প্রচ্ছদ / আহলে হাদীস / ইমামের কিরাত পাঠকালে চুপ থাকা সংক্রান্ত হাদীসটি ইমাম মুসলিম ছাড়া আর কারো মতে সহীহ নয়?

ইমামের কিরাত পাঠকালে চুপ থাকা সংক্রান্ত হাদীসটি ইমাম মুসলিম ছাড়া আর কারো মতে সহীহ নয়?

প্রশ্ন

মোঃ ফায়সাল, যাত্রাবাড়ী।

শ্রদ্ধেয় মুফতি সাহেব,

আলহামদুলিল্লাহ, আপনাদের এই সাইটের লেখা দ্বারা অনেক বিভ্রান্তি দূর হচ্ছে। আমি এক আহলে হাদিস অনুসারীর সাথে ইমামের পিছনে কিরাত পড়া নিষেধ নিয়ে কথা বলছিলাম। আমি বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার থেকে প্রকাশিত মুসলিম শরীফের ৮০০ নং হাদিস দিলাম যেখানে বলা আছে যে, ‘ইমাম যখন কুরআন পাঠ করে, তোমরা চুপ থাক’। এখানে ইমাম মুসলিম (রহঃ) বলেন, এ হাদিস আমার মতে সহিহ। তাকে জিজ্ঞেস করা হল, তাহলে আপনার কিতাবে তা সন্নিবেশ করেন নি কেন। ইমাম মুসলিম (রহঃ) বললেন, আমি যেটা সহিহ মনে করি তা আমার কিতাবে লিপিবদ্ধ করা জরুরি মনে করি না। যেসব হাদিস সহিহ বলে ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আমি কেবল তাই আমার কিতাবে সংকলন করেছি।

এই হাদিস দেখার পরে সেই কথিত আহলে হাদিস বলল যে, এই হাদিস শুধু ইমাম মুসলিম (রহঃ)এর নিকট সহিহ কিন্তু সকল মুহাদ্দিসের নিকট সহিহ নয়। তাই তা গ্রহণযোগ্য নয়।

কিন্তু আপনার ওয়েব সাইটে (লিঙ্কঃ https://ahlehaqmedia.com/1064) লেখা আছে যে, “কাতাদা থেকে সুলাইমান থেকে জারীর এর যে সূত্র রয়েছে সে সূত্রের হাদীসে অতিরিক্ত এসেছে যে, রাসূল সাঃ এরপর বলেনঃ আর যখন ইমাম কেরাত পড়ে, তখন তোমরা চুপ থাকবে। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৯৩২} ইমাম মুসলিম রহঃ বলেনঃ হাদীস সহীহ হওয়ার ব্যাপারে সকল মুহাদ্দিসীন একমত

“হাদিসটি সকল মুহাদ্দিসিনের নিকট সহিহ” –এর রেফারেন্সে টি মেহেবানি করে আমাকে মুসলিম শরীফের বাংলা অনুবাদ থেকে দিলে উপকৃত হব।

উত্তর:

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

উক্ত আহলে হাদীস ভায়ের বক্তব্য সঠিক নয়। উক্ত হাদীসকে শুধু ইমাম মুসলিমই সহীহ বলেন নি। বরং ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল, ইসহাক ইবনে রাহুয়াহ ও একে সহীহ বলেছেন। এবং ইবনে জারীর তবারী (৩১০হি.), ইবনুল মুনযির, ইবনে হাযম, ইবনে আবদুল বার, হাফেজ মুনযিরী, ইবনে তাইমিয়া, ইমাম মুসলিমের সহীহ বলাকে সমর্থন করেছেন। ইবনুত তুরকুমানী, ইবনে হাজার আসকালানী ও ইবনুল হুমাম    প্রমুখ এ মতই পোষণ করেছেন।

দেখুন- (তামহীদ ১১/৩৪) ,তাফসীরে তাবারী,৯/১০৩, আল আওসাত, ৩/১০৫, আল মুহাল্লা, ২/২৭০, আততামহীদ ১১/৩৪, মুখতাসারে সুনানে আবু দাউদ ১/৩১৩, মাজমুউল ফাতাওয়া ২২/৩৪০)

আলজাওহারুন নাকী  (২/১৫৬-১৫৮;) ফাতহুল বারী (২/২৪২) ফাতহুল কাদীর (১/৩৪১)

অতএব এটি সুস্পষ্ট  যে,  এ হাদীসের  আলোচিত অংশটি নিয়ে কোনো কোনো ইমামের যে ভিন্নমত রয়েছে তার চেয়ে বর্ণনাটি সহীহ হওয়ার সিদ্ধান্তই অগ্রগণ্য। যা আমরা https://ahlehaqmedia.com/4237 লিংকের লেখায় বিস্তারিত আলোকপাত করেছি।

আপনি প্রশ্নের শেষ অংশে যে বক্তব্য উদ্ধৃত করেছেন, এখানে ইমাম মুসলিমের ঐকমত্য দ্বারা সমস্ত মুহাদ্দিসের ঐকমত্য উদ্দেশ্য নয়, ইমাম মুসলিমের কিছু সংখ্যক হাদীস-বিচারক শায়খের ঐকমত্য উদ্দেশ্য। অর্থাৎ ‘সহীহ’ গ্রন্থে তিনি কেবল এমন হাদীস এনেছেন যা সহীহ-এর মানদন্ডে উত্তীর্ণ হওয়ার বিষয়ে তাঁর কিছু সংখ্যক হাদীস-বিচারক শায়খ একমত হয়েছেন। তবে তারা কারা সেটা নিশ্চিতভাবে জানা যায় না। -দেখুন: আলমুফহিম, আবুল আব্বাস কুরতবী ১/১০০; আন্নুকাত আলামুকাদ্দিমাতি ইবনিস সালাহ, বদরুদ্দীন যারকাশী ১/১৭৭-১৭৮; মাহাসিনুল ইসতিলাহ, বুলকিনী, মুকাদ্দিমা ইবনে সালাহ, (তাহকীক-সম্পাদনা আয়েশা আবদুর রহমান) এর সাথে মুদ্রিত পৃ. ১৬২; তাদরীবুর রাবী, জালালুদ্দীন সুয়ূতী ১/৭৫; ইবনে মাজাহ আউর ইলমে হাদীস, শায়খ মুহাম্মদ আবদুর রশীদ নোমানী পৃ. ২১৫

 والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

মাওলানা মুহসিনুদ্দীন খান

সহকারী গবেষক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

নিরীক্ষক

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল- ahlehaqmedia2014@gmail.com

আরও জানুন

জমির মালিকের উপর যাকাত আবশ্যক হবে?

প্রশ্ন আমার বাবা এবং বড় ভাইয়ের সমন্বয়ে ২০ থেকে ২২ বিঘা জমি আছে এবং বাজারে …

No comments

  1. মোঃ ফায়সাল, যাত্রাবাড়ী।

    জাঝাকাল্লাহ খাইর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আহলে হক্ব বাংলা মিডিয়া সার্ভিস