প্রচ্ছদ / অপরাধ ও গোনাহ / ঋণ আদায়ে ইনসুরেন্স থাকলে তা আদায় না করলে গোনাহ হবে কি?

ঋণ আদায়ে ইনসুরেন্স থাকলে তা আদায় না করলে গোনাহ হবে কি?

প্রশ্ন

আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ,

বিদেশে অনেকে ব্যাংক থেকে লোন নেয়। নেওয়ার সময় ব্যাংক কিছু টাকা কেটে রাখে ইনসুরেন্স বাবদ যাতে লোন গ্রহণকারী কোন কারণে দেশে চলে গেলে বা টাকা পরিশোধ করতে অপরাগ হলে লোনের টাকা ইনসুরেন্স পরিশোধ করে।

১. জানার বিষয় হলো, ইনসুরেন্স যেহেতু লোন গ্রহণকারীর অনপুস্থিতে লোনের টাকা পরিশোধ করার মর্মে ব্যাংকের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয় এবং ব্যাংক ইনসুরেন্স বাবদ একটা নির্দিষ্ট অংকের টাকা লোন গ্রহণকারীর নিকট থেকে প্রথমেই কেটে রাখে তাই লোন গ্রহণকারী লোনের টাকা পরিশোধ না করে যদি দেশে চলে যায় আর চুক্তিনুযায়ী ইনসুরেন্স তা পরিশোধ করে তবে কি লোন গ্রহণকারী এই ঋণ থেকে দায়মুক্ত হয়ে যাবে নাকি আখিরাতে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের হক নষ্টের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে??

২. কোম্পানী যদি লোন গ্রহীতাকে Cancel/termination করে আর সে কারণে লোনের টাকা পরিশোধ করতে না পারে তবে লোনের টাকা থেকে দায় মুক্তির উপায় কি?

২. আরব দেশের ইসলামী ব্যাংকগুলো কি ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী পরিচালিত হয়। আর এ ব্যাংক থেকে লোন নেয়া কি শরীয়তসম্মত হবে??

দয়া করে উত্তর দিবেন। বিষয়টি জানা খুবই জরুরী।

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

আপনার প্রশ্নটিতে কিছুটা অস্পষ্টতা রয়েছে। প্রথমে লিখেছেন যে ব্যাংক থেকে লোন নেয়া হচ্ছে, সেই ব্যাংকই লোন থেকে কিছু টাকা কেটে রেখে দেয় ইন্সুরেন্স বাবদ।

আবার লিখছেন “ইনসুরেন্স যেহেতু লোন গ্রহণকারীর অনপুস্থিতে লোনের টাকা পরিশোধ করার মর্মে ব্যাংকের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়”

প্রথম বক্তব্য দ্বারা বুঝা যায়, ইনসুরেন্স খোদ ব্যাংকই করে থাকে। আর দ্বিতীয় বক্তব্য দ্বারা বুঝা যায়, ব্যাংক নয় অন্য কোন ইনসুরেন্স  কোম্পানী ইনসুরেন্সের দায়িত্ব নেয়, আর ব্যাংক সেই টাকা তাদের পক্ষ হয়ে পরিশোধ করে নেয়।

যাইহোক, বিষয় যা’ই হোক না কেন। সর্বাবস্থায় হুকুম একই। তথা নির্দিষ্ট ঋণ পরিশোধ না করে দেশে চলে আসলে এজন্য হাশরের ময়দানে পাকরাও হতে হবে।

ব্যাংক বা ইনসুরেন্স কোম্পানী ঋণ পরিশোধের নিরাপত্তা স্বরূপ কিছু টাকা জমা রাখা মানেই পূর্ণ ঋণ আদায়ে বাধ্য নয়, বরং সে কেবলি একজন জামিনদার। আপনি ঠিক সময়ে ঋণ আদায় করে দিবেন এর গ্যারান্টিদাতা। গ্যারান্টিদাতার কাঁধে অন্যায়ভাবে নিজের ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে পালিয়ে আসা কিছুতেই বৈধ নয়।

তাই উক্ত ঋণ আদায়ে ঋণ গ্রহীতা বাধ্য। নতুবা আখেরাতে জিজ্ঞাসিত হবে।

ঋণদাতার কাছে যেকোন পদ্ধতিতে ঋণের অর্থ পৌঁছিয়ে দিতে হবে। প্রথমত কোম্পানীর কোন শাখায় তা জমা দিতে চেষ্টা করবে। না পারলে উক্ত টাকা কোম্পানীর নামে দান করে দিবে।

আরব ব্যাংক পরিচালনার পূর্ণ বিবরণ না দেখে এ বিষয়ে মন্তব্য করা সম্ভব নয়।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ أَخَذَ أَمْوَالَ النَّاسِ يُرِيدُ أَدَاءَهَا أَدَّى اللَّهُ عَنْهُ، وَمَنْ أَخَذَ يُرِيدُ إِتْلاَفَهَا أَتْلَفَهُ اللَّهُ»

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি অপর ব্যক্তির মাল আদায় তথা পরিশোধের নিয়তে [ঋণরূপে] গ্রহণ করে তবে আল্লাহ তার ঋণ পরিশোধ [করায় সাহায্য] করবেন। অপরদিকে যে ব্যক্তি তা গ্রহণ করে ঋণদাতার মাল নষ্ট [আত্মসাৎ] করার নিয়তে আল্লাহ তাকে ধ্বংস করবেন। {বুখারী, হাদীস নং-২৩৮৭, ২২৫৭}

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

ইমেইল- ahlehaqmedia2014@gmail.com

আরও জানুন

অগ্রীম বাসা ভাড়ার উপর বছর অতিক্রান্ত হলে যাকাত কে দিবে?

প্রশ্নঃ মুহতারাম, অমি প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা দেওয়ার শর্তে বাড়ি ভাড়া নেই। ভাড়া নেওয়ার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আহলে হক্ব বাংলা মিডিয়া সার্ভিস