প্রশ্ন
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ।
হুজুর, মানুষ প্রথমে রুহের জগতে ছিল। তারপর মায়ের পেটে, তারপর দুনিয়া, তারপর কবর। তারপর হাশরের ময়দান।
আমার জানার বিষয় হচ্ছে, হাশরের ময়দান, হাউজে কাউসার, বিচার, আমলনামা, পুলসিরাত, জান্নাত, জাহান্নাম ইত্যাদি ধারাবাহিকভাবে জানতে চাই। কোনটার পর কী হবে?
প্রশ্নকর্তা- জি এম আমানত হুসাইন।
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
প্রথমে হাশরের ময়দানে ইসরাফিল আঃ এর ফুৎকার শুনে সকল মানুষ তথা আদম আঃ থেকে নিয়ে কিয়ামত পর্যন্তের সকল মানুষ একত্রিত হবেন। তারপর রাসূল সাঃ এর শাফায়াতে কুবরা তথা সুপারিশের মাধ্যমে বিচারকার্য শুরু হবে। বিচারকার্য শুরু হবার প্রক্কালে সকলের হাতে তাদের আমলনামা দিয়ে দেয়া হবে। তা সকলে পাঠ করবে। তারপর হাউজে কাউসারের পানি পান পর্ব শুরু হবে। এরপর মিযানের পাল্লা প্রস্তুত করা হবে। সেখানে সকল মানুষের পাপ-পূণ্য মিযানের পাল্লায় হিসেব করা হবে।
তারপর পুলসিরাতের উপর দিয়ে সকলকে রওনা হতে হবে। পুলসিরাতটি হবে জাহান্নামের উপর। জাহান্নামীরা পুলসিরাত পাড় না হতে পেরে নিচে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। আর জান্নাতীরা পুল পাড় হয়ে উপারের জান্নাতে পৌঁছে যাবে। {মুফতী মুহাম্মদ তাহের মাসউদ কৃত আকায়েদে আহলে সুন্নাতি ওয়াল জামাআত, প্রকাশনী- খানকায়ে সিরাজিয়া নকশবন্দীয়া মুজাদ্দেদীয়া, পৃষ্ঠা-১২৩}
وَنُفِخَ فِي الصُّورِ فَصَعِقَ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ إِلَّا مَنْ شَاءَ اللَّهُ ثُمَّ نُفِخَ فِيهِ أُخْرَى فَإِذَا هُمْ قِيَامٌ يَنْظُرُونَ (68) وَأَشْرَقَتِ الْأَرْضُ بِنُورِ رَبِّهَا وَوُضِعَ الْكِتَابُ وَجِيءَ بِالنَّبِيِّينَ وَالشُّهَدَاءِ وَقُضِيَ بَيْنَهُمْ بِالْحَقِّ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ (69) وَوُفِّيَتْ كُلُّ نَفْسٍ مَا عَمِلَتْ وَهُوَ أَعْلَمُ بِمَا يَفْعَلُونَ (70
শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে, ফলে আসমান ও যমীনে যারা আছে সবাই বেহুঁশ হয়ে যাবে, তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন। অতঃপর আবার শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে, তৎক্ষণাৎ তারা দন্ডায়মান হয়ে দেখতে থাকবে।
পৃথিবী তার পালনকর্তার নূরে উদ্ভাসিত হবে, আমলনামা স্থাপন করা হবে, পয়গম্বরগণ ও সাক্ষীগণকে আনা হবে এবং সকলের মধ্যে ন্যায় বিচার করা হবে-তাদের প্রতি জুলুম করা হবে না।
প্রত্যেকে যা করেছে, তার পূর্ণ প্রতিফল দেয়া হবে। তারা যা কিছু করে, সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবগত। {সূরা যুমার-৬৮-৭০}
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: أُتِيَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا بِلَحْمٍ، فَرُفِعَ إِلَيْهِ الذِّرَاعُ، وَكَانَتْ تُعْجِبُهُ فَنَهَسَ مِنْهَا نَهْسَةً فَقَالَ: ” أَنَا سَيِّدُ النَّاسِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، وَهَلْ تَدْرُونَ بِمَ ذَاكَ؟ يَجْمَعُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ الْأَوَّلِينَ وَالْآخِرِينَ فِي صَعِيدٍ وَاحِدٍ، فَيُسْمِعُهُمُ الدَّاعِي، وَيَنْفُذُهُمُ الْبَصَرُ، وَتَدْنُو الشَّمْسُ فَيَبْلُغُ النَّاسَ مِنَ الْغَمِّ وَالْكَرْبِ مَا لَا يُطِيقُونَ، وَمَا لَا يَحْتَمِلُونَ، فَيَقُولُ بَعْضُ النَّاسِ لِبَعْضٍ: أَلَا تَرَوْنَ مَا أَنْتُمْ فِيهِ؟ أَلَا تَرَوْنَ مَا قَدْ بَلَغَكُمْ؟ أَلَا تَنْظُرُونَ مَنْ يَشْفَعُ لَكُمْ إِلَى رَبِّكُمْ؟ فَيَقُولُ بَعْضُ النَّاسِ لِبَعْضٍ: ائْتُوا آدَمَ، فَيَأْتُونَ آدَمَ، فَيَقُولُونَ: يَا آدَمُ، أَنْتَ أَبُو الْبَشَرِ، خَلَقَكَ اللهُ بِيَدِهِ، وَنَفَخَ فِيكَ مِنْ رُوحِهِ، وَأَمَرَ الْمَلَائِكَةَ فَسَجَدُوا لَكَ، اشْفَعْ لَنَا إِلَى رَبِّكَ، أَلَا تَرَى إِلَى مَا نَحْنُ فِيهِ؟ أَلَا تَرَى إِلَى [ص:185] مَا قَدْ بَلَغَنَا؟ فَيَقُولُ آدَمُ: إِنَّ رَبِّي غَضِبَ الْيَوْمَ غَضَبًا لَمْ يَغْضَبْ قَبْلَهُ مِثْلَهُ، وَلَنْ يَغْضَبَ بَعْدَهُ مِثْلَهُ، وَإِنَّهُ نَهَانِي عَنِ الشَّجَرَةِ فَعَصَيْتُهُ نَفْسِي نَفْسِي، اذْهَبُوا إِلَى غَيْرِي، اذْهَبُوا إِلَى نُوحٍ، فَيَأْتُونَ نُوحًا، فَيَقُولُونَ: يَا نُوحُ، أَنْتَ أَوَّلُ الرُّسُلِ إِلَى الْأَرْضِ، وَسَمَّاكَ اللهُ عَبْدًا شَكُورًا، اشْفَعْ لَنَا إِلَى رَبِّكَ، أَلَا تَرَى مَا نَحْنُ فِيهِ؟ أَلَا تَرَى مَا قَدْ بَلَغَنَا؟ فَيَقُولُ لَهُمْ: إِنَّ رَبِّي قَدْ غَضِبَ الْيَوْمَ غَضَبًا لَمْ يَغْضَبْ قَبْلَهُ مِثْلَهُ، وَلَنْ يَغْضَبَ بَعْدَهُ مِثْلَهُ، وَإِنَّهُ قَدْ كَانَتْ لِي دَعْوَةٌ دَعَوْتُ بِهَا عَلَى قَوْمِي، نَفْسِي نَفْسِي، اذْهَبُوا إِلَى إِبْرَاهِيمَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَيَأْتُونَ إِبْرَاهِيمَ، فَيَقُولُونَ: أَنْتَ نَبِيُّ اللهِ وَخَلِيلُهُ مِنْ أَهْلِ الْأَرْضِ، اشْفَعْ لَنَا إِلَى رَبِّكَ، أَلَا تَرَى إِلَى مَا نَحْنُ فِيهِ؟ أَلَا تَرَى إِلَى مَا قَدْ بَلَغَنَا؟ فَيَقُولُ لَهُمْ إِبْرَاهِيمُ: إِنَّ رَبِّي قَدْ غَضِبَ الْيَوْمَ غَضَبًا لَمْ يَغْضَبْ قَبْلَهُ مِثْلَهُ، وَلَا يَغْضَبُ بَعْدَهُ مِثْلَهُ، وَذَكَرَ كَذَبَاتِهِ، نَفْسِي نَفْسِي، اذْهَبُوا إِلَى غَيْرِي، اذْهَبُوا إِلَى مُوسَى، فَيَأْتُونَ مُوسَى صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَيَقُولُونَ: يَا مُوسَى، أَنْتَ رَسُولُ اللهِ فَضَّلَكَ اللهُ بِرِسَالَاتِهِ، وَبِتَكْلِيمِهِ عَلَى النَّاسِ، اشْفَعْ لَنَا إِلَى رَبِّكَ، أَلَا تَرَى إِلَى مَا نَحْنُ فِيهِ؟ أَلَا تَرَى مَا قَدْ بَلَغَنَا؟ فَيَقُولُ لَهُمْ مُوسَى صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ رَبِّي قَدْ غَضِبَ الْيَوْمَ غَضَبًا لَمْ يَغْضَبْ قَبْلَهُ مِثْلَهُ، وَلَنْ يَغْضَبَ بَعْدَهُ مِثْلَهُ، وَإِنِّي قَتَلْتُ نَفْسًا لَمْ أُومَرْ بِقَتْلِهَا، نَفْسِي نَفْسِي، اذْهَبُوا إِلَى عِيسَى صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَيَأْتُونَ عِيسَى، فَيَقُولُونَ: يَا عِيسَى أَنْتَ رَسُولُ اللهِ، وَكَلَّمْتَ النَّاسَ فِي الْمَهْدِ، وَكَلِمَةٌ مِنْهُ أَلْقَاهَا إِلَى مَرْيَمَ، وَرُوحٌ مِنْهُ، فَاشْفَعْ لَنَا إِلَى رَبِّكَ، أَلَا تَرَى مَا نَحْنُ فِيهِ؟ أَلَا تَرَى مَا قَدْ بَلَغَنَا؟ فَيَقُولُ لَهُمْ عِيسَى صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ رَبِّي قَدْ غَضِبَ الْيَوْمَ غَضَبًا لَمْ يَغْضَبْ قَبْلَهُ مِثْلَهُ، وَلَنْ يَغْضَبَ بَعْدَهُ مِثْلَهُ، وَلَمْ يَذْكُرْ لَهُ ذَنْبًا، نَفْسِي نَفْسِي، اذْهَبُوا إِلَى غَيْرِي، اذْهَبُوا إِلَى مُحَمَّدٍ، فَيَأْتُونِّي فَيَقُولُونَ: يَا مُحَمَّدُ، أَنْتَ رَسُولُ اللهِ، وَخَاتَمُ الْأَنْبِيَاءِ، وَغَفَرَ اللهُ لَكَ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِكَ، وَمَا تَأَخَّرَ، اشْفَعْ لَنَا إِلَى رَبِّكَ، أَلَا تَرَى مَا نَحْنُ فِيهِ؟ أَلَا تَرَى مَا قَدْ بَلَغَنَا؟ فَأَنْطَلِقُ، فَآتِي تَحْتَ الْعَرْشِ، فَأَقَعُ سَاجِدًا لِرَبِّي، ثُمَّ يَفْتَحُ اللهُ عَلَيَّ وَيُلْهِمُنِي مِنْ مَحَامِدِهِ، وَحُسْنِ الثَّنَاءِ عَلَيْهِ شَيْئًا لَمْ يَفْتَحْهُ لِأَحَدٍ قَبْلِي، ثُمَّ يُقَالُ: يَا مُحَمَّدُ، ارْفَعْ رَأْسَكَ، سَلْ تُعْطَهْ، اشْفَعْ تُشَفَّعْ، فَأَرْفَعُ رَأْسِي، فَأَقُولُ: يَا رَبِّ، أُمَّتِي أُمَّتِي، فَيُقَالُ: يَا مُحَمَّدُ، أَدْخِلْ الْجَنَّةَ مِنْ أُمَّتِكَ مَنْ لَا حِسَابَ عَلَيْهِ مِنَ الْبَابُِ الْأَيْمَنِ مِنْ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ، وَهُمْ شُرَكَاءُ النَّاسِ فِيمَا سِوَى ذَلِكَ مِنَ الْأَبْوَابِ، وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ، إِنَّ مَا بَيْنَ الْمِصْرَاعَيْنِ مِنْ مَصَارِيعِ الْجَنَّةِ لَكَمَا بَيْنَ مَكَّةَ وَهَجَرٍ، أَوْ كَمَا بَيْنَ مَكَّةَ وَبُصْرَى “،
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ঘরে কিছু গোশত (হাদিয়া) এল, পরে এর বাছর অংশটি তার সামনে (আহারের উদ্দেশ্যে) পেশ করা হলো। বাহুর গোশত তার কাছে খুবই পছন্দনীয় ছিল। এরপর তিনি তা থেকে এক কামড় গ্রহণ করলেন। তারপর বললেন, কিয়ামত দিবসে আমিই হব সকল মানুষের সর্দার। তা কিভাবে তোমরা জানো? কিয়ামত দিবসে যখন আল্লাহ তা’আলা শুরু থেকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত সকল মানুষকে একই মাঠে এমনভাবে জমায়েত করবেন যে, একজনের আহবান সকলে শুনতে পাবে, একজনের আহবান সকলকে দেখতে পাবে। সূর্য নিকটবতী হবে। মানুষ অসহনীয় ও চরম দুঃখ-কটূ ও পেরেশানীতে নিপতিত হবে। নিজেরা পরস্পর বলাবলি করবে, কী দুর্দশায় তোমরা আছ , দেখছ না? কী অবস্হায় তোমরা পৌছেছ উপলব্ধি করছ না? এমন কাউকে দেখছ না, যিনি তোমাদের পরওয়ারদিগারের কাছে তোমাদের জন্য সুপারিশ করবেন? তারপর একজন আরেকজনকে বলবে, চল, আদম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে যাই। অনন্তর তারা আদম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে আসবে এবং বলবে, হে আদম! আপনি মালবকুলের পিতা, আল্লাহ- স্বহস্তে আপনাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আপনার দেহে রূহ ফুকে দিয়েছেন। আপনাকে সিজদা করার জন্য ফেরেশতাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন ; তাঁরা আপনাকে সিজদা করেছে। আপনি দেখছেন না আমরা কি কষ্টে আছি? আপনি দেখছেন না আমরা কষ্টের কোন সীমায় পৌছেছি? আদম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উত্তরে বলবেনঃ আজ পরওয়ারদিগার এত বেশি ক্রোধাম্বিত আছেন যা পূর্বে কখনো হননি, আর পরেও কখনও হবেন না। তিনি আমাকে একটি বৃক্ষের ফল খেতে নিষেধ করেছিলেন, আর আমি সেই নিষেধ লঙ্ঘন করে ফেলেছি, ‘নাফসী’, নাফসী’, আজ আমার চিন্তায় আমি পেরেশান। তোমরা অন্য কারো কাছে গিয়ে চেষ্টা কর, তোমরা নূহের কাছে যাও। তখন তারা নূহ (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে আসবে ; বলবে, হে নূহ! আপনি আমাদের প্রথম রাসুল। আল্লাহ আপনাকে “চির কৃতজ্ঞ বান্দা” বলে উপাধি দিয়েছেন। আপনার পরুওয়ারদিগারের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। দেখছেন না, আমরা কোন অবস্হায় আছি? অ্যমাদের অবস্হা কোন পর্যায়ে পৌছেছে? নূহ (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলবেনঃ আজ আমার পরওয়ারদিগার এত ক্রোধানিত আছেন যে এমন পূর্বেও কখনো হননি আর কখনও হবেন না। আমাকে তিনি একটি দুঁআ কবুলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, আর তা আমি আমার জাতির বিরুদ্ধে প্রয়োগ করে ফেলেছি ‘নাফসী’, ‘নাফসী’ , -আজ আমার চিন্তায় আমি পেরেশান। তোমরা ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে যাও। তখন তারা ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে আসবে। বলবে, হে ইবরাহীম! আপনি আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , পৃথিবীবাসীর মধ্যে আপনি আল্লাহর খলীল ও অন্তরঙ্গ বন্ধু। আপনি আপনার পরওয়ারদিগারের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। দেখছেন না, আমরা কোন অবস্হায় আছি এবং আমাদের অবস্হা কোন পর্যায়ে পৌছেছে? ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদেরকে বলবেনঃ আল্লাহ আজ এতই ক্রোধানিত আছেন যে, পূর্বে এমন কখনও হন নাই আর পরেও কখনও হবেন না। তিনি তাঁর কিছুঁ বহ্যিক অসত্য কথনের বিষয় উল্লেখ করবেন। বলবেন, -‘নাফসী”, ‘নাফসী’ , -আজ আমার চিন্তায় আমি পেরেশান। তোমরা অন্য কারো কাছে যাও। মূসা র কাছে যাও। তারা মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে আসবে, বলবে, হে মূসা! আপনি আল্লাহর রাসুল, আপনাকে তিনি তাঁর রিসালাত ও কালাম দিয়ে মানুষের উপর মর্যাদা দিয়েছেন। আপনার পরওয়ারদিগারের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। দেখছেন না, আমরা কোন অবস্হায় আছি এবং আমাদের অবস্হা কোন পর্যায়ে পৌছেছে? মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদেরকে বলবেনঃ আজ আল্লাহ এতই ক্রোধানিত অবস্হায় আছেন যে, পূর্বে এমন কখনো হন নাই আর পরেও কখনো হবেন না। আমি তার হুকুমের পূর্বে এক ব্যাক্তিকে হত্যা করে ফেলেছিলাম। ‘নাফসী’, ‘নাফসী’ আজ আমার চিন্তায় আমি পেরেশান। তোমরা ঈসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে যাও। তারা ঈসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে আসবে এবং বলবে, হে ঈসা! আপনি আল্লাহর রসূল, দোলনায় অবস্হানকালেই আপনি মানুষের সাথে বাক্যালাপ করেছেন, আপনি আল্লাহর দেওয়া বানী, যা তিনি মারইয়ামের গর্ভে ঢেলে দিয়েছিলেন, আপনি তাঁর দেওয়া আত্মা। সুতরাং আপনার পরওয়ারদিগারের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। দেকছেন না, আমরা কোন অবস্হায় আছি এবং আমাদের অবস্থা কোন অবস্থায় পৌছেছে? ঈসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলবেনঃ আজ আল্লাহ তা’আলা এতই ক্রোধান্বিত অবস্থায় আছেন যে, এরূপ না পূর্বে কখনও হয়েছেন, আর না পরে কখনো হবেন। উল্লেখ্য, তিনি কোন অপরাধের কথা উল্লেখ করবেন না। তিনি বলবেন, ‘নাফসী’, ‘নাফসী’-আজ আমার চিন্তায় আমি পেরেশান। তোমরা জন্য কারো কাছে যাও। মুহাম্মাদ -এর কাছে যাও। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তখন তারা আমার কাছে আসবে এবং বলবে, হে মুহাম্মাদ! আপনি আল্লাহর রাসুল, শেষ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , আল্লাহ আপনার পূর্বাপর সকল ক্রটি ক্ষমা করে দিয়েছেন। আপনি আপনার পরওয়ারদিগারের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। দেখছেন না, আমরা কোন অবস্থায় আছি এবং আমাদের অবস্থা কোন পর্যায়ে পৌছেছে? তখন আমি সুপারিশের জন্য যাব এবং আরশের নিচে এসে পরওয়ারদিগারের উদ্দেশে সিজদাবনত হব। আল্লাহ আমার অন্তরকে সূপ্রশস্ত করে দিবেন এবং সর্বোত্তম প্রশংসা ও হামদ জ্ঞাপনের ইলহাম করবেন, যা ইতিপূর্বে কাউকেই দেয়া হয়নি। এরপর আল্লাহ বলবেন, হে মুহাম্মাদ! মাথা উত্তোলন করুন, প্রার্থনা করুন, আপনার প্রার্থনা কবুল করা হবে। সুপারিশ করুন, আপনার সুপারিশ “গ্রহণ করা হবে”। অনন্তর আমি। মাথা তুলব। বলব ৪ হে পরওয়ারদিগার! উম্মাতী, উম্মাতী, -আমার উাম্মাত, আমার উম্মাত, (এদেরকে মুক্তি দান করুন)। আল্লাহ বলবেন, হে মুহাম্মদ! আপনার উম্মতের যাদের উপর কোন হিসাব নেই, তাদেরকে জান্নাতের ডান দরজা দিয়ে প্রবেশ করিয়ে দিন। অবশ্য অন্য তোরণ দিয়েও অন্যান্য লোকের সঙ্গে তারা প্রবেশ করতে পারবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ শপথ সে সত্তার, যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ, জান্নাতের দুই চৌকাঠের মধ্যকার দূরত্ব মক্কার ও হাজরের দূরত্বের মত ; অথবা বর্ণনাকারী বলেন, মক্কা ও বসরার দূরত্বের মত। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৩২৭}
فَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ بِيَمِينِهِ (7) فَسَوْفَ يُحَاسَبُ حِسَابًا يَسِيرًا (8) وَيَنْقَلِبُ إِلَى أَهْلِهِ مَسْرُورًا (9) وَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ وَرَاءَ ظَهْرِهِ (10) فَسَوْفَ يَدْعُو ثُبُورًا (11
যাকে তার আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে, তার হিসাব-নিকাশ সহজে হয়ে যাবে এবং সে তার পরিবার-পরিজনের কাছে হৃষ্টচিত্তে ফিরে যাবে এবং যাকে তার আমলনামা পিঠের পশ্চাদ্দিক থেকে দেয়া, হবে, সে মৃত্যুকে আহবান করবে। {সূরা ইনশিকাক-৭-১১}
عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنِّي فَرَطُكُمْ عَلَى الحَوْضِ، مَنْ مَرَّ عَلَيَّ شَرِبَ، وَمَنْ شَرِبَ لَمْ يَظْمَأْ أَبَدًا، لَيَرِدَنَّ عَلَيَّ أَقْوَامٌ أَعْرِفُهُمْ وَيَعْرِفُونِي، ثُمَّ يُحَالُ بَيْنِي وَبَيْنَهُمْ»
হযরত সাহাল বিন সাদ রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাঃ বলেছেন, আমি তোমাদের আগে হাউজে কাউসারের ধারে পৌঁছবো। যে আমার নিকট দিয়ে অতিক্রম করবে, সে হাউযের পানি পান করবে। আর যে পান করবে সে আর কখনোও পিপাসার্ত হবে না। নিঃসন্দেহে কিছু সম্প্রদায় আমার সামনে [হাউজে] উপস্থিত হবে। আমি তাদেরকে চিনতে পারবো আর তারাও আমাকে চিনতে পারবে। এরপর আমার এবং তাদের মাঝে প্রতিবন্দকতা সৃষ্টি করে দেয়া হবে। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৬৫৮৩}
فَأَمَّا مَنْ ثَقُلَتْ مَوَازِينُهُ (6) فَهُوَ فِي عِيشَةٍ رَاضِيَةٍ (7) وَأَمَّا مَنْ خَفَّتْ مَوَازِينُهُ (8) فَأُمُّهُ هَاوِيَةٌ (9) وَمَا أَدْرَاكَ مَا هِيَهْ (10) نَارٌ حَامِيَةٌ (11
অতএব যার পাল্লা ভারী হবে, সে সুখীজীবন যাপন করবে। আর যার পাল্লা হালকা হবে, তার ঠিকানা হবে হাবিয়া। আপনি জানেন তা কি? প্রজ্জ্বলিত অগ্নি! {সূরা কারিয়া-৬-১১}
وَيُضْرَبُ الصِّرَاطُ بَيْنَ ظَهْرَيْ جَهَنَّمَ، فَأَكُونُ أَنَا وَأُمَّتِي أَوَّلَ مَنْ يُجِيزُهَا، وَلاَ يَتَكَلَّمُ يَوْمَئِذٍ إِلَّا الرُّسُلُ، وَدَعْوَى الرُّسُلِ يَوْمَئِذٍ: اللَّهُمَّ سَلِّمْ سَلِّمْ، وَفِي جَهَنَّمَ كَلاَلِيبُ مِثْلُ شَوْكِ السَّعْدَانِ، هَلْ رَأَيْتُمِ السَّعْدَانَ؟ “، قَالُوا: نَعَمْ يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: ” فَإِنَّهَا مِثْلُ شَوْكِ السَّعْدَانِ، غَيْرَ أَنَّهُ لاَ يَعْلَمُ مَا قَدْرُ عِظَمِهَا إِلَّا اللَّهُ، تَخْطَفُ النَّاسَ بِأَعْمَالِهِمْ، فَمِنْهُمُ المُوبَقُ بَقِيَ بِعَمَلِهِ – أَوِ المُوثَقُ بِعَمَلِهِ -، وَمِنْهُمُ المُخَرْدَلُ،
অনুবাদ- হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, এরপর জাহান্নামের উপর পুল কায়েম করা হবে। যারা পুল অতিক্রম করবে, আমি এবং আমার উম্মত তাদের মাঝে প্রথম থাকবো। সেদিন একমাত্র রাসূলগণ ছাড়া আর কেউই কথা বলতে পারবে না। আর রাসূলগণেরও আবেদন হবে শুধু আল্লাহুম্মা সাল্লিম, সাল্লিম হে আল্লাহ নিরাপতে রাখুন, নিরাপদে রাখুন]। এবং জাহান্নামে সাদান কাটার মত আঁকড়া থাকবে। তোমরা দেখেছো কি সাদানের কাঁটা? সাহাবাগণ বললেন, জী হ্যাঁ, ইয়া রাসূলাল্লাহ। রাসূল সাঃ বললেন, জাহান্নামের যে কাঁটাগুলো এ সাদানের কাঁটার মত। হ্যাঁ, তবে সেগুলো যে কত বড় হবে তা একমাত্র আল্লাহই জানেন। ওসব কাঁটা মানুষকে তাদের কর্ম অনুপাতে বিদ্ধ করবে। কতিপয় মানুষ থাকবে ঈমানদার, তারা তাদের আমলের কারণে নিরাপদ থাকবে। আর কেউ কেউ তার আমলের কারণে ধ্বংস হবে। কাউকে নিক্ষেপ করা হবে। আর কাউকে প্রতিদান দেয়া হবে। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৭৪৩৭, ৭০০০, বাংলা বুখারী-১০, পৃষ্ঠা-৫৬৫}
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।