَاقُ دَخَلَ بِهَا أَوْ لَمْ يَدْخُلْ بِهَا» (سنن الدار قطنى، رقم-3824، السنن الكبرى للبيهقى، رقم-14427)

لَّا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ إِن طَلَّقْتُمُ النِّسَاءَ مَا لَمْ تَمَسُّوهُنَّ أَوْ تَفْرِضُوا لَهُنَّ فَرِيضَةً ۚ وَمَتِّعُوهُنَّ عَلَى الْمُوسِعِ قَدَرُهُ وَعَلَى الْمُقْتِرِ قَدَرُهُ مَتَاعًا بِالْمَعْرُوفِ ۖ حَقًّا عَلَى الْمُحْسِنِينَ [٢:٢٣٦]

স্ত্রীদেরকে স্পর্শ করার আগে এবং কোন মোহর সাব্যস্ত করার পূর্বেও যদি তালাক দিয়ে দাও,তবে তাতেও তোমাদের কোন পাপ নেই। তবে তাদেরকে কিছু খরচ দেবে। আর সামর্থ্যবানদের জন্য তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী এবং কম সামর্থ্যবানদের জন্য তাদের সাধ্য অনুযায়ী। যে খরচ প্রচলিত রয়েছে তা সৎকর্মশীলদের উপর দায়িত্ব। [সূরা বাকারা-২৩৬]

وتستحب المتعة عن سواها: أى المفوضة إلا من سمى لها مهر وطلقت قبل وطء، فلا تستحب لها (رد المحتار-4/245)

ان اعتبار مهر المثل المذكور حكم كل نكاح صحيح لا تسمية فيه اصلا، او سمى فيه ما هو مجهول (رد المحتار، كتاب النحاح، باب المهر-4/281-282)

৩য় প্রশ্নের উত্তর

শুধু আল্লাহকে সাক্ষি রেখে বিয়ে করলে বিয়ে শুদ্ধ হয় না। সুতরাং উপরোক্ত মেয়ের সাথে আপনার মোবাইলেকৃত বিয়ে সম্পন্ন হয়নি। তার সাথে কথোপকথন ও যোগাযোগ সবই শরীয়ত গর্হিত হারাম কাজ। এ থেকে বিরত থাকা আপনার জন্য আবশ্যক।

تزوج بشهادة الله ورسوله لم يجز بل قيل يكفر (الدر المختار مع رد المحتار-4/99

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com

আরও জানুন

অগ্রীম বাসা ভাড়ার উপর বছর অতিক্রান্ত হলে যাকাত কে দিবে?

প্রশ্নঃ মুহতারাম, অমি প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা দেওয়ার শর্তে বাড়ি ভাড়া নেই। ভাড়া নেওয়ার …

আহলে হক্ব বাংলা মিডিয়া সার্ভিস