প্রচ্ছদ / আজান ও ইকামত / একামতের সময় মুসল্লিগণ কখন দাঁড়াবে? একটি দালিলিক পর্যালোচনা

একামতের সময় মুসল্লিগণ কখন দাঁড়াবে? একটি দালিলিক পর্যালোচনা

প্রশ্ন

Hope that almighty Allah keeps you well & happy.

My Question is:

When you say our prayer with Zamat, when we need to stand ?

What are opinion of  recognized Fiqh alem ?

I have found an answer in (attached with mail)

Regards,

Mohammad Mamunur Rashid

Kotowali, Chittagong

Note: As I have no option to write in Bangla (bcz, I am not so much familiar in Bangla typing) , I wrote it in English. Sorry for that.

এটাচট ফাইল- standing4salah

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

এ বিষয়ে আসলে উলামায়ে কেরাম থেকে অনেক মতামত পাওয়া যায়। এ সবক’টি করারই সুযোগ রয়েছে। কেউই অন্য বক্তব্যের উপর আমলকারীকে গোনাহগার বলে সাব্যস্ত করেননি। সেই সাথে না এমন কোন প্রমাণও বিদ্যমান আছে, যার দ্বারা উক্ত ব্যক্তি গোনাহগার প্রমানিত হয়ে থাকেন। ইলাউস সুনান গ্রন্থের  চতুর্থ খন্ডে এসব বক্তব্য উদ্ধৃত করা হয়েছে।

কতিপয় নির্ভরযোগ্য ফক্বীহ লিখেছেন, “যেসব বর্ণনায় ‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ’ এর সময় দাড়ানো যে প্রমাণ রয়েছে এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল, এটি হল শেষ সীমা। এর পর আর বসে থাকবে না। এর দ্বারা উদ্দেশ্য এটা নয় যে, এর আগে বসে থাকতেই হবে, দাড়ানো যাবে না। বরং উদ্দেশ্য হল, সীমা নির্দিষ্টকরণ। এরপর আর বসে থাকা যাবে না। দাঁড়িয়ে পড়তে হবে।

তাইতো ইলাউস সুনানে এ বিষয়ে সকল বক্তব্য উদ্ধৃত করার পর আল্লামা তাহতাবী রহঃ এর বক্তব্য নকল করা হয়েছে-

والظاهر احتراز عن التاخير لا التقديم، حتى لو قام اول الإقامة لا بأس به (اعلاء السنن، باب وقت قيام الإمام والمأمومين للصلاة-4/328، ادارة القرآن كرتاشى)

স্পষ্ট হল এই যে, এর চেয়ে [হাইয়া আলাল ফালাহ এর চেয়ে] দেরী করা যাবে না, কিন্তু আগে করা যাবে না এমন নয়। সুতরাং কেউ যদি ইকামতের শুরুতেই দাড়িয়ে পড়ে, তাহলে এতে কোন সমস্যা নেই। {ইলাউস সুনান-৪/৩২৮}

মোদ্দাকথা, ফিক্বহের গ্রন্থে ইকামতের সময় দাড়ানো বিষয়ে যত মত আছে, এর মাঝে ‘হাইয়া আলাল ফালাহ’ বলার সময় দাড়ানোটি আদব।

আদবের সংজ্ঞা ফিক্বহে হানাফীর প্রসিদ্ধ গ্রন্থ “আদদুররুল মুখতার” এ এভাবে উদ্ধৃত হয়েছে-

تركها لا يوجب اساءة ولا عتابا كترك سنة الزوائد لكن فعله افضل، (الدر المختار، كتاب الصلاة، باب صفة الصلاة-1/477)

অর্থাৎ এটি যে ছেড়ে দেয়, সে গোনাহগার ও অপরাধী সাব্যস্ত হয় না। যেমন সুন্নতে জায়েদা ছেড়ে দিলে হয় না। তবে এটি করা উত্তম। {রদ্দুল মুহতার-১/৪৭৭}

সুতরাং এর উপর আমলকারী যদি যে তা ছেড়ে দেয় তাদের খারাপ ও মন্দ না বলে তাহলে সে আদবের উপর আমলকারী সাব্যস্ত হবে। আর যদি এটি পরিত্যাগকারীদের ভর্ৎসনা করে, মন্দ বলে তাহলে উক্ত ব্যক্তি বিদআতি সাব্যস্ত হবে। কারণ যে কাজ করা আবশ্যক নয়, সুন্নত নয়, সেটিকে দ্বীনের মাঝে জরুরী মনে করা সুষ্পষ্ট বিদআত।

আমরা জানি, এক সময়ে যদি দু’টি কাজ একত্র হয়। যার একটি জরুরী। অপরটি জরুরী নয়। আর একটির উপর আমল করলে অপরটির উপর আমল করা সম্ভব না হয়।

এক্ষেত্রে শরয়ী দৃষ্টিকোণ হল, জরুরী কাজটি করবে, আর অনাবশ্যকীয় কাজটি ছেড়ে দিবে।

দেখুন, উক্ত আলোচিত মাসআলা বিষয়ে প্রসিদ্ধ ফিক্বহ গ্রন্থ ‘আদদুররুল মুখতার’ এ এসেছে-

وشوع الامام فى الصلاة مذ قيل قد قامت الصلاة (رد المحتار-1/479)

কাদ কামাতিস সালাহ বলার সময় ইমামের নামায শুরু করা উচিত। {রদ্দুল মুহতার-১/৪৭৯}

এটিকেও আদবের অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। তাই কোন ইমাম যদি ‘কাদ কামিতাস সালাহ’ বলার সময় নামায শুরু না করে, বরং ইকামত শেষ হবার পর নামায শুরু করে তাতে কোন সমস্যা নেই।

এ কারণে লিখা হয়েছে-

ولو أخر حتى اتمها لا بأس به اجماعا (رد المحتار-1/479)

আর যদি দেরী করে ইকামত শেষ হওয়া পর্যন্ত এতে ঐক্যমত্বের ভিত্তিতে কোন সমস্যা নেই। {প্রাগুক্ত}

এরপর এ দেরী করাটিকে প্রাধান্য পাওয়া বক্তব্য এবং উত্তম বলে এর স্বপক্ষে এ প্রমাণ পেশ করা হয়-

لأن فيه محافظة على فضيلة متابعة المؤذن وإعانة له على الشروع مع الامام (رد المحتار، كتاب الصلاة، آداب الصلاة قبيل “فصل”-1/479)

কেননা, এতে করে মুআজ্জিনের সম্মান রক্ষা করা হয়, আর ইমামের সাথে তার নামায শুরু করতে সহায়ক হয়ে থাকে। {রদ্দুল মুহতার-১/৪৭৯}

তো বুঝা গেল, আসলে ‘কাদ কামাতিস সালাহ’ বলার সময় নামায শুরু করা আদব। তবু বিশেষ কারণে দেরী করে নামায শুরু করাকে উত্তম সাব্যস্ত করা হয়েছে।

এমনিভাবে আলোচিত মাসআলাটিতে বিশেষ কারণে ‘হাইয়া আলাল ফালাহ’ বলার সময় দাড়ানোর বদলে ইকামতের শুরুতেই দাড়ানো উত্তম হবে। সেই বিশেষ কারণটি হল, কাতার সোজা করা। প্রথমে দাড়িয়ে গেলে কাতার সোজা করা সহজ হয়। আর কাতার সোজা করার কড়া নির্দেশসূচক বেশ কিছু হাদীস বর্ণিত হয়েছে। একথা আশা করি সবারই জানা।

একথাতো পরিস্কার যে, ‘হাইয়া আলাল ফালাহ’ বলার সময় মুসল্লিগণ দাঁড়ালে ইকামত শেষ হতে হতে মুসল্লিদের কাতার ভাল করে সোজা হবে না। এক্ষেত্রে হয়তো কাতার সোজা করা ছাড়াই নামায শুরু হবে, কিংবা কাতার সোজা করার জন্য দেরী করতে হবে, যা ইকামত ও নামায শুরু করার মাঝে দেরী করিয়ে ফেলবে। যা প্রমাণিত সত্য কথা।

মোদ্দাকথা হল, ‘হাইয়া আলাল ফালাহ’ বলার সময় দাড়ানো এটি কেবলি আদবের অন্তর্ভূক্ত। সুন্নত, ওয়াজিব কিছু নয়। কিন্তু একটি জরুরী কাজের জন্য এটিকে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। যেমন ‘কাদ কামিতাস সালাহ’ বলার সময় নামায শুরু করা আদব। কিন্তু আরেকটি জরুরী কাজের জন্য তা পরিত্যাগ করা হয়। তেমনি এখানে এ আদবটি ছেড়ে দেয়া হয় কাতার সোজা করার মত জরুরী কাজের জন্য।

তাই এ কাজের উপর যদি কেউ অন্য কারো উপর অভিযোগ উত্থাপন ও ভর্ৎসনা ছাড়াই আমল করে তাহলে উক্ত ব্যক্তি আদবের উপর আমলকারী সাব্যস্ত হবে। আর যদি যে এ আদবের উপর করে না, তাকে ভর্ৎসনা করে, খারাপ বলে তাহলে উক্ত ব্যক্তি বিদআতি সাব্যস্ত হবে। কারণ গায়রে জরুরী বিষয়কে জরুরী মনে করা বিদআত।

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল- ahlehaqmedia2014@gmail.com

lutforfarazi@yahoo.com

আরও জানুন

অগ্রীম বাসা ভাড়ার উপর বছর অতিক্রান্ত হলে যাকাত কে দিবে?

প্রশ্নঃ মুহতারাম, অমি প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা দেওয়ার শর্তে বাড়ি ভাড়া নেই। ভাড়া নেওয়ার …

No comments

  1. Mohammad Mamunur Rashid

    Alhamdulllah, Zazakhallah.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আহলে হক্ব বাংলা মিডিয়া সার্ভিস