প্রচ্ছদ / আকিদা-বিশ্বাস / ঈসা আঃ সম্পর্কে কয়েকটি জ্ঞাতব্য এবং বুজুর্গদের উক্তি প্রসঙ্গে

ঈসা আঃ সম্পর্কে কয়েকটি জ্ঞাতব্য এবং বুজুর্গদের উক্তি প্রসঙ্গে

প্রশ্ন

জনাব

আসসালামু আলাইকুম।

আমি, ওয়াসিম
নারায়ণগঞ্জ থেকে

বক্তব্যঃ

১। ঈসা (আঃ) এর কি ওফাত হয়েছে না কি উর্দ্বজগতে জীবিত অবস্থায় আছে?

২। ঈসা (আঃ) এর পুনরআগমন হবে না কি রূপক ঈসার জন্ম হবে?

৩। নবীজী (সাঃ) মিরাজে গেলে তার সাথে নবীদের দেখা হয়েছিল না কি নবীদের আত্মার দেখা হয়েছিল?

৪। ঈসা (আঃ) এর বিষয় কি ঈমানের অংশ? না কি এসব বিষয় উপেক্ষা করা যাবে?

আল্লাহর অপর সৃষ্টি জ্বীন সম্পর্কে অনেকেই বিশ্বাস করে না, তারা বলে থাকে জ্বীন আসলে ‍মানুষেরই একটা অংশ এ সম্পর্কে

জানতে চাই।     পবিত্র কুরআন মজিদে এবং সহিহ হাদীসের রেফারেন্স দিবেন

 

কোন বুজুর্গের উদ্ধৃতি চাই না

 

জবাব

وعليكم السلام ورحمة الله وبركته

بسم الله الرحمن الرحيم

১ নং এর উত্তর

ঈসা আঃ কে আল্লাহ তাআলা সশরীরে আসমানে উঠিয়ে নিয়েছেন। তিনি মারা যাননি। পবিত্র কুরআনে স্পষ্ট ভাষায় এ বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।

وَقَوْلِهِمْ إِنَّا قَتَلْنَا الْمَسِيحَ عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ رَسُولَ اللَّهِ وَمَا قَتَلُوهُ وَمَا صَلَبُوهُ وَلَٰكِنْ شُبِّهَ لَهُمْ ۚ وَإِنَّ الَّذِينَ اخْتَلَفُوا فِيهِ لَفِي شَكٍّ مِنْهُ ۚ مَا لَهُمْ بِهِ مِنْ عِلْمٍ إِلَّا اتِّبَاعَ الظَّنِّ ۚ وَمَا قَتَلُوهُ يَقِينًا [٤:١٥٧]بَلْ رَفَعَهُ اللَّهُ إِلَيْهِ ۚ وَكَانَ اللَّهُ عَزِيزًا حَكِيمًا [٤:١٥٨]

আর তাদের একথা বলার কারণে যে,আমরা মরিয়ম পুত্র ঈসা মসীহকে হত্যা করেছি যিনি ছিলেন আল্লাহর রসূল। অথচ তারা না তাঁকে হত্যা করেছে,আর না শুলীতে চড়িয়েছে,বরং তারা এরূপ ধাঁধায় পতিত হয়েছিল। বস্তুতঃ তারা এ ব্যাপারে নানা রকম কথা বলে,তারা এক্ষেত্রে সন্দেহের মাঝে পড়ে আছে,শুধুমাত্র অনুমান করা ছাড়া তারা এ বিষয়ে কোন খবরই রাখে না। আর নিশ্চয়ই তাঁকে তারা হত্যা করেনি।বরং তাঁকে উঠিয়ে নিয়েছেন আল্লাহ তা’আলা নিজের কাছে। আর আল্লাহ হচ্ছেন মহাপরাক্রমশালী,প্রজ্ঞাময়। {সূরা নিসা-১৫৭-১৫৮}

এছাড়া হাদীসের মাঝেও ঈসা আঃ এর কিয়ামতের আগে আগমনের বিষয়টি স্পষ্ট করে বর্ণিত হয়েছে।

এক হাদীসে “কিয়ামতের আলামত কি?” এ প্রশ্নের জবাবে রাসূল সাঃ বলেন-

هو خروج عيسى ابن مريم عليه السلام قبل يوم القيامة

ঈসা বিন মরিয়ম আগমন করবেন কিয়ামতের আগে। {মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৯১৮, মুসনাদুল হারেস, হাদীস নং-৭২০, মাশকিলুল আসার লিত তাহাবী, হাদীস নং-৮২০, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৩২৫৩৫, আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-১২৭৪০}

২ নং এর উত্তর

ঈসা আঃ আসমানে অবস্থান করছেন সশরীরে। তিনি মৃত্যু বরণ করেননি। তিনি কিয়ামতের পূর্বে রাসূল সাঃ এর উম্মতী হিসেবে উম্মতী মুহাম্মদীর ধর্ম ইসলাম প্রচারের মানসে পৃথিবীতে আবার আগমণ করবেন। তিনি যেহেতু মারাই যাননি। তাই রূপক ঈসার কোন প্রয়োজনই। বরং স্বয়ং ঈসা আঃ ই আসবেন। যেমনটি সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।

أبا هريرة رضي الله عنه يقول قال رسول الله صلى الله عليه و سلم ( والذي نفسي بيده ليوشكن أن ينزل فيكم ابن مريم حكما مقسطا فيكسر الصليب ويقتل الخنزير ويضع الجزية ويفيض المال حتى لا يقبله أحد 

হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-ঐ সত্বার কসম! যার হাতে আমার প্রাণ! অচিরেই ঈসা আঃ ইনসাফগার শাসক হিসেবে অবতরণ করবেন। অতঃপর তিনি ক্রুশ চিহ্নকে ভেঙ্গে ফেলবেন। শুকরকে বিনাশ করবেন। আর জিযিয়াকে রহিত করবেন। তখন সম্পদের  এমন প্রবাহ ঘটবে যে, কেউ তা গ্রহণ করার মত থাকবে না। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-২১০৯, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৪০৬, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-২২৩৩, মুসনাদুশ শামীন, হাদীস নং-১১৩}

আল মুজামুল আওসাতের এক দীর্ঘ হাদীসের একাংশে এসেছে-

ثم ينزل عيسى بن مريم مصدقا بمحمد صلى الله عليه و سلم وعلى ملته

তারপর ঈসা আঃ আসবেন মুহাম্মদ সাঃ কে সত্যায়নকারী হিসেবে তার উম্মত হয়ে। {আল মুজামুল আওসাত, হাদীস নং-৪৫৮০}

অন্য হাদীসে এসেছে-

عن ابي هريرة ان رسول الله صلى الله عليه و سلم قال ينزل عيسى بن مريم فيمكث في الناس اربعين سنة

হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন-ঈসা বিন মরিয়ম অবতরণ করে ৪০ বছর মানুষের মাঝে অবস্থান করবেন। {আল মুজামূল আওসাত, হাদীস নং-৫৪৬৪}

ইত্যাদি আয়াত একথাই প্রমাণ করে যে, হযরত ঈসা আঃ সশরীরে দুনিয়াতে অবতরণ করবেন। রূপক অর্থে নয়।

৩ নং এর উত্তর

হাদীসের বাহ্যিক অর্থ একথাই প্রমাণ করে যে, নবীদের সাথে রাসূল সাঃ এর সরাসরি শারিরিক দেখাই হয়েছিল। আত্মিক নয়। এ বিষয়টি নিয়ে অযথা বিতর্ক করার কোন দরকার নেই। উভয়টি হতে পারে। তবে সহীহ আক্বিদা এটাই যে, সরাসরি দেখা হয়েছিল। যা হাদীসের বাহ্যিক অর্থ দ্বারা বুঝা যায়।

قال حدثنا أنس بن مالك أن نبي الله صلى الله عليه و سلم قال لما عرج بي رأيت إدريس في السماء الرابعة

হযরত আনাস বিন মালিক রাঃ বলেন, রাসূল সাঃ বলেছেন যে, আমি যখন চতুর্থ আসমানে উঠলে সেখানে হযরত ইদ্রীস আঃ দেখি। {সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-৩১৫৭}

এছাড়া প্রথম আসমানে উঠে হযরত আদম আঃ এর সাথে সালাম-কালাম, দ্বিতীয় আসমানে হযরত ইয়াহইয়া ও হযরত ঈসা আঃ এর সাথে সাক্ষাৎ, তৃতীয় আসমানে হযরত ইউসুফ আঃ, এবং চতুর্থ আসমানে হযরত ইদ্রীস আঃ, এবং পঞ্চম আসমানে হযরত হযরত হারুন আঃ, এবং ছষ্ঠ আসমানে হযরত মুসা আঃ ও সপ্তম আসমানে হযরত ইব্রাহীম আঃ এর সাথে কথোপথন সম্বলিত হাদীস একথাই প্রমান করে যে, সশরীরেই তাদের সাথে কথা হয়েছে এবং দেখা হয়েছে রাসূল সাঃ এর। {হাদীস দেখতে দেখুন-সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৩০৩৫, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৭৮৩৩}

৪ নং এর উত্তর

ঈসা আঃ বিষয়ে তিনটি বিষয় হল মৌলিকভাবে ঈমানের বিষয়। যথা-

১-ঈসা আঃ ইঞ্জিল কিতাবধারী সত্য নবী ছিলেন। রাসূল সাঃ আসার পর তার নবুওত-রেসালত ও ধর্ম রহিত হয়ে গেছে। এবং তার ধর্মগ্রন্থ বিকৃত হয়ে গেছে।

২-ঈসা আঃ কে আল্লাহ তাআলা আসমানে উঠিয়ে নিয়ে গেছেন।

৩-ঈসা আঃ কিয়ামতের আগে রাসূল সাঃ এর উম্মত হিসেবে দুনিয়াতে আবার অবতরণ করবেন।

প্রথম দু’টি বিষয় কুরআন দ্বারা প্রমানিত। আর তৃতীয় বিষয়টি হাদীস দ্বারা প্রমানিত।

তাই এর কোনটিই অস্বিকার যাবে না। প্রতিটিই আমাদের ঈমান। কুরআন অস্বিকার করলে যেমন কাফের। তেমনি হাদীস অস্বিকারকারীও কাফের।

৫ নং এর উত্তর

জিন মানুষের মতই আল্লাহ তাআলার একটি সৃষ্টি। যারা আগুনের তৈরী। কুরআনের একাধিক আয়াতে আল্লাহর বিধান জিন ও মানবজাতির জন্য নাজিল হয়েছে মর্মে ঘোষণা এসেছে। যদি জিন মানুষেররই প্রকার হতো, তাহলে আলাদাভাবে জিনের কথা উল্লেখ করার কি প্রয়োজন ছিল?

জিন মানুষ ছাড়া একটি আলাদা সৃষ্টি। যাদের ব্যাপারে কুরআনে কারীমে একটি স্বতন্ত্র সূরাই আছে “সূরা জিন” নামে। তাই জিন থাকাকে অস্বিকার করা সরাসরি কুরআনকেই অস্বিকার করা।

وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ [٥١:٥٦]

আমার এবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি। {সূরা আজ যারিয়াত-৫৬}

قُلْأُوحِيَإِلَيَّأَنَّهُاسْتَمَعَنَفَرٌمِنَالْجِنِّفَقَالُواإِنَّاسَمِعْنَاقُرْآنًاعَجَبًا [٧٢:١

বলুনঃ আমার প্রতি ওহী নাযিল করা হয়েছে যে, জিনদের একটি দল কোরআন শ্রবণ করেছে, অতঃপর তারা বলেছেঃ আমরা বিস্ময়কর কোরআন শ্রবণ করেছি;

يَهْدِيإِلَىالرُّشْدِفَآمَنَّابِهِ ۖوَلَنْنُشْرِكَبِرَبِّنَاأَحَدًا [٧٢:٢

যা সৎপথ প্রদর্শন করে। ফলে আমরা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছি। আমরা কখনও আমাদের পালনকর্তার সাথে কাউকে শরীক করব না।

وَأَنَّهُتَعَالَىٰجَدُّرَبِّنَامَااتَّخَذَصَاحِبَةًوَلَاوَلَدًا [٧٢:٣

এবং আরও বিশ্বাস করি যে, আমাদের পালনকর্তার মহান মর্যাদা সবার উর্ধ্বে। তিনি কোন পত্নী গ্রহণ করেননি এবং তাঁর কোন সন্তান নেই।

وَأَنَّهُكَانَيَقُولُسَفِيهُنَاعَلَىاللَّهِشَطَطًا [٧٢:٤

আমাদের মধ্যে নির্বোধেরা আল্লাহ তা’আলা সম্পর্কে বাড়াবাড়ির কথাবার্তা বলত।

وَأَنَّاظَنَنَّاأَنْلَنْتَقُولَالْإِنْسُوَالْجِنُّعَلَىاللَّهِكَذِبًا [٧٢:٥

অথচ আমরা মনে করতাম, মানুষ ও জিন কখনও আল্লাহ তা’আলা সম্পর্কে মিথ্যা বলতে পারে না।

وَأَنَّهُكَانَرِجَالٌمِنَالْإِنْسِيَعُوذُونَبِرِجَالٍمِنَالْجِنِّفَزَادُوهُمْرَهَقًا [٧٢:٦

অনেক মানুষ অনেক জিনের আশ্রয় নিত, ফলে তারা জিনদের আত্নম্ভরিতা বাড়িয়ে দিত।

বুজুর্গের উক্তি কি দলিল হতে পারে না?

আপনার প্রশ্নের শেষাংশে “পবিত্র কুরআন মজিদে এবং সহিহ হাদীসের রেফারেন্স দিবেন কোন বুজুর্গের উধ্বৃতি চাই না” এ মন্তব্যটি আমাদের কাছে একটি ঔদ্ধত্বপূর্ণ বক্তব্য বলেই মনে হয়েছে।

বুজুর্গের উক্তি মানে কুরআন হাদীস সম্পর্কে প্রাজ্ঞ ব্যক্তির উক্তি ছাড়া কুরআন হাদীসের সকল অংশ আপনি সরাসরি বুঝতে পারবেন? যদি পারেন, তাহলে ভিন্ন কথা। যদি না পারেন, তাহলে এরকম উদ্ধত বক্তব্যের মানে কি?

আপনি কি বুখারী শরীফ পড়েছেন কখনো? বুখারীতে ইমাম বুখারী রহঃ অসংখ্য অধ্যায় কায়েম করেছেন, যার অধীনে তিনি কুরআন বা হাদীসের কোন উদ্ধৃতি না দিয়ে মাসআলাটি বুজুর্গের উক্তি দিয়ে প্রমাণ করেছেন। উদাহরণত কয়েকটি লক্ষ্য করুন-

ইমাম বুখারী রহঃ বুখারীতে অধ্যায় স্থাপন করেছেন-  باب الاغتباط في العلم والحكمةএ বাবের অধীনে ইমাম বুখারী রহঃ কুরআনের কোন আয়াত আনেন নি, কোন হাদীস আনেন নি। তিনি উল্লেখ করেছেন বুযুর্গদের কথা- وقال عمر تفقهوا قبل أن تسودواঅর্থাৎ হযরত ওমর রাঃ বলেন-সর্দার হওয়ার আগে ইলমী গভীরতা অর্জন কর। ইমাম বুখারী রহঃ নিজের নির্ধারণকৃত বাবের অধীনে আয়াত বা হাদীস না এনে বুযুর্গের কথা এনেছেন।

শুধু এক স্থানে নয়, আরেক স্থানে ইমাম বুখারী রহঃ বাব নির্ধারণ করেছেন-باب الحياء من الإيمانএ বাব নির্ধারণ করার পর তিনি

কুরআনের আয়াত বা হাদীস পেশ না করে বুযুর্গদের কথা নকল করে বলেন-

وقال مجاهد لا يتعلم العلم مستحي ولا مستكبر . وقالت عائشة نعم النساء نساء الأنصار لم يمنهعن الحياء أن يتفقهن في الدين

তথা-মুজাহিদ বলেন-প্রশ্ন করতে লজ্জাকারী বা অহংকারী ইলম শিখতে পারে না। আর হযরত আয়শা রাঃ বলেন-হ্যাঁ, আনসারী মহিলারা দ্বীন শিখতে তাদের লজ্জা আটকে রাখে না। {সহীহ বুখারী, লজ্জা ঈমানের অঙ্গ অধ্যায়}

এখানে লক্ষ্য করুন-ইমাম বুখারী রহঃ বুখারীতে বাব নির্ধারণ করার পর কোন হাদীস না এনে আমাদের বর্ণনাভঙ্গীর মত বড় ও বুযুর্গ মুজাহিদ ও হযরত আয়শা রাঃ এর মন্তব্য এনেছেন।

এছাড়া ইমাম বুখারী রহঃ বাব নির্ধারণ করেছেন-باب من خص بالعلم قوما دون قوم كراهية أن لا يفهمواতথা একদলকে কোন

বিষয়ে বিশেষভাবে জানানো আর অন্যদের না জানানো না বুঝার কারণে”। তারপর ইমাম বুখারী রহঃ কুরআনের আয়াত বা হাদীসের পরিবর্তে বুযুর্গের উক্তি নিয়ে এসেছেন-

وقال علي حدثوا الناس بما يعرفون أتحبون أن يكذب الله ورسوله

আর হযরত আলী রাঃ বলেছেন-তোমরা লোকদের সামনে এমন কথা বল যা তারা বুঝে, এমনভাবে বলো না, যাতে লোকেরা আল্লাহ ও তার রাসূলকে অস্বিকার করে বসে।

ইমাম বুখারী নিজের বাবের অধীনে হাদীসও আনেন নি, আয়াতও আনেননি। নিয়ে এসেছেন বুযুর্গের কথা।

আরো দেখুন-ইমাম বুখারী রহঃ বুখারী শরীফে বাব কায়েম করেছেন- باب الأخذ باليدينতথা মোসাফাহা দুই হাতে করার অধ্যায়।

তারপর তিনি কুরআনের আয়াত বা হাদীস উপস্থাপন না করে বুযুর্গদের আমল উপস্থাপন করে বলেন-

وصافح حماد بن زيد ابن المبارك بيديهতথা হাম্মাদ বিন জায়েদ এবং ইবনুল মুবারক উভয় হাতে মুসাফাহা করেছেন।

এ বক্তব্য উপস্থাপন করার দ্বারা ইমাম বুখারী এটাই বুঝালেন যে, আমাদের বুযুর্গরা দুই হাতে মুসাফাহা করেছেন, তাই আমাদেরও দুই হাতে মুসাফাহা করা উচিত।

আরো লক্ষ্য করুন-ইমাম বুখারী রহঃ বাব নির্ধারণ করেছেন- باب السجود على الثوب في شدة الحرতথা অত্যধিক গরমের কারণে

কাপড়ের উপর সেজদা করার অধ্যায়। এরপর ইমাম বুখারী রহঃ কোন আয়াত বা হাদীস উপস্থাপন না করে বুযুর্গের উক্তি উল্লেখ করেন-

وقال الحسن كان القوم يسجدون على العمامة والقلنسوة ويداه في كمهতথা হাসান বসরী রহঃ বলেন-সাহাবারা পাগড়ী ও

টুপির উপর সেজদা করতেন।

আরো লক্ষ্য করুন-

ইমাম বুখারী রহঃ বাব নির্ধারণ করেছেন- باب التيمم فيالحضر إذا لم يجد الماء وخاف فوت الصلاةতথা মুকিম অবস্থায় যদি পানি না পায়, বা নামায কাযা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে তায়াম্মুম করার অধ্যায়। এ অধ্যায় স্থাপন করার পর ইমাম বুখারী রহঃ কোন আয়াত বা হাদীস পেশ না করে সরাসরি বুযুর্গদের বক্তব্য উদ্ধৃত করেন-

وبه قال عطاء وقال الحسن في المريض عنده الماء ولا يجد من يناوله يتيممতথা একথাই বলেন আতা বিন আবী রাবাহ ও হাসান

বসরী রহঃ যে, অসুস্থ্য ব্যক্তির কাছে যদি পানি থাকে, কিন্তু এমন কেউ নেই যে, তাকে তা দিবে। তাহলে সে তায়াম্মুম করবে।

তাহলে এখানেও ইমাম বুখারী রহঃ কুরআন বা হাদীসের উদ্ধৃতি রেখে বুযুর্গদের কথাই উদ্ধৃত করলেন, তাহলে আমরা বুযুর্গদের কথা বললে খারাপ কাজ করে থাকলে ইমাম বুখারীকে কি বলবেন আপনি?

আল্লাহ তাআলা আমাদের সত্যকে সত্য ও মিথ্যাকে মিথ্যা হিসেবে বুঝার তৌফিক দান করুন।

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালকতালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল- ahlehaqmedia2014@gmail.com

lutforfarazi@yahoo.com

আরও জানুন

অগ্রীম বাসা ভাড়ার উপর বছর অতিক্রান্ত হলে যাকাত কে দিবে?

প্রশ্নঃ মুহতারাম, অমি প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা দেওয়ার শর্তে বাড়ি ভাড়া নেই। ভাড়া নেওয়ার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আহলে হক্ব বাংলা মিডিয়া সার্ভিস