প্রচ্ছদ / আহলে হাদীস / রুকুতে যেতে আসতে রফউল না করলে গোনাহগার হবার কথা বলেছেন ইমাম আবু হানীফা রহঃ?

রুকুতে যেতে আসতে রফউল না করলে গোনাহগার হবার কথা বলেছেন ইমাম আবু হানীফা রহঃ?

প্রশ্ন

গায়রে মুকাল্লিদ আলেম, পিছ টিভির আলোচক শহীদুল্লাহ খান মাদানী সাহেব তার রচিত “মাসনূন সালাত ও দুআ শিক্ষা” বইয়ের ৮২ পৃষ্ঠায়,২৮৫ নং টীকার আলোকে বলা আছে আল্লামা আঈনী হানাফী (রহঃ) বলেছেন-

ঈমাম আবু হানিফা (রহঃ) বলেছেন রাফউল ইয়াদাইন ত্যাগ করলে গোনাহ হবে।।

[উমদাতুল ক্বারী(দারুল ফিকর ছাপা)- ৫/২৭২ পৃষ্ঠা, আঈনী তুহফা – ১/১৩১ পৃষ্ঠা]

ঈমাম আযম (রহঃ) কি এমন বলেছেন?? বলে থাকলে আমরা করি না কেন!!

আল্লাহ আপনাকে উত্তম জাযা দিন।।

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজেউন। এমন জঘন্য মিথ্যা কোন সাধারণ মুসলমানও দ্বীনী বিষয়ে করার সাহস পাবে কি না? তা আমাদের জানা নেই। কিন্তু একজন শায়েখরূপী আলেম কিভাবে এমন জঘন্য মিথ্যা দ্বীনের নামে করলেন তা আমাদের কিছুতেই বুঝে আসে না।

আমরা আপনাদের সামনে উমদাতুল কারীর মূল ইবারত ও অনুবাদটি তুলে দিচ্ছি আপনারা নিজেরাই বিচার করতে পারবেন শহীদুল্লাহ খান মাদানী সাহেব কি পরিণাম জালিয়াতি ও ধোকার আশ্রয় উক্ত লেখায় দিয়েছেন।

আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রহঃ তার প্রসিদ্ধতম গ্রন্থ “উমদাতুল কারী শরহে সহীহুল বুখারী” তে রফউল ইয়াদাইন বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে লিখেন-

وَفِي (التَّوْضِيح) : ثمَّ الْمَشْهُور أَنه لَا يجب شَيْء من الرّفْع، وَحكى الْإِجْمَاع عَلَيْهِ، وَحكى عَن دَاوُد إِيجَابه فِي تَكْبِيرَة الْإِحْرَام، وَبِه قَالَ ابْن سيار من أَصْحَابنَا، وَحكي عَن بعض الْمَالِكِيَّة، وَحكي عَن أبي حنيفَة مَا يَقْتَضِي الْإِثْم بِتَرْكِهِ.

তাওযীহ নামক গ্রন্থ এসেছে যে, প্রসিদ্ধ কথা হল, [ছলাতে] কোন রফউল ইয়াদাইন করাই ওয়াজিব নয়। এ বিষয়ে ইজমাও নকল করা হয়েছে। দাউদ থেকে বর্ণিত। তাকবীরে তাহরীমার সময় তা [রফউল ইয়াদাইন] ওয়াজিব। একথাটি হানাফী মাযহাবের মাঝে ইবনুস সাইয়্যারের ও বক্তব্য। কতিপয় মালেকী ফক্বীহগণও একই বক্তব্য প্রদান করেন। আর ইমাম আবু হানীফা রহঃ থেকে বর্ণিত যে, এটি [তাকবীরে তাহরিমার সময় রফউল ইয়াদাইন করা] ছেড়ে দিলে ব্যক্তি গোনাহগার হবে। [উমদাতুল কারী, আলমাকতাবাতুত তাওফিকীয়্যাহ-৫/৯]

বিজ্ঞ পাঠক ও পাঠিকাবৃন্দ! দেখুন আলোচনা হচ্ছে তাকবীরে তাহরীমার সময় রফউল ইয়াদাইন করতে হবে কি না? এ আলোচনা করতে গিয়ে আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রহঃ আনলেন যে, তাকবীরে তাহরীমার সময় রফউল ইয়াদাইন করতে হবে বলা হয়েছে তাওযীহ গ্রন্থে। এর উপরই ইজমা বলা হয়েছে। তারপর আরো কারা একথা বলেছেন তাদের কথা বলা হয়েছে। তারপর ইমাম আবু হানীফা রহঃ থেকে নকল করা হয়েছে, তিনি বলেছেন তাকবীরে তাহরীমার সময় রফউল ইয়াদাইন না করলে ব্যক্তি গোনাহগার হবে।

আর কথিত শায়েখ শহীদুল্লাহ খান মাদানী সাহেব চরম জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে বলে দিলেন, ইমাম আবু হানীফা রহঃ রুকুতে যেতে আসতে রফউল ইয়াদাইন ছেড়ে দিলে গোনাহগার হবার কথা বলেছেন! নাউজুবিল্লাহি মিন জালিক।

এর নাম দ্বীন প্রচার? এর নামই কি সহীহ হাদীস অনুসরণ?

উমদাতুল কারীর রেফারেন্স দিয়ে ইমাম আবু হানীফা রহঃ থেকে রুকুতে যেতে আসতের রফউল ইয়াদাইন না করলে গোনাহগার হওয়া প্রমাণ করার মিথ্যা চেষ্টা করলেন উক্ত শায়েখ। অথচ উমদাতুল কারীতে দুই লাইন পরেই এসেছে-

وَعند أبي حنيفَة وَأَصْحَابه: لَا يرفع يَدَيْهِ إِلَّا فِي التَّكْبِيرَة الأولى، وَبِه قَالَ الثَّوْريّ وَالنَّخَعِيّ وَابْن أبي ليلى وعلقمة بن قيس وَالْأسود بن يزِيد وعامر الشّعبِيّ وَأَبُو إِسْحَاق السبيعِي وخيثمة والمغيرة ووكيع وَعَاصِم بن كُلَيْب وَزفر، وَهُوَ رِوَايَة ابْن الْقَاسِم عَن مَالك، وَهُوَ الْمَشْهُور من مذْهبه والمعمول عِنْد أَصْحَابه، وَقَالَ التِّرْمِذِيّ: وَبِه يَقُول غير وَاحِد من أَصْحَاب النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم وَالتَّابِعِينَ، وَهُوَ قَول سُفْيَان وَأهل الْكُوفَة. وَفِي (الْبَدَائِع) : رُوِيَ عَن ابْن عَبَّاس أَنه قَالَ: الْعشْرَة الَّذين شهد لَهُم رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم بِالْجنَّةِ مَا كَانُوا يرفعون أَيْديهم إلاّ فِي افْتِتَاح الصَّلَاة وَذكر غَيره عَن عبد الله بن مَسْعُود أَيْضا وَجَابِر بن سَمُرَة والبراء بن عَازِب وَعبد الله بن عمر وَأَبا سعيد، رَضِي الله تَعَالَى عَنْهُم،

আর ইমাম আবু হানীফা রহঃ এবং সাথিসঙ্গীদের মতে তাকবীরে তাহরীমা ছাড়া আর কোথাও রফউল ইয়াদাইন করবে না। একই বক্তব্য প্রদান করেছেন, ইমাম সুফিয়ান সাওরী, ইমাম ইবরাহীম নাখয়ী, ইবনে আবী লাইলা, আলকামা বিন কায়েশ, আসওয়াদ বিন ইয়াযিদ, আমের শাবী, আবু ইসহাক সাবিয়ী, খাইছামা, মুগিরাহ, ওয়াকী’, আসেম বিন কুলাইব, যুফার। ইমাম মালিক থেকে ইবনুল কাসিম একথাই বর্ণনা করেছেন। এটাই মালেকী মাযহাবে মাশহুর এবং তার অনুসারীদের মাঝে মামুল। ইমাম তিরমিজী বলেন, একাধিক সাহাবী রাঃ ও তাবেয়ীগণের বক্তব্যও তাই। একই মতের প্রবক্তা সুফিয়ান সাওরী এবং কুফাবাসীগণ। আর বাদায়ে গ্রন্থে এসেছে, ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, দশজন জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবী তাকবীরে তাহরীমার সময় ছাড়া নামাযে আর কোথাও রফউল ইয়াদাইন করতেন না।এছাড়া আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ, জাবির বিন সামুরা রাঃ, বারা বিন আযেব রাঃ, আব্দুল্লাহ বিন উমর রাঃ এবং হযরত আবু সাঈদ রাঃ থেকেও একথা প্রমানিত। [উমদাতুল কারী, আলমাকতাবাতুত তাওফিকীয়্যাহ-৫/৯]

উমদাতুল কারী থেকে ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর বক্তব্য উদ্ধৃত করা এত শখ ছিল শহীদুল্লাহ খান সাহেবের। তো তিনি উমদাতুল কারীর পুরো বক্তব্যটিই একটু অনুবাদ করে দিতেন, যাতে করে মানুষ বুঝতে পারতো শহীদুল্লাহ খান মাদানীরা সহীহ হাদীসের নামে কত জালিয়াতি ও মিথ্যাচার করে থাকেন।

আল্লাহ তাআলা এসব প্রতারক শায়েখদের মিথ্যাচার ও ধোঁকাবাজী থেকে আমাদের দেশের সরলপ্রাণ মুসলমানদের ঈমান ও আমলকে হিফাযত করুন। আমীন।

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল- ahlehaqmedia2014@gmail.com

আরও জানুন

মসজিদে খেলাধুলা করার হুকুম কী?

প্রশ্ন সম্প্রতি সিলেটের একটি আহলে হাদীস মসজিদে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। আহলে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আহলে হক্ব বাংলা মিডিয়া সার্ভিস