প্রচ্ছদ / প্রশ্নোত্তর / আগাখানী ইসমাঈলী সম্প্রদায় কুফরী ধর্মে বিশ্বাসী দল

আগাখানী ইসমাঈলী সম্প্রদায় কুফরী ধর্মে বিশ্বাসী দল

প্রশ্ন

ইসমাঈলী সম্প্রদায় বা আগাখানী মতবাদী বিশ্বাসীরা কি মুসলমান? তাদের আক্বিদা বিশ্বাস সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। বর্তমানে বাংলাদেশে বিশেষ একটি সম্পদশালী গোষ্ঠি এ সম্প্রদায়কে নতুন করে প্রতিষ্ঠিত করতে চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমাদের মত যারা সাধারণ মুসলমান তারা কুরআন হাদীস সম্পর্কে না জানার কারণে তাদেরকে মুসলমান মনে করছে। আসলেই কি তারা মুসলমান? দলীল প্রমাণসহ উক্ত বিষয়টি পরিস্কার করলে কৃতার্থ থাকবো।

প্রশ্নকর্তা- আহমাদুল্লাহ ঢাকা, বাংলাদেশ।

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

আগাখানী মতাবলম্বী তথা ইসমাঈলী সম্প্রদায় একটি অমুসলিম সম্প্রদায়। খৃষ্টানরা যেমন একটি অমুসলিম সম্প্রদায়। ইহুদীরা যেমন একটি অমুসলিম সম্প্রদায়। কাদিয়ানীরা যেমন অমুসলিম সম্প্রদায়। ঠিক তেমনি ইসামাঈলী সম্প্রদায় তথা আগাখানী সম্প্রদায়ও একটি অমুসলিম সম্প্রদায়। ইসলাম ও মুসলমানদের সাথে এদের কোন সম্পর্ক নেই। আহমদিয়া মুসলিম নামধারী কাদিয়ানী ধর্ম যেমন একটি কাফেরদের ধর্ম। ঠিক তেমনি মুসলিম নামধারী আগাখানী ইসমাঈলী সম্প্রদায় একটি কুফুরী ধর্ম। ইসলামের সাথে এদের ন্যুনতম কোন সম্পর্ক নেই। নিচে তাদের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস এবং আক্বিদা-বিশ্বাস উল্লেখ করা হল।

আগাখানীদের উদ্ভব

ইসমাঈলী সম্প্রদায়ের মৌলিক ভিত্তি হল তাদের ইমামতের আক্বিদার উপর। তাদের মতে জমানার নির্ধারিত ইমামই হল তাদের একমাত্র অনুসরণীয়। তার কথা সর্বোতভাবে কার্যকরী। তাই সর্ব প্রথম তাদের ইমাম তালিকা আমাদের জানা প্রয়োজন।

১ম ইমাম

হযরত আলী রাঃ [মৃত্যু-৪৯ হিজরী}

২য় ইমাম

হযরত হুসাইন বিন আলী রাঃ। [মৃত্যু-৬১ হিজরী]

৩য় ইমাম

হযরত জায়নুল আবেদীন বিন আলী বিন হুসাইন রাঃ। [মৃত্যু-৯৪ হিজরী]

৪র্থ ইমাম

হযরত মুহাম্মাদ বাকের। [মৃত্যু-১১৪ হিজরী]

৫ম ইমাম

হযরত জাফর সাদেক। [মৃত্যু-১৪৮]

জাফর সাদেকের পর ইমামিয়্যাহ ফিরক্বার মাঝে মতভেদ হয়ে যায়। ইসনা আশারিয়া ফিরক্বার লোকেরা হযরত জাফর সাদেকের ছেলে মুসা কাজেমকে ইমাম মানতে থাকে। আর আর ইসমাঈলীরা জাফর সাদেকের বড় ছেলে ইসমাইল বিন জাফর সাদেককে ইমাম মানতে থাকে। ডক্তর জাহেদ আলী সাহেব “তারীখে ফাতিমিয়্যীনে মিসর” নামক গ্রন্থে এ ফিরক্বা সম্পর্কে যা কিছু লিখেছেন তার সারাংশ হল,

ইমাম জাফর সাদেকের বয়সের সিরিয়াল অনুপাতে ৭জন ছেলে ছিল।

১- ইসমাইল।

২- আব্দুল্লাহ আফতাহ।

৩- মুসা কাজেম।

৪- মুহাম্মদ, যিনি দীবাজ নামে প্রসিদ্ধ।

৫- ইসহাক। ৬- আব্বাস।

৭- আলী আরেজী।

প্রথমোক্ত চারজনই ইমাম হওয়ার দাবি করে বসেন। যার ফলে একাধিক ফিরক্বা জন্ম লাভ করে। তাদের মাঝে প্রসিদ্ধ এবং গুরুত্বপূর্ণ ফিরক্বা হল ফিরক্বায়ে ইসমাইলিয়্যাহ এবং ফিরক্বায়ে মুসায়িয়্যাহ।

ইসমাঈলীরা ইমাম জাফর সাদেকের পর ইমাম হওয়ার প্রবক্তা। আর ইসনা আশারিয়্যারা বা মুসায়িয়্যীরা হযরত মুসা কাজেমকে ইমাম মানে।

ইসমাঈলীরা বলে থাকে যে, হযরত ইসমাঈল হযরত জাফর সাদেকের বড় ছেলে। জাফর সাদেক ইসমাইলকে ইমাম বানানোর জন্য নির্ধারিত করেছেন।

আর ইসমাঈল তার পিতার জীবদ্দশায় না কোন বিয়ে করেছেন, না কোন বাদি ক্রয় করেছেন। তাই তিনিই ইমাম।

অপরদিকে ইসনা আশারিয়ারা বলে থাকে যে, ইসমাইলকে ইমাম বানানোর কথা জাফর সাদেক অবশ্যই বলেছিলেন। কিন্তু ইসমাইলের ইন্তেকাল পিতা থাকতেই হয়ে গিয়েছিল। এ কারণে আল্লাহ তাআলার সিদ্ধান্ত পরিবর্তিত হয়ে গেছে, আর ইমামতীর পদ মুসা কাজেমের দিকে প্রত্যাবর্তিত হয়েছে।

আল্লামা মাজলিসীর বর্ণনা মতে ইমাম জাফর সাদেক ইসমাইলকে তার জানেশীন নির্ধারিত করেছিলেন। কিন্তু ইসমাইল একদা মদ পান করলে তার পিতা তার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে যান। তাই তাকে বরখাস্ত করে মুসা কাজেমকে ইমাম নিযুক্ত করেন।

কিন্তু এ বক্তব্য ইসমাঈলী ফিরক্বাপন্থীরা মানে না। ইসমাঈল বিন জাফরের ব্যাপারে দুটি মত। একটি হল তার ইন্তেকাল পিতার জীবদ্দশায় হয়ে গিয়েছিল। আরেকটি মত হল, তার মৃত্যু হয়নি, কিন্তু তাকিয়া [ধোঁকা দিয়ে] হিসেবে তিনি আড়ালে চলে যান। সেই সাথে নিজের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে দেন। যাতে তিনি হত্যার হাত থেকে বাঁচতে পারেন। {তারীখে ফাতিমিয়্যীনে মিসর-১/৩-৪১}

যাইহোক, ইসমাইলীরা জাফর সাদেকের পর ইসমাইলকে তাদের ৬ষ্ঠ ইমাম বিশ্বাস করে থাকে।

এখান থেকে ইসমাঈলীদের সময়কাল শুরু হয়। তাদের সময়কালের নিম্ন বর্ণিত ৫জন ইমাম ছিল। যথা-

৬ষ্ঠ ইমাম

হযরত ইসমাঈল বিন জাফর সাদেক। [মৃত্যু-১৫৮]

৭ম ইমাম

হযরত মুহাম্মদ বিন ইসমাঈল আল মাকতুম [মৃত্যু-১৯৭]

৮ম ইমাম

আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মদ ওসী আহমাদ [মৃত্যু-২১২ হিজরী]

৯ম ইমাম

আহমদ বিন আব্দুল্লাহ তাকী মুহাম্মদ [২২৫ হিজরী]

১০ম ইমাম

হুসাইন বিন আহমদ রাজী আব্দুল্লাহ [২৬৮ হিজরী] হুসাইন বিন আহমদরে ছেলে আব্দুল্লাহ ২৯৭ হিজরীতে আফ্রিকাতে নিজের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করে ফেলে। আর “আলমাহদী” উপাধি ধারণ করে। সেখান থেকে তাদের ইমামদের সময়কাল শুরু হয়।

আব্দুল্লাহ মাহদীর প্রতিষ্ঠিত রাজত্ব ৪৩৬ হিজরী পর্যন্ত আফ্রিকাতে ছিল। ৩৮৫ হিজরী থেকে ৫৬৭ হিজরী পর্যন্ত মিসরে তার রাজত্ব ছিল। তার খলীফাদের খুলাফায়ে আবেদীন বা ফাতিমিয়্যীন বলা হতো। তাদের তালিকা হল,

১১তম ইমাম

আব্দুল্লাহ আলমাহদী [মৃত্যু-২৯৭ হিজরী]

১২তম ইমাম

আবুল কাসেম মুহাম্মদ কায়েম বিআমরিল্লাহ [মৃত্যু-৩৩৪ হিজরী]

১৩তম ইমাম

আবু তাহের ইসমাঈল আলমানসূর বিল্লাহ [মৃত্যু-৩৪১ হিজরী]

১৪তম ইমাম

আবু তামীম মিদাল মুয়িজ লিদীনিল্লাহ [মৃত্যু-৩৬৫ হিজরী]

১৫তম ইমাম

আবু মানসূর নাজ্জার আলআজীজ বিল্লাহ [মৃত্যু-৩৮৬ হিজরী]

১৬তম ইমাম

আবু আলী আলহুসাইন আলহাকেম বিল্লাহ [মৃত্যু-৪১১ হিজরী]

১৭তম ইমাম

আবু মিয়াদ আলী আজজাহের লা গাজাজু দীনিল্লাহ [মৃত্যু-৪৭২ হিজরী]

১৮তম ইমাম

আবু তামীম মিয়াদাল মুস্তানসির বিল্লাহ [মৃত্যু-৪৮৭ হিজরী] মুস্তানসির বিল্লাহ ইসমাঈলীদের আঠারতম ইমাম ছিল। তার ইন্তেকালের পর তার জানেশীনদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি হয়।

মুস্তানসিরের আমীর আবজুশ আফজাল মুস্তানসিরের ছোট ছেলে মুস্তালাকে জানেশীন বানায়। কিন্তু মুস্তানসিরের বড় ছেলে নাজ্জার তা মেনে নেয়নি। বরং সে নিজেই ইমাম হওয়ার দাবি করে বসে। হাসসান বিন সাব্বাহ যে সে সময়ের বড় ইসমাঈলী ছিল, সে নাজ্জারকে সহযোগিতা করে। সেখান থেকে ইসমাঈলীদের দুটি গ্রুপ হয়ে যায়। একদলকে বলা হয়, নাজ্জারীয়া, আর অপর দলকে বলা হতো মুস্তালিয়া।

নাজ্জার মিসর থেকে চলে গিয়ে ইস্কান্দরিয়াতে নিজের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করে। আর আলমুস্তাফা লিদিনিল্লাহ” উপাধি ধারণ করে। আমীর আবজুশ আফজার তার বিপক্ষে সৈন্য পাঠায়। সেবার নাজ্জার হেরে যায় এবং তাকে বন্দী করে কাহেরায় নিয়ে আসা হয়।

মুস্তালী নাজ্জারকে দুই দেয়ালের মাঝে রেখে দেয়ালকে আটকে দেয়। আরেক বর্ণনা মতে তাকে গ্রহবন্দী করে রাখে, যার ফলে সে আর বাহিরে যেতে পারতো না।

অবশেষে ৪৯০ হিজরীতে সে ইন্তেকাল করে। যদিও নাজ্জার তার উদ্দেশ্য সফল করতে ব্যার্থ হয়, কিন্তু তার সহযোগিরা তার দাওয়াতকে জারী রাখে। যার ফলে হাসান বিন সাব্বাহ কালআতুল মাওতের মাঝে নাজ্জারী হুকুমত প্রতিষ্ঠা করে ফেলে।

বলা হয় যে, হাসান বিন সাব্বাহ নাজ্জারের ছেলে হায়ীকে মিসরে ডেকে এনে তার পিতার মসনদে বসিয়ে দেয়। আর এ রাজত্ব প্রায় দেড়শত সাল পর্যন্ত জারী ছিল। মুস্তানসিরের পর নাজ্জারীদের নিম্ন বর্ণিত ব্যক্তিরা ইমাম হয়। যথা-

১৯তম ইমাম

নাজ্জার বিন মুস্তানসির [মৃত্যু-৪৯০ হিজরী]

২০তম ইমাম

হাদীস বিন নাজ্জার [মৃত্যু-৫৩০ হিজরী]

২১তম ইমাম

মাহদী বিন হাদী [মৃত্যু-৫৫২ হিজরী]

২২তম ইমাম

কাহের বিন মাহদী [মৃত্যু-৫৫৭ হিজরী]

২৩তম ইমাম

হাসান আলী [মৃত্যু-৫৬১ হিজরী]

২৪তম ইমাম

আলী মুহাম্মদ [মৃত্যু ৬০৭ হিজরী]

২৫তম ইমাম

জালালুদ্দীন হাসান [মৃত্যু-৬১৮ হিজরী]

২৬তম ইমাম

আলাউদ্দীন মুহাম্মদ [মৃত্যু-৬৫৩]

২৭তম ইমাম

রুকনুদ্দীন খুরশাহ [মৃত্যু-৬৬৪ হিজরী] রুকনুদ্দীনের আমলে কালআতুল মাওতে তাতারীরা হামলা করে পদানত করে ফেলে।

আর রুকনুদ্দীনকে হত্যা করে ফেলে। এর মাধ্যমে নাজ্জারীদের রাজত্বের পরিসমাপ্তি ঘটে। সেই সাথে নাজ্জারী ইমামদের মারকাজুল মাওত ইরানে স্থানান্তর করা হয়। বলা হয় যে, সে সময় তাদের নিম্ন বর্ণিত ইমাম ছিল। যথা-

২৮তম ইমাম

শামছুদ্দীন [মৃত্যু-৭১০ হিজরী]

২৯তম ইমাম

কাসেম শাহ [মৃত্যু-৭৭১ হিজরী]

৩০তম ইমাম

ইসলাম শাহ [মৃত্যু-৮২৭ হিজরী]

৩১তম ইমাম

মুহাম্মদ বিন ইসলাম শাহ [মৃত্যু-৮৬৮ হিজরী]

৩২তম ইমাম

দ্বিতীয় মুস্তানসির বিল্লাহ [মৃত্যু-৮৮০ হিজরী]

৩৩তম ইমাম

আব্দুস সালাম [মৃত্যু-৮৯৯ হিজরী]

৩৪তম ইমাম

শাহ গরীব মির্যা [মৃত্যু-৯০২ হিজরী]

৩৫তম ইমাম

আবু জর আলী [মৃত্যু-৯১৫ হিজরী]

৩৬তম ইমাম

মুরাদ মির্যা [মৃত্যু-৯২০ হিজরী]

৩৭তম ইমাম

যুল ফিকার আলী [মৃত্যু-৯২২ হিজরী]

৩৮তম ইমাম

নূরুদ্দীন আলী [মৃত্যু-৯৫৭ হিজরী]

৩৯তম ইমাম

খলীলুল্লাহ আলী [মৃত্যু-৯৯৩ হিজরী]

৪০তম ইমাম

দ্বিতীয় নাজ্জার [মৃত্যু-১০৩৮ হিজরী]

৪১তম ইমাম

সাইয়্যেদ আলী [মৃত্যু-১০৭১ হিজরী]

৪২তম ইমাম

হাসান আলী [মৃত্যু-১১০৬ হিজরী]

৪৩তম ইমাম

কাসেম আলী শাহ [মৃত্যু-১১৪৩ হিজরী]

৪৪তম ইমাম

আবুল হাসান আলী [মৃত্যু-১১৯৪ হিজরী]

৪৫তম ইমাম

দ্বিতীয় খলীলুল্লাহ আলী [মৃত্যু-১২২৩ হিজরী]

আগাখান পদবী

খলীলুল্লাহ আলীকে এক বিদ্রোহে হত্যা করা হয়। ফলে ইসমাঈলীদের মাঝে বিদ্রোহ শুরু হয়ে যায়। তখন ইরানের তৎকালিন বাদশা ফাতেহ আলী ইসমাঈলীদের খুশি করার জন্য খলীলুল্লাহের দুই বছরের ছেলে হাসান আলীকে আগাখান উপাধি দেয়। সেই সাথে নিজের মেয়ের সাথে তার বিয়ে দেয়।

কিন্তু ফাতেহ আলীর মৃত্যুর পর হাসান আলী আগাখান বৃটিশদের গুপ্তচরবৃত্তি এবং তাদের অতিরিক্ত গোলামী প্রদর্শনের কারণে ইরানীরা তাকে ইরান থেকে বিতাড়িত করে দেয়। তখন হাসান আলী ইরান থেকে বেরিয়ে ভারতে পালিয়ে আসে। মুম্বাইয়ে নিজের আবাসস্থল প্রতিষ্ঠা করে। সেখান থেকেই ইসমাঈলী ইমামদের নামের সাথে আগাখানী পদবী জোড়া শুরু হয়ে যায়।

৪৬তম ইমাম

প্রথম আগাখান হাসান আলী [মৃত্যু ১২৯৮ হিজরী]

৪৭তম ইমাম

দ্বিতীয় আগাখান আলী শাহ [মৃত্যু-১৩০২ হিজরী]

৪৮তম ইমাম

তৃতীয় আগাখান সুলতান মুহাম্মদ শাহ [মৃত্যু-১৩৭৬ হিজরী]

৪৯তম ইমাম

চতুর্থ আগাখান কারীম শাহ [বর্তমান ইমাম, যে কিছুদিন আগে বসুন্ধরায় তাদের ধর্মীয় ইবাদতখানা উদ্ভোধন করতে এসেছিল] এই হল বর্তমান আগাখান করীম শাহ পর্যন্ত আগাখানীদের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও পরিচিতি।

এবার আমরা দেখি এ নতুন ধর্মের রীতিনীতি সম্পর্কে।

আগাখানী ধর্মের কালিমা

আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলূল্লাহ ওয়া আশহাদু আন্না আমীরাল মু’মিনীনা আলীআল্লাহ।

অর্থাৎ আমি স্বাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই, এবং আমি আরো স্বাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ আল্লাহর রাসূল এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয় আমীরুল মুমিনীন হলেন আলী আল্লাহ। {ইসমাঈলী তালিমাতে কিতাব, ১৯৬৮ ঈসাব্দে প্রকাশিত। ইসমাইলিয়্যাহ এসোসিয়েশন পাকিস্তান করাচি]

আগাখানীরা কার ইবাদত করে?

আগাখানীরা আল্লাহ তাআলার পরিবর্তে তাদের বর্তমান ইমামের ইবাদত করে থাকে। {পীর সামসুদ্দীনকৃত গীনানে বারহাম প্রকাশ, মাজমুআ মুকাদ্দাস গীনান-২৯৭, প্রকাশক-ইসমাঈলিয়্যাহ এসোসিয়েশন মুম্বাই ভারত}

হযরত আলী রাঃ এর স্ত্রী কে?

আগাখানীদের জঘন্য আক্বিদা বিশ্বাসী হয়ে বলে যে, রাসূল সাঃ হলেন হযরত আলী রাঃ এর স্ত্রী!

{সাইয়্যেদ ইমাম শাহ কৃত গীনানে মুমিন চীতামনে, মুকাদ্দাস গীনান কা মাজমুআ-১৪৪, প্রকাশক-ইসমাইলিয়্যাহ এসোসিয়েশন ইন্ডিয়া মুম্বাই]

নাউজুবিল্লাহি মিন জালিক!

আগাখানীদের সালাম

আগাখানীদের সালাম হল, “ইয়া আলী মদদ”। আর সালামের জবাবেও বলে “ইয়া আলী মদদ”। {প্রাগুক্ত-৬}

বাতেনী শরীয়ত

তাদের সপ্তম ইমাম মাওলানা মুহাম্মদ বিন ইসমাঈল শরীয়তে মুহাম্মদীর জাহিরী [বাহ্যিক আমল] কে বাতিল করে দিয়ে বাতেনী [লুকায়িত] শরীয়তের প্রচলন করেছেন।{হামারা ইসমাঈলী মাযহাব আওর উসকা নিজাম-৯২, ৬২০}

ইমামের সূরতে আল্লাহ তাআলার অবতরণ

আগাখানীদের বিশ্বাস মতে গরীব দুঃখীদের সাহায্যার্থে বর্তমান বিদ্যমান ইমামের রূপ ধরে আল্লাহ তাআলা আগমন করেন। [নাউজুবিল্লাহ] {তাআরূফী-৬, শিখশা মালা, পাঠ্য বই, রিলিজিয়ন নাইট স্কুল, প্রকাশক-শুবায়ে তালিমে ইসমাঈলীয়্যাহ এসোসিয়েশন, মুম্বাই ইন্ডিয়া}

বিদ্যমান ইমাম সবই জানে!

আগাখানীদের মতে- বর্তমান বিদ্যমান ইমামের জ্ঞান হল পরিপূর্ণ। তাই তিনি যা কিছু হয়েছে, যা কিছু হচ্ছে, এবং ভবিষ্যতে যা কিছু হবে সব কিছুই তিনি জানেন। অর্থাৎ সে আলিমুল গায়েব ওয়াশ শাহাদাহ। {মার্গ-১/৮১, পাঠ্য বই, রিলিজিয়ন নাইট স্কুল, প্রকাশক- ইসমাঈলীয়্যাহ এসোসিয়েশন, মুম্বাই ইন্ডিয়া}

আল্লাহ তাআলার সাথে কাউকে শরীক করা শিরক নয়?

আগাখানীদের মতে আল্লাহ তাআলার জাত ও সিফাতের সাথে কাউকে শরীক বিশ্বাস করলে শিরক হবে না, তবে তাদের ইমামের বদলে অন্য কাউকে ইমাম মানাটা শিরক! {হামারা ইসমাঈলী মাযহাব আওর উসকা নিজাম-৪৯, ২৯৯, ৩০০}

নবীদের চেয়ে ইমামরা শ্রেষ্ঠ?

আগাখানীদের আক্বিদা হল, নবীদের থেকে গোনাহ হতে পারে। তারা কেউ নিষ্পাপ ছিলেন না। আর তারা এমন সব মর্যাদা কামনা করেছেন, যার তার যোগ্য ছিলেন না। পক্ষান্তরে হযরত আলী রাঃ এবং তার বংশধরের মাঝে আগত ইমামগণ। তারা এমন মর্যাদা চেয়েছেন, যার তারা যোগ্য ছিলেন। আর তারা সবাই কর্মকান্ডের দিক থেকে ফেরেস্তার মত, নিষ্পাপ এবং নবী রাসূলদের চেয়ে চার স্তরের উপরের মর্যাদায় সমাসিন [নাউজুবিল্লাহ] {হামারা ইসমাঈলী নিজাম আওর উসকা নিজাম-৭০-৭১}

ইমামরা গোনাহ মাফ করতে পারে!

তাদের এক সময়কার ইমাম পীর শাহ গোনাহ মাফ করে দিতে পারতো। {প্রাগুক্ত, সবক নম্বর-১৭, পৃষ্ঠা-১২}

কুরআনে কারীম ৪০ পারা?

কুরআনে কারীম ৪০ পারা। শেষ ১০ পারা হযরত আলী ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে গেছেন। বর্তমানে বিদ্যমান কুরআন আল্লাহর কিতাব নয়। বরং হযরত উসমানের কিতাব। [নাউজুবিল্লাহ] {কালামে ইমামে মুবীন-১/৬৪, ফরমান-২০, মাজমুআ মাকাদ্দাস গীনান-৯৫, হামারা ইসমাঈলী মাযহাব, ভূমিকা}

কুরআনে কারীম আরবের জন্য। আর অন্যান্যদের জন্য হল “গীনান” এ গীনানের উপরই আমল করা উচিত। { ফরমান নং-৩১, পৃষ্ঠা-৮১, খন্ড নং-১, কালামে ইমামে মুবীন আগাখানে ১১১ ফরমানের মাজমুআ, প্রকাশক-ইসমাঈলী এসোসিয়েশন, ইন্ডিয়া}

ইমামের ফরমান আল্লাহর কালামের সমমানের!

বর্তমান ইমামের ফরমানসমূহ আল্লাহর কালামের সমতুল্য। {আলী জাহ সুলতান কৃত কালামে ইলাহী আওর ফরমানে ইমাম-৬২, প্রকাশক- ইসমাঈলীয়্যাহ এসোসিয়েশন}

বর্তমান ইমামকে সেজদা করতে হবে!

ইমামে হাজেরের মাঝে আল্লাহর নূর হুলুল হয়েছে তথা প্রবিষ্ট হয়েছে। তাই আগাখানী ফিরক্বাপন্থীরা তাকে সেজদা করে থাকে। {সবক-১, পৃষ্ঠা-৪, শিকশা মালা ১১১, পাঠ্যবই, রিলিজিয়ন নাইট স্কুল, প্রকাশক- ইসমাঈলীয়্যাহ এসোসিয়েশন, মুম্বাই ইন্ডিয়া}

হযরত আলী আল্লাহর অবতার?

আগাখানীদের আক্বিদা হল, হযরত আলী রাঃ আল্লাহ তাআলার অবতার। {সাইয়্যেদ ইমাম শাহ কৃত গীনানে মুমিন চিতামনী, মাজমুআ মুকাদ্দাস গীনান-১০৬, প্রকাশক-ইসমাঈলীয়্যাহ এসোসিয়েশন, মুম্বাই ইন্ডিয়া}

হযরত আলী খোদা! তাদের আক্বিদা হল, যে ব্যক্তি হযরত আলীকে মন থেকে আল্লাহ বিশ্বাস করবে, তার সন্তান-সন্ততিতে বরকত হবে। আর সফলতা তার পদচুম্বন করবে। আর নূরে আলী সকল জাহানের সৃষ্টিকর্তা। [নাউজুবিল্লাহ] {সাইয়্যেদ ইমাম শাহকৃত গীনানে মুমিন, মুকাদ্দাস গীনানুকা মাজমুআ-১১৩, প্রকাশক-প্রাগুক্ত}

আরকানে ইসলামকে অস্বিকার

আগাখানীরা নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত, যা ইসলামের মূল রুকন তার জরুরতকে অস্বিকার করে থাকে। {হামারা ইসমাঈলী মাযহাব আওর উসকা নিজাম-১৩৬}

আগাখানীদের ইবাদত

নামায পড়ার বদলে আগাখানীদের উপর ফরজ হল, তিন বেলা তাদের ইবাদাতগাহ “জামাআতখানায়” গিয়ে দুআ করবে। {খাযীনায়ে জাওয়াহের-১৬, ইসমাঈলী এসোসিয়েশন করাচি পাকিস্তান}

আরো কিছু জঘন্য আক্বিদা

# হাইয়্যু, আলকাইয়্যুম মানে হল, তাদের বর্তমান ইমাম। {কালামে ইমামে মুবীন, ফরমানে ইমামে সওম-১/৫} # {সাইয়্যেদ ইমাম শাহ কৃত গীনানে মুমিন চিতামনী, মুকাদ্দাস গীনানূকা মাজমুআ-১০৪}

# খাজা আবু তালেব রাসূল সাঃ এর নবুওত ও রিসালাত সোপর্দ করেছে। {হামারা ইসমাঈলী মাযহাব আওর উসকা নেজাম-৬৩, ৬৪}

এরকম জঘন্য সব আক্বিদায় ভরপুর এ ইসমাঈলী সম্প্রদায় তথা আগাখানী ধর্মমতে। তাই বিজ্ঞ উলামায়ে কেরামদের মতে ওরা কাফের। মুসলমান নয়।

তাই সাধারণ মুসলমানগণ তাদের ইসলাম নামের ব্যবহার দেখে যেন বিভ্রান্ত না হন।

যে সকল বিজ্ঞ আলেমগণ আগাখানীদের কাফের ঘোষণা দিয়েছেন

১- মাওলানা মুহাম্মদ ইউসুফ লুধিয়ানবী রহঃ।

২- মুফতীয়ে আজম পাকিস্তান মুফতী ওলী হাসান সাহেব।

৩- মুফতী রশীদ আহমদ লুধিয়ানবী রহঃ।

৪- দারুল উলুম করাচির উলামাগণ।

৫- মাওলানা সলীমুল্লাহ খান সাহেব।

৬- উলামায়ে সিন্ধ।

৭- পাঞ্জাবের উলামাগণ।

৮- আযাদ কাশ্মিরের উলামাগণ।

৯- বেলুচিস্তানের উলামাগণ।

১০- দারুল উলুম দেওবন্দের উলামাগণ।

১১- মাযাহিরুল উলুম সাহারুনপুরের মুফতীগণ।

১২- জামিয়া আজহারের মুফতীগণ।

১৩- শায়েখ আব্দুল্লাহ বিন বায।

বিস্তারিত জানতে পড়ুন

১-আগাখানিয়্যাত উলামায়ে উম্মতকি নজর মে [সাওয়াদে আজম আহলে সুন্নত চাতরাল পাকিস্তান]

২- আগাখানিয়ূকি সিয়াসী আযায়িম আহলে ওয়াতান কে লিয়ে কে লমহা ফিকরিয়্যাহ। [যাকারিয়া রাজী]

৩-ইসমাঈলিয়্যাহ {সাইয়্যেদ আবুল হাসান আলী নদবী রহঃ}

যেমন কাদিয়ানীরা কাফের হওয়া সত্বেও ইসলামের নাম ব্যবহার করে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করে যাচ্ছে, ঠিক তেমনি আগাখানী ইসমাঈলী সম্প্রদায় ধর্মাবলম্বীরা ইসলামের নাম ব্যবহার করে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করে যাচ্ছে।

হিন্দু বৌধ্য, খৃষ্টানদের মত তারা যদি নিজেদের আগাখানী ধর্মের অনুসারী বলে, কিংবা ইসমাঈলী ধর্মের অনুসারী বলে, তাহলে তাদের ব্যাপারে আমাদের কোন ক্ষোভ নেই। কিন্তু কাফের হয়ে ইসলামের নাম ব্যবহার করবে কেন? অমুসলিম হয়ে মুসলিম পরিচয় বহন করবে কেন? এ কেমন ধৃষ্টতা? আল্লাহ তাআলা আমাদের এসব কাফেরদের ষড়যন্ত্র থেকে সাধারণ মুসলমানদের হিফাযত করুন।

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালকতালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল- ahlehaqmedia2014@gmail.com

আরও জানুন

অগ্রীম বাসা ভাড়ার উপর বছর অতিক্রান্ত হলে যাকাত কে দিবে?

প্রশ্নঃ মুহতারাম, অমি প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা দেওয়ার শর্তে বাড়ি ভাড়া নেই। ভাড়া নেওয়ার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আহলে হক্ব বাংলা মিডিয়া সার্ভিস