প্রচ্ছদ / তাবলীগ জামাত / তাবলীগ এর প্রচলিত পদ্ধতিতে দাওয়াত দেয়া কি জরুরী ?

তাবলীগ এর প্রচলিত পদ্ধতিতে দাওয়াত দেয়া কি জরুরী ?

প্রশ্ন

তাবলীগ এর প্রচলিত পদ্ধতিতে কি দাওয়াত দেয়া কি জরুরী ?

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

না, জরুরী নয়। আর একথা দাওয়াত ও তাবলীগের সাথে জড়িত কোন বিজ্ঞ ব্যক্তিই এমন কথা বলেননি। বলতে পারেন না।

তাবলীগ মানে হল, আল্লাহ দ্বীন অন্যের কাছে পৌঁছে দেয়া। এটির নির্দিষ্ট কোন নিয়ম আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্ধারিত করে যাননি। জায়েজ প্রতিটি পদ্ধতিতেই দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ করা যাবে।

কোন একটির সাথে এটিকে খাস করা যাবে না।

সুতরাং প্রচলিত তাবলীগের আকৃতিতেই তাবলীগের  কাজ করতে হবে, মনে করার কোন সুযোগ নেই। তবে বর্তমান তাবলীগের পদ্ধতিতে দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ করা যেহেতু সহজ ও সাধারণ্যের অনেক ফায়দা হয়ে থাকে, তাই এ পদ্ধতেও তাবলীগের কাজ করা যায়।

এছাড়া কিতাব লিখে, বয়ানের মাধ্যমে, লিখনীর মাধ্যমে, খুতবার মাধ্যমে, একাকী ঘরে ঘরে গিয়ে, মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করে ইত্যাদির মাধ্যমেও দাওয়াত তাবলীগের কাজ করা যাবে।

মোটকথা, আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী অন্যের কাছে পৌছে দেয়া হল মূল মাকসাদ। এটি যেকোন জায়েজ পদ্ধতিতেই হতে পারে। এক পদ্ধতির সাথে খাস করে ফেলার কোন সুযোগ নেই।

রাসূল সাঃ হলেন সর্বশেষ নবী। তার পর পৃথিবীতে আর কোন নবী আসবে না। তাই বিদায় হজ্বের সময় রাসূল সাঃ বজ্র কণ্ঠের ঘোষণা فليبلغ الشاهد الغائب তথা “পস্থিত লোকেরা যেন দ্বীনের এ দাওয়াত অনুপস্থিত লোকদের কাছে পৌছে দেয়” এর মাধ্যমে সমস্ত উম্মতে মুহাম্মদীই তাবলীগ তথা দ্বীন প্রচারের ব্যাপারে দায়িত্বশীল হয়ে যায়। যে ব্যক্তি দ্বীন সম্পর্কে যা জানে তা’ই অন্যের কাছে পৌছে দেয়ার দায়িত্বশীল করে রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন-আমার পক্ষ থেকে একটি বাণী হলেও [মানুষের কাছে] পৌঁছে দাও। {তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-৫৫৭০, সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৩২৭৪, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৬২৫৬, সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-২৬৬৯}

সাহাবায়ে কিরাম রাসূল সাঃ এর উক্ত নির্দেশের বাস্তবায়ন ঘটিয়েছেন যথাযথভাবে। পরবর্তীতে সর্বযুগেই উলামায়ে উম্মত “ওলামায়ে কিরামই হলেন নবীদের ওয়ারিস” হাদীসের সফল বাস্তবায়নের জন্য জীবন বাজী রেখে সংগ্রাম করেছেন।

উল্লেখিত আয়াত ও হাদীস ছাড়াও অসংখ্য আয়াত ও হাদীসে তাবলীগ তথা দ্বীন প্রচার ও প্রসারের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন:

ادْعُ إِلِى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُم بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ (النحل: ١٢٥

আপনি আপনার প্রতিপালকের দিকে আহবান করুন হিকমত বা প্রজ্ঞা দ্বারা এবং সুন্দর ওয়াজ-উপদেশ দ্বারা এবং তাদের সাথে উৎকৃষ্টতর পদ্ধতিতে আলোচনা-বিতর্ক করুন। (সূরা নাহল: ১২৫)

অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন

وَلْتَكُن مِّنكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَأُوْلَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ (آل عمران: ١٠٤

আর যেন তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল হয়, যারা কল্যাণের প্রতি আহবান করবে, ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করবে। আর তারাই সফলকাম। (সূরা আলে ইমরান: ১০৪)

অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন:

كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَلَوْ آمَنَ أَهْلُ الْكِتَابِ لَكَانَ خَيْرًا لَّهُم مِّنْهُمُ الْمُؤْمِنُونَ وَأَكْثَرُهُمُ الْفَاسِقُونَ )آل عمران: ١١٠

তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি, মানবজাতির (কল্যাণের) জন্য তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে। তোমরা ন্যায়কার্যে আদেশ এবং অন্যায় কার্যে নিষেধ কর এবং আল্লাহতে বিশ্বাস কর। (সূরা আলে ইমরান: ১১০)

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com

আরও জানুন

আট ভরি স্বর্নের উপর কতটুকু যাকাত আবশ্যক?

প্রশ্ন আচ্ছালামুয়ালাইকুম। মুহতারাম আমার একটা প্রশ্ন স্বর্ণের কত ভরি হলে যাকাত দিতে হবে। আর আমার …

আহলে হক্ব বাংলা মিডিয়া সার্ভিস